সূর্যের আড়মোড়া ঘুমে জেগে উঠে সকাল, ঝকঝকে আকাশটা তখন দাঁতের ঝিলিক দিয়ে উঠে। সারাদিনের ক্লান্তি, পরিশ্রম, অভিশাপ নিয়ে যখন ঘুমের প্রস্তুতি নেয় তখন আকাশের বুকে সাদা আলো জ্বলে উঠে। ঘুমের এক প্রশান্তি ছেয়ে যায় পুরো আকাশে, আত্নাগুলো বেরিয়ে যায় সন্তর্পণে।
গ্রামের পুকুর পেড়িয়ে মমতাজ মেম্বারের বাড়িতে আজ দুনিয়া ভেঙে পড়েছে, গ্রামের মেম্বার মমতাজ মিয়ার বাড়িতে কান্নার রোল পড়েছে। দুনিয়া কাঁপিয়ে চিৎকারে কেঁদে উঠছে মমতাজ মিয়ার বউ, পাশে বসে থাকা মমতাজ মিয়ার ছোট ছেলে-মেয়ে ডুকরে ডুকরে কাঁদছে।
গতকাল রাতে মেম্বারের কলেজ পড়ুয়া বড় মেয়ে ‘পরী’ গলায় ফাঁস লাগিয়ে আত্নহত্যা করেছে!
বাড়ির উঠোনের মধ্যে দাড়িঁয়ে গ্রামের মানুষ আর পাড়া-পড়শি কানাকানি করে ভিন্ন ভিন্ন মনগড়া অপবাদ আর কুৎসিত রটনা রটিয়ে বলে যাচ্ছিলো তখনো, বলে যাচ্ছিলো – “ওত্তো ডাঙ্গর মাইয়া ফাঁস লাইগাছে! মনো হয় মুহে চুন-কালি মাখায়া শেষমেষ দড়ি...”, “কলেজের পোলাগো লগে ফস্টি-নস্টি কইরা সবকিছু ডুবায়া ওখন....”, “মেম্বাররে আগে কইছিলাম যে, মাইয়া ডাঙ্গর হইছে। বিয়া দাও, হুনলো না আমার...”
মমতাজ মিয়া ঘরের বাইরে চেয়ারে বসে নিঃশব্দে সবকিছু শুনছিলো আর নীরবে দু’দন্ড অশ্রু সিক্ত করছিলো। হাতে কুঁচকে থাকা কাগজের উপর যখন নজর পড়তো, তখন মিন মিন বলতে থাকতো – “তুই মা খালি আমারে একটা বারের লাইগা কইতি, আমি সবকিছু ঠিক কইরা দিতাম..মা রে...তুই কেন এমন করলি?”
গুমোট পরিবেশে সবকিছু যেন থমকে গেছে, অস্তিত্ব সংকটে বিলীন হয়ে যাচ্ছিলো আত্মার সত্তাগুলো।
“ঐ রাসেল? কি দেহোস এমনে তুই?” বাড়ির পিছনের রাস্তা দিয়ে হেঁটে যাবার সময় আচমকা দাঁড়িয়ে পড়ায় পিছন থেকে বলে উঠলো রফিক।
“গেরামে আইজকা অভিশাপ লাগছে। মরণের লীলাখেলা চলতাছে...” রাসেল বলে উঠলো।
“মানে?” রফিক ভাঙা গলায় জিজ্ঞেস করলো।
“আমাগো রহিম মাস্টারের পোলাডাও কাইল রাইতে গলায় দড়ি লাইগাছে। পড়ালেহাও পোলাডা ভালা আছিলো। কেন যে মইরা গেলো.....” আফসোস করতে করতে বললো রাসেল।
“তুই এতো কিছু জানোস কেমনে? আর তোরে এতো কিছু জানতে কইসে কেডায়?” বিরক্তির সুরে বললো রফিক।
“আরে, মাইয়াডারে কাইলকেও নদীর পাড়ে দেখছিলাম। তবে লগে কেউ একজন আছিলো...” আফসোসের সাথে বললো রাসেল।
“তোর ঘরের বউ লাগে মনে হয়? মরলে মরছে। চল, দেরি হইয়া যাইতাছে। ট্রেন ছুইট্টা যাইবো কইলাম...” বলে টেনে রাসেলকে নিয়ে যায় রফিক।
“আমার মন কইতাছে..কেউ ‘পরী’ কে খুন করছে...” বিড়বিড় করে বলতে লাগলো রাসেল।
রফিক হাঁটা থামিয়ে দিয়ে পিছন ফিরে তাকালো, রাসেল তখন কচ্ছপের গতিতে হেঁটে আসছিলো। বিরক্ত হয়ে হনহন করে হেঁটে রাসেলকে ঝাঁকি দিয়ে বললো – “বিড়বিড় করতাছোস কেন তুই? ঠিক সময়ে যাইতে না পারলে চাকরি কিন্তু পাইবি না।”
“আমার মনে হইতাছে পরীরে কেউ খুন করছে...” ঠান্ডা গলায় বললো রাসেল।
“কিহহহ? মানে? কি কইতাছোস তুই?” বিচলিত কন্ঠে বলে উঠলো রফিক।
উপর্যুক্ত জবাব না পাওয়ায় রফিক আবারো উৎকন্ঠায় বলে উঠলো – “এইগুলো কিন্তু পুলিশি ঝামেলা। তুই কইলাম এইসবের মধ্যে যাইস না...”
