গত ২৮ আগষ্ট প্রথম আলোয় একজন সাংবাদিক লিখলেন ‘বিষাক্ত’ চিটাগুড়ের সাথে আটা ও চিনি মিশিয়ে রাজশাহীর চারঘাটে ভেজাল গুড় তৈরী হচ্ছে। আর গত ১৫ সেপ্টেম্বরের খবরে দেখা গেল যে আইন শৃঙ্খলা বাহিনী সেখানে অ্যাকশন চালিয়ে প্রায় ৫ টন এ ধরণের ‘ভেজাল’ গুড় নদী ও ডোবায় ফেলে দিয়েছেন। প্রথমেই প্রশ্ন করি প্রথম আলোর সাংবাদিক এ ‘বিষের’ তথ্য কোথায় পেলেন? আখের রস থেকে চিনি বা গুড় তৈরীর শেষে চিটাগুড় বাই প্রোডাক্ট হিসেবে থেকে যায়। ইন্টারনেট থেকে যে তথ্য পেলাম, তা সাংবাদিকের তথ্যের সম্পূর্ণ বিপরীত। উইকিপেডিয়া ও অপর একটি ঠিকানা থেকে পাওয়া যায় যে আখের রসের থেকে তৈরী চিটাগুড় বা ‘ব্ল্যাকস্ট্র্যাপ মোলাসেজ’ এর মধ্যে বরঞ্চ অনেক মিনারেল ও ভিটামিন থাকাতে এটি স্বাস্থ্যের জন্য চিনি থেকেও ভাল। গো-খাদ্য ও শিল্প-কারখানায় ব্যবহার হয় বলেই চিটাগুড় ‘বিষাক্ত’, এ কথাটি লিখা কি খুব দায়িত্বের হয়েছে? দ্বিতীয়ত: প্রশ্ন করি, আইন রক্ষা বাহিনী কোন বিজ্ঞানীর সাথে পরামর্শ না করে, কোন পরীক্ষা নিরীক্ষা না করে, পত্রিকার একটি খবর দেখেই কেন চারঘাটে হামলা চালালেন? আমি তো এটিকে একটি নতুন উদ্ভাবন হিসেবে দেখতে চাই। চিটাগুড়, আটা ও চিনি – এর কোনটিই অখাদ্য নয়। হ্যাঁ, বলা যেতে পারে, এটি প্রচলিত গুড় নয়, তাই গুড় নামে বিক্রয় করাটা হয়ত পুরোপুরি ঠিক হয় নি, হয়ত ‘বিকল্প’ গুড়ের মত একটি বিশেষণ যোগ দিলে ভাল হত, কিন্তু তাই বলে টন টন এ পণ্য নদীতে ফেলে দেয়াটা কি যুক্তিযুক্ত হয়েছে? কিছুদিন আগে আমরা জেনেছি যে বিদেশী প্রযুক্তিতে বড় বড় কারখানায় যে ‘কনডেন্সড মিল্ক’ তৈরী হয় তাতে দুধই থাকে না, কিন্তু দুধ নামেই তা বিক্রয় হচ্ছে। সে কারখানার পণ্য কি আমরা পানিতে ফেলে দিয়েছি? দিই নি, কারণ সেটি বিদেশীদের উদ্ভাবিত প্রযুক্তির। আর সে পণ্য একই নামে এখনও বাজারে চলছে।
আসলে আমাদের সবার মানসিকতার মধ্যে দেশের যে কোন উদ্ভাবনের প্রতিই একটি বিরূপ মনোভাব আছে। আর তা আরও বহুগুণে বেড়ে যায় যদি উদ্ভাবনটি হয় অল্পশিক্ষিত বা অখ্যাত কারও। যার কারণে দেশে নিজস্ব প্রযুক্তির কোন শিল্প গড়ে উঠছে না। তাই সবার প্রতি আমার অনুরোধ, দেশের সাধারণ কারিগরেরা নতুন কিছু তৈরী করলে পরীক্ষা নিরীক্ষা না করে প্রথমেই তাকে এভাবে বন্ধ ও ধ্বংস করার উদ্যোগ নেবেন না। প্রায় ফেলে দেয়া চিটাগুড় ব্যবহার করে চারঘাটে নতুন যে ‘বিকল্প গুড়’ আবিষ্কৃত হয়েছে তার মধ্যে যদি কোন ক্ষতিকর উপাদান থাকে তা দূর করার জন্য বরঞ্চ দেশের বিজ্ঞানীদেরকে নিয়োগ করুন, কিন্তু মূলেই এ উদ্যোগটিকে ধ্বংস করবেন না।
সর্বশেষ এডিট : ১১ ই অক্টোবর, ২০০৯ রাত ১১:১৮