বাংলা প্রবাদে আছে, “চোরের দশদিন আর গেরোস্তের একদিন,” সম্ভবত এই কথাটা আফগানদের জন্য প্রযোজ্য। তবে হ্যাঁ, অবশ্য ই, এখানে গেরোস্তের ভূমিকায় রয়েছে আফগানরা।
বরাবরের মতো চোরের ভূমিকা পালন করছে মহামান্য যুক্তরাষ্ট্ররা!
আফগানিস্তানের শান্তি প্রতিষ্ঠ্র জন্য ‘দোহা’য় যুক্তরাষ্ট্র এবং আফগান তালেবানদের মধ্যে শান্তি চুক্তির অগ্রগতি হচ্ছে, হয়েছে।
অনেকে হয়তো ‘তালেবান’ শুনলে আঁৎকে উঠেন, ভাবেন হায়! হায়!!
শেষ-মেষ এই হালত?
আফসোস!
গুটি কয়েক ‘মানুষ’ এর শব্দ ব্যবচ্ছেদ আমরা গোঁড়ামির ভিতর ডুবে আছি, যেমন আছি ‘রাজাকার’ শব্দটা নিয়ে!
যাই হোক,
তালেবান মূলত এসেছে আরবী তালিব শব্দ থেকে। যার অর্থ হল জ্ঞান তলবকারী, শিক্ষার্থী, ছাত্র। আরবী তালিব শব্দের সাথে ফারসী ভাষার বহুবাচনিক উপসর্গ আন/আঁ যুক্ত হয়ে হয়েছে তালিবান বা তালেবান অথবা তালেবাঁ।
মার্কিন কর্মকর্তাওরা নিজেদের হার মেনে নিয়ে, একটা দেশকে ধ্বংস আর করতে না পেরে, নিজেদের হতাশাকে শেষমেষ আঁকড়ে ধরে এখন আফগানদের সাথে ‘খসড়া চুক্তিতে’ পৌঁছার চেষ্টা করছে।
এবং, এটি হতে পারে তাদের নতুন চাল!
অসম্ভব কিছু কি?
মার্কিনদের চাটুকার, শালীন ভাষায়, মার্কিন আলোচক দলের প্রধান জালমে খলিলজাদ ইঙ্গিত দিয়ে বুঝিয়েছেন যে, ‘প্রয়োজন হলে সামরিক চাপ বাড়িয়ে হলেও আফগানদের আলোচনার টেবিলে ফিরে আনা হবে।’
আমি মনে মনে বলি আর হাসি, “ব্যাটা, বাপের আগে পোদ্দারি করতে যাস নে। বাপ বড়, তোরা পুঁচকে!”
তালেবান নেতারা আফগানিস্তানের প্রেসিডেন্ট আশরাফ ঘানির উপর ক্ষুদ্ধ। কারণ, প্রেসিডেন্ট জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা (এনএসএ) কে সংযুক্ত আরব আমিরাত পাঠিয়েছিলেন ‘আলোচনা’র জন্য!
এদিকে, সৌদি আরব বরাবরের মতো দর্শকের ভূমিকায় থাকায় চোরেরা নিজের কাজ করে যাচ্ছে। যদিও সেখানে সৌদি আরবের লোকসানের চেয়ে লাভের পরিমাণ বেশি!
আফগানিস্তান এখন দুনিয়ার সবচেয়ে বড় অর্থনীতি অঞ্চল (ইকোনমি ফিল্ড), বিশেষ করে পাকিস্তান, চীন আর যুক্তরাষ্ট্রের জন্য।
আব্বা এবং আম্মা উভয়ের ভূমিকার জন্য রাশিয়া যথেষ্ট এবং নিজেদের স্থিতিশীলতা ধরে রাখার জন্য এখনো স্থির হয়ে আছে। তবে, ঝড় কখন উঠবে আল্লাহ মাবুদ জানেন!
যাই হোক, পাকিস্তান নিজেদের স্বার্থে একবার ডানে দুল খায়, ক্ষাণিকবাদে বামে। ‘দোহা’য় আলোচনার মাঝামাঝি সময়ে তালেবান আলোচক দলে ‘মোল্লা বারাদার আখুন্দকে’ নিয়োগ দেওয়া হয়, তিনি তালেবানের সহপ্রতিষ্ঠাতা ও মোল্লা উমারের ডেপুটি।
আহ!!
মোল্লা উমার (রহ.)!
ওয়াশিংটনের বৈদেশিক নীতির সবেচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো আফগানিস্তান থেকে বেরিয়ে আসা। কারণ, যুদ্ধে যে জিততে পারবে না এটা উনাদের বোধগম্য হয়ে গিয়েছে। এখন হয়তো, ‘আদর করে বিষ খাওয়ানোর’ কাজ চলছে।
দেশটির সতেরো (১৭) বছরের যুদ্ধ দেশটিকে আরো বিভক্ত করেছে, যুদ্ধক্ষেত্রে বিজয় ও বিভিন্ন অঞ্চলের উপর নিয়ন্ত্রণ বভাড়ার সাথে সাথে আফগান তালেবান সদস্যরা সুবিধাজনক অবস্থানে আছে।
সুইজারল্যান্ডের পার্বত্য পর্যটন শহর ‘দাভোস’ এ আফগান প্রেসিডেন্টের বক্তব্যের মধ্য দিয়ে আফগানিস্তান থেকে প্রিয় মিত্র ও মালিক, যুক্তরাষ্ট্রের, প্রত্যাহারের পরিকল্পনা ও কাবুল সরকারের ‘যথেষ্ট উদ্বেগ’ এর মধ্যে বিদ্যমান যথেষ্ট পার্থক্যের প্রমাণ পাওয়া যাচ্ছে।
আফগানিস্তান অতীত থেকে এশিয়ার একটি গুরুত্বপূর্ণ সন্ধিস্থল হিসেবে পরিচিত, আর এই জমিনের বুকে বহু প্রাচীন বাণিজ্য ও বহিরাক্রমণ ঘটেছে, রক্তে ভিজেছে। রক্তে শুকিয়েছে এই জমিন।
কিন্তু, আজ পর্যন্ত কেউ ‘আফগান’কে নিজের মুঠোয় করতে পারলো না।
যেখানে চোখ যাবে, যেখানে কথা পৌঁছোবে, সেখান থেকে আফগান নিয়ে প্রহেলিকা আসবে। তালেবান নিয়ে কুৎসা আসবে।
কিন্তু, সত্যতা আসবে না।
কারণ, “সত্য ততক্ষণ মজাদার, যতক্ষণ পর্যন্ত সেখানে মিষ্টি থাকে।”
অবশেষে, এটি একটি শান্তির গল্প হিসেবে আখ্যায়িত হলো!
সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ সকাল ১১:১১