কলেজের প্রথম দিন। সকালে উঠেই মা্যের এক গাদা উপদেশ হজম করে বেরিয়ে পরতেই গেটের সাথে সাইকেলটা লেগে চেইনটা পরে গেল। কোন রকম অমঙ্গলের তোয়াক্কা না করেই বের হলাম। প্রাচীরে সাইকেলটা রেখে চেইনে হাত দিতেই হঠাৎ চোখ পরল পশ্চিমের গেটে। চোখ পরতেই সর্বনাশ। লম্বা খোলা চুলে যেন এক লাল পরী এক্ষনি আসমান থেকে নেমে এল পৃথিবীতে। আর সমস্ত অমঙ্গলের আশঙ্কা যেন আশীর্বাদ হয়ে পরল আমার উপর। হঠাৎ আমার চোখে চোখ পরতেই লাজুক লতাটির মত চুপসে গিয়ে ধুম করে গেট বন্ধ করে দিল। বুঝতে বাকি রইলনা বাড়িওালার মেয়ে। কয়েকদিন হল বাবার চাকুরির বদলির সুবাদে নতুন শহরের নতুন বাসায়। কিন্তূ এখনো অনেক কিছুই বাকি।
সেদিন কলেজ থেকে ফিরেই বিভিন্ন প্রসঙ্গ টেনে মা্য়ের কাছে জানলাম ওর সম্পর্কে। নাম অর্পা, ক্লাস টেনে পরে। দুই ভাই বোন। ও ছোট।
পরদিন সকালে একবুক আশা নিয়ে তাকে দেখার জন্য বের হলাম। কিন্তু হতাশায় বুকটা ভরে গেল। কলেজ থেকে ফিরেই লাল পরীটিকে দেখার জন্য কেমন অস্থির হয়েগেলাম। ওদের গেটের সামনেও কয়েকবার হাটলাম। অবসশেষে হতাশ হয়ে ফেরার সময় গেটে এক পা রেখে পশ্চিমে তাকাতেই বুকটা ধুক্ করে উঠল। পা বের করতেই আবার একবার তাকিয়েই টুপ করে ভিতরে ঢুকে পরল লালপরীটি। আমি আর এগোলাম না।
এর পরদিন সেই একই ঘটনা। বেস কিছুদিন এভাবেই কাটল, কিন্তু কোন কথা বলার সাহস পেলাম না। পাছে কি হয় এই ভেবে। ইতিমদ্ধে ছোটোর সাথে ওদের বাড়ির বিশেষ করে ওরসাথে ভালো সম্পর্ক হয়েগেছে। ছোটোর কাছথেকেই সব তথ্য পেতাম।
একদিন প্রাইভেট থেকে ফিরতেই গেটের সামনে আবার দেখা । এবার দ্রুত চলে না গিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে ছোট্ট একটা হাসি। মহুর্তের মদ্ধেই আমি জেন হারিয়ে গেলাম। সম্বিত ফিরে পেতেই দেখি বাড়ির সামনে।
সে রাতে আর ঘুম হলনা। সারাক্ষণ সুধু লাল পরীটির কথা ভাবলাম। অবশেষে চিন্তা ভাবনা করে একটা চিরকুট লিখলাম, “বিকাল পাঁচটায় পুকুরপারে এসো, কথা আছে”। পরদিন ছোটকে আইস্ক্রিম খাওয়ানোর শর্তে চিরকুটটা পাঠালাম। আমি পাঁচটার অনেক আগেই পুকুর পারে গিয়ে বসে আছি। বিকাল গরিয়ে সন্ধ্যা নামছে কিন্তু অর্পা আসলনা। অবশেষে হতাস হয়ে ফিরতেই দেখি অর্পা, সাথে ওর মা। আমার বুকটা এবার খুব জোরে ধুক্ করে উঠল। আমার লালপরীটি আমার কথায় সারা দিয়েছে। কিন্তু বেশিক্ষন থাকলনা। কিন্তু তাতে কি, এতাই আমার অনেক পাওয়া। বাসায় ফিরে আর পড়ায় মন বসাতে পারলাম না সেদিন। সারাক্ষন ওর কথাই ভাবলাম।
এরপর কয়েকদিন গেটের সামনেই দেখা হল, কিন্তু কথা হলনা। এবার ভাবলাম কথা বলতেই হবে। পরদিন আবার চিরকুটে লিখে পাঠালাম, তবে এবার একা আসতে বললাম। আমি যথারিতী অনেক আগেই হাজির। আবার বিকাল গরিয়ে সন্ধ্যা নামছে অর্পা আসছেনা। ভাবলাম ভাই আছে তাই হয়ত আসতে দেরি হচ্ছে । কিন্তু না, অর্পা আসল না। হিমালয় সমান ব্যাথা জেন আমার বুকের উপর ভেঙ্গে পরল।দুঃখ ভারাক্রান্ত মনে বাসায় ফিরলাম।
