প্রসঙ্গটা আলোচিত-সমালোচিত-সৃজনশীল মানুষ যুগল নিয়ে, “মিথিলা-সৃজিত” কে নিয়ে, এজন্য যাদের ‘সমস্যা’ আছে, না পড়তে পারেন!
প্রসঙ্গটা তুলতে অথবা প্রসঙ্গটা নিয়ে লিখতেও ইচ্ছে করছিলো না। কিন্তু, অনেকটা স্ব-জাগতিক হয়ে ই লেখেছি কথাগুলো।
বাংলাদেশের মিডিয়া জগত ও এর সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলোতে ‘মিথিলা’ নামটা খুব দাপটের সাথে চলছিলো, খুব সম্মান-শ্রদ্ধা-ভালোবাসা-দৃষ্টিনানন্দিকতা সহ বেশ কিছু বিশেষণ ব্যবহার করা হচ্ছিলো ততক্ষণ পর্যন্ত, যতক্ষণ পর্যন্ত ‘মিথিলা’ একজনের ঘরের স্ত্রী ছিলো, একজন পুরুষের পাশে দাঁড়িয়ে ছিলো বট গাছের ছায়ার মতো।
কিন্তু, আশ্চর্যভাবে অবাক করার মতো নির্লজ্জ বিষয় হলো যে, আমরা, আমি এবং আমার চারপাশে থাকা গুটি কয়েক, বিশ্বাস না হলে মেপে দেখুন, গুটিকয়েক নালায়েক-খবিস ছেলে-মেয়ে শুরু করে কিছু দৃষ্টিকটু এবং বাজে মনমানসিকতার সব কর্মকান্ড।
এগুলোতে আবার যুক্ত হয়েছে এবং হচ্ছে ‘তথাকথিত কিছু পেইজ (নাম আর সেগুলো লেখলাম না),’ আর, আমাদের ছেলে এবং মেয়েরা সেগুলো শেয়ার করছে, টাইমলাইনে রাখছে, মজা করছে... ইত্যাদি ইত্যাদি।
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর সম্ভবত একটা কথা বলেছিলেন, যা সম্ভবত এরকম ছিলো যে, “মেয়েরা যতদিন নিজেদের সম্মান করতে না শিখবে, ততদিন পর্যন্ত ওরা পায়ের নিচে পড়ে থাকবে!”
যা বলছিলাম,
মিথিলা'র সাথে তাহসানের বিয়ে ভেঙে যাবার পর থেকে আশ্চর্য রকমের লজ্জাহীন ভাবে আমার দেশের ছেলে এবং মেয়ে স্ট্যাটাস এর মাধ্যমে, নিজেদের আড্ডা-ঠাট্টা-গপিস এর মাধ্যমে, এমনকি নিজেদের ব্যক্তিগত জীবনেও ‘মিথিলা’কে যা-না-তা তারা বলে যাচ্ছে, রটিয়ে যাচ্ছে।
দেখুন, আমর কিন্তু কারো বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ নেই এবং আমি এটাও জানি যে, আমি আমার লেখা দিয়ে সমাজের কোনো বিরাট কিংবা আমূল পরিবর্তন আনতে পারবো না।
কিছু কিছু স্পষ্টভাষী লোকের ভাষায়, “আমার লেখা দিয়ে কারো কোনোও বালও ছিঁড়বে না!”
বাস্তব এবং সত্য, তবে আমি লিখছি এবং ইন শা আল্লাহ লিখবো এই কারণে যে, আমি লিখতে পারি এবং সত্য বলতে পারি।
চুমু-চুমু আলাপে, কুৎসা রটনার মতো বাজে জিঘাংসা আমার চরিত্রে নেই।
সবচেয়ে খারাপ লাগে আর কষ্ট লাগে যখন দেখি, এই যুগের তথাকথিত কিংবা খুব ই নিচু মানসিকতার মেয়েরা ই তাদের ‘জাতি’র মেয়েকে তুলোধুনো করছে কথার দ্বারা, ঠাট্টার দ্বারা, আড্ডার দ্বারা এবং লেখার দ্বারা!
‘মিথিলা’ এখন তাহসান এর স্ত্রী না থাকায় উনার সম্মান-শ্রদ্ধা-মর্যাদা-যোগ্যতা-ব্যক্তিত্ব সব নষ্ট হয়ে গিয়েছে?
‘মিথিলা’ কি তবে এতোদিন একজন অগাছা-পরগাছা হয়ে বেঁচে ছিলো?
‘মিথিলা’ কি তবে এতোদিন বোঝা হয়ে ছিলো তাহসান নামক একজন পুরুষের ঘাড়ে?
