বড় সবুজ পাহাড়ের মত দেখতে ব্যাবিলনের শূন্য উদ্যান পৃথিবীর সপ্তাশ্চর্যের মধ্যে একটি।মজার কথা হল আজ পর্যন্ত এই উদ্যানটির কোন অস্তিত্ব পাওয়া যায় নি।এটি থাকার কিছু পৌরাণিক প্রমাণ পাওয়া যায় মাত্র।
বিভিন্ন রোমান এবং গ্রিক সাহিত্যিকগণ এই বাগান সম্পর্কে প্রচুর লেখালেখি করে গেছেন।তাদের লেখালেখি থেকেই ধুলন্ত উদ্যানটির চমকপ্রদ বিষয়গুলো জানা যায়।
অধিকাংশ ইতিহাসবিদ এবং সাহিত্যিক এক মত হয়েছেন যে ইরাকের ইউফ্রেটিস নদীর তীরে খ্রীষ্টপূর্ব ৬০০ অব্দে তৎকালীন ব্যবিলনের সম্রাট নেবুচাঁদনেজার তার সম্রাজ্ঞীর প্রেরণায় এটি নির্মান করেন।
সম্রাট নেবুচাদনেজার ছিলেন ভীষণ আমুদে স্বভাবের। নিনেভে দখল করার সময়
মিডিয়ান সম্রাট তাকে সহযোগিতা করেছিলেন। মিডিয়ান রাজকন্যার সৌন্দর্যে আকৃষ্ট হয়ে তিনি তাঁকে বিয়ে করেন। বিয়ের পর রাজকন্যা হলেন ব্যাবিলনের সম্রাজ্ঞী। কিন্তু ব্যাবিলনের সম্রাজ্ঞীর আদৌ ভালো লাগত না, কারণ মিডিয়া ছিলো পাহাড় পর্বতের দেশ। আর ব্যাবিলন ছিল সমতল ভুমি। সম্রাজ্ঞী পাহারী দৃশ্যের জন্য ব্যাকুল হয়ে পড়লেন। সম্রাট সম্রাজ্ঞীর মনের কথা বুঝতে পেরে তাঁকে খুশী করতে প্রাসাদের ওপর বিশাল পাহাড় তৈরি করেন। পাহাড়ের সঙ্গে তৈরি হলো মনোরম বাগান। সারা পৃথিবী থেকে চমৎকার সব উদ্ভিদ আর ফুল এনে সাজিয়ে দেয়া হল বিশ্ববিখ্যাত এই বাগান। কারণ তিনি চেয়েছিলেন পৃথিবীর সব আনন্দ আর সুখের সম্রাজ্ঞীর জন্য ভালোবাসার প্রতীক অঙ্কন করতে।
ধুলন্ত এই উদ্যানটি বিশালতায় অবাক হতে হয়।
প্রথমে নির্মাণ করা হয় বিশাল এক ভিত, যার আয়তন ছিল ৮০০ বর্গফুট। ভিতটিকে স্থাপন করা হয় সম্রাটের খাস উপাসনালয়ের সুবিস্তৃত ছাদে। ভিত্তি স্থাপন করার পর মাটি থেকে এর উচ্চতা দাড়িয়েছিল ৮০ ফুট। এই ভিত্তির উপরেই নির্মিত হয়েছিল বিশ্বের সর্ববৃহৎ এবং বিস্ময়কর পুস্পবাগ। ৪০০০ শ্রমিক রাতদিন পরিশ্রম করে তৈরি করেছিল এই বাগান। বাগান পরিচর্যার কাজে নিয়োজিত ছিল ১০৫০ জন মালী। ৫ থেকে ৬ হাজার প্রকার যুলের চারা রোপণ করা হয়েছিল এই ঝুলন্ত বাগানে। ৮০ ফুট উচুতে অবস্থিত বাগানের সুউচ্চ ধাপগুলোতে নদী থেকে মোটা পেচানো নলের সাহায্যে প্রতিদিন প্রায় বিরাশি হাজার গ্যালন পানি উঠানো হত!!
৫১৪ খ্রিস্টাব্দ।পার্শ্ববর্তী পারস্য রাজ্যের সাথে এক ভয়াবহ রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ হয় সম্রাট নেবুচাদনেজারের।আর এই যুদ্ধেই সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস হয়ে যায় আশ্চর্য সুন্দর এক বাগান।ব্যাবিলনের ধূলন্ত উদ্যান।