পরদিন আর গেটে নাগিয়ে পুকুর পারেই বসে রইলাম। সন্ধ্যা হয়েএল। মশার কামর সহ্য করতে না পেরে ফিরতেই দেখি অর্পা। কিন্তু আমাকে দেখেই কেনজানি ফিরে গেল। কিছু বুঝলাম না।পিছু ফিরে দেখি ওর ভাই। আমিও আর কোনদিকে না তাকিয়ে সোজা বাসায় চলে এলাম।
এরপর ছোটর বার্ষিক পরিক্ষার কারনে কয়েকদিন চিরকুট দিতে পারলাম না। ওর পরিক্ষা শেষহতেই নিশ্চিত হলাম, এবার বলতে পারব আমার মনের কথাগুল। কিন্তু সেরাতে আরেক দমকা হাওয়া সবকিছু এলোমেলো করে দিল। এবার বাবার কাঙ্খিত জেলায় ট্রান্সফার। আর স্থির থাকতে পারলাম না। রাতেই একটা লম্বা চিঠী লিখে ছোটোকে দিয়ে পাঠাব ভাবতেই মার কাছে শুনলাম ওরা সবাই দাদুর বাড়িতে গেছে। আমার মাথায় জেন আকাশ ভেঙ্গে পরল।
পাঁচদিন পর আমাদের জেতে হবে। এর মাঝে কিভাবে আমি অর সাথে যোগাযোগ করব ? আমি তো অর দাদু বাড়ির ঠিকানাও জানিনা। এভাবে বিভিন্ন রকম হতাসা আমাকে ঘিরে ধরল। কিন্তু যাওয়ার ঠিক এর দুদিন আগে খবর পেলাম ওরা ফিরে আসেছে। এই খবর টা শুনে আমার পাগল হওয়ার উপক্রম। হয়তো ওর বাবা মার আরো কয়েক দিন থাকার কথা ছিল কিন্তু অ শুধু আমাকে দেখার জন্যি তারাতারি ফিরে আসেছে। পরদিনই ছোটোকে দিয়ে একটা চিরচুট পাঠালাম, "বিকালে পুকুরপারে পাঁচটার অপেক্ষায়"। আমি রীতিমত আনেক আগেই হাজির। মনে মনে বার বার ভাবতে লাগলাম অকে কি কথা বলব, প্রথমে কি দিয়ে শুরু করব, অকে কি সরাসরি বলব আমার মনের কথাতা নাকি ও বুঝে নেবে। এরকম অকেক চিন্ত আমার মনে এসে মেঘের মত জমতে লাগল। ধীরে ধীরে সন্ধ্যা নেমে এল। আমি তবুও আশায় বুক বেধে রইলাম। দেখতে দেখতে সব পাখি নীরে ফিরে গেল, রাত হয়ে এল, কিন্তু অর্পা এলনা।
মনে মনে প্রচন্ড রাগ হল ওর উপর ।কেন আমার সাথে এরকম করল ও। তাহলে কি অর সবকিছু মিথ্যা ছিল ? ওর হাসি, ওর লজ্জাবতি মুখ, ওর লাল জামা পরে আসা এ সব কিছুই মিথ্যা ? এরকম অনেক প্রশ্ন আমার হৃদয়টাকে ক্ষতবিক্ষত করে দিল। চারিদিকের সবকিওছুই জেন মিথ্যা মনে হতে লাগল আমার কাছে।ভাঙ্গা মন নিয়ে বাসায় ফিরলাম।কাল সকালে চলে যাব।রাতে কিছুই গুছালাম না।
পরদিন সকালে একটু দেরিতে ঘুম থেকে উঠলাম। উঠে নাস্তা করে নিজের সবকিছু গুছালাম।বারান্দায় গ্রিল ধরে গলা উচু করে ওদের বাড়ির দিকে কয়েকবার উকি দিয়ে দেখার চেস্টা করলাম, কীন্তূ শেষ বারের মতও দেখতে পেলাম না ওকে। বাইরে ট্রাক রেডি।ছোটোর বিছানার চাদর টানতেই অনেকগুল কাগজ পরল মেঝেতে।কাছেগিয়ে হাতে তুললাম ওগুলো। তুলেই আবাক হয়ে কাগজের টুকরো গুলোর দিকে তাকিয়া রইলাম।সবার উপরে অর্পাকে লেখা আমার কালকের চিরকুট টা। বাকিগুল ওকে লেখা আমার সমস্ত চিরচুটগুল। আর কিছু ভাবতে পারলাম না।সুধু একবার হাসলাম। বাইরে থেকে বাবার ডাক শুনতে পেলাম “তারাতারি কর , সবকিছু রেডি”।“আসছি বাবা” বলে জিনিস পত্র নিয়ে বের হলাম। গেটে দাঁড়িয়ে একবার তাকালাম পঞ্চিমের গেটে। কেউ নেই, সুধু দখিনা বাতাসে গেট টা একটু নরে উঠল।
সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে ডিসেম্বর, ২০১৪ রাত ১০:২৯