‘মিথিলা’ কি এতোদিন নিজের হাতের দ্বারা, নিজের যোগ্যতার দ্বারা, নিজের ব্যক্তিত্বের দ্বারা কোনো কিছু ই কি অর্জন করতে পারে নি?
‘মিথিলা’ কি তবে একজন পরনির্ভরশীল ব্যক্তি?
‘মিথিলা’ কি বাংলাদেশের সমাজে একজন স্বনির্ভর মানুষ হয়ে দাঁড়ায় নি?
এসব প্রশ্নের উত্তর যদি ‘হ্যাঁ’ হয়, তবে দয়া করে, অনুগ্রহ করে, তাঁর ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে ঘাঁটাঘাঁটি বন্ধ করুন। আর, যদি এর উত্তর ‘না’ হয়, তবে ‘না’ বলা ব্যক্তিদের সাথে তর্কে আমি যাবো না।
যদিও, কিছু লোক এখানে, এই লেখায় নির্লজ্জের মতো ‘হা-হা-হা’ হেসে নিজেদের নির্বুদ্ধিতার প্রমাণ বরাবরের মতো দিয়ে যাবেন।
আর কিছু লোক তো বলে ই দিবেন যে, “আমি নারীবাদী,” “মাইয়াগা তো রঙ তামাশা করতে আসছি,” “পাবলিসিটি করতে আসছি নিজের,” “মার্কেট পাইতে আসছি” ইত্যাদি ইত্যাদি ইত্যাদি!
‘মিথিলা’ এখন এমন একটি দেশে, এমন একটি সমাজে বাস করে... যেখানে, যে ই দেশে, “একজন নারী প্রধানমন্ত্রী,” “একজন নারী বিরোধী দলীয় নেত্রী,” “একজন নারী জাতীয় সংসদ এর স্পিকার।”
বাংলাদেশ ‘নারী শক্তির জাগরণী’র দেশ, বাংলাদেশে ‘নারী’রা নিজ নিজ যোগ্যতা-মেধা-ব্যক্তিত্ব-মেধা-বুদ্ধি দিয়ে নিজেদের জায়গায় স্ব-প্রতিষ্ঠিত।
কারো একজন স্ত্রী হয়ে, কারো একজনের মা হয়ে, কারো একজন মেয়ে হয়ে, কারো একজনের বোন হয়ে নয়, উঁনারা, নারী'রা, নিজ নিজ যোগ্যতা বলে স্ব স্ব প্রতিষ্ঠানে প্রতিষ্ঠিত।
সম্ভবত, গতকাল ভারতীয় একজন নানন্দিক এবং বর্তমান সময়ের স্বনামধন্য সিনেমা নির্মাতা'র সাথে মিথিলা'র বিয়ে হয়েছে।
কাছের মানুষ, পছন্দের মানুষ, বিপদে পাশে থাকা মানুষ, সত্যিকারের মানুষ কিন্তু তাদেরকে ই বলে, যারা যেকোনো খুশিতে-কষ্টে-আনন্দে-ব্যথায়... যেকোনো উপলক্ষে ‘পাশে’ থাকে।
একজন বাংলাদেশী হয়ে অন্তত নিজেদের সম্মান রাখুন, নিজেদের ইজ্জ্বত যদি এভাবে ই প্রতিদিন আমরা নিজেরা ই বিক্রি করতে থাকি, এভাবে ই সবার সামনের নিজেদের ঐতিহ্য-সংস্কৃতি-সভ্যতা'কে বিক্রি করতে থাকি, ফেলতে থাকি, ধ্বংস করতে থাকি, তবে শেরে বাংলা এ কে ফজলুল হক এর ভাষ্যমতে এমন যে, “আমার-আপনার-আমাদের কারো ই একদিন নিজেদের পুটকি ঢাকার মতো কাপড় থাকবে না!”
আমরা বই পড়ছি, বইও কেউ কেউ লিখছি, সিনেমা দেখছি, সিনেমাও কেউ কেউ বানানোর চেষ্টা করছি।
এতো সৃজনশীলতার ভিতর থেকেও, এতো নান্দনিকতা এর ভিতর থেকেও যদি আমরা নিজেদের বদলাতে না পারি তবে আমরা কিসের এবং কেনো ই ‘শিক্ষিত’ হলাম?
কেন ই বা ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের’ ট্যাগ লাগিয়ে গর্ব করে ছবি তুলে নিজের শিক্ষার যোগ্যতাকে খর্ব করছি?
বাকিটা তো আপনারা বুঝেন, জানেন। ❤
সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০১৯ বিকাল ৫:৫১