বই পর্যলোচনা (রিভিউ): ১১
বইয়ের নামঃ শেষের কবিতা
লেখকঃ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
ভাষাঃ বাংলা
ঘরনাঃ চিরায়ত উপন্যাস
বইয়ের পৃষ্ঠাঃ ১১২
মূল্যঃ ৭৬ টাকা
প্রকাশনীঃ সূচীপত্র
ব্যক্তিগত অনুযোগ (রেটিং) – ৪.৬/৫
লাব্যণের কৌতূহল আর বাধ মানল না, জিজ্ঞাসা করে ফেললো, “লাইন কী-বলুন না।”
“For God’s sake, hold your tongue and let me love!”
লাবণ্যের বুকের ভিতরা কেঁপে উঠলো।
বিশ্বকবি, কবিগুরু, মননের গুরু, আমার রবি’দা উপন্যাস ‘শেষের কবিতা’র একটি অংশ বিশেষ এটি। অমিত-লাবণ্যের প্রেমময় সময়গুলোকে যুগলবন্দী করে রাখা ইচ্ছেগুলোকে কবিগুরু সমর্পণ করেছেন তাঁর ‘শেষের কবিতায়।’
আমি বারবার শৈল্পিক মুগ্ধ হয়ে পড়ি রবি’দার শব্দে, উঁনার গল্পে।
এতো চমৎকার প্রেক্ষাপট আর যুগলবন্দীতে আমি যেন অকপটে রাখতে থাকি সময়ের সাথে।
বইটি শুরু হয়......
উপন্যাস শুরু হয় নায়ক চরিত্রের অমিত রায়কে দিয়ে, যার বাবা ছিলেন ব্যারিস্টার। অমিত রায়-ও নিজের বাবার মতো ব্যারিস্টার। অক্সফোর্ড এর ছাত্র, পড়াশোনার পার্ট মোটামুটি চুকিয়ে অমিত ফিরে আসে দেশে। তারপর দেশে আসার পর শুরু হয় বিয়ের তোড়জোড়!
অমিতের পরিবার বেশ ভাল ভাবে ধরে অমিতকে বিয়ে দেয়ার জন্য। কিন্তু বিয়ের ইচ্ছা থাকলেও বিয়ে করতে ঠিক রাজি নয় অমিত। কেন?
কারণ বিলেতে পড়াশোনা করে আসলেও অমিতের মত সুক্ষ্ম আর মার্জিত রুচিবোধের ছেলের বিয়ে করার জন্য মেয়ে ঠিক পছন্দ হয়না। অমিতের আশেপাশে অবশ্য মেয়েদের ভীড় কম নেই। তবে এরা সবাই আধুনিক হওয়ার এতো কম্পিটিশনে নেমেছে যে অমিত ঠিক নিজের মনের মানুষটাকে খোঁজে পাচ্ছিলনা।
অন্যদিকে অমিতের দুই বোন ‘সিসি’ ও ‘লিসি’ নাম শোনে বুঝে নেয়া যায় এরা কোন পর্যায়ের আধুনিক! ভাইয়ের ঠিক উল্টো!
আধুনিকতার ছোঁয়ায় এদের যেন ঠিক মতো চিনতে পারেনা অমিত রায়। যাইহোক, ভাগ্যের কোন এক যোগসূত্রে অমিত ঘুরতে যায় শিলঙ পাহাড়ে। বিষন্নতায় কাটল অমিতের কিছুটা দিন শিলঙে। তারপর.... দেখা হয় ‘লাবণ্যের’ সাথে! রবীন্দ্রনাথের উপন্যাসে যার নাম লাবণ্য, বুঝে নেয়া যায় সে কতটা লাবণ্যময়ী!
