somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ডুমুর এবং ওয়াস্প : কোটি বছরের সম্পর্ক

২৩ শে মার্চ, ২০১৫ বিকাল ৫:১২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


পৃথিবী যে কোনো ডুমুর ভাঙলে দেখা যাবে তার ভেতর থেকে কয়েকটা কালো ডানাওয়ালা পিঁপড়ের মতো পোকা হঠাৎ ছাড়া পেয়ে যেন লাফিয়ে লাফিয়ে পালাচ্ছে, লাফিয়ে উঠে যেখানে পারছে সেখানে পড়ছে। এরা বিভিন্ন ধরনের ওয়াস্প। ওয়াস্প ইংরেজি শব্দ। বোলতা ভিমরুলরাও এক-এক ধরনের ওয়াস্প, কিন্তু তারা থাকে একজোটে, বাসা বেঁধে। এ ওয়াস্পরা সবাই একা-একা। কী করছে এরা ডুমুরের ভেতর? আর ঢুকলই বা কী করে? কিন্তু ডুমুর ফল, না ফুল? আসলে দুটোই। ডুমুরের গোলাটাই সেই ফুল। গোড়ায় ফুল, বেড়ে উঠলে ফল। চারপাশ থেকে মুড়িয়ে ফুলের শরীরের যা কিছু সব সবজু আবরণীতে ঢেকে ফেলা হয়েছে। তার পুংকেশর, গর্ভকেশর সবই রয়েছে, সেগুলোকেই ভেতরে সরু কেশরের মতো দেখা যায় ফলটা ভেঙে নেয়ার পর। ফুল যখন আছে তখন পরাগমিলের কাজটাও তো করতে হবে কাউকে না কাউকে। সেই কাজের জন্যই আছে ওই ওয়াস্পগুলো, কিন্তু সিন্দুকবন্দি ফুলের কাছে তারা পৌঁছেবে কী করে? একটা ডুমুর নিয়ে একটু ভালো করে ঘুরিয়ে ফিরিয়ে দেখলেই বোঝা যাবে, তার মাথার কাছে, মানে বোটার উলটো বিন্দুতে রয়ে গেছে একটা অতিসূক্ষ্ম ছিদ্র। এটাই এই ওয়াস্পদের ফুলে ঢোকার পথ। কিন্তু ফুলের ভেতর তারা মধুর আশায় ঢোকেনি, ডুমুরের ফুলে সে বন্দোবস্তও নেই।

ওয়াস্পগুলো আসে গাছকে বোকা বানাতে, উলটো গাছ তাদের দিয়ে কাজ করিয়ে নেয়। গাছের বীজ বেশ পুষ্টিকর খাদ্য। মা-ওয়াস্পগুলো ডুমুরের গোলার মধ্যে ঢুকে কয়েকটা ফুলের ভেতর ডিম পাড়ে। নিজেরা আর বেরোতে পারে না অবশ্য, কিন্তু তার দরকারও তখন ফুরিয়ে গেছে- নিজের জীবনেও, গাছের জীবনেও। কারণ, অন্ধকার গোলার ভেতর ঘুরে ঘুরে ডিম পাড়তে গিয়ে মা ওয়াস্প ডুমুরের অনেক ফুলে পরাগমিলন ঘটিয়ে ফেলে নিজের অজান্তেই। কোথা থেকে এল ওই পরাগ। কেন? ওই মা ওয়াস্পটিও তো জন্মেছে কোনো ডুমুরের গোলার ভেতর। সেখান থেকে বেরোনোর সময়ই তো সে সঙ্গে এনেছে ওই গাছের পরাগ, ঠিক যেভাবে এই ডুমুরের ভেতর জন্ম নেয়া ওয়াস্প এখানকার পরাগ নিয়ে চলে যাবে অন্য ডুমুরে ডিম পাড়তে। পৃথিবীর সব ডুমুর কোনো না কোনো ধরনের ওয়াস্পের ওপর নির্ভর করে আসছে পরাগমিলনের জন্য। আর সেই ওয়াস্পগুলোও ডুমুরের ফলের ভেতর ছাড়া জন্মাতে পারে না। পরস্পর নির্ভরতার এ এক আশ্চর্য উদাহরণ।
কিন্তু যে কোনো ওয়াস্প যে কোনো ডুমুরে ঢুকতে পারে না। আগে জানা ছিল, একটা নির্দিষ্ট প্রজাতির ডুমুরের সঙ্গে এভাবে জোট বেঁধেছে শুধু একটাই নির্দিষ্ট প্রজাতির ওয়াস্প। ২০০৩-এ আমেরিকার স্মিথসনিয়ান ট্রপিক্যাল রিসার্চ ইন্সটিটিউটের বিজ্ঞানী ড্রুড মালবো আর তার সহকারী বিজ্ঞানীরা সেই ভুলটা ভেঙে দিলেন। তারা দেখলেন, ডুমুরগাছ অতটা কড়াভাবে পরাগমিলনের প্রার্থী বাছাই করেনি।
একই ডুমুরগাছে তারা যেমন কখনও দু’রকমের ওয়াস্প পেয়েছেন, তেমনই একই ওয়াস্প বেরিয়েছে অন্তত দুই প্রজাতির ডুমুর থেকে, এও দেখা গেল। কিন্তু তাতেও জুটি বাঁধার ব্যাপারটা খুব খাটো হয়ে যায় না। ডুমুরেরগাছে সকালের নাশতা সারতে আসে বসন্ত বৌরি, হরিয়াল, আসে বুলবুলি, কোকিল। তারা জানেও না, এ যে ফলটা তারা উদরসাৎ করছে, সেটা ‘কো-স্পন্সরড বাই...।’ হ্যাঁ, একটা অতি ছোট্ট প্রাণী যাকে আতশকাচ ছাড়া ভালোভাবে দেখাই যায় না। একটা জঙ্গলে যত ডুমুরগাছ আছে, তাতে পালা করে ঘুরে ফিরে ফল আসা জরুরি। কারণ সব ক’টা গাছে একবার ফল এসে গেলে একটা গাছ থেকে বেরিয়ে পরের প্রজন্মের ওয়াস্পগুলো ঢুকবে কোথায়?
আর তার ফলেই বছরভর কোনো না কোনো ডুমুরগাছে ফল থাকে। জঙ্গলের প্রাণীদের খিদে মেটানোর এ বরছজোড়া বন্দোবস্তের কারণেই ডুমুরগাছকে বিশেষ সম্পদ হিসেবে ধরা হয়। জঙ্গলের জীবনে তার আসন ভারি মর্যাদার। আমাদের দেশে কোনো বড় মানুষের তুলনা দেয়া হয় বটগাছের সঙ্গে। বট এক ধরনের ডুমুর আবার অশ্বত্থও। এভাবে বছরের পর বছর ডুমুরের গাছে কয়েকটা বীজের দখল নিতে আসে এক পোকা আর অন্ধকার বোকা বানিয়ে তাকে দিয়ে খাটিয়ে নিচ্ছে গাছ। অথবা এক পক্ষ ছাড়া অপর পক্ষের বাঁচা অসম্ভব। সবচেয়ে পুরনো ঘনিষ্ঠতম এ সম্পর্কের বয়স কম করে আট-নয় কোটি বছর।
---সংগৃহীত
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ড. ইউনুস: এক নতুন স্টেটসম্যানের উত্থান

