somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আমার প্রিয় বাংলা ছবি

০৮ ই এপ্রিল, ২০০৯ রাত ১০:২৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

একটা সময়ে অনেক বাংলা ছবি দেখতাম। কখনো হল এ গিয়ে আবার কখনো বা বাসার ভিসি আর এ( তখন ভিসি আর এর যুগ ছিল)। তখন বয়স অল্প ছিল হিন্দী বা ইংরেজী বুঝতাম না। তাই বাংলাদেশের ঢিসুম ঢিসুম মার্কা ছবিগুলো বেশ ভালো লাগত। একুশে টিভি চালু হওয়ার পর বেশ কিছু সুন্দর বাংলা ছবি দেখার সুযোগ হয়। তার কয়েকটি ছবি একদম মনে রাখার মত। বাংলাদেশে একটা সময়ে বেশ সুন্দর ও মৌলিক ছবি তৈরী হত। কিন্তু এখন আর সেরকম সুন্দর ছবি হয় না। তাই আমার তালিকায় বলতে গেলে তেমন কোন আধুনিক ছবি নেই। আর বাংলাদেশের ভালো কোন মুভি ডাটাবেস নেই। তাই ছবিগুলোর ডাউনলোড লিঙ্ক দিতে পারলাম না। কারো কাছে যদি ডাউনলোড লিঙ্ক থাকে জানালে সাথে লিঙ্ক দিয়ে দিব। ঠিক একই কারনে বেশ কয়েকটি মুভির ইমেজ দিতে পারলাম না। সে জন্য আমি দুঃখিত। যাই হোক নিচে আমার খুব প্রিয় কয়েকটি বাংলা ছবির নাম দেয়া হলঃ

১. জীবন থেকে নেয়াঃ

এটি জহির রায়হান নির্মিত শেষ কাহিনী চিত্র।এটা দেখেছিলাম একুশে টিভির সৌজন্যে। এই চলচ্চিত্রটি ১৯৭০ - ১৯৭১ সালে মুক্তি পায়। সামাজিক এই চলচ্চিত্রে তৎকালীন বাঙালি স্বাধীনতা আন্দোলনকে একটি পরিবারের ভিতরের ঘটনাবলীর মাধমে তুলে ধরা হয়েছে। এই ছবির কাহিনী, পটভূমি , পরিচালনা এককথায় অসাধারন। বাংলাদেশের মানুষের দূর্ভাগ্য যে জহীর রায়হানের মত গুনী পরিচালক দেশ স্বাধীনের পরপরই নিখোজ হয়েছিলেন। তিনি বেচে থাকলে আমরা আরো বেশ কিছু ছবি নিয়ে গর্ব করতে পারতাম। ছবিটিতে অভিনয় করেছিলেন রাজ্জাক, সুচন্দা, রোজী সিদ্দীকী, খান আতাউর রহমান, রওশন জামিল, আনোয়ার হোসেন, আমজাদ হোসেন প্রমুখ।ছবিতে আমার সোনার বাংলা গানটি চিত্রায়িত হয়েছিল, যা পরবর্তীতে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় বাংলাদেশের জাতীয় সঙ্গীত হিসাবে স্বীকৃতি লাভ করে।

২. ছুটির ঘন্টাঃ


এটি আশির দশকে নির্মিত জনপ্রিয় বাংলা ছবি। ছবিটি ১২ বছর বয়সের এওকটি ছেলেক নিয়ে। ছেলেটি স্কুল ছুটি শেষে বাথরুমে আ্টকা পড়ে এবং ১০ দিন অমানবিক কষ্ট সহ্য করার পর মৃত্যুবরণের করে। ছবিটি পরিচালনা করেন আজিজুর রহমান। ছবিতে অভিনয় করেন মাস্টার শাকিল, রাজ্জাক, সুজাতা, খান আতাউর রহমান। এই ছবির শেষ দৃশ্যটা এখনো মনে দাগ কেটে আছে।


৩. পুরস্কারঃ


এই ছবিটাও বাচ্চাদের নিয়ে ছবি। এখন পর্যন্ত আমি ছবিটির কোন ডিভিডি পাইনি। কিন্তু অত্যন্ত হৃদয়গ্রাহী একটি ছবি। এই ছবিটি দেখেছিলাম একুশে টিভির সৌজন্যে। এই ছবির কাহিনী গড়ে উঠেছে একদল কিশোরকে নিয়ে যারা কিশোর সংশোধনমূলক কেন্দ্রে থাকে। তারা সকলেই এত অল্প বয়সেই অন্যায়ের কারনে এখানে এসেছে। তাদের এখানে থাকার পাশাপাশি অনেক ধরনের কাজ শেখানো হয়। কিন্তু তাদেরও কিশোরসুলভ মন আছে। চায় আদর, একটু আদর একটু ভালোবাসা পেলে তারা ভালো মানুষ হয়ে উঠবে। এটাই ছবির মূল কথা। এই ছবিতে অভিনয় করেছিলেন বুলবুল আহমেদ, শওকত আকবর, মাস্টার শাকিল, মাস্টার সুমন সহ আরো অনেকে।

