আমরা যে অর্থে শিক্ষিত (প্রথম পর্ব)
০১
একবার এক ধূর্ত শিয়াল ক্ষুধার্ত অবস্থায় খুব দিশেহারা। কোথায় কি খাবে, কোথায় খাবার পাবে, কেমনে খাবার জোগাবে তা কিছুই মাথায় ঢুকছিল না। বিষয়টা এমন, ক্ষুধা যখন জঠরে থাকে তখন স্বাভাবিক বোধ-বু্দ্ধি লোপ পাওয়াটাই স্বাভাবিক। শিয়ালের ক্ষেত্রেও তাই, অত্যাধিক বুদ্ধিমান এবং ধূর্ত হলেও মাত্রাতিরিক্ত ক্ষুধার জ্বালায় তাঁর বোধ-বুদ্ধি লোপ পেয়েছে। এমনিতে শিয়াল প্রাণী জগতে তার বুদ্ধির জন্য বিখ্যাত হলেও এই শিয়াল রাজের ক্ষেত্রে ব্যত্যয় হলো। বনের বড় রাস্তাটা যখন সে অতিক্রম করছিল তখন বড় এক গাছের মগডালে একটা মোটা-তাজা বনমোরগকে দেখতে পেল। তার চোখের সামনে মোরগটার থলথলে মাংসল দেহটা ভেসে আসলো। আহ! সুপুষ্ট রোস্ট খানা মুখে জল এনে দিলো। খিদের ছটফটানি ও খাবারের লোলুপতায় তার মুখে লালা এসে গেল। শিয়ালটা বনমোরগটাকে প্রলুব্ধ করতে চাইলো তাঁর খাবার বানাতে।
তাই মিষ্টি করে ডেকে ভুলাতে চাইলো বনমোরগটাকে। সে ডাক দিলো ওহে বুদ্ধিমান পক্ষীকূলমনি, তুমি কি একটু নিচে আসবে? বনমোরগটি শিয়ালের সম্পর্কে জানতো। তাই হঠাৎ করে তাঁর এই মধুর সম্ভাষণে মুগ্ধ হলো। নিচে যখন নেমে আসবে যখন তখন হঠাৎ তার মধ্যে সন্দেহ জাগলো। সন্দেহ বাতিক ভালো না, আবার থেকে ভালো কিছু হতেই পারে না। তাই একবার পরীক্ষা করে নিতে চাইলো। বললো, ‘কিহে পন্ডিত মশায়, হঠাৎ করে এই অধমের কেন ডাক পড়লো? আর কেনইবা এতো মধুর করে পক্ষীকূলমনি বলে ডাকা?
শিয়াল তাকে নানান কথায় ভুলাতে চাইলো। তার রুপের, সৌন্দর্যের, চেহারা গড়ন ও চাল-চলন নিয়ে অতিশয় প্রশংসাবাচক সম্ভাষণে তুষ্ট করতে চাইলো। তারপর বললো আমি তোমার গুণমুগ্ধ। তুমি এই যে বনের মাঝে ভোর বেলায় সবাইকে ডেকে সকালের কথা মনে করিয়ে দাও, ক্ষুধার জ্বালা মিটাতে খাদ্য অন্বেষণের কথা মনে করিয়ে দাও, এতে বনের সকল প্রাণীকূল উপকৃত হয়। তাই এমন একজন উপকারী বন্ধুর আমার খুব প্রয়োজন। তুমি যদি নিচে আস তবে আমি তোমার সাথে বন্ধুত্ব করতে চাই। বনমোরগ শিয়ালের কথায় মুগ্ধ চমৎকৃত হলেও শিয়ালকে বিশ্বাস করতে চাইলো না। ক্ষুধা এবং খাবার অন্বেষণের কথা শুনে পূর্বের সন্দেহ আরো দানা বাঁধলো। আর যাই হোক, শিয়ালের ভোজন হচ্ছে মাংস। আর সে নিজেই তো এক সু-স্বাদু মাংসের উৎস। তাই সে বুদ্ধি করে শিয়ালকে যাচাই করতে চাইলো মতলব আসলে কি?
