পৃষ্টা ২০-২২
‘যা শুনেছিলাম সব সত্য। আজ আমি সত্যি বিপর্যস্ত হয়েছি।’
‘বান্ধব।'
‘জি ভূতভ্রাতা।’ বলে রাহীম সামনে তাকিয়ে কোষবদ্ধ তেগের হাতা দেখে শিউরে উঠলে পুরুষকণ্ঠে বলল, ‘এই তেগে জাদুশক্তি আছে। অসৎরা অসদ্ব্যবহার করবে। আমি নিশ্চিত হয়েছি, লোকোত্তর তুই বিশ্বস্ত। রাহুর রেষ-রিষ্টি তোর অনিষ্ট করতে পারবে না। আমি এখন পাপমোচন করতে চাই। সদয় হয়ে আমাকে সাহায্য কর। কেউ তোর ক্ষতি করতে পারবে না। আমি তোর আশে পাশে থাকব। এখন থেকে এই তেগ তোর। বীরের মত আড়াআড়ি বাঁধলে তেগ অদৃশ্য হবে এবং সদ্ব্যবহারে তোর মঙ্গল হবে।’
‘নিশ্চিত হওয়ার জন্য নিশ্চয়তা চাই।’
‘কোষে তেগ আছে। বাবাপির বলেছিলেন, কোষ থেকে বার করলে আমার অমঙ্গল হবে। তোকে নিশ্চিত করার জন্য আদেশ অমান্য করব।’
‘এখন আমি নিশ্চিত হয়েছি আপনি নিশ্চয় তাদের একজন।’
‘ভাইরে, আমাকে সাহায্য কর।’
‘এত মিনতি করছেন কেন?’
‘সদয় হয়ে তেগ নে, ধীরে ধীরে সব বিশ্লেষিত হবে।’
তেগ হাতে নিয়ে শান্তকণ্ঠে রাহীম বলল, ‘এখন কী করব?’
‘অমরত্ব সম্বন্ধে কিছু বল।’
বুক ভরে শ্বাস টেনে রাহীম বলল, ‘আর যারা আল্লাহর পথে নিহত হয়েছে তাদেরকে মৃত বলো না বরং তারা জীবিত কিন্তু তোমরা তা অনুধাবন করো না।’
‘আত্মা সম্বন্ধে কিছু বল।’
‘আল্লাহ বলেছেন, হে প্রশান্ত আত্মা, তুমি তোমার মালিকের নিকট ফিরে এসো সন্তুষ্ট ও প্রিয়পাত্র হয়ে, অনন্তর তুমি আমার বান্দাদের অন্তর্ভুক্ত হও, এবং আমার জান্নাতে প্রবেশ কর।’
‘ধন্যবাদ, তোর সাথে কথা বলে আমি আশান্বিত হয়েছি।’
‘জ্ঞাতব্য তথ্য জেনে জ্ঞাতা এবং আশ্বস্ত হতে চাই।’
‘দরবেশের দেশে অভিচার নিষিদ্ধ এবং উত্তরসূরিদের জন্য জ্ঞাতব্য যাথাতথ্য, আল্লাহর আইন অনুল্লঙ্ঘনীয় এবং ঔদ্ধত্যে অত্যহিত। পরস্পর নির্ভরশীল মানুষ সত্বরপ্রিয় এবং মরণশীল। ত্বরায় মানুষ ত্বরান্বিত হয় ত্বরিতে স্তম্ভিত। শান্তিমন্ত্রে আশ্বস্ত, তন্ত্রমন্ত্রে বিপর্যস্ত। অভিচারে অন্যের অনিষ্ট, অবিচারে ন্যায় অনুদ্দিষ্ট। অটল আস্থায় নিষ্ঠ, আদর আহ্লাদে ঘনিষ্ঠ। তিক্ত অমৃত হয় মন্ত্রে, অমৃত বিষাক্ত হয় অপমন্ত্রে।’
‘তন্ত্রমন্ত্র আমি বুঝি না।’
‘অভিধান পড়লে তন্ত্র মন্ত্রের কূটার্থ বুঝতে বেশি সময় লাগবে না।’
‘অভিধানের দিকে তাকালে আমার মাথা ঝিমঝিম করে, চোখের সামনে লাল ফুল দেখি।’ বলে রাহীম কাঁধ ঝুলালে হাঁপ ছেড়ে পুরুষকণ্ঠে বলল, ‘দুই হায়ন তোকে খুঁজেছি। তোর হাতে তেগ দিয়ে আজ আমি শাপমুক্ত হয়েছি।’
‘নিশ্চয় আমি অভিশপ্ত হয়েছি?’