“তোর ওতো ফাইটাছে কেন? খুন মনে হয় তুই করছোস?” বিরক্তির সুরে বলে উঠলো রাসেল।
“আরে না..নাহ...কি কইতাছোস তুই? আ...আমি কেন এসবে..রর মধ্যে যামু। চল, চল...ট্রেন ছুইট্টা যাইবো কইলাম।” বলে রাসেলের হাত টেনে পায়ের গতি বাড়িয়ে দিলো রফিক।
পিছন ফিরে দ্বিতীয়বারের মতো তাকায় রফিক, ‘জানের বদলায় জান’ যেন এ যাত্রায় মিথ্যা প্রমাণিত হলো। আকাশের দিকে চেয়ে সৃষ্টিকর্তাকে ধন্যবাদ জানিয়ে উঠে পড়লো ট্রেনে।
“চাচা, জানাযার সময় হয়ে গেছে। চাচীরে বলেন পরীরে গোসল দিতে, ইমাম সাহেবের মত পাল্টানোর আগে আগে জানাযা পড়ায়া ফেলতে হইবো। নাইলে পরে আবার ‘আত্মহত্যাকারীর জানাযা সাধারণ মানুষ পড়াইবো, আমি পারুম না..’ এই ফতোয়া দিয়া দিবো।” অশ্রুসিক্ত কণ্ঠে বলে উঠলো আপন ভাতিজা সোহেল।
“বাবা...আমার মাইয়াডা মইরা গেলো রে বাবা। আমার মাইয়াডা.....” বলতে বলতে হুড়মুড় করে কেঁদে উঠলেন মমতাজ মাস্টার। আর সেই কান্নার ভাগিদার হলেন সন্তানতুল্য ভাতিজা সোহেল, আর কাঁধে ভর দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে এই পরিবার।
“চাচা, সবর করেন। আল্লাহ সবরকারীদের ভালোবাসেন...” বলে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে লাগলো সোহেল।
দেড় বছর পর.......
ঢাকার লেকের পাশে বেড়ে উঠা ভবনের ৯ তলায় ছাদ বিস্তৃত, ছাদের উপর বসতি গড়েছে এক যুবক। পেশায় সেলস অফিসার, চেহারার গড়নে আর আচরণে নিজের পরিপাটি ছবি বানাতে পারায় অফিসের সিনিয়র স্যারের সুপারিশে ‘ফ্যামিলি ফ্ল্যাট’ ভবনের ছাদে নিজের আশিয়ানা গড়েছে যুবকটি।
তবে, মাঝে মাঝে রাতের আঁধারে যখন অশরীরী আত্মার পরিস্ফূটন ঘটে তখন গভীর ঘুমে স্বপ্নে অনুভব করতে পারে যে, নিজের হাত-পা নাড়াতে পারছে না, কথা বলতে পারছে না। অশরীরী কোনো এক আত্মা এই যেন খপ করে ধরে ফেলবে ওর গলা, নিমিষের মাঝে গলা টিপে মেরে দিয়ে টানিয়ে দিবে দড়ির ফাঁদে!
খানিক পরে আঁৎকে উঠে ঘুমের ঘোর থেকে বেরিয়ে এসে লাফ দিয়ে হাঁ করে বড় বড় দম নিতে থাকে রফিক, গ্রাম থেকে পালিয়ে আসা সেদিনের যুবকটি।
মেঝেতে পাতা তোষোক পাতিয়ে সেটাকে বিছানা বানিয়েছে রফিক, একাকী জীবনের স্বাদ এই সময়ে এসে বড্ড তিক্ত লাগছে!
ভয়ার্ত স্বপ্নের অলিগলি থেকে নিজেকে বাঁচিয়ে নিয়ে এসে ফ্রিজের দিকে ছুটে যায় রফিক, এক লিটারের পানির বোতল বের করে ডক-ডক করে গিলতে থাকে পানি। বুক পর্যন্ত ভিজিয়ে স্বস্তির শ্বাস ফেলে রফিক।
বিছানার পাশে থাকা সিগারেটের প্যাকেট আর লাইটার নিয়ে খোলা আকাশের নিচে চলে যায় রফিক, ছাদের এই অংশে বাড়ির অন্যান্য ভাড়াটিয়াদের আসা ‘নিষেধ’ রয়েছে বিধায় খোলা আকাশ আর খোলা ছাদ রফিক একচ্ছত্র রাজ্য বলা চলে!