বনমোরগ নিচে নামার আগে নিরাপদে সটকে পড়ার একটা জায়গা দেখে নিলো। রাস্তার ধারে গাছের পাশেই ছিল একটা বহমান নদী। তাতে একটা পুরনো গাছ পড়ে সাকোমতোন এপাড় ওপাড় বরাবর ছিল। এটি দিয়ে পূর্বে পার হওয়ার মতো ব্যবস্থা থাকলেও বর্তমানে গুণে ধরায় অত্যন্ত নড়বড়ে ও ভঙ্গুর ছিল। তাই এটি একে বারে পরিত্যক্তই ছিল। শিয়াল যেখানটায় দাড়িয়ে ছিল তার আর বনমোরগের ঠিক মাঝখানে ছিল এই সাকোটি। বনমোরগ শিয়ালের কাছে নেমে গেলেও বিপদ বুঝে এখানটা দিয়ে সহজে পালানোর রাস্তাটা দেখে নিয়ে সেই মতো প্রস্তুতি নিলো।
তারপর আস্তে করে শিয়ালে গতিবিধি লক্ষ্য করে এগিয়ে গেল। শিয়াল কার্যসিদ্ধি হয়েছে ভেবে ধারালো নখর থাবা প্রস্তুত করে ঝাপিয়ে পড়লো বনমোরগের উপর। সতর্ক মোরগ বুঝতে পেরে ত্বরিত ঐ রাস্তা ধরে নদী পার হয়ে গেল। বিস্মিত ক্ষুব্ধ শিয়াল পড়িমরি করে মোরগকে ধরতে নিয়ে ঐ সাকোতে যখন উঠলো গুণেপোকায় খাওয়া সাঁকোটি শিয়াল সমেত একদম বহমান স্রোতস্বিনি নদীর বুকে পতিত হলো। এবং শীঘ্রই নদীর অতল গহ্বরে হারিয়ে গেল। ততক্ষণে বনমোরগটি নিরাপদে ঐপাড়ে গিয়ে হাফ ছেড়ে বাঁচলো। বুদ্ধিমান শিয়ালের মৃত্যু এবং সতর্ক, সজাগ দৃষ্টিমান বনমোরগের নতুন জীবন লাভ হলো। এর থেকে মোরগ সদা সতর্ক ও সম্ভাব্য বিকল্প সবকিছু চিন্তুা করে কাজ করার শিক্ষা নিলো।
এই গল্পের কোন ভূমিকায় আমরা? শিয়াল নাকি বনমোরগ?
০২
উপরের গল্পটি অলীক এবং আমার ফাঁদা একটি কল্পনা মাত্র। কিন্তু বাস্তবিক অর্থেই কি আমরা ঐ শিয়ালের মতো নই? আমরা বুদ্ধিমান প্রাণী, সৃষ্টির সেরা জীব আশরাফুল মাখলুকাত, আমরা এই পৃথিবীর রাজেশ্বর অধিপতি, আমরা এই সভ্যতার বিনির্মাণকারী ইত্যাদি ইত্যাদি। এসব ছাইপাশ কথা দিয়ে আর কতদিন?
আমার প্রশ্ন স্পষ্ট, আর কতদিন এইসব ধান্ধাবাজি বাজে কথা দিয়ে নিজেদের মূর্খতা অজ্ঞতা অলসতা ঢাকবো? একবার কি চিন্তা করেছেন সত্যিই কি আমাদের মধ্যে এই সব গুণে গুণান্বিত হওয়ার গুণগুলো আছে? একবারও কি বনমোরগের মতো নিজেদের বুদ্ধি বিবেককে কাজে লাগিয়েছেন? ধ্যাত্তেরি, আমরা তো নিজেদের বুদ্ধিমান শিয়াল ভাবি। এই ভেবে ভেবে নিজেদের চোখের সামনে সব সময় একটা আস্ত স্বাস্থ্যবান মাংশল মোরগের রান কল্পনা করি। আর এই মোরগের রানটি যেন আমার খাওয়ার জন্যই জন্মেছে ভেবে যথেচ্ছারে আমার আহার্য ও ভোগ্য বলে ধরে নিই। ধরবো আর খাবো, পরিশ্রম করার কোন মানে নাই। নিজের চিন্তা করার কোন দরকার নাই। শিয়ালের মতো ভাবার দরকার নাই আমিও যেমন বুদ্ধিমান তেমনি মোরগের ঘিলুতেও অল্প বিস্তর হলেও বুদ্ধি আছে। আমার যেমন খাওয়া দরকার তেমনি তারও বেঁচে থাকার ইচ্ছাটাও রয়েছে। আমি যেমন বুদ্ধি করে খাওয়ার পরিকল্পনা করেছি তেমনি সেও ভেস্তে দেওয়ার পরিকল্পনা করতে পারে। আখেরে হলো কি, শিকার করতে গিয়ে নিজেই শিকার।
