সময়ের সাথে সংসারের চাকা গড়িয়ে চলে, মাসুমাকে দিয়ে আনোয়ারা তার ফরমায়েশ খাটিয়ে কতৃত্ব হাসিল করে।বাড়ির বউকে কষ্ট দিয়ে জব্দ করে, তার উপর কতৃত্ব পরায়নাতা করে নিজেকে ফিরে দেখা মানেই একটা বড় রকমের আত্মতৃপ্তি।নিজের আস্ফোলনের প্রতিফলন ঘটিয়ে তা উপলব্ধি করার মজাটাই আলাদা।কিন্তু মাসুমা যে সরল প্রকৃতির মেয়ে তা নয়,শ্বাশুড়ির কৌশল সে সহজেই উপলব্ধি করতে পারে।সংসারের কাজে শ্বাশুড়িকে ফাঁকি দিয়ে যতটুকু সম্ভব ততটুকুই করে।শ্বাশুড়ির চলাফেরা গতি প্রকৃতির সাথে সে তাল মেলায়।এক বনে দুই শিয়ালের চালাকিপনা কোন দিনই দ্বীর্ঘায়ীত হয়না।আনোয়ারা মাসুমার ভাব ভঙ্গি বুঝতে পেরে আরো কঠোর হতে গেলেই তখন ছোট খাট মন মালিন্য ও সাহসের সাথে শ্বাশুড়ির মুখের উপর জবাব দিয়ে দেয়।এ নিয়ে অনোয়ারার নাকে কান্না চলতে থাকে।ঘটনা সাঁজিয়ে গুছিয়ে মোবারকের কাছে পেশ করতে থাকে।মোবারক স্ত্রীর ভালোবাসার প্রতি দুর্বল।স্ত্রীর অপমান মোবারক সইতে পারে না।মোবারক স্ত্রীর মান ভাঙ্গাইতে স্ত্রীর পক্ষে সাফাই গায়।মন থেকে মাসুমার প্রতি এমনিতেই সমর্থন নেই।কারণ এই মেয়েই ভুলিয়ে ভালিয়ে তার ছেলেকে সর্বনাশের ফাঁদে বন্দি করেছে।আবার সব কিছু ভুলে মোবারকের হৃদয় যখন স্নেহ পরায়ন হয়ে ওঠে, তখন পুত্র বধুকে আপন করার বাসনায় সে উদার হয়। এভাবে সময় গড়াই, সময়ের ব্যাবধানে মাসুমার গর্ভে বাচ্চা এল,বাচ্চা ভুমিষ্ট হল, সংসারে সমস্থ কাজের মধ্যে ছেলেকে পরিচর্যা করা, বেকার স্বামীর স্ত্রী হওয়ার কুটিক্তি, প্রেম করে বিয়ে করার অপবাদ, সব মিলিয়ে পরিবেশটা বিষাক্ত ছিল।হেদায়েতের কষ্ট হয়, স্ত্রী পুত্রের চাহিদা মেটাতে সে অক্ষম।হেদায়েত শান্ত স্বভাবের স্ত্রীর মুখে সে সব ঘটনায় শুনতে পায়।হেদায়েত স্ত্রীকে বোঝায়, বাপ মার অমতে বিয়ে করেছি,কিঞ্চিত বিতর্ক হতেই পারে…।মাসুমার দম্ভোক্তি, তোমার মা যদি আমাকে বাহারের স্ত্রী মনে করে তাহলে ভুল করবে।সে যদি বেশি বাড়াবাড়ি করে, তাহলে বুঝিয়ে দেব আমি কে?হেদায়েত স্ত্রীর কথার গুরুত্ব নিয়ে ভাবাভাবি করেনা। তার ভাবনা সংসারের হাল ধরতে হবে। বর্তমানে সে পুত্র সন্তানের বাবা।এমতাবস্থায়, বাপের কাঁধে খাওয়া আর কত চলে।আয় রোজগারের পথ তৈরি হলে সংসারে আর কোন সমস্যাই থাকবেনা। প্রেমের বিয়ে তার উপর বেকার,তাই মাছুমার অভিযোগের ভিত্তি তার কাছে গুরুত্বহীন।হেদায়েত চাকরী ও ব্যাবসার উপায় নিয়ে ভাবে।চাকরীর প্রতি সে বরাবর-ই উদাসীন, আবার ব্যাবসা করতে টাকা লাগে, মোবারকের সাথে পরামর্শ করলে একটা উপায় হতে পারে।কিন্তু মোবারকের সামনে দাঁড়ানোর সাহস তার হয়না।এদিকে মোবারক ও ছেলের কর্মসংস্থান নিয়ে চিন্তা করে, ছেলেকে উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত করার আশা ছিল।মাঝপথে হেদায়েত স্বেচ্ছায় বিয়ে করে মোবারকের সে সপ্ন চুরমার করে দিয়েছে।সপ্ন ভাঙ্গার ক্ষোবে মোবারক ভেতরে ভেতরে ফুঁসে ওঠে।আবার হেদায়েতের এই বিপদের দিনে সে চুপ থাকতেও পারেনা।মোবারকের সংসার কৃষি নির্ভর, একক সংসার থেকে যা আয় হয় তা দিয়ে বিলাসিতা করেই চলে।মোবারকের ছেলে মেয়ে সব মিলিয়ে সাত জন।বর্তমান সংসার স্বাচ্ছন্দে চললেও ছেলে মেয়েদের ভবিষ্যত নিয়ে মোবারক চিন্তিত।বড় ছেলে তার সপ্ন ভেঙ্গেছে, তাই বলে বাঁকি গুলোকে নিয়ে তার সপ্ন দেখতে দোষ কোথায়।
সর্বশেষ এডিট : ০১ লা জুন, ২০১৬ রাত ১১:৩২