ছাদের কোণায় এসে পাতানো এক চেয়ারে ঠেস দিয়ে বসে সিগারেট জ্বালিয়ে নেয় রফিক, ঠান্ডা বাতাসের বিশুদ্ধ স্বাদ পুরো শরীর জড়িয়ে দেয়।
সিগারেট টানতে টানতে বেশ আনমনা হয়ে পড়ে রফিক, আর তখন চোখগুলো আটকিয়ে যায় সামনের ১২ তলা ভবনের ১০ তলার ফ্ল্যাটের দিকে!
গত এক মাসে ধরে রফিক সমান্তরলে থাকা দশম ফ্ল্যাটের মেয়েকে দেখে আসছিলো, প্রথম দেখায় বুকের ভিতর ‘ছলাৎ’ করে উঠেছিলো ওর। কেমন জানি পুরোনো এক চেহারার সাথে মিলে যায় পুরোটা, চোখগুলো যেন কিছু বলতে চায় তাকে।
গত তিন-চার মাস ধরে লাগাতার দৃষ্টি সব কুয়াশা পরিষ্কার হয়ে গিয়েছে। তবে, বারান্দার বসে থাকা মেয়েটির সিক্ত চোখগুলো রফিককে খুব কাছে টানে। রফিকের ইচ্ছে হয় যেন বলতে – “এই, তুমি কেঁদো না। আমি আছি না....!”
আবার, মাঝে মাঝে দু-তিনদিনের জন্য যেন কুয়াশায় মিশে যায় মেয়েটি। কোনো হদিস পাওয়া যায় না তার, হারিয়ে যায় বিষন্নতায়।
প্রতিদিন সকালের যখন মেয়েটি বাসার নিচে থাকা ভ্যান থেকে তরকারি কিনতে আসে, রফিক তখন অফিসের যাবার জন্য নিচে আসে। প্রতিদিন সকালে মেয়েটির ক্লান্ত-পরিশ্রান্ত আর বিষম চেহারা দেখে নিজেকে অপরাধী ভাবে, ভাবে নিজের কাঁধ এলিয়ে দিয়ে বলতে – “এই দেখো, আমি চলে এসেছি। তুমি কেঁদো না আর....!”
কিন্তু, রফিক বলবে না। বলতে পারবে না।
কারণ, মেয়েটি বিবাহিত। সে এখন অন্যের সম্পদ, অন্যের ঘরের আমানত।
মেয়েটি স্বামী প্রায়শঃ মেয়েটির উপর হাত তুলে, গায়ে ‘ঠাস’ করে চড় দেয়। চড়ের আওয়াজ আর মেয়ের বুক ফাঁটা কান্না হয়তো ঘরের কাঁচের ভিতর আবদ্ধ থেকে যায়, কিন্তু সে আওয়াজ আর কান্না ঠিক যেন বান হয়ে বিঁধে যায় রফিকের নরম বুকে!
এখনো সমান্তরালে থাকা ফ্ল্যাটের মেয়েটি নির্যাতনের শিকার হচ্ছে, পাথরের মতো বসে-দাঁড়িয়ে মার খাচ্ছে মেয়েটি। নিশ্চুপ, নির্বাক, নিরুপায় হয়ে কেঁদে যাচ্ছে রফিকের সমান্তরাল ফ্ল্যাটে অবস্থান করা কাজল ভেজা চোখের মেয়েটি। আর, এমনটা কেন হয় যখন....
ভাবনার জগতে ছেদ পড়লো ফোনের আওয়াজে, ভিতরে থাকা ফোনের আওয়াজে বাজতে থাকলো ভিতর থেকে। চেয়ার ছেড়ে উঠে যাবার সময় রফিক দেখলো যে...মেয়েটির স্বামী উচ্চস্বরে চিৎকার করে জানালার বাইরে দিয়ে আঙুল তুলে রফিকের ছাদের দিকে কি যেন ইশারা করছে, জবাব না পাওয়ায় আবারো চড় মেরে মাটিতে ফেলে দেয় মেয়েটিকে!
রুমের ভিতর ফোন তখনো বাজতে থাকে, এক রাশ বিরক্তি মুখে নিয়ে সিগারেট প্যাকেট নিয়ে ভিতরে চলে গেলো রফিক। বিছানার উপর পড়ে থাকা মোবাইল ফোন হাতে নিয়ে ভয়ে চেহারা কুঁচকে গেলো রফিকের, এক ডুক গিলে ফোন রিসিভ করে বললো – “জ্বি, স্লামালাইকুম। কেমন আছে....”
“শুয়ারের বাচ্চা, এত্তোক্ষণ লাগে কেন তোর ফোন ধরছে? মইরা গেছিলি নাকি?” অপর প্রান্ত থেকে ধিক্কার সুরে বলে উঠলো একজন।
“না, মানে...ইয়্যে...আমি...”