জি জনাব, আমাদেরও তেমন অবস্থা। শিক্ষাকে আমরা মোরগ খাওয়ার মতো মনে করে গ্রহণ করি, করছি, করে যাচ্ছি। ভালো বুদ্ধি, কার্যকর পদ্ধতি, রসদের যোগান, ক্ষুধার নিবৃত্তি। ভালো করে পড়, বেশি করে মুখস্ত কর, সিলেবাস-পাঠক্রম গিলে খাও, যা পার তাই দিয়ে পরীক্ষা নামক মহার্ঘ্য পদ্ধতিতে বেশি বেশি নাম্বার পেয়ে আস্ত একটা ভালো চাকরি খুঁজে নাও। ব্যাস হয়ে গেছে। প্লেটে প্লেটে ছড়ানো সুখাদ্য পুষ্টিবান সুপুষ্ট মোরগের রোস্ট, খাসির রেজালা, গরুর ভূনা, কোরমা-কালিয়া। চাকরি ধাবাও, রোস্টের বাগান বানাও। যা ইচ্ছা যখন তখন খাও। সেক্ষেত্রে তোমার ভালো করে পরীক্ষা নামক শৃংখল দিয়ে ভালো মার্কস পেয়ে, চাকরি নামক সোনার হরিণের জন্য এক গাঁধা মুখস্ত রসদের যোগান নিয়ে কোন প্রকার ঢাল তলোয়ার ছাড়াই নেমে পড়তে হবে জীবন যুদ্ধে। সেজন্য তোমাকে তুলে দেওয়া হয়েছে এক গাঁদা বই, আর একটি শিক্ষা ব্যবস্থা ও পদ্ধতি। টাকা দাও, সনদ নাও। নাকানিচুবানি খেয়ে জীবন হারাও। মেধার কোন মূল্য নাই, মেধাকে কাজে লাগানোর উপায় নাই, মেধাকে শাণিত করার অস্ত্র নাই কিন্তু মেরে ফেলার সব ব্যবস্থা রয়েছে।
শিক্ষাকে চাকরি লাভের যোগ্যতা যেদিন করা হয়েছে বোধকরি সেই দিনই শিক্ষা নামক বস্তুটির মৃত্যু হয়েছে। এখন চাকরিই সব? জ্ঞানার্জন হচ্ছে সিলেবাস নামক পাঠ্যক্রমের রেসেপি? দরকার নেই বুদ্ধি বিবেচনা, কিভাবে এটা নিতে হবে, কেন নিবো, কতটা নেওয়া উচিৎ, কি করে এটা আমার কাজে লাগতে পারে, আদৌ কি এটি ভোগ্য কিনা, হলে কেমন করে ভোগ করতে হবে, কিভাবে পূর্ণ স্বাদ পাবো, কি করে পুষ্টি লাভ করতে পারি কিংবা আদৌ এতে পুষ্টি কতটা আছে আর প্রচলিত পদ্ধতিতে সত্যিই পুষ্টি লাভ করতে পারা যায় কিনা, না গেলে পদ্ধতিটাই বা কি? হজম হবে কিনা, না হলে কেমনে করতে হবে তার কোন উত্তর নাই।
এমন হাজারটা প্রশ্ন করা যেতে পারে। করা যেতে পারে শিক্ষা লাভ আদৌ কি চাকরিলাভের জন্য গ্রহণ করা উচিৎ কিংবা অনুচিত সেই প্রশ্নটা। সন্মানিত বুদ্ধিমান প্রাণী দাবিদার আশরাফুল মাখলুকাত, ইতিহাসের দিকে দৃষ্টিপাত কেন করেন না? কেন বুঝতে চেষ্টা করেন না শিক্ষা বিষয়টা কি আর চাকরিলাভের রেসিপি জিনিসটা কি? ভালো মার্কস পাওয়া মানে শিক্ষা লাভ না। ভালো রেজাল্ট করেছেন মানে আপনি শিক্ষিত হচ্ছেন না। যতই নিজেকে শিয়াল ভাবেন, আপনাকে ধোকা দেওয়ার মতো হাজারটা বন মোরগ রয়েছে।
