ইউনিভার্সিটি ফার্স্ট কি সেকেন্ড ইয়ারে পড়ি। তখন রেলের 'সুবর্ণ এক্সপ্রেস' সার্ভিস কেবল নয়া নয়া শুরু হয়েছে ঢাকা-চিটাগং রুটে। সৌদিয়া এস.আলম ছেড়ে আমি এবার নিপাট গুড বয়টি সেজে বাংলাদেশ রেলওয়ের মহা গুণমুগ্ধ নিয়মিত যাত্রী। কাঁটায় কাঁটায় পাঁচ ঘন্টায় গন্তব্যস্থল, বিনে টিকিটিযাত্রী ও হকারমুক্ত ফিটফাট পরিপাটি বগি, ঝকঝকে বাথরুম, সুসজ্জিতা উর্দি পরিহিতা সুদর্শনা হুরপরী যথা সব এটেন্ডেন্টস ও চেকার!! দেড়শো টাকায় আর চাই কি বাপু! বাস ছেড়ে ট্রেন ধরেছি বলে পরিবার খোশ, আর ফি মাসে দু দু'বারের অমন স্বর্গভ্রমন সুখ পেয়ে আমি বাগবাগ। কি সুখের মধুদিন সে আহা। ভ্রমনের পাঁচ ঘন্টাকেও আমি ভাগ ভাগ করে নিতেম। ১ম ঘন্টা থিতু হয়ে বসতে বসতেই আধো তন্দ্রায় কেটে যেতো। পরের সময়গুলান ১ঘন্টা 'মাসুদ রানা', পনেরো মিনিট চা, ১০মিনিট করে এক একটা সিগারেট, পনেরো মিনিট চিপস, বিশ মিনিটের নাস্তা, নানা মেয়াদি যাত্রীকুলে হুরপরী খোঁজ দ্য সার্চ, 'ডাইনিং টু বগি'-'বগি টু ডাইনিং' এভাবেই নানা 'ফেজ'এ ভাগ করা ছিলো। সময় যে কোন ফাঁকে পেরিয়ে যেতো টেরও পেতেম না মাইরি ( কাভি কাভি যাত্রার প্রাক্কালে বরিশাল কলোণী কি টিটিপাড়া ঢুঁ মারলেতো কথাই নেই। যদিও সে ভিন্ন প্রসঙ্গ এবং গেমু যথা অকালপক্ককূল ছাড়া তা বুঝা বাকীদের কম্মো নহে)। বিশেষ করে 'ডাইনিং কার'এ কাটানো সময়টা ছিলো আমার সবচাইতে প্রিয় মুহুর্ত। গপাগপ, আরে না না রসিয়ে রসিয়েই চেখে নিতেম জোড়া মাখনটোস্ট, কাটলেট আর ফ্রায়েড চিকেন। খাওয়ার পাশাপাশি সময়ক্ষেপনও যে ছিলো অন্যতম মুখ্য উদ্দেশ্য। একটার পর একটা অর্ডার চলতোই। তারপরে আয়েশ করে দুধচিনি 'ডাবল' চা আর সিগারেট। আহা মধু মধু। ভালো কথা, কেবল ভোজনরসিক ভাবলে আমার রাক্ষুসে হজমি অতি সামর্থকে চরম অপমান করা হবে। মানুষ পেট কিংবা গলাপুরে খায় আর আমি খাই মনের হাউসপুরে। খাওয়ার সময় এক আশ্চর্য রুহানি তাকত চলে আসে আমাতে। হারামীর মতন খেতে পারি মাইরি। যতক্ষন ইচ্ছা ততক্ষন খাই। থুঃ থুঃ মাশা আল্লাহ, মা শা আল্লাহ।
অমনি সুখে ভরা মধুময় সোনালী দিনগুলির কোন এক স্বর্গভ্রমনক্ষনে 'ডাইনিং'এ বসে কাটলেটের রস্বাদন করছি। হঠাৎ আধখাওয়া কাটলেটের মাংসের পুরে মনে হলো আঁশ জাতীয় কিছু একটা লেপ্টে আছে। কাঁটা চামচ খুঁচিয়ে উঠাতে গিয়ে দেখি শেকড় আরো লম্বা। মাংসের পুর কেটে কেটে আঁশ উঠে আসছে। যত টানছি আরো আসছে।আরো আসছে, আরো.............একি পুর এবার ফেটে ফেটে যাচ্ছে কেনো? ফেটে যা বেরুলো ভুত দেখেও অত চমকাতেম না ঈমানসে।
পুরো অর্ধেক ফ্রায়েড তেলাপোকা!!
