বাহার মিয়া দাদীর মৃত্যুর পর ছন্দ পতনের মধ্য দিয়েই ইন্টার মিডিয়েট পাশ দিল।পরিবারের এহেন পরিস্থিতিতে তার লেখাপড়ায় মন নেই।৮০-র দশকে ইন্টার-মিডিয়েট পাশের নজির ও সাফল্য সম-সাময়ীক লোক ছাড়া তেমন স্পষ্ট করে আর কেউ বুঝবেনা। তা যতই ব্যাখ্যা করে বোঝানো হোক না কেন?পাশের পর চাকুরী পেতেও অসুবিধা হলনা। পাশের গ্রামে হাই স্কুলে সহকারী শিক্ষক পদে নিয়োগ পেল।এমন সংসারে এ এক ভিন্ন প্রেক্ষাপট।গৃহস্থলী ঘরে মানুষ পরিশোধনের কারিগর।পূর্ব সম্মানের সাথে নতুন সম্মানের যোগ হল।এবার এমনি সু -যোগ্য সন্তানের বিবাহের কথা পরিবার চিন্তা করতে লাগল।মফস্বল পাড়াগাঁয়ে বসবাস করলেও, পান ব্যাবসায়ের সুবাদে তাদের জেলা শহর পাবনা ও থানা শহর ঈশ্বরদীতে ঘন যাতায়াত ছিল।ব্যাবসায়ের সুবাদে তাদের সুনাম জেলা ও থানা পর্যায়ে বিস্তৃত ছিল।পাবনায় মোবারকের এক পরিচিত আঁতেলের মাধ্যমে পাত্রী ঠিক হল।সদরের প্রান কেন্দ্রে ১তলা ছাদ দেওয়া পাকা বাড়ি।মেয়ের বাপ পাকিস্থানী আমলে সরকারী পদে চাকুরী করত। দেশ স্বাধীনের পর বাংলাদেশে সে চাকুরী বহাল ছিল।মেয়েরা তিন ভাই দুই বোন।সবাই লেখাপড়া করে।আঁতেলের মাধ্যমে পাত্রী পক্ষের আমন্ত্রনে মোবারক ও জাফর মিয়া পাত্রী দেখা-দেখির কাজ চুড়ান্ত করে সরাসরি বিয়ের দিনক্ষণ ঠিক করে ফেলল।পাত্রী পক্ষ বেশি ভাবাভাবি করলনা। এক দিকে পাত্র পক্ষের ব্যাবসায়ীক সুনাম, অন্য দিকে শিক্ষিত সুদর্শন চাকুরীজিবী ছেলে।বাহার মিয়ার মতামতের বালাই ছিলনা।পারিবারিক সিদ্ধান্তই চুড়ান্ত।তখনকার দিনে পাত্রী যাচাই বাছাইয়ে পাত্র পক্ষ ছাড়া পাত্রের কোন সুযোগ ছিলনা।বাহারের ক্ষেত্রেও এর ব্যাতিক্রম নয়।বিয়ের নির্ধারিত দিনে বাহার বর সেঁজে কনের বাড়িতে উপস্থিত হল।এর পর অনেক আয়োজনের মধ্যে দিয়ে যখন বাহারের হাতে কনে কল্পনার হাত সঁপে দেওয়া হল, তখন সে হাতের কোমল স্পর্শে বাহারের হৃদয় পাওয়ার আনন্দে উপচে উপচে পড়তে লাগল।কয়েকবার সে আড় চোখে স্ত্রীর ঘোমটা দেওয়া মুখখানা দেখবার চেষ্টা করেছে।ঘোমটার পরিমান এত বড়ই ছিল যে, বারবার চেষ্টায় সেই কাঙ্খিত মুখখানা বাহার দেখতে পেলনা।অধীর আগ্রহে যখন বাসর ঘরে সেই মুখখানা দেখার সৌভাগ্য হল, তখন সে বিস্মিত!এ রুপ তার কল্পোলোক কেও হার মানায়।সে যা চেয়েছে তার থেকেও বেশি পেয়েছে।হিমেলে ভেজা আধো জ্বলে পদ্মের গোলাপী রংয়ের মত তার গায়ের রং, চোখ মুখ নাকের বর্ণনার কাছে পৃথিবীর সব উপমাই বেকার।আর সেই রাত…………….
সর্বশেষ এডিট : ২১ শে মে, ২০১৬ রাত ১১:৩৮