আমি একটু বাড়াবাড়ি রকমের ঘুম কাতরে।ধর, ঘুমানোর উদ্দেশ্যে বিছানায় পিঠ রেখে একবার শুধু চোখ বুজেছি, হঠাৎ চোখ খুলে দেখব বাইরে ঝলমলে সকাল।মানে এক চোখ বোজাতেই গোটা রজনী পার।আমার ঘুমের আনন্দ হল বিছানায় হাত পা ছড়িয়ে কয়েক মুহূর্ত পিঠটা শুধু রাখা। এর কোন মানে হয়? সুখের ঘুম ঘুমাচ্ছি কিন্ত সেটা যদি কিছুমাত্র অনুভব না করা যায় তাহলে এই সুখের আর সার্থকতা কোথায়?অন্তত আমিতো কোন সার্থকতা দেখি না।
আনন্দের কথা হল।সুখ একদিন সার্থক হল। দৈবক্রমে এক মধ্য নিশিতে হঠাৎ ঘুম ভেঙে গেল আমার। আনন্দিত হওয়ার মতই ঘটনা।রাত্রে যে সত্যি সত্যিই ঘুমিয়ে থাকি তা আজ টের পাওয়া গেল।এখন দ্বিতীয়বার গা ঢেলে চোখ বুজে শরীরের শিথিলতাকে উপভোগ করার পর্ব।
কিন্তু দেখ বিপরীতে আমি রইলাম থম মেরে বসে।ভাবছি কোথায়ও কোন গন্ডগোল হচ্ছে নাতো?এরকম ঘুমতো ভেঙে যায় না কখনো।যতটা আমার মনে পড়ে এরকমটাতো কখনো হয় নি! তা সূর্য মহাশয়-ই কি উঠতে দেরী করছেন নাকি আজ? হতেও পারে।আমি বরাবরই আফিসে যেতে দেরী করি।আর রবিমামাতো মিলিয়ন মিলিয়ন বছর ধরে নিয়ম করে অংশু দিয়ে আসছেন।একদিন না হয় তার অনিয়ম হল।তাতে অন্তত আমি কোন অসন্তোষ বা ক্ষতির কারণ দেখছি না।অতএব রবিমামাকে আমার তরফ থেকে অনায়সে ক্ষমা করে দেওয়া যায়।
রবিমামাকে অতি দক্ষতার সঙ্গেই ক্ষমা করে দিতে দিতে শেষ মুহূর্তে আমার হঠাৎ মনে হল মামা তার নিয়ম পালনে এখনো নিষ্ঠাবান।সে আমার মত না।
ঘটনা হল আমার মধ্য রাতেই ঘুম ভেঙেছে।এবং ঘুম ভাঙ্গার কারণটাও স্পষ্ট হল।মধ্যরাতের এই মুহূর্তে কেউ আমার হাত ধরে আছে।সে শুধু হাতটা ধরে নেই। ভয়াবহ শক্তি দিয়ে চেপেও রেখেছে।
এটা অত্যন্ত অপ্রত্যাশিত এবং ভয় পাওয়ার মতই ঘটনা। আমার জানা মতে সারা ফ্লাটে আজ আমি একা।দ্বিতীয় কোন মানব মানবী নেই।তাহলে এই দ্বিতীয় মানব বা মানবীর উদয়ন কেন?
আর কেনই বা তিনি আমার হাতটা এমন শক্ত করে চেপে ধরে আছেন?
হাতটা নরম। কোন মানবী-ই হবে।মানবী কি প্রেম নিবেদন করতে চায় নাকি ?তা এটা কোন ধরনের প্রেম নিবেদন হে-ব্জ্রমুঠিতে হাত ধরে হাতের হাড় ভেঙে ফেলবে?