“তোতলানি বন্ধ কর, রফিইক্কা। তুই তোর ঠিকানা জানাইবি না আমারে? আমি কিন্তু শেষবারের মতো কইতাছি...” চেঁচিয়ে বলে উঠলো একজন।
“দেখেন, আমি আপনেরে আগেও কইছি। এখনো কইতাছি। আমি কিছু জানি না, আমারে আপনে এইসবের মধ্যে জড়াইবেন না।”
“তোরে আমি চারদিনের সময় দিলাম, নিজের খবর আমারে জানা। নাইলে তোর কইলজ্জা ছিঁইড়া কুত্তারে খাওয়ামু...”
“আপনের ঘরের আগুন আপনে নিজেকে থামান, আমারে ডাইকেন না। রাখলাম, বিদায়.....” বলে ফোন রেখে দেয় রফিক।
প্রচন্ড এক ভয়-আকুলতা আর ক্লান্তি নিয়ে বিছানায় শুয়ে পড়ে রফিক, তা অন্ধকার ঘরে চেঁচিয়ে বলতে থাকে – “কুত্তার বাচ্চা! তোর লাইগা আমি দেশান্তরি হইছি। কসম আল্লাহর, তোরে আমি জানু ছাড়ুম না....” অনবরত বলে যেতে থাকে রফিক।
পরদিন সকালে, রফিক প্রতিদিনের মতো বাসা থেকে বের করে দরজার বাইরে এসে রিকশা খুঁজতে থাকে। প্রথম দৃষ্টিতে চোখে পড়ে যায় মেয়েটি, ভ্যান থেকে সবজির দোকানীর সাথে দাম দরাদরি করছে।
“নাহ, আজকে তো বলতে হবে। নাহলে, দম বন্ধ হয়ে মারা যাবো তাড়াতাড়ি। বুকের মধ্যে এতো ব্যথা রাখতে পারবো না..” বলে বড় এক দম নিয়ে সামনের দিকে পা বাড়ায় রফিক।
সবজির দোকানীর সামনে এসে কোনো রকম ভণিতা না দিয়ে বলে উঠে – “শুনুন, আপনাকে আমার ভালো লেগেছ। জানি আপনি বিবাহিত, কিন্তু এরপরও আমি নিজেকে আপনার কাছে আসা থেকে দমিয়ে রাখতে পারছি না। আপনি কি....” বলা শেষ করার আগে মেয়েটি আগুন ঝরা চোখ নিয়ে তাকিয়ে উঠলো রফিকের দিকে।
যেন আজন্মের এক প্রতিশোধ এখনো বাকির খাতায় তোলা রয়ে গেছে, সুযোগ করে খপ করে রাঙানো ছুরি বসিয়ে দিবে পাতানো বুক বরাবর!
মেয়েটি হনহন করে চলে গেলো সামনে থেকে, রফিক কিছু বুঝে উঠার আগে দোকানী বলে উঠলো – “দূর মিয়া, দিলেন তো সকাল সকাল কাস্টমার নষ্ট কইরা। লাগানির মন চাইলে বাড়িত যান, আমাগো পেটে লাথ দেন কেন?” বলে বিরক্তিতে কুঁচকে নেয় কপাল।
বেচারা রফিক একূল-ওকূল পার না পেয়ে রিক্সা ডেকে গন্তব্যের উদ্দেশ্যে পাড়ি দেয়।
এরপরের দু’দিন আবারো হারিয়ে গেলো সমান্তরালের মেয়েটি, নিজের উপর বিতৃষ্ণা জন্মে আসার জন্য আগুন টেনে নিজের প্রায়শ্চিত্ত করার ঠান নিচ্ছে রফিক।
সিগারেটের দগ্ধতা পুড়ে নিষ্পেষিত হয়ে যাচ্ছে অতীতগুলো, তবে রাতের গভীরে আত্মাগুলো জেগে উঠে অতৃপ্তি নিয়ে।
“ঠক...ঠক...ঠক....ঠক...” শব্দ আসতে থাকে দরজার অপর থেকে, বিরক্তি মুখ করে ঘুমকাতুরে চোখ নিয়ে রফিক বলে উঠেছে – “কেডা রে ঐখানে? পরে আয়...”