‘না, আজ তুই শতভাগ আশীর্বাদপ্রাপ্ত হয়েছিস।’
‘ধন্যবাদ। এমন একখান তেগের প্রয়োজন ছিল। এখন যেতে পারব? আমার অনেক কাজ আছে।’ বলে রাহীম তেগের কোষ আড়াআড়ি পিঠে বাঁধলে অলীক আলো তার বুকে প্রবেশ করে এবং সে শিউরে উঠলে পুরুষকণ্ঠ বলল, ‘কী হয়েছে?’
‘আমি চাইলে সূর্যকে স্পর্শ করতে পারব কিন্তু করব না।’ বলে রাহীম বুক ভরে শ্বাস টানলে পুরুষকণ্ঠ বলল, ‘তোর মাথা খারাপ হয়েছে নাকি?’
‘কেন স্পর্শ করব না জানতে চান না কবিরাজি করাতে চান?’
‘আমি পণ করে বলতে পারব তোর মত আজব মানুষ বাপের জন্মে কেউ দেখেনি।’
‘ভূতভ্রাতা, চোঁয়া দুধে পুড়া গন্ধ থাকে এবং বদহজম হলে চোঁয়া ঢুকুর ওঠে। আমি জানি আপনারা লেবুর শরবত পছন্দ করেন না।’
‘তুই আসলে পোক্তলোক। তোর সাথে টক্কর দিলে আক্কেল দাঁতের বারোটা বাজবে।’
‘ঠাঠা রোদে ভাপ, নিশ্চয় সূর্যের জ্বর উঠেছে। বাষ্পস্নান করতে হবে। উঁফ, কী বোটকা গন্ধরে বাবা।’
‘আমাকে কিছু বলছিস নাকি?’
‘আসলে কী হয়েছে, আমার পেটে সমস্যা হচ্ছে। গোসল করে রজনীগন্ধার রস মাখতে হবে।’
‘তোর সাথে আমি আর কথা বলতে চাই না।’
‘আপনাকে আন্তরিক ধন্যবাদ।’ বলে রাহীম দৌড়ে বাড়ি থেকে বেরোলে উদাসিনীর মুখোমুখি হয়। উদাসিনী অপলকদৃষ্টে তাকালে কপাল কুঁচকে রাহীম বলল, ‘এভাবে তাকাচ্ছ কেন গো?’
‘আমার ভুখ লেগেছে। গতকালকের আগের কাল শুঁটকিসুরুয়া দিয়ে সিদ্ধ ভাত খেয়েছিলাম।’
‘শিকপোড়া খাবে?’
‘শিকে পুড়ে কী খাওয়াবে?’
‘ছোট দাদির মুরগি।’ বলে রাহীম এদিক-ওদিক তাকিয়ে দৌড় দিতে চেয়ে অচিন পাখির ডাক শুনে গাছের দিকে তাকিয়ে ধনেশপাখি দেখে, ‘ও দাদি গো।’ অবাককণ্ঠে বলে গুলতি দিয়ে গুলি মেরে দৌড়ে যায় এবং উদাসিনী তাকে অনুসরণ করে। পাখি ধরে কোষ থেকে তেগ বার করলে পরিবেশের সাথে উদাসিনীর হাবভাব বদলে। অদ্ভুত পশুপাখি এবং কিম্ভুতকিমাকার আবির্ভুত হয়। তা দেখে রাহীম বুক ভরে শ্বাস টেনে, ‘হন্তা নয় আমি মন্তা হতে চাই।’ গম্ভীরকণ্ঠে বলে তেগ তাক করলে পলকে পরিবেশ স্বাভাবিক হয়। বুক কাঁপিয়ে দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে উদাসিনী বলল, ‘এই তেগের হাতল যে ধরেছে সে হন্তা হয়েছে। তুমি মন্তা হবে কেমনে?’
পাখি জবাই করে উদাসিনীর চোখের দিকে তাকিয়ে রাহীম বলল, ‘মানুষের গলা কাটলে নিশ্চয় হন্তা হতাম আমি ধনেশের গলা কেটে মন্তা হয়েছি।’
‘বরাতজোরে আত্মসাধকের সাথে সাক্ষাৎ হয়েছে।’ স্বগতোক্তি করে উদাসিনী সানন্দে হেসে বলল, ‘শ্রেষ্ট জীব সত্যি আজব। আজীব শব্দের অর্থ নিশ্চয় জানো?’
‘আজ নিশ্চয় দুর্বিপাকে পড়েছি।’ নিম্নকণ্ঠে বলে রাহীম ডানে বাঁয়ে তাকালে শান্তকণ্ঠে উদাসিনী বলল, ‘মানুষ কেন অমর হতে চায়?’