এই অবস্থায় স্বাভাবিকভাবেই ভয় পাওয়ার কথা। আমি বুক সটান করে উন্নত মম চিত্তেই বলছি আমি যথাসাধ্যই ভয় পেয়েছিলাম।এবং ভয় পাওয়ার ক্ষেত্রে কোথায়ও ঘাটতি রেখেছিলাম বলেও মনে হয় না।আর্তনাদ করা ধাতে নেই বলে চরম বিপদেও আর আর্তনাদ করা হয়ে উঠল না।(অত্যন্ত দুঃখের বিষয়)
তা করলামটা কি একেবারে শ্বাসরুদ্ধকর কান্ডের মত হেই হুই জাতীয় একপ্রকার কুকুর তাড়া শব্দ করে এক ঝটকায় বিছানায় দাঁড়িয়ে পড়লাম এবং সঙ্গে সঙ্গে চেপে ধরা অংশে আমিও হাত চেপে ধরলাম।
স্বস্তির কথা না অস্বস্থির কথা বুঝতে পারছি না।ওখানে আমি কোন হাতের স্পর্শ পেলাম না। আমি চেপে ধরার আগেই মানবী আমার হাত ছেড়ে দিয়েছে।কিন্তু হাতটা তখনো কেমন বেশ ভারী আর অবশ হয়ে আছে।যেন এখনো কেউ চেপে ধরে আছে।
আমি দ্রুত বিছানা থেকে নেমে পড়লাম।অন্ধকারে হাতড়িয়ে সুইচ অন করলাম কোন রকম।কাউকে দেখব বলেই আশা করে ছিলাম।কিন্তু কেউ নেই।পুরো রুম ফাকা। যদি চোর হয়ে থাকেন তাহলে ইতিমধ্যে তিনি কোথায়ও লুকিয়ে পড়েছেন এবং ভুত হয়ে থাকলে তিনি নিশ্চয় শূন্যেই মিলিয়ে যাবেন।তারা লুকিয়ে থাকুক আর শূন্যে মিলে শান্তিতেই থাকুক আমি আমার হাতের অবস্থা আগে দেখে নিলাম।আর দেখেই মনে হল ব্যাপারটা আসলে কোন ভয়ের না।ব্যপারটা বিস্ময়ের নয়তো খুবই স্বাভাবিক।কারণ, যে শক্ত করে আমার হাতটা চেপে ধরা হয়েছিল তাতে হস্তচাপিনীর হাতের পাচ আঙ্গলের সব কয়টি দাগ বসে গিয়ে লাল হয়ে যাওয়ার কথা (এবং সেই দাগ দেখে ভয়ে আমার দুই ফুট আৎকে উঠার মত অবস্থা হওয়ার কথা) কিন্তু তা হয় নি।হাত একেবারেই স্বাভাবিক।
-------------
তাহলে বিষয়টা কি দাড়াচ্ছে? কেউ কি সত্যিই আমার হাত চেপে ধরে ছিল?রুম ছিল ঘন অন্ধকার । কে হাত ধরেছিল দেখতে পাওয়ার কোন সুযোগ ছিল না।অবশ্য ভুত বলতে যদি সত্যিই কিছু থেকে থাকে তাহলে তিনি অদৃশ্য থেকেই তার শক্তির প্রয়োগ দেখাতে পারবেন।
আবার হাতে ছাপ না পড়া একমাত্র ভুতের ক্ষেত্রেই মানায়।মানুষের ক্ষেত্রে না।অতএব ভুত হওয়ার পাল্লাই ভারী।
কিন্তু আমাদেরতো আর ভুতে বিশ্বাস করলে চলবে না।এর একটা ব্যাখা খুজে বের করতেই হবে।এই নিমিত্তে আমি নিজে একটা ব্যাখা খুজে নিয়েছি।ব্যাখাটা যুতসই হল কিনা তা বিবেচনা করার ভার তোমাদের উপর রইল।
আসলে হয় কি, অনেক সময় কাত হয়ে শুয়ে থাকার সময় হাতটা দেহের নিচে যায় চাপা পড়ে।অনেক্ষন চাপা পড়ার ফলে ঐ হাতটায় রক্ত চলাচল করতে পারে না।রক্ত চলাচলে বাধা পায়।এই বাধা পাওয়ায় হাতের রক্ত চাপ নিয়মমাফিক যায় বেড়ে, তখন হাত হয়ে আসে অবশ,এবং মনে হয় যেন কেউ হাতটা শক্ত করে চেপে ধরে আছে।
আমার সঙ্গে ঠিক এরকম ঘটনাই ঘটেছিল।ভৌতিক কিছু না।