somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বিদ্যুৎ সমস্যা- টোটকা ও দীর্ঘস্থায়ী সমাধান

১৪ ই এপ্রিল, ২০১০ সকাল ১০:২৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বর্তমানে বাংলাদেশে চলছে চরম বিদ্যুত সংকট।একদিকে প্রচন্ড গরম অন্যদিকে ঘনঘন লোডশেডিং এর কারণে মানুষের প্রাণ যায় যায়।বর্তমানে বাংলাদেশে বিদ্যুতের চাহিদা ৫ হাজার ৩শ মেগাওয়াট। অন্যদিকে উৎপাদন ৩ হাজার ৭শ থেকে ৩ হাজার ৮শ মেগাওয়াট। অর্থাৎ চাহিদা-জোগানের ফারাক ১ হাজার ৫শ মেগাওয়াট।এটি সরকারী হিসাব মতে। বেসরকারি হিসাবে অবশ্য বিদ্যুতের চাহিদা ৬ হাজার মেগাওয়াটেরও বেশি। সে ক্ষেত্রে ঘাটতি ২ হাজার থেকে ২ হাজার ২শ মেগাওয়াট।আমার এক বন্ধু বলেছিল বাংলাদেশের যে অবস্থা তাতে আমাদের উচিত ছিল শীতপ্রধান দেশ হওয়া।কারণ

শীতকালে কারেন্ট যায়না

শীতকালে লোডশেডিং না হওয়ার মূল কারণ চাহিদা কম থাকা-বেশিরভাগ বাসা বাড়ি বা অফিসে ফ্যান বন্ধ থাকা ইত্যাদি।কিন্তু তখনও যে লোডশেডিং হয়না তা নয়।সেই ঝড়ের বেশিরভাগ যায় গ্রামবাংলার উপর দিয়ে।আমি এর প্রতক্ষ সাক্ষী।দিনে কমপক্ষে ৮-৯ ঘন্টা কারেন্ট থাকেনা শীতকালেই।গ্রীষ্ম কালে যাও কারেন্ট তারা পায় তা সেচমৌসুমের সুবাদে।কারণ আমাদের নাগরিক সরকারের বা সুশীল সমাজের গ্রামবাংলার কথা মনে পড়ে বোরো বা আমনের সেচমৌসুমে।না হলে যে সুশিলদের পেটে ভাত পড়বেনা।আর পেটে ভাত না পড়লে টানা নানা টকশোতে অংশ নেয়ার শক্তি পাবে কোথায়??এই সেচমৌসুমে যৎসামান্য বিদ্যুতপ্রাপ্তি বাদে গ্রামেরমানুষদের জন্য বিদ্যুত

"সে তো থাকে সুশিল পল্লীতে ঐ শহরে, এই গ্রামে তাকে খুঁজে পাওয়া যাবেনা।"

