somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বিকৃত আত্মার পৃষ্ট-পোষক (ধারাবাহিক উপন্যাস)

২৯ শে মে, ২০১৬ রাত ১২:৫৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বাহারের আপন ছোট ভাই সেলিম মিয়া পাবনা শহরে বি, এ ক্লাসে অধ্যায়নরত।নেহায়েত প্রয়োজন ছাড়া সে বাড়িতে তেমন একটা আসেনা।যাবতীয় যোগাযোগের ক্ষেত্রে সে মোবারককেই তার আদর্শ বলে মানে।বাড়ির পরিবারের সদস্যদের প্রতি তার স্বচ্ছ ধারনা আছে।আজ সংসারের এমন বিপর্যযে তার মধ্যে গভীর উদ্বেগ ঝড় তোলে।মাতৃস্নেহের মায়াবী সান্নিধ্য তার মনে নেই।সদর থেকে মাঝে মাঝে বাড়িতে গেলে এই ভাবিই তাকে মাতৃস্নেহের বিছানো আসনে আদর যত্নে ত্রুটি রাখেনি।আজ সংসারে নৈরাজ্যের কথা যখন তার কানে পোঁছে, নিজের সমস্থ পরিজনের মধ্যে এই পরিচিত মুখটি তাকে প্রচন্ড নাড়া দেয়।সেলিম বাড়ি এসে মোবারকের সাথে দফায় দফায় অলোচনা করতে লাগল।অনেক চেষ্টা তদবীরে কোন কাজ হলনা।মেয়ের বাপ এ বংসে মেয়ে দিবে না।মোবারকের হৃদয় ভারাক্রান্ত। বাহারের শ্বশুর বাড়ি অসহায়ত্বের মত ধরনা দিয়ে কোন কাজ হলনা।সমস্থ দেহে পরাজয়ের গ্লানী আজ তাকে মলিন করে দিল।সব কিছু মোবারকের কাছে কেমন ঝাপসা,সমস্থ যুক্তি তর্ক উপেক্ষা করে তাদের একটাই দাবী পাগলের সংসারে আমার মেয়েকে মরতে দেবনা।আর যাকে কেন্দ্র করে এই জটিলতা সেই কল্পনাকে একটিবারও বাহার পক্ষের কেউই আর দেখতে পেলনা।বাহার এলোমেলো মস্তিস্কে জীবনের পথ হাতড়ে হাতড়ে ফিরে। চাকরী অনেক আগেই গেছে। পুরোপুরি শুন্য হাতে আধা বিকৃত মস্তিস্কে এদিক ওদিক তার ছুটাছুটি। তার উপর শাস্তনবানুর কুট কৌশলী বাজে মন্তব্য বাহারকে স্থীর থাকতে দেয়না।প্রেমের পুঁজা অর্চনা করার শিক্ষা মুর্খ হৃদয়ে আলো দেয়না। কেবল কিটপতঙ্গের মত পরিতৃপ্ত ভোগে তারা খুশি।আদিম যুগের নেংটা খেয়ালে বাহার আজ বন্দী। চা বিড়ি খাওয়া বাহারের দ্বীর্ঘ দিনের অভ্যাস।কিন্তু যে বাড়িতে ভাতের নিরাপত্তা নেই, সেখানে চা বিড়ি…………….?অভ্যাসের পরিবর্তন তো আর চাইলেই করা যায়না।তাই সামান্য চা আর বিড়ির জন্য মানুষের কাছে হাত পেতে নিজের অর্জিত সম্মান গলাটিপে ধরে মারতে আজ তার দ্বীধা থাকলো না। সমাজ সংসার আজ তাকে পুরোপুরিই পাগল বলে আক্ষ্যায়িত করে পাগল উপাক্ষ্যান রচনা করতে লাগল। যা ঘটে তাও বলে, যা ঘটেনি তাও বলে।এ পরিবারের সাথে যাদের ঈর্ষন্বিত সম্পর্ক ছিল, তারা আজ মক্ষম সুযোগ পেয়ে এই দুর্বল মুহুর্তকে উস্কে দিতে লাগল। উপযুক্ত ছেলের ভার বহনের দায়ীত্ব পরিবার রাখেনা। সামান্য পকেট খরচার যোগান কেউ দিতে আসেনি। জাফর মিয়ার ভাবাবেগের বালাই নেই, অপর দিকে মোবারক যে কিনা স্ব শিক্ষায় শিক্ষিত তার তো বোঝা উচিত ছিল….গতানুগতিক ক্ষুদ্র থেকে বৃহৎ পরিসরে জীবনের সমস্থ পরিমন্ডলে ইচ্ছা পরিব্যাপ্তি, আর্থিক সঙ্গতি এসবের যে যোগসুত্র তার পরিমাফিক যে চাহিদা, তা ক্ষুদ্র হোক আর বৃহৎ হোক তাকে অবঞ্জা করা মানে মানবতাকে অবঞ্জা করা।হোক তা বিড়ি সিকারেট সেটাও কারো হতে পারে অন্যতম চাহিদা। তাই বলে অধিকার হরনের জ্বালা এভাবে পথে পথে লুটাবে?আর কুলাঙ্গার শ্রেনীর লোকেরা তা সস্তা দরে কিনে পকেটে ভরবে, এতে করে যে অধিকার লুটায়ে দিল, তার যেমন অস্তিত্ব শুণ্য তার সাথে সম্পর্কিত পরিবারেরও সম্মানের ঘাটতি থেকে গেল।(এই যায়গায় মোবারকের স্ব শিক্ষায় শিক্ষিত বাক্যটি বিস্তর শিক্ষার মাঝে কুল হারিয়ে দিশা পেলনা)কেউ যখন তার নিজের মধ্যে নিজের অস্তিত্ব হারিয়ে ফেলে,তখন তাকে ফিরিয়ে আনার জন্য এমন সস্তা উপকরনকেই গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করতে হয়।