ওয়াশিংটনের আব্রাহাম লিঙকনের চমৎকার ভাস্কর্য আছে। আবার পুরো কিউবা জুড়ে ফিদেল ক্যাস্ট্রোর কোনো স্ট্যাচু নেই। কিন্তু পুরো কিউবার বুক জুড়ে তার ইমেজ ছড়িয়ে আছে। ফিদেল নিজেই নিষেধ করে গিয়েছেন- তিনি পাথরে থাকতে চাননা। মানুষের বুকে থাকতে চান। জার্মানে এরদোগানের স্বর্ণের “অবয়ব” বানানো হয়েছিলো। এখন নেই। মুসলিম মনীষী রুমি, হাফিজের ভাস্কর্য সহ নানা মুসলিম দেশে বিখ্যাত মানুষের ভাস্কর্য আছে। কারণ-ভাস্কর্য নান্দনিকতা বৃদ্ধি করে -কথা সত্য। কিন্তু এই নান্দনিকতা আপনি কোথায় খুঁজছেন!!!
কোন এক বিখ্যাত কবির পদ্যের লাইন- "রাতে মশা, দিনে মাছি -এই নিয়ে ঢাকায় আছি"। আরেক বিখ্যাত সাংবাদিক লণ্ডন পত্রিকায় রিপোর্ট করেছিলেন- ঢাকা হলো মশা, মাছি আর মানুষের শহর। এই মশা-মাছির পাশাপাশি যেখানে প্রতিটি অফিস দূর্নীতিতে মেডেল পায়- সামান্য বৃষ্টি হলে ঢাকা শহর নর্দমার পানিতে সয়লাব হয়ে যায়-ভার্সিটির শিক্ষকরা অন্যের থিসিস চুরি করে বেড়ায়, অফিসগুলো ঘুষের আড়ৎ বানায়-খাবারে ভেজাল মিশায়- সরকারি হাসপাতালের করিডোর গুলো অন্ধকারে ঢেকে যায়, একটা সীটের জন্য রোগীর স্বজনদের রোনাজারি-হাহাকার-আর্তনাদ শুনা যায়- ভার্সিটিতে ধর্ষণ আর মাদ্রাসায় বলাৎকারের বিভৎস ঘটনা ঘটে যায়- সেখানে ভাষ্কর্যের নান্দনিকতা মানে হলো টাট্টিখানায় বসে গোলাপের খুশবু নেওয়া । বঙ্গবন্ধু আজ বেঁচে থাকলে বলতেন- তোমরা যতনা নান্দনিকতা বাড়ানোর জন্য ভাস্কর্য বানাচ্ছো। তার চেয়ে বেশি বানাচ্ছো আমাকে তেল মারানোর জন্য। গতকাল দু মিনিটের তাঁর একটা ভাষণ শুনছিলাম- সেখানে তিনি একেবারে কান্নাজড়িত কন্ঠে বলছেন- ভিক্ষা করে প্রায় তিনশত কোটি টাকা আমি বিদেশ থেকে আনলাম- কিন্তু চোরের দল সব লুঠ কইরা খাইলো। সবাই পায় সোনার খনি, আমি পেয়েছি চোরের খনি। আর এই চোরগুলো কোনো মেহনতি মানুষ, কৃষক, শ্রমিক না- এরা হলো সব শিক্ষিত চোর। বঙ্গবন্ধু তৈলমারা এইসব শৈল্পিক শিক্ষিত চোর বাটপারদের ভালোই চিনতে পেরেছিলেন।
কিন্তু মূল কথা হলো- এতো মুসলিম দেশে এতো মুসলিম শাসক, মনীষার ভাস্কর্য যদি থাকে তবে -এই দেশে বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য থাকলে সমস্যা কি? পলাশীর মোড়ে শামীম সিকদারের বানানো বঙ্গবন্ধুর চমৎকার একটা ভাস্কর্য আছে। এতোদিন কোনো সমস্যা হলোনা। আজকে হঠাৎ করে হচ্ছে কেন?
হুজুরদের কথা- সাদ্দাম, গাদ্দাফি, এরদোগান, রুমির ভাস্কর্য থাকা না থাকা ব্যাপার না। আমাদের দেখতে হবে- নবী-রাসুল, খলীফা-সাহাবাদের কোনো ভাষ্কর্য আছে কিনা? কারণ-রাজা বাদশাহরা আমাদের আদর্শ না। আমাদের আদর্শ নবী রাসুল। যেটা ইসলামে নেই- সেটা এই দেশে থাকতে পারবেনা।
কিন্তু ইসলামেতো শিশু বলাৎকার নেই, মক্তবে ছোট শিশুকে বেদম প্রহার নেই, ঘুষ নেই , দূর্নীতি নেই। এমনকি নবী সাঃ কোরআন পাঠ পর্যন্ত ধীরে ধীরে করতে নির্দেশ দিয়ে বলেছেন- রব খুব গোপন প্রার্থণাও শুনতে পান। ধর্ম আত্মপ্রচারের জন্য নয়। এটা হলো আত্মশুদ্ধির জন্য। কিন্তু এসব কিছুইতো পুরোদমে চলছে। ঘুষ চলছে, দূর্নীতি চলছে, শিশু বলাৎকার চলছে, রাতের বেলা হাসপাতালের পাশেই মাইক বাজিয়ে বিকট শব্দে ওয়াজ মাহফিল চলছে। বর্তমান সময়ের ওয়াজ মাহফিল হালাল এন্টারটেইনমেন্ট ছাড়া আর কিছুই নয়। শুধু দোষটা হলো ভাষ্কর্য বানানোর? আর মুর্তি পুজা করার। দেশের নব্বই ভাগ মুসলমান, দশভাগ হিন্দু। পুজার জন্য কি এরা মুর্তি বানিয়ে উপাসনা করতে পারবেনা। এরা কি দেশের নাগরিক না?