বিদ্যুত এর এই সমস্যার আরেক করুণ শিকার এইচ.এস.সির পরীক্ষার্থীদের।এই গরমে তাদের যে কি পরিমান কষ্ট হয় তা বিগত জোট সরকারের আমলে আমি আর মহাজোট সরকারের আমলে আমার ছোটবোন টের পাচ্ছে হাড়ে হাড়ে।আমার বোনকে পালাক্রমে বাতাস করে যায় মা,বাবা আর আমি একটি হাতপাখা দিয়ে।বেশি জোড়ে বাতাস করা যায়না।কারণ মোমবাতি নিভে যায়।এভাবে বাংলাদেশের মধ্যম মধ্যবিত্ত পরিবারগুলা দিন কাটাচ্ছে।এই বিদ্যুত সমস্যা নিয়ে সামুতে একটি স্টিকি পোস্ট দেখেছিলাম।সমাধান গুলা আমার কাছে খুব একটা যৌক্তিক মনে হয়নি।তারপরও লিখেছেন তো।
প্রধানমন্ত্রী আসুন ব্লগে কথা বলি, আসুন কৃচ্ছতা সাধন করি
বিদ্যুতের যে অবস্থা তাতে এখন পাশাপাশি টোটকা সমাধান ও দীর্ঘস্থায়ি সমাধান জরুরি।না হলে আমাদের মৃতপ্রায় শিল্পকারখানা গুলি অচিরেই পুরা মৃত হয়ে যাবে।বেকার হয়ে যাবে হাজার মানুষ।দেশে একটি পুরা নৈ্রাজ্যের সৃষ্টি হবে।ফলে আমাদের সবাইকে বিদ্যুত সমস্যা নিয়ে ভাবতে হবে।
টোটকা সমাধানঃ(আপাতত সমাধান)
১.আপাতত আমদের সাপ্তাহিক ছুটির দিনগুলি কি ভিন্ন ভিন্ন বারে ফেলা যায়না?এতে আমাদের বিদ্যুতের চাহিদা একই সময়ে আকাশ ছুবেনা।শিল্পকারখানা গুলা একসাথে স্থবির হয়ে বসে থাকবেনা।কিছুটা হলেও লাঘব হবে সমস্যা।
২.সাধারনত আমরা যেসব এসি ব্যাবহার করি বাসাবাড়িতে সেগুলা ১-৫ টন হয়ে থাকে।যা চালাতে কারেন্ট প্রয়োজন হয় প্রায় ৩-২০ কিলোওয়াট।অথচ একটি বৈদ্যুতিক ফ্যানের কারেন্ট রেটিং মাত্র ৮০-২০০ ওয়াট।আমরা কি দেশের এই আপতকালিন সময়ে পারিনা নিজেদের সামান্য সুবিধা ছাড়তে?আপাতত আমাদের উচিত এয়ার কন্ডিশনার গুলার ব্যাবহার কমানো।গ্রিষ্মে আপাতত ফ্যান ব্যাবহার করাই ভাল।ফলে উপকার পাবে জনসাধারণ।সাশ্রয় হবে বিদ্যুতের।শপিং মল গুলাতেও কমাতে হবে অহেতুক আলোকসজ্জা ও সেন্ট্রাল এসির ব্যাবহার।
৩।সাধারন বাতির ব্যাবহার কমিয়ে বাড়াতে হবে এনার্জি সেভিং বাতি বা ফ্লুরসেন্ট লাইট।বাথ্রুম বা টয়লেটে দেখি অনেকে ৬০ ওয়াটের বাতি ব্যাবহার করেন যা অর্থহীন।এখানে ৪-৫ ওয়াটের এনার্জি সেভিং বাতি যথেষ্ট।
৪।সামুর সেই পোস্টে দেখেছিলাম বলা হয়েছে

স্কুল, কলেজ এবং বিশ্ববিদ্যালয়ে এক মাসের বিশেষ গ্রীষ্মকালীন ছুটি ঘোষণা করুন। বিদ্যুতের সাশ্রয় হবে, শিক্ষার্থীদের ভোগান্তি কমবে। রবীন্দ্রনাথের তোতাকাহিনী গল্পটির কথা মনে আছে আপনার ? গরমে স্কুল কলেজ করতে গিয়ে কত ছেলেমেয়ে অসুস্থ হচ্ছে - একবার খবর নিয়ে দেখুন। এক মাস স্কুল বন্ধ রাখলে শিক্ষার্থীদের লেখাপড়া চাঙ্গে উঠবে এমনটা ভাবার মতো আবার্চীন আপনি নিশ্চয়ই নন। সজীব ওয়াজেদ জয় বিদেশে পড়াশুনা করেছে - প্রয়োজনে উনার সাথে পরামর্শ করলেও আপনি নিশ্চিত হবেন , বৈরী পরিবেশে একমাস স্কুল বন্ধ রাখলে বিদ্যাবুদ্ধির কোনও ঘাটতি হয়না।