“আমি এসেছি!” অপরিচিত কিন্তু একটা শীতল কণ্ঠস্বর ভেসে এলো দরজার ওপাশ থেকে।
ক্ষণিকের জন্য যেন সবকিছু থেমে গিয়েছিলো রফিকের, কিছু বুঝে উঠতে পারার আগে হুড়মুড় করে বিছানা থেকে লাফিয়ে উঠে হ্যাঁচকা টানে খুলে ফেললো মূল দরজা।
দরজার বাইরে লাল পাড় দেওয়া সাদা শাড়ি জড়ানো এক স্বর্গের অপ্সরী দাঁড়িয়ে ছিলো মূর্তির মতো, লাল টিপ আর রক্তিম লজ্জ্বায় দেখে রফিকের মনে বেজে উঠছিলো আখতার হোসেনের কবিতার দু’টি বাক্য – “লাজ লজ্জ্বায় নেমেছে সাঁঝ, লজ্জ্বাহীনা আমি পৃথিবী করি রাজ।”
“এভাবে বাইরে দাঁড়িয়ে থাকবো আমি?” মিষ্টি হাসি হেসে চোখের ভ্রু নাচিয়ে বলে উঠলো মেয়েটি।
মেয়েটির কথা শুনে যেন হুঁশ ফিরে এলো রফিকের, দরজা থেকে সরে গিয়ে ভিতরে আসার জায়গা করে দিলো। মেয়েটি ভিতরে গিয়ে ঘরের চারদিকে নজর বুলিয়ে বিছানার পাশে এলো, নিজের হাতের ব্যাগ মেঝেতে রেখে ‘ঘরের স্বামী-প্রেমী স্ত্রীর’ মতো করে রফিকের অগোছালা বিছানা টেনে-ঝেড়ে পরিষ্কার করে হাঁফ ছেড়ে বিছানায় বসলো।
রফিক তখনো দরজার সাথে ঠেস দিয়ে দাঁড়িয়ে ছিলো, অবাক চোখে একমনে তাকিয়ে ছিলো ঘরোয়া অপ্সরীর দিকে।
“কি হলো, ওখানে দাঁড়িয়ে কেন? এদিকে আসুন।” বলে হাত বাড়িয়ে ডাক দেয় মেয়েটি।
রফিক যেন স্বপ্নের রাজ্যে ঘোরাঘুরি করছে, এখনো নিজেকে বিশ্বাস দিতে পারছে না যে এটা বাস্তব। মেয়েটি সামনে এসে চেয়ার টেনে সমান্তরালে বসে পড়ে রফিক, চোখগুলো যেন নিষ্পেষিত হতে থাকে আজীবনের তরে!
“আমি কি আপনাকে ছুঁয়ে দেখতে পারি? আমি নিজেকে এখনো বিশ্বাস দিতে পারছি না যে আপনি আমার সামনে আছেন।” বলে হকচকিয়ে উঠে রফিক।
“আমি তো আপনার। আমার সব আপনার...” বলে ফিক করে রহস্যের হাসি হেসে দেয় মেয়েটি।
“আপনার নাম কিন্তু আমার জানা নেই, আমি আপনাকে কি নামে ডাকবো?”
“কি নামে ডাকতে চান আমাকে?”
“আপনি যা বললেন, সেটা ডাকবো।”
“আমাকে আপনার কাছে কেমন দেখায়?”
“একদন আসমানের না দেখার পরীর মতো!”
“তবে পরী ডাকবেন।”
যেন বজ্রপাত পড়ে যায় রফিকের চেহারায়, পরিচিত-অপরিচিতের এক নগ্ন খেলার দৃশ্যপট ছেয়ে যায় চারদিকে। চেহারার রক্ত সাদা হয়ে ফিকে হয় যায়, সময়ের পালাবর্তনে আত্নার মিথষ্ক্রিয়া সময়কে থমকে দেয়!
“কি হলো? আপনি ওমন চুপ কেন হয়ে গেলেন?”
“না মানে, এমনি। আপনার স্বামী যদি জানতে পারে তবে কি হবে?”
“ওকে আমি ছেড়ে চলে এসেছি। আপনি কি আমাকে আপনার সাথে রাখবেন....” বলে দু’দন্ড অশ্রু ছেড়ে দিলো মেয়েটি।
“আরে..আরে..করেন কি! এতো দামি মুক্তোর কণা এভাবে ঝড়াবেন না। আমি আছি তো...” বলে সামনে এগিয়ে হাতে হাত ধরে মুষ্টিময় করে রফিক।
মেয়েটি মুচকি হাসি দিয়ে উঠে দিয়ে ফ্রিজের সামনে যায়, ফ্রিজের উপরের-নিচের ডালা খুলে রান্নার জন্য কি কি আছে সেগুলো খুঁজে দেখতে থাকে।
“ফ্রিজের এই হাল কেনো?”
“একলা জীবনের এরচেয়ে আর ভালো কি হতে পারে, বলুন!” মুচকি হেসে জবাব দিলো রফিক।
“এখন তো আমি এসে গিয়েছি, সব ঠিক করে দিবো...” বলে গাল ভর্তি হাসি উপহার দেয় মেয়েটি।
“আপনাকে কাছ থেকে দেখলে আমার একজনের কথা বেশ মনে আসে, আপনার চোখগুলো যেন সবসময় কথা বলে উঠে...”
“সাহিত্য চর্চায় ইচ্ছে আছে দেখা যায় আপনার, আপাতত বাজারে যায়। ভালো ভালো তরকারি, মাছ-গোস্ত কিনে আনেন। বাইরের খাবার খেয়ে আপনার শরীর-চেহারা নষ্ট হয়ে গিয়েছে, আজ থেকে নো বাইরের খাবার। ওকে?”
“ম্যাডাম যেভাবে বলেন....”
মিনিট পাঁচেকের মধ্যে রফিক জামা গায়ে লাগিয়ে বাজারের ব্যাগ হাতে বাইরে চলে আসে, এই প্রথম নিজেকে পুরুষ পুরুষ লাগছে। তবে এখনো বিশ্বাস করতে কষ্ট হচ্ছে..মেয়েটি সত্যি নিজের হতে চলেছে!
