প্রাসঙ্গিক ভাবনাঃ
এক) ট্রাম্প হলো বিগত ত্রিশ বছরে আমেরিকার একমাত্র প্রেসিডেন্ট যিনি নতুন করে কোনো যুদ্ধে জড়াননি। কিন্তু তিনি যুদ্ধ করেছেন- বিজ্ঞানের বিরুদ্ধে। মাস্কের বিরুদ্ধে। নিজ দেশের মানুষের জীবনের বিরুদ্ধে। ফলে, হার্ভার্ড, এমআইটি, স্টানফোর্ডের মতো বিশ্ববিখ্যাত বিশ্ববিদ্যালয় যে দেশে আছে- তার এই একগুয়েমির কারণে সেই দেশে করোনায় মারা গেছে ২ লাখ ৩৩ হাজার মানুষ। এবারের নির্বাচনে ট্রাম্প যদি হারেন। এই একগুয়েমির জন্যই হারবেন।
দুই) ফ্রান্সের পণ্য বয়কটের জন্য আমরা জোর দাবী তোলেছি। কিন্তু ফ্রান্স থেকে আসা রেমিটেন্স বয়কটের কথা কেউ বলিনি। কারণ-এতে নিজের উপর চাপ বাড়বে। ফ্রান্সের উপর না। আমরা জাতে মাতাল তালে ঠিক।
তিন) বর্তমান বিশ্বে চারটি কম্যুনিস্ট স্ট্যাটস হলো- চায়না, কিউবা, লাউস, ভিয়েতনাম। কম্যুনিস্টরা নিজেদের মানবতাবাদী বলে। কিন্তু চায়নার উইগুরে প্রতিটি মুসলিম পরিবার চায়নার সোলজার দ্বারা নির্যাতিত। মুসলিম রমনীকে চায়নীজ সোলজারের সাথে রাত পার করতে হয়। কোরআন পাঠ করা নিষিদ্ধ করেছে। ঘর থেকে খুঁজে বের করে অসংখ্য কোরআন শরীফ কম্যুনিস্ট সোলজাররা পুড়িয়ে দিয়েছে। জীবনের ভয়ে কোরআন শরীফ বালতির ভিতর বেঁধে পানিতে ডুবিয়ে রাখছে উইগুর মুসলিমরা । মানবতাবাদী কম্যুনিস্টদের এ ব্যাপারে মুখ বন্ধ। প্রতি মুহুর্তে ৮০ মিলিয়ন সংখ্যালঘু চায়নীজ মুসলমানদের আর্তনাদের জন্য- কোরআন শরীফ পুড়িয়ে ফেলার জন্য আমরা কেউ চায়না পণ্য বয়কটের কথা বলিনি। অথচ, নিজ দেশেই কোরআন অবমাননায় একভাইকে মেরে আমরা পুড়িয়ে ফেলেছি। কারণ- এই ভাইকে মেরে পুড়িয়ে ফেললে ঈমান শক্ত হয়। আর চায়না পণ্য বয়কট করলে আমরা ক্ষতিগ্রস্থ হই । কারণ- আমাদের টুপি থেকে তাসবিহ পর্যন্ত যে চায়না লেগে আছে।
চার) হিন্দু কর্ত্বক বাবরি মসজিদ ধ্বংস-আমাদের কলিজায় লাগে। কিন্তু সৌদি এয়ারস্ট্রাইকে নর্থার্ন ইয়েমেনের মসজিদ, হাসপতাল চুর্ণ হয়ে গেলে, শিশুরা মারা গেলে আমাদের বুক তেমন করে বিদীর্ণ করেনা। কারণ- বাবরি মসজিদ হলো সেলিব্রেটি মসজিদ। আর ইয়েমেনের মসজিদগুলো হলো ভুখানাঙ্গা গরীব ইয়েমেনিদের মসজিদ। তাছাড়া-মুসলমান মুসলমানের মসজিদ ধ্বংস করছে-ঠিক আছে। নবীর তো আর অপমান করছেনা।
পাঁচ) গরু খাওয়ার অপরাধে গত সপ্তাহেই এক মুসলমান পরিবারকে ঘর ছাড়া করেছে- যোগীর রাজ্য গুজরাতে। এই পরিবারের ভাগ্য ভালো । খুন করে ফেলেনি। অথচ, ভারতের ফাইভস্টার হোটেলগুলো বীফ ছাড়া চলেনা। অসংখ্য হিন্দু মানুষ ভারতে গরু খায়। কিন্তু উগ্রবাদী হিন্দুদের এতে যায় আসেনা। কারণ- হিন্দুরা গরু খেলে খাক। এতে তো আর রামের অবমাননা হয়না।
ছয়) হেল্থ সেক্টর হলো বাংলাদেশের অন্যতম দূর্নীতিগ্রস্ত সেক্টর। মুমুর্ষু রোগীকে হাসপাতালের বারান্দায় রাত কাটাতে হয়। আর হেল্থ সেক্টরের শীর্ষ থাকা মানুষগুলো নিউইয়র্কে হাইরাইজ ভবনের মালিক হয়। এই বিশাল দূর্নীতি দমনে তাদের কোনো কথা নেই। শুধু হিজাব আর পায়ের টাখুনর উপর কাপড় পরানোটাই আসল কথা। কারণ- আমজনতাকে এটা বলে খুব সহজেই ভুলানো যাবে। আর বেহেস্তেও একটা রুমের অগ্রিম বরাদ্দ দেয়া যাবে।
সাত) ট্রাম্পকে দিয়ে শুরু করেছি। উনাকে দিয়েই শেষ করি। আমেরিকার ৪৫ জন প্রেসিডেন্টের মাঝে সবচেয়ে অনৈতিক প্রেসিডেন্ট হলেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। তারপরও লাখে লাখে না কোটি কোটি ধর্মপ্রাণ খৃষ্টান ধর্মাবলম্বীরা ট্রাম্পকে পছন্দ করে। কারণ- ট্রাম্প যতই অনৈতিক কাজ করুক না কেন - যতই দুশ্চরিত্রবান হোক না কেন-যতই মানুষকে ঘৃণা করুক না কেন- সবকিছুর শেষে উনিতো বাইবেল ধরেই চুমু খান। আমরা যদি আমাদের আত্মসমালোচনা করতে না পারি- তবে আমরা সবাই উপরে চরিত্রবান হলেও ভিতরে আসলে একেকজন ডোনাল্ড ট্রাম্প।