ছোট বেলাই দেখতাম কতো সুন্দর সুন্দর কিছু গাছ আমাদের গ্রামের মানুষ লাগানো শুরু করেছে, যদিও তখন ঐগাছগুলো নামও জানতাম না, পরে একসময় শুনেছি ঐগাছগুলো নাম অ্যাকেসিয়া, ইউক্যালিপ্টাস আরও অনেক...
গাছগুলোকে আমার খুব ভালো লাগতো কারণ ঐগাছগুলো দেখতে আসলেই সুন্দর, তখন কি আর জানতাম যে সব সুন্দরেরই কিছু খারাপ দিক আছে....
এখন যখন গাছপালার ডাক্তার হয়েছি, তখন জানতে পেরেছি ঐসব দেখতে সুনদর গাছগুলো আমাদের কি পরিমাণ ক্ষতি করে ফেলেছে এতোদিনে এমনকি এখনও থামেনি আমাদের অসচেতনার কারণে..
নিজের ভালো নাকি পাগলেও বুঝে, তাহলে আজ এতোদিন পরেও( প্রায় ৪০-৪৫বছর) কেনো আমরা আমাদের ভালোটা বুঝতে পারলাম না??
যাই হোক আজ আমি চেষ্টা করবো অ্যাকেসিয়া ও ইউক্যালিপ্টাস গাছের ক্ষতিকর প্রভাব গুলো লিখতে
১. এই গাছগুলোর মুল মাটির খুব গভীর পর্যন্ত বিস্তৃত থাকে, যার ফলে এরা মাটির প্রায় সব স্তর থেকে খাদ্যরস শোষণ করে, এবং এই পরিমাণটা আমাদের দেশী যে কোনো গাছের থেকে অনেক গুণ বেশী, এ কারণে এইসব গাছের আশেপাশের সকল গাছ তাদের খাবার ঠিক মতো পাই না,, ফলে একসময় পাশের গাছগুলো মারা যায় খাদ্যাভাবে
২. এই গাছগুলো প্রতিদিন প্রায় চল্লিশ লিটার পানি শোষণ করে মাটি থেকে যা আমাদের দেশী গাছগুলোর থেকে অনেক অনেক গুণ বেশী...
এ কারণে এই সব গাছ যে সব এলাকাই ব্যপকহারে লাগানো হয় সেসব এলাকায় মরুকরণ শুরু হয় এরং একটা সময় পর ঐসব এলাকার পানির লেয়ার মাটির অনেক নিচে নেমে যায়
৩.অ্যাকেসিয়া ও ইউক্যালিপ্টাস গাছের পাতা সহজে পচে না তাই অসংখ্য হিউমাস নির্ভর প্রজাতি যেমন ওষুধি গাছ এবং কেঁচোসমূহ আশঙ্কাজনক অবস্থায় পড়েছে এবং প্রায় বিলুপ্তির পথে
৪.এই গাছগুলো আমাদের দেশী প্রজাতির প্রায় সব গাছের জন্য ক্ষতিকর শুধু এই কথাটা দিয়ে এদের ক্ষতির ব্যপকতা সম্পর্কে সঠিক ধারণা দেওয়া সম্ভব না, কারণ এই সব গাছ তাদের আশেপাশের সব গাছের জন্য মূর্তিমান আতঙ্ক, কারণ এই সব গাছের পাশের গাছগুলো ঐসব গাছের দ্বারা এমন সব রোগে আক্রান্ত হয় পরিণাম হচ্ছে ঐসব দেশী গাছের মৃত্যু, এটার সত্যতা আপনি দেখতে পারবেন আপনার আশেপাশে থেকেই, এই সব বিদেশী গাছের জন্য যে কতো কাঠাল গাছ মরে গেছে তার কেনো হিসেব নেই
৫. এইসব গাছের দৌরাত্ম ও মানুষের স্বাস্থ্যের ওপর এর বিরূপ প্রতিক্রিয়ার কথা আজ সবারই জানা, আমরা জানি ফুলের পরাগরেণুতে অনেকেরই অ্যালার্জির সমস্যা হয়, কিন্তু ঐসব বিদেশী গাছের রেণুতে এই সমস্যাটা এতো ব্যাপক যে তা আজ আমাদের জন্য একটা আতঙ্কের নাম
৬. অনেক অ্যাজমা বিশেষজ্ঞ মত দিয়েছেন যে এই সব গাছের ফুলের রেণু মানুষের শরীরে অ্যাজমা সৃষ্টির জন্য দায়ী
৭.পশুপাখিরাও এই গাছগুলোকে পছন্দ করে না। কারণ ঐসব গাছ পশুপাখিদের কোনো সাহায্য বা উপকারে আসে না, কারণ খাওয়ার উপযোগী ফল ও মধু তৈরি করতে পারে না ঐসকল গাছ..
৮.খুব বেশী সরু আর লম্বা ডালপালার কারণে এই সকল গাছ ঝড় প্রতিরোধের জন্যে উপযোগী না এবং ঝড়ের সময় অন্যান্য প্রাণির আশ্রয়ও দিতে পারে না।
৯. এই গাছগুলো খুব দ্রুত বড় হয়, আমার জানা মতে এই একটা মাত্র ভালো দিক ছাড়া আর কোনো ভালো নেই এইসব বিদেশী গাছের,
সব শেষে সবার কাছে অণুরোধ এই সব বিদেশী গাছগুলো সম্পর্কে নিজে সচেতন হোন সেই সাথে আপনার পাশের মানুষগুলোকেও সচেতন করুন এবং আমাদের দেশী অসংখ্য গাছকে বিলুপ্তির হাত থেকে রক্ষা করুন।।।।