লিখেছেন মুনতাসির রাসেল, ২৯ শে মার্চ, ২০২৫ দুপুর ১২:৫৭


ড. মুহাম্মদ ইউনুস ধীরে ধীরে রাজনীতির এক নতুন স্তরে পদার্পণ করছেন—একজন স্টেটসম্যান হিসেবে। তার রাজনৈতিক যাত্রা হয়তো এখনও পূর্ণতা পায়নি, তবে গতিপথ অত্যন্ত সুস্পষ্ট। তার প্রতিটি পদক্ষেপ মেপে মেপে নেয়া,... ...বাকিটুকু পড়ুন

কেয়া তুমি

লিখেছেন দানবিক রাক্ষস, ২৯ শে মার্চ, ২০২৫ দুপুর ১:৩৫

যুদ্ধাহত আমি,
নিয়তি আমায় ফেলে দিয়েছে, পরাজয়ের হাতে,
রক্তে রাঙা পথের শেষে,
শুধু শূন্যতা আর ক্লান্তির গ্লানি।

আমার তলোয়ার আজ মরিচা ধরা,
স্বপ্নগুলো রকাক্ত।
যে চোখ একদিন জ্বলেছিল আগুনে,
সেখানে আজ শুধু অন্ধকার।

হৃদয়ের প্রতিটি কোণে যুদ্ধের ক্ষত,
নিঃশব্দ... ...বাকিটুকু পড়ুন

উন্নয়নের মহাসড়ক দিয়ে পালিয়ে গেল আওয়ামী লীগ?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৯ শে মার্চ, ২০২৫ বিকাল ৩:৪০



আওয়ামী লীগের তৈরী করা উন্নয়নের মহাসড়ক অনেক চওড়া হয়েছে। সেই মহাসড়কে বাংলাদেশ উঠার পরেও আওয়ামী লীগ পালানোর রাস্তা পেল।অবশ্য তাদের কতিপয় বেকুব ধরা খেয়ে এখন জেলে আছে।... ...বাকিটুকু পড়ুন

সবাইকে পবিত্র ঈদুল ফিতর ২০২৫ এর শুভেচ্ছা

লিখেছেন নতুন নকিব, ২৯ শে মার্চ, ২০২৫ বিকাল ৪:৩৪

সবাইকে পবিত্র ঈদুল ফিতর ২০২৫ এর শুভেচ্ছা

ছবি, অন্তর্জাল থেকে সংগৃহিত।

প্রিয় সহব্লগারবৃন্দ,

দেখতে দেখতে পবিত্র ঈদুল ফিতর ২০২৫ আমাদের দোরগোড়ায়। আনন্দ-বেদনা, উৎসব-চিন্তার মিশেলে এই ঈদ এসেছে আমাদের মাঝে। সবাইকে জানাই আন্তরিক... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রধান উপদেষ্টার চীন সফর কেমন হলো ?

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ২৯ শে মার্চ, ২০২৫ রাত ৮:৪৮


প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস এখনো চীন সফরে রয়েছেন। চীন সফর কে কেন্দ্র করে বাংলাদেশে এক শ্রেনীর মানুষের মধ্যে ব্যাপক হাইপ দেখা যাচ্ছে। বাংলাদেশের ইতিহাসে এমন সাসেক্সফুল সফর আর কোনো দলের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×