আমরা নেট-এ যে সব ছবি দেখি তার অনেকগুলোই HDR ফটোগ্রাফি, কিন্তু সব গুলোই কিন্তু HDR ফটোগ্রাফি না। হাই ডাইমানিক র্যাঞ্জ (High Dynamic range) বা HDR ফটোগ্রাফি তোলা খুব মজার একটা অভিজ্ঞতা।
Dynamic range বলতে বোঝায় কোন ছবিতে আলোর প্রখরতার সর্বোচ্চ এবং সর্বনিম্ন অনুপাত। খুব সহজ করে বলতে গেলে ছবিতে সাদা এবং কালোর বা আলো এবং ছায়ার উপস্থিতি। মানুষের চোখ খুব অদ্ভুত একটা সৃষ্টি। ধরুন আপনি দূপুরবেলা ভরপেট খেয়ে বিছানায় বসলেন। পাশেই খোলা জানালা এবং একই সাথে আপনি দুটি বাসা দেখতে পারছেন। জানালা বরাবর অপর একটি বাসার জানালা এবং সেখানে মৌসুমি পড়ার টেবিলে পড়ছে এবং তার পাশে অন্য একটি বাসার ছাদ। আপনি মৌসুমির দিকে তাকিয়ে হাসলেন। সেও আপনার দিকে তাকিয়ে একটু লাজুক হাসি দিল। এমন সময় অন্য বাসার ছাদে রুপা উঠেছে। আপনি চোখ সরিয়ে রুপাকে দেখলেন। রুপা আপনাকে দেখে হাত নেড়ে ইশারা করল, আপনিও সাথে সাথে রুপার দিকে তাকিয়ে হাত নাড়লেন। যেহেতু মৌসুমির পাশের দেওয়ালে জানলা নেই, সে বুঝলোনা যে পাশের ছাদে কেউ আছে। সে মনে করল আপনি তাকে হাত নেড়েছেন। সেও হাত নাড়লো। আপনি পড়লেন মহা ফাঁপড়ে। কার সাথে টাংকি মারবেন? একবার রুপার দিকে তাকাচ্ছেন আরেকবার মৌসুমির দিকে তাকাচ্ছেন।
এবার ধরুন আপনি চাইলেন রুপা আর মৌসুমির একসঙ্গে ছবি তুলবেন। একই সময়ে দুজনের সাথে টাংকি মারা তো ভাগ্যের ব্যাপার। তাছাড়া বিয়ের পর বউকেও ছবি দেখিয়ে বলতে পারবেন, “দেখো, বিয়ের আগে আমার জন্য কত মেয়ে লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতো!” DSLR ক্যামেরা দিয়ে আপনি রুপাকে ফোকাস করে ছবি তুললেন। কিন্তু মৌসুমির ছবি উঠলোনা। কারন জানলা দিয়ে পুরো রুমটা ছবিতে অন্ধকার উঠল। আপনি মৌসুমিকে ফোকাস করে ছবি তুললেন। এবার মৌসুমি ছবিতে আসলো কিন্তু রুপাসহ পাশের বাসার ছাদটি পুরোই সাদা হয়ে গেল।
ব্যাপারটা কি হল? ব্যাপারটা হল যেহেতু আপনার চোখ DSLR ক্যামেরার থেকে হাজার হাজারগুণ ভাল একটা ক্যামেরা, আপনি একই সাথে বাসার ভিতরের ছায়াতে থাকা মৌসুমি এবং বাইরের প্রখর রোদের আলোতে থাকা রুপাকে দেখতে পারছেন। মানুষের চোখের ডাইনামিক রেঞ্জ অনেক হাই। কিন্তু DSLR ক্যামেরার ডাইনামিক রেঞ্জ খুবই কম তাই আপনি রুপার এবং মৌসুমির ছবি একই সাথে তুলতে পারলেন না।
