somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বিকৃত আত্মার পৃষ্ট-পোষক (ধারাবাহিক উপন্যাস)

২৩ শে মে, ২০১৬ বিকাল ৪:৪২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

সুখ বেশি দিন স্থায়ী হলনা।রবীন্দ্রনাথের ঘরে বাইরে উপন্যাসে পড়েছি, বউ হয়ে যে মার খায়, শ্বাশুড়ি হয়ে সেই বড় মারটা মারে। একথা পদে পদে সত্য।শাস্তনবাণুর এত দিন কার উপার্জিত বিদ্যা বুদ্ধি এখন পরিপক্ক। শাস্তনবাণু তার শ্বাশুড়ির কাছে যা রপ্ত করেছিল, আজ তা প্রোয়োগের মাধ্যমে তার জ্ঞ্যানের পরিধীর পরিচর্যার কাজে পরিপুর্ণ নিয়োজিত থাকল। নতুন বউকে দিয়ে সংসারের সমস্থ কাজ করানো, কাজের ত্রুটি ধরে খোঁটা দেওয়া, খাওয়া দাওয়ায় শিথিল্য কড়াকড়ি পরিবারের সবাইকে খাইয়ে তারপর তার খাওয়া। স্বামীর উপার্জন নিয়ে খোঁটা শুনতে হয়।কয়টাকা কামাই করে মাষ্টার স্বামী,খালি খালি বসে গিলতে লজ্জা করেনা, সকাল অব্দি সন্ধা পর্যন্ত এই ধরনের অমানবিক আচরণ কতটুকু যুক্তি যুক্ত ছিল তা ভেবে দেখার বালাই ছিল না।কেবলি সমস্থ সংসার জুড়ে শাস্তনবাণুর কু-শিক্ষার তপ্ত তেজে এমনি করে এই নতুন সংসার ধুষর হতে থাকলো। নব পুত্র বধু কল্পনার চোখের পানিতে মেঘ জমে।মেঘের কালো আভরণটা তার দেহের সর্বাঙ্গে লেপ্টে গিয়ে উদভ্রান্ত হয়ে সে নিজের থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পরত। স্বামীর মধ্যে কোন শুন্যতা সে দেখতে পায়নি, তবু শুণ্য থেকে ধরণীতে তার অবহেলায় প্রতিনিয়ত খসে খসে পরা।বাহার দিনে চাকরী করে রাতে স্ত্রীর সানিধ্যে যখন তাকে ছুঁতে যায়, তখন দেখে এ এক আধমরা ফুল।যার সমস্থই কেবল শুণ্যতা, শোভা নোই বললেই চলে।নীরব চোখ,ক্লান্ত শরীর, বন্দী পাখির মত তার চোখে মুখে ভয়ের ছাপ। কারনটা বাহারের স্পষ্ট করেই জানা।সাগরের জ্বল দুষিত হলে সেখানে বসবাসরত প্রাণীর প্রাণ রক্ষা হয়না।তেমনি সংসারের আবর্তে যদি পেতাত্মার বসবাস থাকে তাতে করে সুস্থ হৃদয়গুলোর এমনি করুন দশা হয়।কিন্তু এ মায়াজাল ভেদ করার সাধ্যও বাহারের নেই।স্ত্রীর পক্ষে সংসারের বৈরিতা চ্যালেন্জ করে সেখানে নতুন সূর্যের বাসনা অলৌকিক।সামান্য মাইনে বেতন, এ দিয়ে সংসার থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়া যায়না।আবার সংসারে যে পেতাত্মা তার সাথে লড়াই করে টিকে থাকার পুঁজি বাহারের নেই।স্ত্রীর চাঁদ মুখ আজ মলিন। কোন কিছুতেই মন স্থীর করতে পারেনা বাহার।ব্যাপক ভাবনা চিন্তা রাহুর মত গ্রাস করতে লাগল তাকে।দিনের পর দিন এমনি অস্থির তাড়নার সংবাদ কল্পনার বাপের বাড়ি পোঁছতে সময় লাগল না। মাঝে মাঝে কল্পনার বাপের বাড়ি থেকে লোক এসে এ সংসারের হীনতা স-চক্ষে দেখে গেছে।বাহার মিয়া শ্বশুর বাড়ি স্ত্রী নিয়ে বেড়াতে গেলে সেখানেও বিষয়টি বিশেষ প্রাধান্য পেয়েছে। এবং বিস্তর আলোচনা পর্যালোচনার মাধ্যমে বাহারের নিরবতাকে দুর্বলতা বলে আখ্যায়িত করে বাহারের উপর অভিযোগের বৃদ্ধাঙ্গুলী তুলেছে। বাহার যে বরাবর নিশ্চুপ তা নয়, স্ত্রীর অধিকার কারো পদতলে পিষ্ট হচ্ছে তার বাহার স্পষ্ট বোঝে। স্ত্রীর পক্ষে মাঝে মাঝে সোচ্চার হতে দেখা গেছে তাকে।