মোবারক অনেক ভেবে চিন্তে সিদ্ধান্ত নিল, ছেলে মেয়েকে শহর মুখি করতে হবে।ছেলে-মেয়ে শহরমুখী হলে বাস্তব সমাজের মুখোমুখি হবে,তখন ওরাই ওদের পথ চিনে নিতে পারবে। আর এ ক্ষেত্রে যতটুকু সাহায্য সহযোগীতা দরকার, মোবারক তা করবে।মোবারক তার পরিকল্পিত চিন্তাধারা বাস্তবে রুপ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিল।মোবারকের এই ভাবনার উৎস, শহরের কেন্দ্রস্থলে ছয় কাঠা জমি। দুই ভাইয়ের সংসার অলাদা হওয়ার পর এলাকার চেয়ারম্যানের কাছ থেকে জমিটুকু তার কেনা।মোবারক এ ব্যাপারে স্বেচ্ছায় হেদায়েতের সাথে আলোচনা করল।মোবারক বলল, আমি শহরে ঘর তুলে থাকার ব্যাবস্থা করে দিচ্ছি, তোমরা সেখানে থাকবে,বাড়ি তৈরি হলে তোমার চলার ব্যাবস্থা করে দিব।হেদায়েত ঘাড় নেড়ে বলল, জ্বী আব্বা।রাতে হেদায়েত মাছুমাকে বিষয়টা জানাল।মাসুমা খুউব খুশি, শ্বাশুড়ির সাথে তার সম্পর্ক খুবই খারাপ। বেশ কদিন ধরে হেদায়েতের বাচ্চাটার জ্বর, ডাক্তার নিয়মিত দেখে তবু জ্বর আসে আর যায়।বাচ্চার শরীর শুকিয়ে শ্রী হীন, হেদায়েতের খুউব কষ্ট হয়।হেদায়েত স্ত্রীকে বললো বাবুকে ভাল ডাক্তার দেখানো দরকার,আব্বাকে বলে কালকেই বড় ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাব।পরদিন হেদায়েতের শিশু বাচ্চাকে ডাক্তার দেখানো হল।হেদায়েত ঔষধ পত্র নিয়ে বাড়ি ফিরল।ঠিকমত সেবা যত্ন চলতে থাকল।কিন্তু রোগের কোন প্রতিকার হলনা।ঘরের মধ্যে বাচ্চা শিশুর এই রুগ্ন শরীর হেদায়েত কে ভীষন পীড়া দেয়।এর কিছু দিন পর হটাৎ করে হেদায়েতের শিশু বাচ্চাটা মারা যায়।বাড়িতে শোকের মাতম, পুত্র শোকে মাসুমার আহাজারী,পাড়া প্রতিবেশি তাদের সান্তনা দিচ্ছে, হেদায়েত জনতার ভিড় থেকে একটু দুরে, কৃষি কাজের সামগ্রী রাখার ঘরের পেছনে লুকিয়ে নিথরে কাঁদতে লাগল, পৃথিবী তার কাছে মরু উদ্যান। হেদায়েতের মনে হতে লাগল, তার পুত্রের অকাল মৃত্যুর জন্য সেই দায়ী।যথাযথ উপার্জনের ব্যাবস্থা আর সঠিক চিকিৎসা করালে তার পুত্রের এই অকাল মৃত্যু হতনা।চোখের সামনে কঙ্কাল সার দেহ নিয়ে পুত্রের করুন মৃত্যু হেদায়েতকে পুড়িয়ে ছাই করতে লাগল।আনোয়ারা নাতির শোকে কান্নার মাতম তুলেছে, সে কান্নার ধরন, প্রকৃতি তার মত। মোবারক বাড়ির বাইরে একটা গাছের নিছে গম্ভীর হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।লাশ দাফন সম্পন্ন হল, দিন গড়িয়ে রাত হল, বিভিষীকা নিথর কালো অন্ধকারে হেদায়েতের ঘুমহীন চোখে অশ্রু খেলা করে। রাতের নিস্তব্ধতা যেন হেদায়েতকে গ্রাস করতে চায়। হেদায়েতের হৃদয় যেন চিৎকার দিয়ে বলছে;
আমাকে করো না গ্রাস
আমি মুক্তির স্বাধ থেকে চীর বঞ্চিত আছে শুধু দ্বীর্ঘশ্বাস
আমি আজন্ম দুঃখী
সুখ খুঁজি মিছি
বাঁধিছিনু ভবে বাসা
মহাপ্রলয়ঙ্কর নিষ্ঠুর বেগে ধাওয়ায়ে এসে ভষ্ম করিছে ভাষা
আমি শোষিত, আমি নিষ্পেষিত,কলঙ্কিত আমার হৃদয়
তপ্ত দহনে ঝলসানো আমি, ছুটি মিথ্যে ভবের নেশায়
আকড়ে ধরিনু যা, ভাঙল সবই তা
আশা হারিয়ে নিরাশার মাঝে ভাষে আমার গা
আমি রুষ্ঠ চিত্তে চিতার দহে হচ্ছি নিয়ত ভষ্ম
সমস্থ আশা নিরাশা, দেখি হেথায় রয়েছে কষ্ট
তকদীর হেথা নিষ্ঠুর তথা পোড়ায় চিতার দহে
অবিনাশি দুঃখ বেদনার বীণায় বাজে রহে রহে।
সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা জুন, ২০১৬ দুপুর ২:৩৭