এবার তাহলে জানা যাক HDR ছবি তুলতে আপনার কি কি লাগবে। অবশ্যই একটা DSLR ক্যামেরা, ট্রাইপড, রিমোট সাটার, আর পোস্ট প্রসেসিং-এর জন্য সফটওয়্যার।
প্রথমে আপনাকে ছবি তুলতে হবে। HDR ছবিগুলো আসলে একটা ছবি না। বলা যায় এগুলো তিনটি, পাঁচটি, সাতটি বা আরো অধিক ছবির সমন্বয়। আপনি যখন ছবি তুলবেন তখন নূন্যতম তিনটি ছবি আপনাকে তুলতে হবে। তিনটি ছবির একটি হল নরমাল এক্সপোজার এ তোলা, দ্বিতীয়টি হল low exposure এ তোলা, তৃতীয়টি হল high exposure এ তোলা। খালি হাতে তিনটি ছবি তুলতে গেলে আপনার হাত কেঁপে যেতে পারে। সেক্ষেত্রে তিনটি হুবহু একই ছবি উঠবে না। সেকারণে আপনার ট্রাইপড এবং রিমোট সাটার ব্যবহার করা উচিত। অবশ্য কোন শক্ত স্থানে ক্যামেরা স্থির রেখে খালি হাতেও আপনি ছবি তুলতে পারেন। তবে ছবিগুলো একই রকম না হওয়ার সম্ভবনা থেকে যায়। অ্যাপারচার মোড এ ছবি তোলা ভাল। সেক্ষেত্রে ছবির অ্যাপারচার এবং আই এস ও একই থাকবে। সাটার স্পীড অথবা এক্সপোজার কম্পেনশেসন বদলে আপনি ছবির এক্সপোজার চেঞ্জ করে নিতে পারবেন। ভাল DSLR ক্যামেরাগুলোতে এক্সপোজার ব্রাকেটিং বলে একটা অপশন থাকে। এর মাধ্যমে ক্যামেরা নিজে নিজে বিভিন্ন এক্সপোজারে ছবি তুলে। যেমন আপনি যদি ১ এক্সপোজার ইন্টারভেল এ পাঁচটি ছবি তুলতে বলেন তবে ক্যামেরা -2EV, -1EV, 0EV, 1EV, 2EV এক্সপোজার এ পাঁচটি ছবি তুলবে। আপনার ক্যামেরাতে যদি এই অপশনটি না থাকে তবে ম্যানুয়ালি এক্সপোজার চেঞ্জ করে ছবি তুলতে হবে। নিচের ছবিগুলো আমি -1EV, 0EV, 1EV এক্সপোজারে তুলেছি।
ছবি তোলা হয়ে গেলে কম্পিউটারে ছবিগুলো নিয়ে আপনাকে প্রসেস করতে হবে। HDR ছবি প্রসেস করার জন্য বিভিন্ন রকমের সফটওয়্যার পাওয়া যায়। HDR luminance একটি ফ্রি সফটওয়্যার। এছাড়াও আপনি যদি ফটোশপ ব্যবহার করেন তবে Google Nik Collection plugin ব্যবহার করতে পারেন। এটা আগে কিনতে হত, এখন ফ্রী করে দিয়েছে। আমি ফটোশপে Google NIK collection plugin ব্যবহার করে HDR ছবিটি প্রসেস করেছি।
ফাইনাল ছবি
নিচের ছবিটি আমার তোলা প্রথম –HDR ছবি। এই ছবিটি আমি খালি হাতে ম্যানুয়ালি তুলেছিলাম।
এছাড়াও আপনি একটি Single ছবি তুলে সফটওয়্যার দিয়ে তা HDR ছবিতে রূপান্তর করে নিতে পারেন। তবে অনেকেই এই ধরণের ছবিতে True HDR ছবি বলতে চান না। Google Nik Collection plugin ব্যবহার করে Single ছবিকেও HDR করা যায়।
সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে আগস্ট, ২০১৬ সকাল ১১:১৪