আজব দুনিয়া!
রাতের এক জম্পেশ খাবার শেষে বিছানায় গা এলিয়ে দেয় রফিক, নিজেকে আজ পৃথিবীর সবচেয়ে ভাগ্যবান পুরুষ বলে দাবি করতে ইচ্ছে করছে। মেয়েটি অক্লান্ত পরিশ্রম শেষে সবে মাত্র গোসল সেরে বের হলো, ভেজা রেশমী চুলের ডগার পানির ফোঁটা যেন ইচ্ছে করে রফিকের গায়ে ছিটাচ্ছে! রফিক সন্তর্পণে দেখে যাচ্ছে মেয়েটিকে, আদুরে-আলসে গড়নের মেয়েটি যেন নিজের মাঝে সর্বসর্বা।
“শুনুন..” রফিক আদুরে গলায় ডাক দিলো।
“বলুন...” মেয়েটি মায়া জড়ানো কন্ঠে বলে উঠলো।
“বসুন আমার পাশে একটু..”
“আসছি, চুলগুলো একটু শুকিয়ে আসছি। আপনি আরাম করুন...”
বলে গালভর্তি মিষ্টি হাসি হেসে পাশের রুমে চলে গেলো মেয়েটি।
বিছানার উপর দুটি শরীরী সত্তা শুয়ে আছে, দৈহিক মননের চেয়ে যেন আজ মনের মনন শক্তিশালী হয়ে উঠেছে। রফিকের ইচ্ছে করছে...মেয়েটি ছবি করে সাজিয়ে রাখতে। এতো রুপবতী-গুণবতী মেয়ে আজকের সময়ে....
চিন্তার জগতে ছেদ পড়ে দরজার আওয়াজে, ‘ঠুম-ঠুম-ঠুম’ আওয়াজে যেন দরজা ভেঙে ভিতরে চলে আসবে। এমন ভয়ানক আওয়াজে মেয়েটি চমকে উঠলো, হাত-পা থরথর করে কেঁপে উঠলো লাগলো। রফিক তা দেখে অবাক হয়ে প্রশ্ন করলো – “কি হলো? আপনি এভাবে কাঁপছেন কেন?”
“আমার মনে হয় আমার স্বামী চলে এসেছে। আমাকে এখানে দেখলে আমাকে মেরে ফেলবে। আমি মরতে চাই না...আমাকে বাঁচান আপনি...” উন্মাদের মতো বলতে লাগলো মেয়েটি।
“আহ! আমি ভয় পাবেন না। আমি আছি তো, আমি দেখছি। কথা দিলাম, নিজের প্রাণ থাকতে আপনাকে কিছু হতে দিবো না...”
“কথা দিচ্ছেন তো?”
“কথা দিচ্ছি....” বলে হাত বাড়িয়ে হাতে হাত ধরলো রফিক।
রফিক বিছানা ছেড়ে উঠে গিয়ে দরজা খুললো, বাইরে দাঁড়িয়ে থাকা পরিচিত সত্তা লোকটি বলে উঠলো – “কুত্তার বাচ্চা, আমি ঘরের বউ কই? বাইর কর ওই মাগীর বাচ্চারে...”
“আরে ভাই, কে আপনি? এটা ভদ্রলোকের ঘর। এখানে কেউ থাকে না, আমি একা থাকি এখানে। আপনি ভুল জায়গায় এসেছেন।”
“বাইর কর কইতাছি, নাইলে কিন্তু জানে মাইরা দিমু...” রফিককে ধাক্কা দিয়ে ভিতরে ঢুকতে চায় মেয়েটির স্বামী। রফিক লোকটি বাইরে ধাক্কা দিয়ে বলে – “আপনাকে আমি চিনি না, অপরিচিত লোক আমার এখানে ঢুকতে মানা...” বলে দরজা বন্ধ করে দিয়ে থাকে লোকটির মুখের উপর।
“তুই কি আমারেও চিনোস না, রফিক?” শীতল, ভয়ার্ত এক কণ্ঠ বলে উঠলো পিছন থেকে। কণ্ঠ শুনে রফিকের পা অনবরত কাঁপতে লাগলো, সাদা চেহারা নিয়ে দরজা আবার খুললো রফিক।
“সোহেল ভাই...আপনি এখানে....” বলা শেষ করার আগে রফিকের বুকে লাথি মারে সোহেল। ছিটকে বিছানারা পাশে পড়ে রফিক।
“আপনি যান। পাশে রুমে লুকোন গিয়ে, আমি না বলা পর্যন্ত বের হবেন না....” রফিক খক-খক করে কাশতে কাশতে বললো মেয়েটি।
মেয়েটির চেহারা থেকে রক্ত শুকিয়ে গিয়েছে, ভয়ে পুরো শরীর কাঁপছে। পাথরের মূর্তির মতো জমে বসে আছে বিছানার উপর, যেন মৃত্যুকে আবারো আলিঙ্গন করবে জীবনের তরে।
“মাইয়াডারে ধইরা আন।” সাথে থাকা পালোয়ানগুলোকে আদেশ দেয় সোহেল।
“এই মাইয়ারে আমি নিজের হাতে মারমু,বান্দির পাখনা জগাইছে আজকাল....” সোহেলকে লক্ষ্য করে বলে উঠলো মেয়েটির স্বামী।
“তোমার এই কাজ আমি নিজের হাতে করে দিতাছি, চলবো?”