৪. অশিক্ষিতঃ

এটিও আজিজুর রহমানের ছবি। এই ছবিতে অভিনয় করেছিলেন রাজ্জাক, মাস্টার সুমন। এই ছবির একটি গান 'মাস্টার সাব আমি নাম দস্তখত শিখতে চাই'- বললেই অনেকেই হয়তো ছবিটি চিনতে পারবেন। আশির দশকে আলোড়ন তোলা একটি ছবি। গ্রামের চৌকিদার রাজ্জাকের বন্ধু সুমন। সে সুমনের কাছ থেকে লেখাপড়া সিখতে চায়। সুমন তাকে শেখায়। একদিন গ্রামের মোড়লের ছলচাতুরী ধরে ফেলে সুমন। এ জন্য মোড়লের হাতে তাকে জীবন দিতে হয়। এ কারনে গ্রামে পুলিশ আসলে মামলা চালানোর জন্য স্বাক্ষর দিতে বললে কেউ স্বাক্ষর দিতে পারেনা। কারন গ্রামের কারো অক্ষরজ্ঞান নেই। স্বাক্ষর না দিলে মামলা হবে না। পার পেয়ে যাবে গ্রামের মোড়ল। তখন সুমনে্র চৌকিদার বন্ধু এগিয়ে আসে স্বাক্ষর দিতে।

৫. দীপু নাম্বার টুঃ

এই ছবিটি পরিচালনা করেছেন মোরশেদুল ইসলাম। মূল কাহিনী মুহম্মদ জাফর ইকবালের কিশোর উপন্যাস। এর মূল কাহিনী ভালো লাগলে ছবিটিও ভালো লাগবে। বিশেষ করে ছবির চিত্রায়ন, পরিচালনা, অভিনয় বেশ নজরকাড়া। ছবিতে অভিনয় করেছেন অরুণ, বুলবুল আহমেদ, ববিতা সহ আরো অনেকে। ছবির কাহিনী হল দীপুর বাবা সরকারী চাকরি করেন। তাই বিভিন্ন জায়গায় পোস্টিং এর কারনে প্রতিবছর স্কুল পরিবর্তন করতে হয়। সেখানে নতুন নতুন বন্ধু হয় দীপুর। দীপুর নতুন স্কুলের অনেক বন্ধুর পাশাপাশি তারিকের সাথে তৈরী শত্রুতা। এরই জের ধরে তারিক তার বন্ধুদেরকে নিয়ে প্রচন্ড মারে দীপুকে। তাদের স্কুলের হেডমাস্টার এসে তাকে কে মেরেছে জিজ্ঞাসা করলে দীপু বলে যে সে তাদের চিনতে পারেনি। তারিক যখন জানতে পারে যে দীপু তার নাম স্যারকে বলে নি তখন তার মনে অনুশোচনা হয়। ধীরে ধীরে দিপু ও তারিক একে অপরের ভাল বন্ধু হয়ে যায়। তারিক এর মাঝে গুপ্তধনের সন্ধান পায়। তারপর শুরু হয় আরেক এডভ্যাঞ্চার।

এই কয়েকটি নয় বাংলা আরো বেশ কয়েকটি ছবি দেখার মত। কিন্তু সেসব লিখতে গেলে ইতিহাস হয়ে যাবে। এই ছবিগুলো ছাড়াও আরো অনেক ছবি আছে যে গুলো বেশ ভালো লেগেছিল। যেমনঃ আগুনের পরশমনি, অরুনোদয়ের অগ্নিসাক্ষী, ওরা এগারোজন, মেঘের পরে মেঘ, শংখনীল কারাগার, ডুমুরের ফুল, মাটির ময়না ইত্যাদি।

