নতুন জামা কাপড় বা দ্রব্যাদির ক্ষেত্রে আমি সাধারণত ‘অবসেসিভ-কম্পালসিভ ডিসঅর্ডার’ বা ওডিসি'তে তে ভুগি ! অনেকে আবার শুচিবায়ু বলে চেনেন ।
স্পষ্ট ভাষায় নতুন জামা কাপড় বা দ্রব্যাদির ক্ষেত্রে আমি বেশ সংবেদনশীল ।
এ রোগ যে আমার মাঝে প্রতিনিয়ত দেখা যায় তা কিন্তু নয় শুধুমাত্র নতুন জামা কাপড় বা দ্রব্য বস্তুর বেলায় এটি বেশ লক্ষণীয় প্রভাব ফেলে ।
নতুন জুতো কেনার পর অন্তত মাসখানেক ধুলোবালি লাগতে দিই না
রাস্তা ঘাট বা সময়ের বিড়ম্বনায় পড়ে দেখা যায় মাঝে মাঝে জুতো হাতে নিয়ে ও চলতে হয়।
ছোটবেলায় ইদের সময় বিটিভি'তে জাম্প কেডসের বিজ্ঞাপন দেখে হাউ মাউ করে এই কেডসের জন্য কান্নাকাটি করতাম অবশেষে জুতো হাতে আসার পর কোলবালিশের মতো জড়িয়ে ধরে রাতে ঘুমাতাম ।
বিন্দুমাত্র ধুলোবালি লাগতে দিতাম না।
কদিন পর ঠিক এই আমার মাঝে'ই এক ভিন্ন চরিত্র দেখা যেত সাধের জুতোকে জুতোপেটা করে ছাড়ছি নোংরা করে নাকুনি চুবনি খাওয়াচ্ছি । কেউ দেখলে বুঝতেই পারবে না মাসখানেক আগে এই জুতোটার জন্য আকাশ ফাটিয়ে চেঁচিয়েছি, মাটিতে গড়াগড়ি করে কেঁদেছি ।
এরুপ বহু খেলনার ক্ষেত্রে হয়েছে- বিমান, হেলিকাপ্টার, পশু-পাখি ইত্যাদি ইত্যাদি প্রথমে কদিন বেশ যত্নে রাখতাম কদিন পর নাড়ি ভুড়ি বের করে সেটাকে খেলনাবস্তু বানাতাম ।
একই সত্তায় দুই চরিত্র !
কখনো ‘অবসেসিভ-কম্পালসিভ ডিসঅর্ডার’ বা শুচিবায়ু কখনো 'বাইপোলার ডিসঅর্ডার' বা ম্যানিয়া।
এবার মুল আলোচনায় আসা যাক;
সচরাচর কোনো বিশেষ কারণে শাহাবাগ অঞ্চলে সপ্তাহে অন্তত একদিন যাওয়া পড়ে কিন্তু বই মেলার সময় বিশেষ কারণ থাকা সত্ত্বে ও বই মেলায় যাওয়া পড়ে না ।
কয়েকটি কারণের মাঝে ভিড় ভাট্ট্রা অন্যতম প্রধান একটি কারণ ।
শিশুকালে স্কুলের সিঁড়িতে জোর জবস্তি ধাক্কা ধাক্কি, হৈ-চৈ ভালো লাগলেও এ বয়সে এসে মানুষিকতার পরিবর্তন ঘটেছে এসব ভালো লাগে না ।
ধাক্কা ধাক্কি, হৈ-চৈ ভালো না লাগার অন্যতম কারণ ''শুচিবায়ু'' ।
ঠ্যালা ঠ্যালির ভিড়ে জামা কাপড়ের ভাঁজ নষ্ট হওয়া দাগ লাগা ছিঁড়ে যাওয়া ইত্যাদি মারাত্মক কষ্টকর আর বিরক্তিকর ব্যাপার স্যাপার ।
নতুন ব্লেজার আর নতুন জুতো পরে গত শুক্রবারে বই মেলার উদ্দেশ্যে বের হয়েছিলাম;
তার পূর্বে বন্ধুতালিকার কিছু প্রগতিশীল কবি সাহিত্যিকদের টেলিফোন নাম্বার সংগ্রহ করে সংরক্ষণ করা হয়েছিলো ।
বই মেলার দীর্ঘ সিরিয়াল আর জনসাধারণের উপচে পড়া ভিড় দেখে অতটুকু নিশ্চিত হলাম হাত পা বাঁচিয়ে আমি অন্তত সহিহ সুস্থ মোতাবেক বাসায় আসতে পারলে'ও আমার নতুন ব্লেজার আর জুতোর যে নাড়ি ভুড়ি বের হয়ে যাবে তা নিশ্চিত ।
অতঃপর বই মেলায় প্রবেশ না করে মুখ ফিরিয়ে রিক্সায় করে নীলক্ষেত চলে গেলাম । সেখান থেকে ১২০০ টাকায় একগাদা নতুন পুরতন বই কিনে বাসায় ফিরলাম।
এতো বিড়ম্বনা ঠেলে নতুন কোর্ট আর জুতো বাঁচানোর পর বিজয়ের হাঁসি মুখে নিয়ে ঘরে প্রবেশ করা মাত্র'ই মা চেঁচিয়ে বললেন -
''হায়, হায়, কোর্টের পিছনে কালি লাগলো ক্যামনে !''
সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ সকাল ৯:৪৩