০১
"ওঁদের কর্মকাণ্ড নিয়ে প্রশ্ন আছে" বাংলাদেশ কোচ হাথুরেসিংহের এই উক্তির সাথে শুধু আমরা নই, সারা ক্রিকেট বিশ্ব একমত
ওদের বলতে হাথুরেসিংহ আইসিসির কর্তাব্যক্তি ও মোড়লদের কথাই বুঝিয়েছেন। নিয়মের বেড়াজালে, শৃংখলার কারণে হয়তো আরো স্পষ্ট করে ওনি সব কথা বলেননি। কিন্তু যেটুকু বলেছেন তা কতটা বিতর্কিত হলে আইসিসি নিয়ে, তাদের প্রশাসন নিয়ে একজন কোচ বলতে পারেন তা আমাদের বুঝার বাকি নেই। আমরা বারবার দেখেছি ওদের নগ্ন রুপ। ক্রিকেটকে বিতর্কিত করতে হেন কোন কাজ নাই যে এরা করেনি। নিজেদের কড়গত করতে আইসিসি নামক নখদন্তহীন ক্রিকেট প্রশাসন নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে, বিগ থ্রি ভারত, অস্ট্রেলিয়া ও ইংল্যান্ড। বিগ থ্রি বিল নামক কলঙ্কজনক বিল পাশ করিয়ে স্বার্থসিদ্ধি করার পায়তারা আজ সারা ক্রিকেট বিশ্ব জেনেছে। অর্থের লোভে, ক্ষমতার লোভে এহেন নগ্ন কাজ এদের দ্বারাই সম্ভব। কিন্তু নেহাত মন্দ ভাগ্য বলেই আজ আমাদের ক্রিকেট নিয়ন্ত্রা এরাই। আমরা পদানত এদের লেহনে।
এরা সেই দলের যারা আন্তঃর্জাতিক ক্রিকেট ম্যাচ পাশ কাটিয়ে, এফটিফিকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে, ক্রিকেটের উদীয়মান শক্তিকে ধাবিয়ে রেখে, নিয়ম কানুনের বালাই না রেখে নিজেদের স্বার্থে ক্রিকেটের ভদ্রতা বোধ ও জ্ঞানকে জলাঞ্জলি দিয়েছে। তাই ক্রিকেটকে আজকে ভদ্রলোকের খেলা ভাবতেও কষ্ট হয়। এরা অর্থকরী আইপিএল, বিগব্যাশ, ফ্রেন্ডস টি-টুয়েন্টি লীগ চালিয়ে যাচ্ছে নিজেরা কিন্তু বিপিএল পিসিএল সিপিএলকে রুদ্ধ করার, বন্ধ করার সব কূট চালই চালছে। হাজার কোটি টাকা জুয়ার আসর থেকে সংগ্রহ করে পকেটস্ত করছে, কিন্তু অন্যদের সামান্য অর্থলাভের পথও রুদ্ধ করে দিতে উঠে পড়ে লেগেছে। উদীয়মান ক্রিকেট শক্তিকে বড় ভাই সূলভ আচরণে কোন ঠাসা করে রেখেছে, রাখতে বদ্ধ পরিকর। তাঁদেরকে এফটিফির নির্ধারিত ম্যাচ খেলতে দিচ্ছে না, বড় বড় ম্যাচের সুযোগ কমিয়ে দিচ্ছে। নিজেরা কথা দিয়েও কথা রাখছেনা। যেখানে ক্রিকেট শেষমেশ প্রস্তুতি, অভিজ্ঞতা ও সুযোগের সদ্ব্য ব্যবহারের খেলা সেখানে হল্যান্ড, আয়ারল্যান্ড, স্কটল্যান্ড, আফগানিস্তান, ওমান, আরব আমিরাত, কানাডা, কেনিয়া, জিম্বাবুয়ে এবং কি হাল-আমলের সবচেয়ে ধারাবাহিক দল বাংলাদেশকেও ম্যাচ খেলতে না দিয়ে কোনঠাসা করার পরিকল্পনা চলছে। এবং তা বাস্তবায়িতও হচ্ছে।
০২