০৩
জীব বিজ্ঞানে ঘাস ফড়িং নিয়ে পড়তে পড়তে আমার ছোট ভাই আমাকে বলছিল, ঘাস ফড়িং যদি জানতো আমাকে নিয়ে এত পড়াশোনা হবে, আমাকে নিয়ে এইভাবে বইয়ে ব্যবচ্ছেদ করা হবে, প্রাকটিক্যাল পরীক্ষার নামে নাড়ি চিরে খাতায় নাড়ি বৃত্তান্ত লিপিবদ্ধ করা হবে তবে ঘাস ফড়িং কখনো জন্ম লাভই করতো না। করতো না হয়তো, কিন্তু ঘাস ফড়িংয়ের জন্ম তার হাতে না। এটা প্রাকৃতিক বিষয়। কিন্তু এই ঘাস ফড়িংকে প্রকৃতি হতে বইয়ের পাতায় আনার কারণ কি? কারণ অবশ্য একটা আছে। প্রাকৃতিক এই বিষয়টা কেমন করে ঘটেছে, কেন ঘটেছে, কিভাবে ঘটেছে, এর থেকে আমরা কি শিখতে পারি, প্রাকৃতিক কোন শৃংখলার ব্যাখ্যা পেতে পারি কিনা, প্রাকৃতিক নিয়ম সম্ধন্ধে ঋদ্ধ হতে পারি কিনা, বাস্তবিক অর্থেই আমাদের জীবনে কিছু শিক্ষা নিতে পারি কিনা তাও কিন্তু ভাবতে হবে। এই রকম নানান প্রশ্ন আসতে পারে, উত্তরও পেতে পারি। ঘাস ফড়িং থেকেও শিক্ষা নিয়ে নিজেদের জীবনে কাজে লাগাতে পারি। সেই শিক্ষা নেওয়ার জন্যই ঘাস ফড়িংয়ের জীবন বৃত্তান্ত, জীবন ধারণ, শারিরিক কার্য বৃত্তান্ত ও নানাবিধ পাঠ্য বইয়ে স্থান দেওয়া হয়নি কি? হয়েছে, তবে কেন এতো ঘাস ফড়িং ভীতি? আসলেই কি আমরা যারা শিক্ষার্থী কিংবা যারা শিক্ষক, সে সম্পর্কে নূন্যতম চিন্তা করেছি? নাকি মুখস্ত কর, পাশ কর, ডিগ্রি অর্জন কর, চাকরি বাগাও আর মাস্তিতে থাকো এবং সেই বোধেই ঘাস ফড়িংকে নিরন্তর যন্ত্রণায় ফেলে ব্যবচ্ছেদ করি বইয়ের পাতায়।
০৪
শিক্ষা কি? শিক্ষা কেন দরকার? প্রচলিত পদ্ধতি শিক্ষার উপযোগী কিনা? শিক্ষা কিভাবে গ্রহণ করতে হয়, কিভাবে কাজে লাগাতে হয়, কি এর মহত্ব সে সম্পর্কে কথা বলা আমার ধৃষ্টতা। অল্প জ্ঞানে বড় কথা বলা শোভা পায় না। তবে আমার বলাটা আমার স্বাধীনতা। মতের মিল হতে পারে আবার নাও হতে পারে। এই যে বর্তমান শিক্ষা ব্যবস্থাকে আমি প্রশ্নের মুখোমুখি দাঁড় করাতে চাচ্ছি একে কেউ কেউ আমার বাড়াবাড়ি, বাতুলতা, ভন্ডামি, মূর্খতা কিংবা ধৃষ্টতাও বলতে পারেন। কিন্তু আমাকে নিবৃত্ত করতে পারেন না। আপনি যে পদ্ধতির ধারক বাহক, আমিও সেই সিস্টেমের বন্দী। দুই অণু হাইড্রোজেন আর এক অণু অক্সিজেন মিলে পানি সৃষ্টি হয়। সে আমার আপনার জানার বিষয় কেন? পানিতো প্রকৃতিতে অবাধ পাওয়া যায়। সাগরে, নদীতে, পুকুরে, হ্রদে, ডোবায়, জলাশয়ে, কুয়ায়, ভূ-গর্ভে। তাহলে কেন এই প্রাকৃতিক সূত্রের দরকার? কারণ হচ্ছে এই সূত্রের যখন ব্যত্যয় হবে, এতে যখন অন্য উপাদান উপস্থিত হবে তখন আমাদের বুঝতে হবে ডাল মে কুচ কালাহে। পানি যে আর পানি নাই তা বুঝে সেই মতো ব্যবস্থা নিতে হবে। যেমন সালফার ডাই অক্সাইড যখন পানিতে মিশ্র হবে তখন সালফিউরিক এসিড উৎপন্ন হবে। বুঝেন ঠেলা, কই পানি আর কই সালফিউরিক এসিড। ব্যবহার করে দেইখেন বাঁশ কারে কয়।