কিন্তু যে দৈন্যতা আর হীন মনস্কতার জলে পরগাছার মত তাদের বসবাস, সে জল দুষিত হলেও সে তার-ই খোরাক। এই চরম সত্য বাহার বুঝতে পারে।এই সত্য উন্মোচন করে সেখান থেকে বের হয়ে আসতেও বাধা আছে। কারণ সত্যের পেছনের সত্য উপেক্ষিত হয়।পরিবার কে ছোট করা হয়। আবার নিজের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে বদ্ধ জলাশয় ডিঙ্গিয়ে সাগরের জ্বলে মিলিত হওয়ার যে স্রোত , তার বিরাট অভাব।সংকট পূর্ণ পরিস্থিতি আলোচিত করার লোক আছে কিন্তু উপাই বাতলে দেওয়ার পক্ষে কেই সহায়ক নয়।এমনি অস্বাভাবিক ছিল সেই ক্ষণ।এমনি অস্ভাবিক ছিল সেই দিন যাপনের গল্প।সমস্থ অসাহায়ত্বের মাঝে বাহারের কাঁটাময় পথ।বিষাক্ত কাঁটার আঘাতে বাহার ক্ষত বিক্ষত হতে থাকল।আর এভাবে দিন যতই গড়তে লাগল, দিনের সাথে ক্ষতও পাল্লা দিয়ে বিভৎস হতে লাগল। দেখতে দেখতে প্রায় দুই বৎসর গড়াল। সংসার জীবনে সদ্য কন্যা সন্তানের বাবা বাহার।এত দিন নিজেদের মানবধিকার ক্ষণে ক্ষণে ভুলুন্ঠিত হয়েছে, সংসারের বৈরিতায় কল্পনা ও বাহারের লুকানো দগ্ধ নিশ্বাসে তাদের সমস্থ শরীর ঝলসে গেছে। পবিত্র বন্ধনের অস্তিত্বটুকু টিকে রাখার প্রতয়েই তাদের এরুপ দূড় পথচলা।আজ নবাগত সন্তানের উপর এই ধরনের সংসারের বিকৃত আত্মার প্রেতাত্বা যখন ভর করতে চায়, সংসারের এই বিভৎস রুপের ছাঁয়া যখন তাদের নিষ্পাপ শিশুর অধিকার কেড়ে নিতে চায়, তখন সে দুংখ তাদের কাছে নরকের কুন্ডলিতে নিক্ষিপ্ত হওয়ার চেয়েও হাজারো গুন কষ্টদায়ক মনে হয়।বাচ্চার দুধ খাওয়া নিয়ে কুটুক্তি, গরুর দুধখাইয়ে কাজ কি,এ সংসারে এতটাকা নাই যে প্রতিদিন দুধ কিনে খাওয়াবে, বুকের দুধ খাইয়ে শাস্তনবাণু ও তখনকার মেয়েরা পোলাপান মানুষ করেছে।খাওয়াইলে বুকের দুধ খাওয়াক না খাওয়াইলে সস্তা মোটা চালের ভাত টিপে টিপে মুখে ভরে দিক।কিছুদিন এমন করলে খাওয়া শিখে যাবে।কাজের ফাঁকে যদি বাচ্চার কান্নার শব্দে কল্পনা মায়ের টানে ছুটে আসে সেখানেও বিপত্তি আছে।এ ক্ষেত্রে শাস্তনবাণুর ভাষ্য এমন বাচ্চা পেঁ করলে অমনি মা ছুটে যায়। আমরাও তো বউ ছিলাম, অনেক ছেলে মেয়ে মানুষ করেছি, ঐ রকম ছুটে যায়নি।সংসারের কাজকামে মন নাই, মেয়ে নিয়েই যদি পড়ে থাকতে হয়, তাহলে বাপের বাড়ি যেয়েই পড়ে থাকনা, সেখানে খাতির যত্নের অভাব হবে না । এ সংসারে পড়ে থাকার কি দরকার। তারা নাকি শিক্ষিত জাত, শিক্ষিত ঘরে বিয়ে দিলেই পারত, আমার ছাওয়ালের ঘাড়ে ফোঁড়া হতে এলি কে। এ রকম বিদঘুটে অ-শোভন বিচরণে আত্মা বিকৃতের খেলায় প্রেতাত্তার প্রহসন।এখানে পাঠক মনে একটা প্রশ্ন জাগতে পারে, এ বাড়ির আর যারা সদস্য তাদের কি অবস্থা, প্রতিক্রিয়া কি? বিষয় হল এই মূল্যবোধের জাগ্রত রুপ করো ভেতরই তেমন স্পষ্ট নয়।বয়স্কদের মধ্যে কিঞ্চিত যারা উপলব্ধি করতে পারে তাদের কাছে এ চিত্র অতি পরিচিত। একেবারে গা সওয়া। তাই বিস্লেষন নিয়ে অযাচিত বিস্তর ভাবাভাবির আগ্রহ তাদের নেই।ঝড় যেদিক দিয়ে যাচ্ছে সেদিক দিয়েই যাক, দায়ীত্ব বোধ? উহু সেটা হবে নাক গলানো, বাড়াবাড়ী করলে পেতাত্মা তাকেও ধরবে।

সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে মে, ২০১৬ বিকাল ৪:৪২
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বিশ্রী ও কুশ্রী পদাবলির ব্লগারদের টার্গেট আমি

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৭ ই নভেম্বর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:০৫



আমাকে জেনারেল করা হয়েছে ১টি কমেন্টের জন্য; আমার ষ্টেটাস অনুযায়ী, আমি কমেন্ট করতে পারার কথা; সেটাও বন্ধ করে রাখা হয়েছে; এখন বসে বসে ব্লগের গার্বেজ পড়ছি।

সম্প্রতি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছবি কখনো কখনো কিছু ইঙ্গিত দেয়!

লিখেছেন ডার্ক ম্যান, ০৭ ই নভেম্বর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৩৭



গতকাল ভারতীয় সেনাপ্রধানের সাথে বাংলাদেশ সেনাপ্রধান এর ভার্চুয়ালি কথা হয়েছে। ভারতীয় সেনাবাহিনী তাদের অফিসায়াল এক্স পোস্টে এই ছবি পোস্ট করে জানিয়েছে।

ভারতীয় সেনাপ্রধানের পিছনে একটা ছবি ছিল ১৯৭১ সালের... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রথম আলু

লিখেছেন স্নিগ্দ্ধ মুগ্দ্ধতা, ০৭ ই নভেম্বর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৫৯



লতিফপুরের মতি পাগল
সকালবেলা উঠে
পৌঁছে গেল বাঁশবাগানে
বদনা নিয়ে ছুটে



ঘাঁড় গুঁজে সে আড় চোখেতে
নিচ্ছিল কাজ সেরে
পাশের বাড়ির লালু বলদ
হঠাৎ এলো তেড়ে




লাল বদনা দেখে লালুর
মেজাজ গেল চড়ে।
আসলো ছুটে যেমন পুলিশ
জঙ্গী দমন করে!





মতির... ...বাকিটুকু পড়ুন

দেশে ইসলামি আইন প্রতিষ্ঠা করা জরুরী?

লিখেছেন রাজীব নুর, ০৭ ই নভেম্বর, ২০২৪ রাত ৯:০২



বিশ্ব ইসলামের নিয়মে চলছে না।
এমনকি আমাদের দেশও ইসলামের নিয়মে চলছে না। দেশ চলিছে সংবিধান অনুযায়ী। ধর্মের নিয়ম কানুন মেনে চললে পুরো দেশ পিছিয়ে যাবে। ধর্ম যেই সময় (সামন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

একটি ছবি হাজার কথা বলে

লিখেছেন ইফতেখার ভূইয়া, ০৮ ই নভেম্বর, ২০২৪ রাত ৩:৫৩

আগস্টের ৩ তারিখ আমি বাসা থেকে বের হয়ে প্রগতি স্মরণী গিয়ে আন্দোলনে শরিক হই। সন্ধ্যের নাগাদ পরিবারকে নিয়ে আমার শ্বশুর বাড়ি রেখে এসে পরদিনই দুপুরের মধ্যেই রওনা হয়ে যাই। আগস্টের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×