বাংলাদেশ ক্রিকেটের নতুন উদীয়মান শক্তি। অনেক দিন ধরেই তাদের অগ্রযাত্রা অব্যাহত হলেও ২০১৫ বিশ্বকাপ ক্রিকেট জন্ম দিয়েছে নতুন বাংলাদেশ। ওয়ানডে ফরম্যাটে বিশ্বকাপের আগে জিম্বাবুয়েকে ধবল ধোলাইয়ের ধারাবাহিকতায় বিশ্বকাপে অনেক শক্তিশালী দুলকে নাকানিচুবানি খাইয়েছে। দূর্ভাগ্যজনকভাবে আম্পায়ারদের ভুল সিদ্ধান্তের বলি হয়ে কোয়ার্টার ফাইনালে বিদায় নেয়। কিন্তু সেই থেকে সবগুলো ওয়ানডে সিরিজে অপরাজিত থাকার রেকর্ড অক্ষুন্ন রেখেছে। পাকিস্তানকে হোয়াইট ওয়াশ, ভারত ও দক্ষিণ আফ্রিকাকে ২-১ এ সিরিজে হারিয়ে নিজেদের সামর্থ্যের প্রমাণ দিয়েছে। এশিয়া কাপের ফাইনালে উঠে তাকে আরও রঙিন করেছে। যদিও তা ২০ ওভারের ম্যাচ ছিল। ক্রিকেটের অন্যতম তিন দল ভারত, পাকিস্তান ও দক্ষিণ আফ্রিকাকে হারানোর পরেও বাংলাদেশকে আর কত পরীক্ষা দিয়ে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের মূল পর্বে খেলতে হয়? বাংলাদেশ দল কি মূল পর্বের আটটি দলের থেকে কোন অংশে কম? কেন তাহলে বাংলাদেশকে বাছাই পদ্ধতি পার হয়ে মূল পর্বে খেলতে হবে? এটি একটি বৈশ্বিক চক্রান্তের ফল। সারাবিশ্বের সবগুলো আন্তর্জাতিক সংগঠন যখন সদস্য সংখ্যা বৃদ্ধিতে বিশ্বাসী, ফুটবল-হকিসহ সবগুলো আন্তর্জাতিক খেলায় যখন বিশ্বকাপের দল বাড়ানোয় চিন্তায় মশগুল তখন আইসিসি নামক দুষ্টগ্রহ বিশ্বকাপে দল কমিয়ে আনা নীতিই মশগুল। এটা কেন? আইপিএল, বিগ ব্যাশ টুর্নামেন্ট চালিয়ে কয়েক পয়সা হাতিয়ে নেওয়ার জন্য? কেন এই নগ্নতা?
০৩
অনেক দিন ধরেই বাংলাদেশ ভালো খেলছে। ভালো খেলছে বললে ভুল হবে, অত্যাধিক ভালো খেলছে। চিরচেনা সকল সমালোচকদের মুখ বন্ধ করে দিয়ে সামর্থে্যর প্রমাণ দিয়েছে। বলতে বাধ্য করেছে বাংলাদেশ দল এখন আর ছোট দল নয়, এখন আর তাদেরকে বলে কয়ে হারানো যাবে না, এখন আর আন্ডারডগের তকমায় ফেলা যাবে না, বলতে হবে তাদের দিনে তারাই সেরা। এই যে ভালো দল হয়ে উঠা তা একদিনে হয় নি। অনেক দিনের পরিশ্রমের সফলতা এই প্রাপ্তি। কিন্তু গত কিছু দিনে বাংলাদেশ দলকে ঘিরে অনেকগুলো নেতিবাচক খবর প্রচারিত হয়েছে। যার সর্বশেষটি হলো তাসকিন ও আরাফাত সানির বোলিং একশনকে অবৈধ সন্দেহে অভিযুক্ত করা। হ্যাঁ, যে কারো বোলিংকে চাকিংয়ের অভিযোগে অভিযুক্ত করা যেতে পারে। মুরালিধরন, সুনীল নারাইন, হাফিজ, অজন্তা মেন্ডিস, সাঈদ আজমলকে করা হয়েছে, আমাদের রাজ্জাক, সোহাগ গাজী এবং আল-আমিনকেও করা হয়েছে। কিন্তু কাউকেই এভাবে বৈশ্বিক কোন টুর্নামেন্ট চলাকালীন করা হয়েছে বলে আমার মনে পড়ছে না। ধরে নিলাম আগে করা হয়েছে কাউকে, আর এটা স্বাভাবিক বিষয়। কিন্তু কথা হলো এতদিন এই দুইটা প্লেয়ার একই সংস্থার হয়ে একই আম্পায়ারদের ম্যাচ পরিচালনায় খেলে যাওয়ার পর হঠাৎ কেন আজকে পূর্বের কোন প্রকার সন্দেহ-সতর্কতা ছাড়া অবৈধ বোলিংয়ের দায়ে অভিযুক্ত করা হলো? কাউকে বাড়তি সুবিধা দেওয়ার জন্য নয়তো? বাংলাদেশ দল কি এখন কোন কোন দলের জন্য পারফরমেন্সের দিক থেকে মাথা ব্যাথার কারণ সেই কারণে?