“দৌঁড়াইবো।”
“তাইলে, এই মার্ডারের ভিডিও করো। এই নাও...” বলে পালোয়ানগুলোর হাতে থাকা ভিডিও ক্যামেরা তুলে দিলো মেয়েটির স্বামীর হাতে।
“চমৎকার।” বলে ধৃষ্টতার হাসি হেসে বললো লোকটি।
মেয়েটিকে নিজের সামনের এনে চুল মুঠ করে দু-তিনটে চড় মারলো সোহেল, ঠোঁট কেটে রক্ত পড়লো লাগলো টুপটুপ করে।
“ভাই...ভাই...প্লিজ..ভাই....ওরে ছাইড়া দেন ভাই। আমি যা কইবেন আমি তাই করমু ভাই...ওরে ছাইড়া দেন ভাই....” হুড়মুড় করে চিৎকার করে কাঁদতে লাগলো রফিক।
“শুয়ারের বাচ্চা, যখন তোরে কইছিলাম তখন তোর হুঁশ কই ছিল? এখন জানের উপর হাত পড়তে দম বন্ধ হইতাছে, না? হালার, তাও আবার সেকেন্ড হ্যান্ড মালের উপর তোর নজর গেছে....হালা বলদ....” ধিক্কারের সুরে বলতে লাগলো সোহেল।
“আপনি বলেছিলেন আমাকে আপনি বাঁচাবেন...আমি আপনার সাথে বাঁচতে চাই...আমাকে বাঁচান...আমি আপনার...” বলতে বলতে মেয়ের গলা চেপে ধরলো সোহেল।
“ভাই, রেডি..” বলে ইশারা দিলো পালোয়ান দলের একজন।
সোহেল মেয়েটিকর গলায় ধরে ঝুলিয়ে দিতে লাগলো বানানো ফাঁসির দড়িতে, মৃত্যু যেন অকল্পনীয় সুরে বেজে উঠলো লাগলো চারদিকে।
“আমি তনয়া....” রফিকের দিকে চেয়ে ছোট করে বললো মেয়েটি।
“আমি জানি পরীরে কেডা মারছে। পরীর খুন হইছে এইডা আমি নিজের চোখে দেখছি, তনয়ারে ছাইড়া দে কইলাম...” ক্রোধের আগুনে মত্ত হয়ে বলতে লাগল রফিক।
“এবারের মতো আজ সম্ভব না। পরের বার....” বলে চোখ টিপে ইশারা করলো শেষবারের মতো।
তিনদিন পর......
বাড়ির বাইরে বেশ তোড়ঝোড় করে ব্রেক কষলো পুলিশের দুইটা জিপ, গাড়ি থেকে নেমে এলো এ.এস.পি স্যার সহ থানার ও.সি. ও পাঁচ-সাতেক পুলিশ সদস্য। বাড়ির ভিতরে ঢুকে গেলো পুলিশ সদস্যরা, পুলিশ দেখে এক আতঙ্ক ছড়িয়ে গেলো বাড়িতে।
“কি ব্যাপার, এ.এস.পি. সাহেব? আপনি আমার বাড়িতে?
আসুন...বসুন....” বলে অভ্যর্থনা জানালেন মেম্বার মমতাজ মিয়া।
“দুঃখিত স্যার, আজকে আমরা বসতে আসে নি। ওয়ারেন্ট নিয়ে এসেছি, আসামী ধরতে।” দৃপ্তকন্ঠে জবাব দিলো এ.এস.পি।
“নাহ! এই পোলারে নিয়া আর পারা গেলো না।
সোহেল....সোহেল.....” বলে চেঁচিয়ে ডাকতে লাগলো মেম্বার মমতাজ মিয়া।
হৃদপুষ্ট শরীর নিয়ে বাইরে বেরিয়ে এলো সোহেল, এক রাশ বিরক্তি নিয়ে জিজ্ঞেস করলো – “কি হইছে, কন?”
“তুই আবার কেন নতুন ঝামেলায় জড়াইছোস? ওয়ারেন্ট নিয়া পুলিশ আইছে তোর জন্য....”
“আচ্ছা, ঠিক আছে। চল পুলিশ, ঘুইরা আহি....” বলে সামনে হেঁটে যেতে থাকে সোহেল।
পুরো বাড়িতে নতুন করে আবারো পাড়া-পড়শি আর লোকজন জমা হয়ে ভিড় করে ফেলে!