আমার যুক্তি হচ্ছে যা পড়বো, যা শিখবো তা জেনে বুঝে শিখতে হবে। কেউ যদি সালফিউরিক এসিড সম্পর্কে ধারণা রাখে তাহলে জানবে তাতে পানি ছিল, কিন্তু এখন নেই। আর কেউ সালফার ডাই অক্সাইড পানির সাথে মিশ্রিত হবার পর দুইবার ভাববে কি উৎপন্ন হয়েছে জেনে। যা শিখবো তা জেনে শিখবো। যা জানবো, তা বুঝে ব্যবহার করবো। বাস্তুবিক ক্ষেত্রে প্রায়োগিক না হলে ধরা খেতে হবে।বাস্তবিক ক্ষেত্রে প্রায়োগিক না হলে শেখা অপূর্ণ থেকে যাবে। এই যে অপূর্ণতা সেটা আমাদের শিক্ষা লাভের অপূর্ণতা। পদ্ধতির কিছুটা, প্রয়োগের কিছুটা, গ্রহণ করার কিছুটা। বেশিটা হলো না বুঝে নিতে যাওয়ার, না বুঝে দিয়ে দেওয়ার রীতিটা। আমাদের বর্তমান শিক্ষা ব্যবস্থায় যা চলছে আর কি।
যেখানে শিক্ষা লাভ কে ডিগ্রি লাভের পদ্ধতি জ্ঞান করা হচ্ছে, যেখানে ডিগ্রি লাভটাকে ব্যবসায়িক বিনিয়োগের মতো চাকরি লাভ, জীবন ধারণের বাহন করা হচ্ছে সেখানে এমনটাই হবে। যার ফল হচ্ছে আধুনিক বিজ্ঞান এখনো এতদূর এগিয়ে যাওয়ার পরেও আমরা ঝাড় ফোক, তুকতাক, জাদু-মন্ত্র, অলীক সাপের বিষ নামানো ওঝার কারিশমায় চোখ বুঝে বশ্যতা স্বীকার করছি। আর মারহাবা মারহাবা বলে আমার শিক্ষার, আমার জ্ঞানের জৌলুস দেখাচ্ছি। আরে ভাই শিক্ষা জিনিসটা চাকরি লাভের জন্য না, মোরগের সুপুষ্ট রোস্টের জন্য না, জ্ঞানের রৌশনাই দেখিয়ে- সাইনবোর্ড টানিয়ে ভিক্ষাবৃত্তি না। শিক্ষা হচ্ছে জেনে বুঝে ব্যবহারিক ভাবে জীবনে প্রয়োগ করা। আপনি যখন শিক্ষিত দাবি করবেন, একটা ডিগ্রি নিবেন- তখন আমি ধরে নিবো আপনি সাপুড়ের বিষ নামানোকে ভন্ডামি ছাড়া অন্য কিছু ধরেন না। সাপে কামড়ের একমাত্র ঔষধ মেডিসিন ছাড়া অন্য কোন কিছু ভাবেন না। কিন্তু আশ্চর্য হতে হয় আমাদের সেই পুরনো বিশ্বাসগুলোতে আকড়ে পড়ে থাকতে দেখে। এমন হাজারটা কুসংকার গোড়ামিতা নিয়ে এখনো আমরা আমাদেরকে শিক্ষিত মনে করি। ভাবি ডিগ্রি অর্জনই আমাদের শিক্ষা লাভের সনদ। তাই ভাবার দরকার নেই, বুঝার দরকার নেই, জানার দরকার নেই, প্রয়োগের বিষয় নেই, মিলিয়ে নেবার কারণ নেই।
গুরুনং শিক্ষায়ং নমঃ, পৃষ্ঠায়ং শিক্ষায়ং নমঃ। উদরস্তয়ং গিলায়ং নমঃ, বশ্যয়ং মোক্ষজ্ঞানং নমঃ। এই হচ্ছে আমাদের বেদ বাক্য!!!
সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই মার্চ, ২০১৬ রাত ১২:৩১