এই লাইন্টার সাথে একদম একমত না।নানা কারণ্রে আমাদের শিক্ষাজীবন এমনিতেই বড় তার উপর আবার নতুন করে বন্ধ????কতটুকুই বা কারেন্ট নেয় একটা স্কুল?এটা সমাধান হতে পারেনা আপাতত সমাধান ও না এটা।
দীর্ঘমেয়াদি সমাধান


১।মাইক্রো পাওয়ারপ্লান্ট তৈরি করতে হবে।আমাদের দেশের দির্ঘ ট্রান্সমিশন লাইনের কারণে প্রচুর বিদ্যুতের অপচয় হয় তাই অন্চল্ভিত্তিক গ্রিড ব্যাবস্থা চালু করতে পারা যায় কিনা দেখতে হবে।
২।প্রতিটি ভারি ও মাঝারি শিল্প কারখানায় স্টার্লিং ইঞ্জিন ব্যাবহার করতে পারা যেতে পারে।স্টার্লিং ইঞ্জিন এক ধরনের বহির্দহ ইঞ্জিন বলে এতে যেকোন ফুয়েল ব্যাবহার করা যেতে পারে।ভারি ও মাঝারি শিল্প কারখানার WASTE HEAT বা নির্গত তাপকে ব্যাবহার করে স্টার্লিং ইঞ্জিনএর সাহায্যে প্রায় ৫০০ কিলোওয়াট পর্যন্ত বিদ্যুত উতপাদন করা সম্ভব।উপরন্তু এই ইঞ্জিনের কর্মদক্ষতা প্রায় ৫০% এর বেশি যা ঈর্ষনিয়।
৩.বিকল্প শক্তির ব্যাবহার ও এ সম্পর্কিত গবেষনাকে উৎসাহিত করতে হবে।বিশেষ করে প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রজেক্ট ও থিসিস হিসেবে সোলার ও ঊইন্ড এনার্জির সাহায্যে বিদ্যুত উতপাদন কে গুরুত্ব দিতে হবে।সোলার এনারজি নিয়ে বাংলাদেশে যেসব FYP হয়েছে সেগুলার প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে।যেমন 3 dimensional solar tracking device এর সাহায্যে বিদ্যুত উতপাদন নিয়ে কাজ করতে হবে।
৪.ঊইন্ড এনার্জি নিয়ে গবেষনা করতে হবে।যদিও বাংলাদেশে এর প্রয়োগ নিয়ে সন্দেহ আছে।তবুও সমুদ্রের তীর ও উপকুলে এ নিয়ে কাজ করা যেতে পারে।কুতুবদিয়ায় একটি ঊইন্ড এনার্জি প্ল্যান্ট আছে।কিন্তু এর রক্ষনাবেক্ষন নিয়ে চলছে তামাশা।বাধ নষ্ট হয়ে যাওয়ায়
এটি ডুবে যেতে পারে।সাইক্লন এর বিরুদ্ধেও নেই পর্যাপ্ত ব্যাবস্থা।প্রতি একক বিদ্যুত উৎপাদনে ডিসেল জেনারেটরে লাগে ৪০ টাকা কিন্তু উইন্ড এনার্জি প্ল্যান্টে লাগে মাত্র ৮ টাকা...!!!আশার কথা আমাদের পাশের দেশ ভারত ফি বছর ১২০০০ মেগাওয়াট বিদ্যুত উৎপাদন করে।সুতরাং সম্ভাবনা আছে আমাদেরো।তাছাড়া কুতুব্দিয়ার প্ল্যান্টের ক্ষমতাও ১ মেগাওয়াট।তাই এর সঠিক রক্ষনাবেক্ষণ জরুরি।
৫.নতুন পাওয়ার প্ল্যান্ট স্থাপন করতে হবে।এ জন্য সঠিক Location বাছাই করতে হবে।কাপ্তাই জলবিদ্যুত প্রকল্পের মত Ecological balance নষ্ট করে এমন লোকেশন কাম্য নয়।
সবশেষে জনকল্যাণে কিছু বিষয়ে ঝুঁকি নিতে হবে। উদ্দেশ্য সৎ হলে এবং সৎসাহস থাকলে ঝুঁকি সত্ত্বেও অনেক সিদ্ধান্ত দ্রুততার সঙ্গে নেওয়া যায়। (সাপ্তাহিক ২০০০)
কিন্তু আমাদের নীতিনির্ধারক মহল কতটা সৎসাহসি সন্দেহ আছে।এর আগেও খাম্বায় খাম্বায় আটকে গিয়েছে আমাদের বিদ্যুতের স্বপ্ন।ক্কিন্তু আমাদের ভবিষ্যতের জন্য মাথে নামতে হবে এখনই।
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মায়ের কাছে প্রথম চিঠি

