somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ছায়াবিদ্রোহী(গল্প)

২৫ শে এপ্রিল, ২০১৬ রাত ১১:৫৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ছায়াবিদ্রোহী
-------------------------

(১)
পৌষ মাসের এক কুয়াশাচ্ছান্ন সকালে খুশির কোন অন্ত্য ছিল না কবীরের।
গতরাতে সে বোতল পাতিয়ে রেখেছিল গাছে।আজ দেখে রসে ভরে বোতল থেকে বরঞ্চ রস বেয়ে পড়ছে।আনাদিনও পাতিয়ে রাখা হত অবশ্য কিন্তু ভোরে এসে দেখা যেত বোতলটাই শুদ্ধ রস বেমালুম গায়েব।চোরে চুরি করে ভেগেছে।কবীরের গা জ্বলে যেত রাগে।গ্রামটা যে তাদের চোরের আখড়া তা আর নতুন কিছু নয়। কবীরেরতো মনে হয় সব শালা-ই চোর।মসজিদের ইমাম থেকে শুরু করে গ্রামের সবচে ভালো মানুষটাওকে তার চোর বলে মনে হয়। চোর না হলেও ছিচকে চোরতো বটে।
কবীর চোরটাকে যে ধরার কম চেষ্টা করেছে তা না।ধরা সম্ভব হই নি।চোরটা মহা সেয়ানা।কোন ফাকে যেন বোতলটা হাতিয়ে নিয়ে যায়- টের পাওয়া দুস্কর ।তা কবীরও সেয়ানা কম হয় নি।শেষবার তার মাথায় একটা বুদ্ধি খেলে গেল চড়াৎ করে।সে যা করল তা হল খুব উদারভাবে বোতলটায় পেচ্ছাব ভরে সুন্দর করে খেজুর গাছটায় ঝুলিয়ে রেখে এল।বোতলের মধ্যে তরলটুকু খাটি রসের মতই লাগছিল।
অতএব রস ভেবে চোরটা যে অন্তত এক চুমুক দিয়ে দেখেছে তা আন্দাজ করা শক্ত কিছু
না।চোরটা আয়োজন করে বোতলের মুখ গালে পুরে এক ঢোক রস খেয়ে দেখল,তারপর ঘটনা বুঝে ভ্যাক ভ্যাক করে বমি করতে করতে বোতলটা দূরে ছুড়ে মারল ভেবে কবীরের এক বিস্তর হাসি পেল।ব্যাটার জব্বর শিক্ষা হয়েছে।এইবার আর রস নিতে আসে নাই।আর আসবে বলেও মনে হয় না।ইশ!পেচ্ছাবের সাথে যদি একটু চিনি গুলিয়ে দেওয়া যেত তাহলে আরেকটু মজাটা হত।শুধু চুমুক দিয়েই ফেলে দিত না। পুরোটুকুই খেত।ভেবে কবীরের আবার খুব হাসি পায়।
হাসতে হাসতেই পরমুহূর্তে তার মনে হল চোরটা আজ নিজেই বোতলটায় পেচ্ছাব ভরে রেখে যায়নিতো !
(২)
চিন্তায় কপালে ভাজ পড়ল কবিরের
খুব সাবধানী হয়ে সে বোতলের মুখে নাক ঠেকিয়ে তরলটুকু একটু শুকে দেখল।না,ঠিক আছে।খাটি রসই ভিতরে। নিশ্চিন্ত হয়ে কবিরের খুব আনন্দ হল।