“ওহ আচ্ছা...আপনের জন্য শহর থেইক্কা একটা গিফট আনছিলাম। এতোদিন ব্যস্ত থাকার কারণে দিয়ে পারি নাই। হান্নার, গিফট বাইরে কর চাচার লাইগা....” বলে এস.আই. হান্নানকে আদেশে দেয় সোহেল।
পুলিশের গাড়ি থেকে বেরিয়ে আসে কয়েকটি সত্তা, সত্তাগুলোর দিকে চোখ পড়ামাত্র মেম্বার মমতাজের শ্বাস ফুলে যায়। উঠোনের উপরে রাখা চেয়ারে উপর ধপ করে বসে যায় মমতাজ, পকেট থেকে ইনহেলার বের করে কয়েক দম দিয়ে শ্বাস ঠিক করে সে।
“শুয়ারের জাত, তোরে কইছিলাম ওরে জিন্দা পুঁইতে। ওরে জিন্দা আনছোস কেন তুই?” চেঁচিয়ে বলতে লাগলো মেম্বার।
চারদিকের পরিবেশ যেন থমকে গেছে, আগে কি ঘটতে যাচ্ছে তা যেনো কেউ ধরতে-বলতে পারছে না। আশে-পাশের মানুষগুলোর চেহারা থেকে যেন রক্ত সরে গেছে। মনে মনে যেন বলছে – “মেম্বারের মতো ভালা মানুষ খুন-খারাবিও করে...!!”
পিনপিন নীরবতাকে ভেঙ্গে দিয়ে সোহেল বলে উঠে - “তোমার কথায় আমি আজ পর্যন্ত কত কত খুন করছি সেটার ইয়াত্তা নাই, তোমার কোনো কথা আমি আজ পর্যন্ত ফালাই নাই। তোমারে আমি মাথার তাজ বানায়া রাখছি। আর....” বলে খানিকটা দম দিয়ে রক্তচক্ষু নিয়ে বলে উঠলো – “তুই শুয়ারের বাচ্চা...শেষ-মেষ আমার বইন ‘পরী’কে মাইরা ফালাইছোস...!! কুত্তার বাচ্চা, কি করছিলো মাইয়াডা? দোষ কি আছিস ওর? ভুল তো মাইনষের হয়, এর লাইগা কি জানে মাইরা ফেলবি....!! কুত্তার বাচ্চা, কলেজের মাস্টারের পোলারেও তুই মারছোস আর যখন তুই জানছোস যে, ‘পরী’ প্রেগন্যাট; তুই তোর ক্ষমতা-সম্মান-ইজ্জ্বত আর চেয়ার বাঁচিনির লাইগা এই ফুইফুইট্টা মাইয়াডারে মাইরালছোস.....শুয়ারের বাচ্চা, তোরে তো আসমানের মালিক আল্লাহও কোনোদিন মাফ করবো না.....” বলতে বলতে হুড়মুড় করে মাটিতে বসে পড়লো সোহেল। গগন বিদারী কান্নার আওয়াজ ভেসে আসতে লাগলো ঘর থেকে, মাটি কামড়ে পড়ে কাঁদতে লাগলো পরীর মামাতো বোন তনয়া।
“চল, কুত্তা। আমার তো ইচ্ছা করতাছে তোর এনকাউন্টার কইরা ফালাইয়া দেয়।” এ.এস.পি বলে উঠলো।
মমতাজ মেম্বারের হাতে হাতকড়া পড়িয়ে টেনে-হেঁচড়ে নিয়ে যাওয়া হলো পুলিশের গাড়িতে, গাড়িতে উঠার আগ মুহূর্তে এ.এস.পি রফিককে লক্ষ্য করে বলে উঠলো – “আমরা সবাই খুব দুঃখিত, তোমাকে আমরা ওভাবে মানসিকভাবে পীড়া দিয়ে চাই নি। কিন্তু, পরিস্থিতি বাধ্য করে....”
“না স্যার, ঠিক আছে। আমরাও কিছু ভুল ছিলো...” শুকনো হাসি হেসে বললো রফিক।
“ভালো থেকো...”
“জ্বি স্যার...”
রফিক পুকুরের পাড় ধরে হেঁটে গিয়ে নদীর পাড়ে বসলো, বুক থেকে যেন পৃথিবীর সবচেয়ে বড় কষ্ট নেমে গেলো। আনমনে চোখে ফেটে অশ্রু গড়িয়ে পড়তে লাগলো চোখ থেকে, ডুকরে ডুকরে ফুঁপিয়ে কাঁদতে লাগলো রফিক। মুহূর্তখানিক পরে এক সত্তা পাশে বসলো রফিকের, নিজের কাঁধ বাড়িয়ে দিয়ে রফিকের কান্নাগুলোতে শুকে নিতে লাগলো।
“আরে..আরে..করেন কি! এতো দামি মুক্তোর কণা এভাবে ঝড়াবেন না। আমি আছি তো...” বলে মুচকি হেসে উঠলো মেয়ে সত্তাটি!
সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই জানুয়ারি, ২০১৯ সন্ধ্যা ৬:১২