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৩ ই এপ্রিল, ২০২৫ দুপুর ১২:০৪

Ex-Cadets Literary Society নামে একটি ফেসবুক গ্রুপ আছে, আমি যার সদস্য। এই গ্রুপে বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কারপ্রাপ্ত স্বনামধন্য লেখক ও এক্স-ক্যাডেট শাকুর মজিদ একটি পোস্টের মাধ্যমে জানিয়েছেন যে ক্যাডেট কলেজ... ...বাকিটুকু পড়ুন

ট্রানশিপমেন্ট বাতিলের পর বাংলাদেশ কী করতে পারে!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৩ ই এপ্রিল, ২০২৫ দুপুর ১:২৩

১.০
আমি তখন সাউথ কেরিয়ার কিউং হি বিশ্ববিদ্যালয়ে ইন্ডাস্ট্রি ও ট্রেড পলিসিতে মাস্টার্স করছি। আমার একটা কোর্সের নাম ছিল থিওরি অ্যান্ড প্রকটিসেস অব গ্লোবাল ট্রেড গভর্নেন্স। কোর্সটি পড়াতেন প্রফেসর Wook Chae... ...বাকিটুকু পড়ুন

সময় থাকতে মনা হুশিয়ার......

লিখেছেন জুল ভার্ন, ১৩ ই এপ্রিল, ২০২৫ বিকাল ৩:২৪

সময় থাকতে মনা হুশিয়ার......


ফ্যাসিবাদের দুঃশাসনকালে সময়ের চলমান প্রক্রিয়ায়, নাগরিক দ্বায়িত্ব পালনে দেশের প্রয়োজনে রাজপথে আমরা অন্যায়ের প্রতিবাদ করেছি। কীবোর্ডকে অস্র বানিয়ে স্বৈরশাসকের হৃদয় ফালাফালা করে দিয়েছি। ফলে... ...বাকিটুকু পড়ুন

চৈত্র সংক্রান্তি থেকে পহেলা বৈশাখ বহমান আনন্দধারা।

লিখেছেন মনিরা সুলতানা, ১৩ ই এপ্রিল, ২০২৫ সন্ধ্যা ৭:২৮


চৈত্র মাসের বাতাসে যে সুগন্ধা হওয়ার দোলন সে ব্যাপারটার প্রশান্তি অনন্য! মাঝ দুপুরের তপ্ততা, নুয়ে আসা বিকেলে আচমকা দুরন্ত দুষ্ট ঝড়, অথবা সন্ধ্যার আজানের ঘরে ফেরার ব্যস্ত ধ্বনি।... ...বাকিটুকু পড়ুন

গাজা, ওসামা, পাকিস্তান, নাজি : বাংলাদেশে মাল্টিভার্স পতাকা বিপ্লব !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৩ ই এপ্রিল, ২০২৫ রাত ৮:১২


গত একসপ্তাহ ধরে ফিলিস্তিনের গাজাবাসীর উপর ইসরায়েলের হামলার প্রতিবাদে সারা বাংলাদেশে প্রতিবাদের ঝড় বয়ে গেছে। কিন্তু এই প্রতিবাদের মিছিলে এমন সব পতাকা, সিম্বল ও ছবি হাতে প্রতিবাদীরা মিছিল করেছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×