সব বাদ দিয়ে কিভাবে পাগল ঠিক করা যায় এই পর্ব শুরু হল।পাগলামীর পরিমান কতটুকু উদ্রেককারী ছিল তা যাচাইয়ের আবশ্যক ছিলনা। চলাফেরা আচার অচরনে স্বভাবিক স্বকীয়তা নেই, তাই পাগলা গারদই হওয়া উচিত তার উপযুক্ত ঠাঁই।পাগলের বৃহৎ চিকিৎসা পাবনাতেই হয়।এক দিন ঘোড়ার গাড়ি ঠিক করে সবাই মিলে জোর পুর্বক ধরাধরি করে টেনে হিঁচড়ে রশি দিয়ে বেঁধে বাহার কে পাগলা গারদে নিক্ষেপ করে দিল।কর্তব্যরত ডাক্তাররা বাহারের মধ্যে পাগলামির আলামত পেলনা। তবুও এক দেড় মাস তাকে প্রাথমিক চিকিৎসা করে ছেড়ে দিল।বাড়িতে ফেরার পর সেই একই বাহার যে লক্ষনগুলো তার মধ্যে পুর্বে বিদ্যামান ছিল এখনও তাই রয়েছে। বিষয়টা এবার জাফর কে শঙ্কিত করল। পুর্বে পুত্র নিয়ে মাথা না ঘামালেও এই কিছুদিনের মধ্যে এলাকার লোকমুখে বিভিন্ন এলাকার পাগল ও পাগলের কর্মকান্ড সমন্ধে ভুতুড়ে মন্তব্য শুনে জাফর মিয়া শঙ্কিত। তাই উদ্ভুত ঘটনা যাতে না ঘটে, এখান, ওখান থেকে কিছু চেয়ে না খায়, এসব বিষয়কে আমলে নিয়ে বাজার থেকে শিকল কিনে বাহারের পায়ে তালাবদ্ধ করে দিল।বাহারের জীবনে আর কিছুই অবশিষ্ট রইলনা। সমগ্র সমাজ, আকাশ বাতাস আজ পাগল পাগল ধ্বণীতে বাহারের মস্তিস্ককে উন্মাদ করে দিল।শিকলে বাধা সুঠাম দেহ শিকল ভাঙ্গার কাজে তার সমস্থ শক্তি ব্যায় করল। কাজ হলনা। এরপর নাওয়া খাওয়া ছেড়ে আস্তে আস্তে যখন দুর্বল হতে লাগল,তখন করুনা চিত্তে জাফর মিয়া একদিন সে তালা খুলে দিল। এরপর আর বাহারকে পায় কে? সমস্থ গ্লানী পেছনে ফেলে তিক্ততা পুঁজি করে ঘর থেকে বেরিয়ে পড়ল বাহার।কোন দায়বদ্ধতা নেই, কেবলি নিজের মনে খেয়ালী স্মৃতি আওড়ায় আর অবারিত প্রশস্থ পথে উন্মুক্ত পথ চলায় সে স্মৃতি তার পুঁজি হয়ে রয়।স্মৃতি হাতরেই তার সুখ কখনও হাঁসে আবার কখনও নিস্তব্ধ নিরবতায় সে স্মৃতি ধুষর ধুলিঝড়ে তার সমস্থ পৃথিবী উলট পালট করে দেয়। এর পর হৃদয়ের টানে আপন ভিটামাটির টানে তার হৃদয় যখন থমকে দাঁড়ায়, তার জীবন তৃষ্ণার দেবী স্ত্রীর স্মৃতি যখন মনে পড়ে, জীবনের অর্ধেক বসন্তের উপাক্ষ্যান যেখানে রচনা হয়েছে, সেই যায়গার সেই সব মুখ যখন তার মনে পড়ে, কিংবা সব হারিয়ে রাস্তার ভিখারী হওয়ার যে তিক্ত অভিঞ্জতা তা হজম করতে না পেরে যখন বাড়িতে তার পুন আগমন, তখন দেখে সে আগমনের বার্তা হাস্যরসে ভরা, গ্লানী মাখা যেখানে তার নিজের বলে কিছু নেই।তারপরও সে এ বাড়ির সদস্য ছিল এ তার মনের জোর। শাস্তনবানু অনেক আগেই পুত্র দায় ছেড়ে দিয়েছে।বাড়ির প্রভুভক্ত কুকুরকে দু মুঠো ভাত দেওয়া যেমন মালিকের কর্তব্য, ঠিক খানকা ঘরে আশ্রয় নেওয়া বাহারের অধিকারও কুকুরের মত উপেক্ষিত হতে থাকল।এরপর একদিন সিকারেটের টাকা জোগাড় করার জন্য ঘরের চেয়ার চুরি করতে গিয়ে ধরা পড়ে বাহার মার খেল, মোবারকের মেজ ছেলে কেরামতের হাতে। কেরামতের সে কি গর্ব পাগল মেরে তার ব্যাপক সুখ্যাতি। সবাই বলাবলি করতে লাগল, অত্যাচার শুরু হয়েছে কেরামত যদি আজ তাকে না পেটাত এমন উৎপাত চলতেই থাকত। শাস্তন বানু বলতে লাগল ও জাতি পাগল যথেষ্ট শিক্ষা না হলে শেষ পর্যন্ত সংসার নিলামে তুলত।মান সম্মান যা গেছে এখন সংসারে হাত দিছে,(এই পর্বে মোবারকের স্ব শিক্ষায় শিক্ষিত মন্ত্রের আলামত পেলাম না)এরপর আবার উধাও, আবারের আগমন। এবারের আগমন স্থায়ী হলনা। বাহারের তৃতীয় ভাই রোকন তাকে ধরে পেটাল, রোকনের হাত থেকে ছুটে বাহার দৌড় দিল। আর রোকন বাহারের পিছু পিছু দাও নিয়ে ধাওয়া করে এলাকা ছাড়া করল।আতঙ্ক আর ঘৃনায় এ বাড়িতে বাহারের পা আর কোন দিন পড়েনি। এরপর বিশাল ভ্রমান্ডকেই সে তার বাড়ি বানিয়ে ছিল।আর প্রশস্থ জনপথ ছিল সে বাড়ির উন্মুক্ত দরজা।

সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে মে, ২০১৬ রাত ১২:৫৭
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

অন্তর্বর্তী সরকারে উপদেষ্টা নিয়োগ কারা দেয় ?

লিখেছেন মেঠোপথ২৩, ১৩ ই নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:০৩

বৈষম্যবিরোধি আন্দোলনের সফল পরিসমাপ্তির পর আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সমন্বয়কেরা ডক্টর ইউনুসকে দেশের ক্ষমতা গ্রহন করার আহবান সেই শহীদ মিনার থেকেই জানিয়েছিল। ডক্টর ইউনুস প্রথমে অরাজি হলেও পরে ছাত্রদের হাজারো অনুরোধের মুখে... ...বাকিটুকু পড়ুন

গণমুখী একটি চাওয়া

লিখেছেন ডঃ এম এ আলী, ১৩ ই নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ১০:২০


মানুষের মুখে হাসি ফুটুক,
আঁধার মুছে আলোর ছোঁয়া,
ক্লান্তিহীন পথ চলুক,
নতুন স্বপ্ন আনবে জোড়া।

দিনবদলের শপথ নিয়ে,
কাঁধে কাঁধ মিলে কাজ করে যাই,
নদীর স্রোতে ভেসে ভেসে
একটি স্রোতে মিলিয়ে যাই।

সবার তরে সমান বিচার,
ধনীর দুঃখীর,... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলার একমাত্র অভিশপ্ত রাজনৈতিক দল আওয়ামীলীগ

লিখেছেন জ্যাকেল , ১৩ ই নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ১১:৫০

২৩শে জুন বাংলার শেষ স্বাধীন নবাব জনাব সিরাজ উদ দৌলা ব্রিটিশদের কাছ হেরে যান কেবলমাত্র মীরজাফর, জগৎশেট, রাজভল্লভ, ঘষেটিদের কারণে। বাংলার ইতিহাসে এই দিনটি একটি অভিশপ্ত দিন। এর পর থেকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সেকালের গ্রামের বিয়ের বর দেখা

লিখেছেন প্রামানিক, ১৩ ই নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ২:১৩


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

একদিন পরেই শুক্রবার। সকালেই বাবাকে ঐ বাড়ির ঘরবর (অর্থাৎ বর দেখা অনুষ্ঠানকে আঞ্চলিক ভাষায় ঘরবর বলে) উপলক্ষে ডাকা হয়েছে। বাবা সকালে গিয়ে বর দেখা উপলক্ষ্যে কি কি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ওবায়েদুল কাদের কি মির্জা ফখরুলের বাসায় আছেন?

লিখেছেন রাজীব, ১৩ ই নভেম্বর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৩৮

"পালাবো না, পালিয়ে কোথায় যাবো? দরকার হলে মির্জা ফখরুলের বাসায় আশ্রয় নেবো। কি ফখরুল সাহেব, আশ্রয় দেবেন না?" ওবায়েদুল কাদের একটি জনসভায় এই কথাগুলো বলেছিলেন। ৫ই আগষ্টের পরে উনি মির্জা... ...বাকিটুকু পড়ুন

×