আমি মুভি রিভিউ খুব ভালো লিখতে পারি না। তারপরও এই পোস্ট দেয়ার কারন হল আমার পাশের বাসায় একটি ছেলে থাকে সে ক্লাস নাইনে পড়ে। কিন্তু সে জীবন থেকে নেয়া ছবিটির নাম শুনে নি। প্রথমে খুব অবাক হয়েছিলাম। কিন্তু পরে মনে হল এখনকার ছেলেরা এইসব ছবি দেখবে কিভাব। কিছু কিছু ছবি হয়তোবা টিভিতে দেখায়। কিন্তু মাত্রাতিরিক্ত বিজ্ঞাপনের কারনে কোন ছবি দেখার ধৈর্য্য হয়না। এখনকার প্রজন্ম কম্পিউটার এর সামনে বড় হচ্ছে।তাছাড়া পড়াশুনার চাপ বাড়ছে। তাই তারা গল্পের বই, খেলাধূলা থেকে দূরে সরে যাচ্ছে। এখন খুব একটা ভাল বাংলা ছবি না তৈরী হলেও একতা সময়ে বেশ ভাল কিছু ছবি তৈরী হয়েছে।সেই ছবিগুলোর নামও অনেকে জানেনা। এবং অত্যন্ত দুঃখের সাথে উপলব্ধি করলাম বাংলা চলচ্চিত্রের জন্য ভালো কোন মুভি ডাটাবেস নেই। তাছাড়া বাংলা পুরাতন ছবিগুলোর ডাউনলোড তো দূরের কথা ইমেজ লিঙ্ক ও পাওয়া যায় না। এই ছবিগুলোর কথা কারো মনেই থাকবেনা। এখন আর মানুষের ঘরে ঘরে, গাড়িতে বাংলা গান বাজে না, বাজে হিন্দী গান। এখনকার নাটকগুলোতে ইংরেজীর প্রাধান্য দেখা যায়। অনেকগুলো নাটকতো বাবা মার সাথে দেখাই যায় না। মানুষজন তাই হিন্দী সিরিয়াল দেখে। সিনেমা হল এ বাংলা ছবি চলে না। ইংরেজী ছবি হলে হল উপচে দর্শক যায়। আমরা কি ধীরে ধীরে আমাদের সংস্কৃতি থেকে দূরে সরে যাচ্ছিনা? আর কয়েকদিন পরে হয়তোবা আমাদের কোন অস্তিত্বই থাকবে না।

সাহায্যঃ প্রথম আলো, উইকিপিডিয়া, কিডস বিডি নিউজ২৪
সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই এপ্রিল, ২০০৯ রাত ১১:০৫
২১টি মন্তব্য ৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৫ রাত ৮:২৪



চাইলে জিয়াউর রহমান ঢাকায় ঝাঁ চকচকে দালান কোঠা রাস্তা বানিয়ে সবার চোখ ধাঁধিয়ে উন্নয়ন করার বাহাদুরি করতে পারতেন। সেটা না করে তিনি ঘুরতে লাগলেন সারা দেশে, গ্রামে গঞ্জে গিয়ে খাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

জবাবদিহিতার অনন্য দৃষ্টান্ত

লিখেছেন মেঠোপথ২৩, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৫ রাত ৮:৪৫

অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টার পদ থেকে পদত্যাগ করার পর বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের অন্যতম কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক নাহিদ ইসলামের বিরুদ্ধে গুজব ছড়ানো হয় সোশ্যাল মিডিয়ার বিভিন্ন অ্যাকাউন্ট থেকে। সেসব পোস্টে তার বিরুদ্ধে বিপুল... ...বাকিটুকু পড়ুন

আপনি যাত্রা করবেন নাকি রাজনীতি করবেন ?

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৫ রাত ১০:১১


ইদানীং দেশে রাজনৈতিক দল গজানোর হার দেখলে মনে হয়, দেশের মাটিতে এখন ধান নয়, গজায় দল। ভোট এলেই বুঝি এই দলগুলো দুলে ওঠে, আর না এলেই পড়ে থাকে ফাইলের পাতায়।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের নেতারা যদি সত্যিই নির্দোষ হতেন, তাহলে তারা পালিয়ে গেলেন কেন?

লিখেছেন নতুন নকিব, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৫ রাত ১১:০৯

আওয়ামী লীগের নেতারা যদি সত্যিই নির্দোষ হতেন, তাহলে তারা পালিয়ে গেলেন কেন?

পলায়নপর ছবি কৃতিত্ব এআই

২০২৪ সালের ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পর আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতারা দেশ ছেড়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সুরের জাদু: গিটার বাজালে কি ঘটবে?

লিখেছেন শাম্মী নূর-এ-আলম রাজু, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৫ সকাল ৯:৪১



গাজীপুরের পুবাইলের পুরনো গির্জাটি রাতের আঁধারে যেন জীবন্ত হয়ে ওঠে। এই গির্জার নির্মাণকালে কিছু না জানা কুসংস্কারের অনুসরণ করা হয়েছিল। গাজীপুরের লোককথায় বলা হয়, এই গির্জার নিচে আটটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×