হুটোপুটি, চিৎকার, চেঁচামেচি, হুলোস্থুল, হুমকি-ধামকি ম্যালা কিছু হলো। ডাইনিং ম্যানেজার নির্বিকার। বিক্ষুদ্ধ কাস্টোমারদের খিস্তির তুবড়ি। ব্যস সেদিনের অটুকুন, এই আর কি। যথারীতি বাংলাদেশ রেলওয়ে স্বগৌরবে এগিয়ে চলেছে আপন ঐতিহ্যে। বিচ্ছিন্ন কিংবা রোজকার এ ঘটনায়তো আর জীবন থেমে থাকেনা। দর্শকরাও হয়তো সব ভুলে গেছেন। তবে ক্ষতি যা হবার হয়েছে ঐ একজনেরি। বিশ্ববিদ্যালয়ের ঐ তরুন ছাত্রের কচি বুক ভেঙ্গে খানখান। চিরতরে বিনাশ হলো তার সেই ফি মাসের সুখের মধু ভ্রমন। যে খোকা তেলাপোকা দেখলে নিনাদে পাড়া জড়ো করে আজ সে.....................
বিঃদ্রঃ যারা বুঝেননি তাদেরকে অভিনন্দন। আর শায়মা'পু যথা যারা বুঝেছেন তাদেরকে 'ফার্দার নো মোর খোটা' সতর্কবাণী।
ইহা স্রেফ একখানি স্মৃতিচারণমূলক পোষ্ট। বাংলাদেশ রেলওয়ে ভ্রমনকে নিরুৎসাহিত করা মোটেই লেখকের উদ্দেশ্য নহে। শুনেছি আজকাল 'সোনার বাংলা' এবং আরো নয়া নয়া নামে না না স্বর্গভ্রমনের সেবা দেয়া হয়ে থাকে। ইদানিং প্রায় প্রায় ভাবি নেবো নাকি রিস্ক আরেকখানা...................
এই পোষ্ট লিখনের পুরোপুরি ক্রেডিটের হক্বদার একমাত্র সামুর 'প্রিন্স অব রম্য' গিয়াস উদ্দীন লিটন। তাহার একখানি 'সট্য ঘটনা অবলম্বনে' রচিত পোষ্ট পঠনে সুড়সুড়িত এবং প্রনোদিত হইয়া ইহা রচিত হইয়াছে। দিলেম তাহার সেই ঘিনঘিনে পোষ্টের চৌম্বক পেস্টাইয়া,
ঘটনাটা আসলে আমার
এক ক্লোজ বন্ধুর
রুটির সাথে খেয়েছিল
আধাআধি ইন্দুর।
এই গল্প করেছিলাম
ছবির সাথে কুক্ষণে
সব দোষ চাপাচ্ছে সে
আমার ঘাড়ে এক্ষণে।
এই গল্প শুনে ছবি
হেঁসে কুটি কুটি
সেই থেকে সেও খায়
ইন্দুর উইথ রুটি।
গল্পটা জমবেনা
যদি লিখি পদ্যে
মুল বর্ণনাটা তাই
দিলাম এবার গদ্যে।
আমার এক ফ্রেন্ড মেসে থাকে। এক দিন সে ফ্লোরে বসে আয়েশ করে আলুভাজি আর রুটি খাচ্ছিল। সে ছিল আবার বিরাট খাদক। একসাথে দুইটি রুটি রোল করে এক কামড় রুটি আর এক চামুচ ভাজি খাচ্ছিল। এমন সময় আমি দরজায় নক করি, সে এসে দরজা খুলে দেয়।
আমি তার খাটে বসি। সে যথারীতি খাওয়া শুরু করল। আমি খেয়াল করলাম তার মুখে রক্ত লেগে আছে। রহস্য উদ্ঘাটন করে পাওয়া গেল; সে যখন রুটির রোল রেখে দরজা খুলতে গিয়েছে এই ফাঁকে রুটির লুজ রোলের ভিতর একটি ইদুর ছানা ঢুকে যায়। বন্ধুটি খাওয়ার দ্বিতীয় পর্বের শুরুতে প্রথম কামড়েই ইদুরের কল্লা সহ অর্ধেক খেয়ে ফেলে।
আমার হল শুরু (বমন), তার হল (নাস্তা) সারা।
উল্লেখ্যঃ ছড়াখানিও গিয়াস লিটনের স্বরচিত। পোষ্টপঠনে কারো বমন ক্রিয়ার উদ্বেগ হইলে কিংবা লাঞ্চ-ডিনারের রিজিক দিন কতেকের জন্যে উঠিয়া গেলে পোষ্টদাতা কুনুভাবেই দায়ি নহে।
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই অক্টোবর, ২০১৮ সকাল ৭:২৭