‘ফ্রিজে রেড ওয়াইনের একটা বোতল আছে। খাও, মাথা ঠান্ডা থাকবে। আমি আসছি ঘন্টাখানেকের মধ্যে।’
এই এসএমএস পাওয়ার সাথে সাথেই আমার বাড়ি ছেড়ে বের হয়ে যাওয়া উচিত। তবে যাওয়ার আগে বোতলটা অর্ধেক করে যাব।
কিন্তু ফ্রিজ না খুলে রান্নাঘরে গেলাম। অ্যালকোহল নয়, আমার শরীর চাইছে ক্যাফেইন। ধীরেসুস্থে কফি বানালাম, এক চামচ হরলিকস মেশালাম। যেমনটা সকালবেলায় আয়েশ করে খেতে পছন্দ করি। ওর জন্যও এক কাপ বানিয়ে রাখব নাকি?
এইসব ভাবনা মাথায় কেন আসছে? ওর জন্য কফি বানালেও তাতে একটু বিষ মিশিয়ে দেওয়া উচিত। আর সেটা সুন্দর করে টেবিলে রেখে আমার কেটে পড়া উচিত।
আমি এসেছি আমার কাপড়চোপড় গুছিয়ে নিতে। এক কাপড়ে বাড়ি ছেড়ে গিয়েছিলাম। আজ সব গুছিয়ে নেব। আর কালকে আমরা কাজি অফিসে গিয়ে তালাক নেব।
আম্মা ফোনের পর ফোন দিয়ে যাচ্ছে।
‘কেন তুমি আমাকে না বলে ওই বাড়িতে গেলা!’
‘আমার কাপড় নিতে আসছি। এখনি চলে যাব।’
দশ মিনিটও যায়নি আবার ফোন। ‘কি ব্যাপার কতক্ষণ লাগে। ওর সাথে দেখা করবানা। চুপচাপ চলে আস।’
ফোনটা অফ করে দিলাম।
সবকিছু এখনই গোছগাছ করা উচিত। আর নিতে আসার সুযোগ নাই। কেন জানি ঘুম পাচ্ছে খুব।
ঘুম ঘুম চোখেই দরজা খুলে দিলাম। শোবার ঘরে এসে লক করে দিলাম। ও এই ঘরে ঢুকল বারান্দার দরজা দিয়ে। এইটা কেন খোলা রাখলাম?
বিছানা ঝাড়ার ঝাড়–টা দেখতে পাচ্ছি। এইটা নিয়ে ঝাপিয়ে পড়ব নাকি? বাথরুমে ঢুকে লক করে দেব? আমার ফোন অফ পেয়ে আম্মা নিশ্চয়ই মাতম করছে। দশ সেকেন্ড গলা চেপে রাখলেই নাকি একটা মানুষ মরে যায়। আর ওর গায়ে নাকি আমার দশ গুণ শক্তি। আম্মা খুনখারাবি চান না। উনার মেয়ের সংসারের দরকার নাই। বেঁচে থাকলেই হল।
‘হা হা তোমার বুয়া বেইমান। আজকে সকালে বলে দিসে তুমি আসবা। তুমি নাই, বেটি কোন কাজও করেনা। বাসায় কিছু নাই। ন্যানদোস খাবা না কেএফসি। নাকি তুমি-ই রানবা।’
‘তোমাকে বিষ খাওয়ায়ে ঘুমের বড়ি খাব।’
‘কোনটাই বাসায় নাই। আস রেড ওয়াইন খাই। আরে বাপ তুমি তো খাওইনি! আমি তো ভাবলাম পুরোটা মেরে দিয়ে বমি করে ঘর ভাসায়ে রাখস।’
‘সেটাই করা দরকার ছিল। ভদ্রলোকের মেয়ে বলে পারলামনা।’
‘হ্যাঁ, কি আর করবা। ছোটলোকের ঘরে আসছ।’
এই বাক্যালাপ চালানোর কোন অর্থ নাই। আমি কেন এখনো বের হয়ে যাচ্ছিনা। ও তো আটকায়নি।
‘আমি এখন চলে যাব। আমার সুটকেসটা লিফটে তুলে দাও।’
‘আরে কই যাবা। দুইদিন পর ভাইয়ের বউ এসে ভাগায়ে দিবে। তখন তো এখানেই আসবা আবার। তার চেয়ে থেকেই যাও। বউ না হোক, বন্ধুর মতই থাক।’
স্টিভি ওয়ান্ডারের ‘আই জাস্ট কলড টু সে’ গানটাই তো বোধহয় সবচাইতে জনপ্রিয়। হঠাত মনে হল এইটা না, স্টিভির সেরা গান ‘সাইনড সিলড ডেলিভারড আই’ম ইয়োরস’।
এই নিয়ে পরে আলোচনা হবে। আপাতত রেড ওয়াইন চলুক।
সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে নভেম্বর, ২০১২ ভোর ৪:৩০