অমিত আর লাবণ্যের পরিচয় পর্বটা বেশ মনোমুগ্ধকর, চলচ্চিত্রের অংশের মতো।
ধীরে ধীরে ভাল লাগার সৃষ্টি হয় অমিতের মনে লাবণ্যের জন্য আর সেটা প্রকাশ করতেও দেরী করেনা সে। লাবণ্যের মনে যে ভাল লাগা ছিলনা তা বলা যায়না তবুও কোন এক অজানা ভয় ছিল লাবণ্যের মনে... কি ভয়? ভয়টা কি যথার্থ?
লাবণ্যের বাবা অবনীশ দত্তের ব্যক্তিগত লাইব্রেরিতে প্রায়ই পড়তে আসে শোভনলাল। সেখান থেকেই লাবণ্যের প্রতি ভালবাসাটা জন্ম নেয় শোভনলালের।
অবনীশ দত্তের অবশ্য বেশ পছন্দ শোভনলালকে। অবশ্য নিজের মতামত মেয়ের উপর চাপিয়ে দেয়ার মানুষ নন অবনীশ।
শিলঙ পাহাড়ে যোগমায়ার বাড়িতে এসে হঠাৎ উপস্থিত অমিতের বোন সিসি, সাথে আসে ‘কেতকী।’
যোগ পরিবর্তন আর আধুনিকতার ছোঁয়ায় নামটা এমন অদ্ভুত রূপ নেয়। তারপর....... কাহিনী বদলে যায় হঠাৎ করে!
কেন?
কেতকীর আগমনে হঠাৎ করেই কোথায় চলে যায় লাবণ্য? আর কেনই কেতকীর মত মেয়ের চোখে নেমে আসে আবেগের জল? কি হয় অমিতের? আর শোভনলাল, কি হয় সেই জ্ঞানপিপাসু শোভনলালের?
নিজের ব্যক্তিগত পাঠ প্রতিক্রিয়ায় ‘শেষের কবিতা’ বেশ গাম্ভীর্যপূর্ণ। বাংলা সাহিত্যে রোমান্সে রবীন্দ্রনাথের প্রভাব সবচেয়ে বেশি। আর, তার রোমান্টিক উপন্যাসের মধ্যে সবচাইতে জনপ্রিয় আর পাঠক-নন্দিত হলো ‘শেষের কবিতা’। শেষের কবিতার কিছু লাইন আপনাকে দিবে দর্শনের পূর্ন প্রান, আর কিছু লাইন আপনাকে ভাসাবে রোমান্সের সাগরে।
শেষের কবিতা উপন্যাসে রবি ঠাকুরের অসাধারণ কিছু উক্তি আছে, আছে কিছু অসাধারণ চিত্র বর্নণা। যেমনঃ
(ক) কমল-হীরের পাথরটাকে বলে বিদ্যে, আর ওর থেকে যে আলো ঠিকরে পড়ে, তাকে বলে কালচার। পাথরের ভার আছে, আলোর আছে দীপ্তি।
(খ) সায়াহ্নের এই পৃথিবী যেমন অস্ত-রশ্মি-উদ্ভাসিত আকাশের দিকে নিঃশব্দে আপন মুখ তুলে ধরেছে, তেমনি নীরবে, তেমনি শান্ত দীপ্তিতে লাবণ্য আপন মুখ তুলে ধরলে অমিতের নতমুখের দিকে।
(গ) সেইখানে পশ্চিমের দিকে মুখ করে দুজনে দাঁড়ালো। অমিত লাবণ্যের মাথা বুকে টেনে নিয়ে তার মুখটি উপরে তুলে ধরলো। লাবণ্যের চোখ অর্ধেক বোজা, কোণ দিয়ে জল গড়িয়ে পড়ছে।
শেষের কবিতা, যে উপন্যাসের কোনো শেষ নেই; সাহিত্যপ্রেমীদের এবং সব প্রেমপোষণকারীদের রবি’দার এই অমর অনবদ্য প্রেমকাহিনী পড়ার সাদর আমন্ত্রণ জানাচ্ছি…..
সর্বশেষ এডিট : ০৪ ঠা মার্চ, ২০১৯ সকাল ১০:৩৪