হ্যাঁ, আমাদের সেই সন্দেহ হয় যখন ভারতের রবিচন্দন অশ্বিন মনে প্রাণে বাংলাদেশ দলের পরাজয় চান। যখন তিনি ক্রিকেটের তুলনামূলক নবীশ দল ওমানের পক্ষ হয়ে ছড়া কাটেন বাংলাদেশের অমঙ্গল চেয়ে তখন আমাদের বুঝতে বাকি থাকে না তাদের ভয়টা কোথায়? কেনইবা সরাসরি তারা মুখোমুখি হতে চায় না। কেনইবা বাংলাদেশ সফরে আসার অনীহা, কিংবা নিজ দেশে খেলতে ভয় সেটা সদ্য ওয়ানডে সিরিজে প্রমাণিত হয়েছে। টি-টোয়েন্টিতে সর্বদেশ যা হলো তা বাংলাদেশের দূর্ভাগ্য- আর ভারতের জন্য ভালো দিন ছিল। নাহলে এশিয়া কাপটা বাংলাদেশ দলের হাতেই বেশী শোভা বাড়াতো। হারের ভয় তাহলে তাদের মজ্জাগত হয়েছে। ভারতের ক্ষেত্রে যতটা প্রকট তারচেয়ে বেশি নিউজিল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়ার জন্য। অস্ট্রেলিয়া দেশের মাটিতে বাংলাদেশের ফর্ম দেখেতো সফরই বাতিল করেছে নিরাপত্তার দোহায় দিয়ে। ছোটদের বিশ্বকাপে নিজেদের দল পর্যন্ত পাঠায়নি যেখানে বাকি বিশ্বের সবগুলো দল নিরাপদে সন্তুষ্টির সাথে খেলে গেল। তাহলে কেন নিরাপত্তার নামে বাংলাদেশকে নিয়ে তাদের সেই নেগেটিভ ব্র্যান্ডিং? ডাল মে কুচ কালা হে।
০৪
বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের গ্রাফ যখন উর্ধ্বমুখী হঠাৎ করে বাংলাদেশ দলকে ঘিরে নানান বিতর্ক ছড়ানো হচ্ছে। কেন করা হচ্ছে এই সব? কেন বাংলাদেশ দলকে নিয়ে এখন এত বেশী নেতিবাচক খবর হচ্ছে? এটা কি বাংলাদেশের ধারাবাহিকতা নষ্ট করতে? এটি কি তাদের অগ্রযাত্রা নষ্ট করতে? এটি কি দলের মনোবলে নাড়া দিতে? হয়তো তাই। নিজেরা ধোয়া তুলসি পাতা না হয়ে অন্যের ব্যাপারে তাদের নাক গলানো পুরনো স্বভাব। তাদের অনেক বোলার নিয়েই কম বেশী সন্দেহের কথা শুনা যায়। কই, কাউকে অভিযুক্ত করে ল্যাবে পাঠানোর কোন কথা তো কখনো শুনিনি। হরভজন সিংকে যখন আজমল অভিযুক্ত করে কথা বলে, তখন মামলার ভয় দেখানো হয়। কিন্তু আল-আমিনকে অভিযুক্ত করেও পার পেয়ে যায় যেখানে আল-আমিনের একশানে নূন্যতমও সমস্যা নেই। হায়রে সেলুকাশ, আর কত দেখবো এমন নোংরামি?
বাংলাদেশ দল এতসব ঝড়ের মাঝেও চূড়ান্ত পর্বে দাপটের সাথে উঠেছে। এটি খুব আনন্দের খবর, ভালো খবর। কিন্তু এতসব ভালোর মাঝে হঠাৎ করে কুচক্রী মহলের সজাগ হয়ে যাওয়া আমাদেরকে বাংলাদেশকে নিয়ে, বাংলাদেশের ক্রিকেটকে নিয়ে ভাবিত করে। এই সজাগ হওয়া কি বাংলাদেশের ক্রিকেটীয় অগ্রযাত্রা থামানোর পায়চারী নয়? হাথুরেসিংহের উক্তিটি কি তাই প্রমাণ করে না?
সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই মার্চ, ২০১৬ রাত ২:৩৪