‘আদেশ অমান্য করা মানুষের অভ্যাস। আদেশ অমান্য করে দুরাত্মা হতে চাই না। আদেশ মেনে ধর্মাত্মা হতে চাই।’ বলে রাহীম ধুলি দিয়ে তেগ পরিষ্কার করে কোষে ভরতে চাইলে হাত পেতে গম্ভীরকণ্ঠে উদাসিনী বলল, ‘তেগ দাও।’
‘এই তেগ কাউকে দেব না। পারলে আগুনের বন্দোবস্ত করো।’ বলে রাহীম গাছের আড়াল থেকে শিক বারে করে বলল, ‘দয়া করে শিকের কথা কাউকে বলবে না।’
‘ঠিকাছে বলব না। জানো, মশলা লাগিয়ে পুড়লে আরও মজা হবে।’
‘গরমাগরম পুড়লে নুন মরিচ লাগে না।’ বলে রাহীম দেশলাই বার করে আগুন ধরায়। মৃদুহেসে উদিসানী বলল, ‘চুরি করে দাদির মুরগি খাও কেন?’
‘দাদি মানত করলেও শিরনি করেন না। সপ্তায় একটা খেয়ে বেতন আদায় করি।’
‘কিসের বেতন?’
‘সপ্তায় আমি একটা খাই। শিয়ালরা প্রতিরাতে কয়েকটা খায়। বাগুরা পেতে পাহারা দেই। শোনো, বিবাগী সুর আমি পছন্দ করি না।’ বলে রাহীম আড়চোখ তাকালে উদাসিনী মৃদু হেসে বলল, ‘কোকিলাকে মারো না কেন?’
‘শুনেছি, কাক কোকিল খরগোশের মাংস হারাম।’ বলে রাহীম উদাসিনী চোখের দিকে তাকিয়ে বলল, ‘এভাবে তাকাচ্ছ কেন? আমার পেটে কাতুকুতু হচ্ছে।’
‘বরাঙ্গ।’ বলে উদাসিনী মৃদু হাসলে রাহীম কপাল কুঁচকে মাথা দিয়ে ইশারা করে বলল, ‘বরাঙ্গের অর্থ কী?’
‘সুর্দশন সুপুরুষ।’
‘আওলাকেশি বুড়ি গো, তোমার মন্ত্র শুনে আমার অন্তর চমকে উঠেছে।’
‘তুমি সত্যি অনন্যসাধারণ।’
‘অসাধারণ শব্দের অর্থ আমি জানি না। যাক, মশলা কখন লাগিয়েছিলে?’ বলে রাহীম মাথা দিয়ে ইশারা করলে উদাসিনী মৃদু হেসে বলল, ‘খুঁটের গিঁটে ছিল।’
‘ও মাই গো।’ বলে রাহীম চমকে উঠে পেটে ধরে কাঁচুমাচু হয়। উদাসিনী খিল খিল করে হেসে বলে, ‘তুমি এমন কেন?’
মাংসের দিকে তাকিয়ে শিউরে রাহীম বলল, ‘আমার ডর লাগের। এই মাংস শিয়ালরাও খাবে না।’
‘কী হয়েছে?’
‘তুমি কে?’
‘জনমবিরহিনী।’
‘আজব শব্দের অর্থ আমি জানি না এবং জানতেও চাই না। আমি শুধু জানতে চাই, আমার প্রতি এত আকৃষ্ট হয়েছে কেন?’
‘তোমার দিকে তাকালে আমি প্রাণবন্ত হই।’
‘আমার মাঝে এত বন্ততা আছে নাকি? ও দাদি গো, আউলাকেশিনী এসব কী বলে গো।’
‘আশীর্বাদপ্রাপ্ত তুমি আত্মসাধক। মা তোমার জন্য মঙ্গলকামনা করেন। প্রমদা তোমার কাছে প্রেম নিবেদন করবে।’
‘অত্যন্ত অনিষ্টের কথা শুনে কম্প দিয়ে জ্বর উঠেছে। ভূতভ্রাতা, সূর্যকে আজ বালিশ তোশক দিতে হবে। সর্বনাশ, মারধর করলেও আমি একলা এত দূর যাব না।’ বলে রাহীম মাথা নাড়লে মৃদু হেসে উদাসিনী বলল, ‘তুমি নিশ্চয় আমার পরমাত্মীয়।’
‘আমি জানি না। নামধাম বললে নিশ্চিত হতে পারব।’
এই বই দুই খন্ডে আমাজনে প্রকাশ করেছি
Poromatthio: Volume 1 (Bengali) Paperback – 21 Jun 2016
by Mohammed Abdulhaque (Author)
Product details
Paperback: 596 pages
First edition (21 Jun. 2016)
Language: Bengali
ISBN-10: 1534824596
ISBN-13: 978-1534824591
Product Dimensions: 12.7 x 3.4 x 20.3 cm
এক সাথে পড়তে চাইলে আমাজন থেকে কিনতে পারবেন
অথবা অনলাইন পড়তে চাইলে আমার সাইটে আছে
সর্বশেষ এডিট : ২০ শে মে, ২০১৭ বিকাল ৫:২০