হুজুর বলেন- বড় কঠিন কথা বলেছেন। মন্দিরে মুর্তি বানানো যাবেনা। পুজা করা যাবেনা। সেকথাতো কোথাও বলিনি। বরং প্রয়োজনে ওদের উপাসনার কাজ নির্বিঘ্ন করা-প্রতিটি শাসকের দায়িত্ব এবং এই দায়িত্বের সাথে আমরা পুরোপুরি ঐক্যমত পোষণ করি। মন্দিরে মুর্তি থাকবে থাকুক। তাতে আমাদের কিছুই যায় আসেনা। শুধু কমন মহল্লায়, চলার পথে যেন কোনো মুর্তি- ভাষ্কর্য না থাকে। ইসলামী রাষ্ট্রে এসব থাকতে পারবেনা।
কিন্তু দেশতো ইসলামী রাষ্ট্রনা। আপনারা পারলে ক্ষমতায় যান। তারপর নিজের ইচ্ছেমতো আইনকানুন বানান। আর মাটির-পাথরের মুর্তিতো একেবার অক্ষম একটা জিনিস। এটা মক্কার প্রবল ক্ষমতাবান কুরাইশ সর্দাররাও বুঝতো। তাই, ইসলামে আইডেলটির বিরুদ্ধে হওয়া জিনিসটা শুধু মুর্তি উপাসনার ভিতর ছিলোনা- এটা ছিলো কোনো ক্ষমতা, কোনো রাজা -বাদশা- শাহানশাহ, অর্থ, বিত্ত, পদবী- কারোরই পুজা না করা। এই জিনিসটাই ছিলো- ইসলামের সবচেয়ে বড় বিপ্লব। যা কুরাইশদের মাঝে আগুন ধরিয়ে দিয়েছিলো। মুর্তি পুজা হলো কি হলোনা তাতে আসলে আবু জেহেলদের তেমন কোনো মাথাব্যথা ছিলোনা। আল্লাহর কাছে অনুগ্রহ না চেয়ে অন্য যেকোনো কিছুর প্রতি অনুগৃহিত হওয়াটাই হলো আসল পুজা। একজন ডিসি, এসপি, এমপি, মন্ত্রীদের পাশে কাচুমুচু করে দাঁড়িয়ে থাকাটাই পুজা। মাস্তান- পাতি মাস্তান স্কুলের চেয়ারে বসে থাকেন- আর একজন শিক্ষাগুরুর দাঁড়িয়ে থাকাটাই হলো- ভয়ের পুজা। শুধু মুর্তিগিরি পুজা না-পিরগিরি, মাজারগিরি এসব কিছুই পুজা। একটা পাথরের তৈরী ভাষ্কর্যের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে গেলেন- কিন্তু দেশ জুড়ে ভয়ের পুজার বিরুদ্ধে, মাজার পুজার বিরুদ্ধে, পীর পুজার বিরুদ্ধে- শিশু বলাৎকারের বিরুদ্ধে - দুর্নীতিের বিরুদ্ধেতো দাঁড়াতে পারলেন না। শুধু লিল্লা, যাকাত , ফিতরা খেয়ে জীবন পার করে দিলেন।
হুজুর বললেন- আমরা লিল্লা- যাকাত -ফিতরা খেয়ে এতিম খানা চালাই। আর আপনারা শিক্ষিত হয়ে কোটি কোটি টাকা দেশ থেকে পাচার করে - বিদেশ গিয়ে বাড়ি ঘর বানান। আর খোঁজে খোঁজে সব দোষ শুধু মোল্লাদের ঘাড়ের উপর চাপান। দুদক- কোর্ট-কাচারি, অফিস আদালত, টেলিভিশন, মিডিয়া এসবের কোনো কিছুইতো আর মোল্লারা চালায়না। আপনাদের মতো শিক্ষিতরাই চালায়। আমরা অবুঝ, মুর্খ ভাস্কর্যের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছি। আপনার শিক্ষিত, বুদ্ধিমান-বাকিগুলোর বিরুদ্ধে আপনারা দাঁড়ান- নিষেধ করেছে কে?