কবীর বোতলটা মুখে পুরে চুমুক দিয়ে একটু রসের স্বাদ নিতে যাবে এমন সময়ই একটা তাজ্জব বিষয় চোখে পড়ল তার। শুধু তাজ্জব না, ভয়েরও বটে। সে দাঁড়িয়ে আছে সূর্যের দিকে পাশ ফিরে সামনের পুকুরটার দিকে।তার ছায়ারও হিসেব অনুযায়ী পাশ ফিরে থাকার কথা।কিন্তু সেটাতো সেভাবে নেই!ছায়াটা তার দিকে একদম মুখ করে দাঁড়িয়ে আছে।তাছাড়া সে গালে বোতলের মুখ পুরে দিচ্ছিল।ছায়াটির হাতে বোতল আছে ঠিকই কিন্তু সেটা তারমত মুখে পুরে নেই,বরং ছায়াটির হাতে বোতলটি দুমড়ে মুচড়ে আছে।আরে ছায়াটি ওরকম ফোস ফোস করছে কেন?রেগে আছে নাকি ?
কবীর ভয় পেয়ে গেল ভিষণ । এটা কার ছায়া? সে অসহায়ের মত এদিক ওদিক তাকাতে লাগল। যতদূর চোখ যায় কেউ নেই!কবীর আবার ছায়াটির দিকে তাকাল।ছায়াটি হাসছে এখন।স্বাভাবিক হাসি না।হাসিটার মধ্যে যেন ভয়ংকর কোন ইঙ্গিত খুজে পায় সে।
কবীরের মাথাটা চক্র দিয়ে উঠল হঠাৎ।সারা শরীর থেকে দরদর করে ঘাম বের হচ্ছে। চোখে মুখে তার এখন অবিশ্বাস আর দিশেহারা ভাব।সে বিহ্বল হয়ে প্রাণপণে দৌড় দিতে যাবে অনির্দিষ্ট কোন দিকে, তখনি তার মনে হল প্রচন্ড শক্তি দিয়ে কেউ তাকে মাটির সঙে টেনে রেখেছে।
কবীরের বুকের ধক ধক হাজার গুন বেড়ে গেল।
কীসে টেনে রেখেছে তাকে?তার ছায়া?তার নিজের ছায়া?সে চায় কি?তাকে হত্যা করতে?শিউড়ে উঠল কবীর।
"ছাড় শুয়োরের বাচ্চা,ছাড়"আতঙ্কে কবীরের শ্বাসরুদ্ধ হওয়ার উপক্রম। সে প্রাণপণ চেষ্টা করছে দাঁড়িয়ে থাকার।পারছে না।ভুতুড়ে ছায়াটি তাকে এক অদম্য শক্তি দিয়ে টানছে মাটির দিকে। কবীরের হাটু ভেঙে নিয়ে আসছে।আর দাঁড়িয়ে থাকা যাচ্ছে না।কবীর তার থলথলে শরীর নিয়ে দুড়ুম করে মাটিতে আছড়ে পড়ল।বিকটভাবে আর্তনাদ করতে চাইল সে।কিন্তু সামান্যও আওয়াজ বের হল না।ছায়াটি তাকে জেতে ধরেছে।সে এখন কবীরকে তার পুরোপুরি অধীনে পেয়ে গেছে।সর্বশক্তি দিয়ে টানছে নিজের দিকে।ভয়াবহ আক্রোশে দুমড়াতে মুচড়াতে থাকে কবীরের দেহ।
ছায়াটি চায় কবীরের সবটুকু তার নিজের মধ্যে শুষে নিতে
(৩)
সাঙ্গ হল ছায়াটির কাজ।মুক্তি হল আরেকটি ছায়ার।যে ছায়া এখন পুর্ণাঙ্গ মানুষ।তারমুখে এখন মানুষের মতই হাসি এবং সে হাসি একই সাথে পরিতৃপ্ত ও গর্বের।কারণ ছায়াটি জানে, ছায়াদের ইতিহাসে তার নাম স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে।নামের পাশে মুদ্রিত থাকবে "ছায়াদের দ্বিতীয় বিদ্রোহী"
কবীর দ্রুত জায়গাটি থেকে প্রস্থান করে।সে আর সময় নষ্ট করতে চায় না।যতদ্রুত সম্ভব তাকে অন্য ছায়াদের মুক্তি দিতে হবে।ঐ জগতে ছায়ারা বড় কষ্টে আছে।

***গল্পাংশ(ছায়াবিদ্রোহী)
সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে এপ্রিল, ২০১৬ রাত ১১:৫৪
২টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মত প্রকাশ মানে সহমত।

লিখেছেন অনুপম বলছি, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১:২৭

আওয়ামী লীগ আমলে সমাজের একটা অংশের অভিযোগ ছিলো, তাদের নাকি মত প্রকাশের স্বাধীনতা নাই। যদিও, এই কথাটাও তারা প্রকাশ্যে বলতে পারতেন, লিখে অথবা টকশো তে।

এখন রা জা কারের আমলে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আত্নমর্যাদা!

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ২:৪৩

রেহমান সোবহান একজন প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক। তার বাড়ি থেকে বিদ্যালয়ের দূরত্ব প্রায় ৬ কিলোমিটার। রেহমান সাহেব এমন একটি বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করতেন যা খুব নির্জন এলাকায় অবস্থিত এবং সেখানে যাওয়ার... ...বাকিটুকু পড়ুন

কাঁঠালের আমসত্ত্ব

লিখেছেন বিষাদ সময়, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৫:৩৭

কাঁঠালের কি আমসত্ত্ব হয় ? হয় ভাই এ দেশে সবই হয়। কুটিল বুদ্ধি , বাগ্মিতা আর কিছু জারি জুরি জানলে আপনি সহজেই কাঁঠালের আমসত্ত্ব বানাতে পারবেন।
কাঁঠালের আমসত্ত্ব বানানের জন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। অ্যাকসিডেন্ট আরও বাড়বে

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৫৯



এরকম সুন্দরী বালিকাকে ট্র্যাফিক দায়িত্বে দিলে চালকদের মাথা ঘুরে আরেক গাড়ির সাথে লাগিয়ে দিয়ে পুরো রাস্তাই বন্দ হয়ে যাবে ।
...বাকিটুকু পড়ুন

কেমন হবে জাতীয় পার্টির মহাসমাবেশ ?

লিখেছেন শিশির খান ১৪, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১০:৫৬


জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে বিক্ষুব্দ ছাত্র জনতা আগুন দিয়েছে তাতে বুড়ো গরু গুলোর মন খারাপ।বুড়ো গরু হচ্ছে তারা যারা এখনো গণমাধ্যমে ইনিয়ে বিনিয়ে স্বৈরাচারের পক্ষে কথা বলে ,ছাত্রলীগ নিষিদ্ধ হওয়াতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×