এমন এক সময় ছিল যখন আমি মনে করতাম যে যত বেশি মেগাপিক্সেল ক্যামেরা হবে, ছবির মান তত ভাল হবে। কথাটি অনেকাংশে ঠিক হলেও তা পুরোপুরি ঠিক না। যেমন ধরুন ২ মেগাপিক্সেল ক্যামেরার চেয়ে ৮ মেগাপিক্সেল ক্যামেরায় অনেক ভাল ছবি উঠবে, কিন্তু ৮ মেগাপিক্সেল ক্যামেরার চেয়ে ১৬ মেগাপিক্সেল ক্যামেরায় ঠিক ততটুকু ভাল ছবি উঠবে না। মানে বলতে চাচ্ছি, ৮ মেগাপিক্সেল আর ১৬ মেগাপিক্সেলে যে ছবি উঠবে, আপনার কাছে দুটো ছবির মধ্যে মানের খুব একটা পার্থক্য আছে বলে মনে হবে না। আসলে আমরা যারা শখের জন্য ফটোগ্রাফি করি, তারা খুব বেশি হলে তা অনলাইনে শেয়ার করি বা খুব ছোট আকারে প্রিন্ট করি। তাই ৮, ১৬ বা ২৪ মেগাপিক্সেলে আমাদের খুব একটা সমস্যা হবে না। (তবে প্রফেশনার ফটোগ্রাফার হলে ভিন্ন কথা। তাদের ছবি বিলবোর্ডের মত বড় আকারে প্রিন্ট করা হয়। তখন অবশ্যই বেশি মেগাপিক্সেলে ছবি তুলতে হবে।)
৮ মেগাপিক্সেলের একটি compact ক্যামেরা এবং ৮ মেগাপিক্সেলের একটি DSLR ক্যামেরায় তোলা ছবির মধ্যে DSLR এ তোলা ছবিটি এত ঝকঝকে এবং সুন্দর হয় কেন? এর প্রধান কারণটি হল ক্যামেরার ইমেজ সেন্সর।DSLR ক্যামেরায় যে ইমেজ সেন্সর ব্যবহার করা হয় তা compact ক্যামেরায় ব্যবহৃত সেন্সরের চেয়ে আকারে অনেক বড় হয়। ব্যাপারটা এমন আপনাকে যদি একটা ছোট কাগজ এবং একটা বড় কাগজ ধরিয়ে দেওয়া হয় এবং বলা হয় দুটি কাগজে একই ছবি আঁকতে। তবে আপনার বড় কাগজে আঁকা ছবিটাই স্পষ্ট এবং সুন্দর হবে।
সবচেয়ে বড় ইমেজ সেন্সরের আকার হয় ৩৬মিমি X ২৪মিমি। একে অনেক সময় ৩৫মিমি সেন্সরও বলা হয়। প্রাগ ঐতিহাসিক যুগে আমরা যখন রীলের ক্যামেরায় ছবি তুলতাম, তখন ছবির নেগেটিভ বের করতে হত। নেগেটিভের সাইজ ছিল ৩৫মিমি। সেই নেগেটিভের সাথে এই ইমেজ সেন্সরের মাপের মিল থাকায় একে ৩৫মিমি সেন্সর বলা হয়। এবং এই মাপের সেন্সর যে ক্যামেরায় ব্যবহার করা হয় সেগুলোকে Full frame DSLR ক্যামেরা বলে।
এন্ট্রি লেভেলের DSLR ক্যামেরাগুলোতে যে ইমেজ সেন্সর ব্যবহার করা হয়, সেগুলোর মাপ সাধারণত ২৩.৬মিমি X ১৫.৬ মিমি বা ২২.২মিমি X ১৪.৮মিমি হয়ে থাকে। এগুলোকে APS-C (Advanced Photo System type-C) সেন্সর বলা হয়। ২৩.৬মিমি X ১৫.৬ মিমি মাপের সেন্সর Nikon ক্যামেরা গুলোতে ব্যবহার করা হয়। ২২.২মিমি X ১৪.৮মিমি মাপের সেন্সর ক্যানন ক্যামেরায় ব্যবহার করা হয়। সাধারণ digital compact ক্যামেরার সেন্সরের মাপ হয় ৬.১৭মিমি X ৪.৫৫মিমি। তবে অনেক ক্যামেরায় ৭.৬মিমি X ৫.৭মিমি সেন্সরও ব্যবহার করা হয়। এছাড়াও আরো বিভিন্ন মাপ আছে যেগুলো বিভিন্ন ব্যান্ডের ক্যামেরায় ব্যবহার করা হয়।
Crop factor: আপনি যদি একটি ফুল ফ্রেম ক্যামেরা দিয়ে ৫০মিমি ফোকাল লেন্থে কোন ছবি তুলেন এবং একই ফোকাল লেন্থে একটি APS-C সেন্সরযুক্ত ক্যামেরা দিয়ে ছবি তুলেন, তবে দুটি ছবি দেখতে একইরকম হবে না। APS-C যুক্ত ক্যামেরার ছবিটি দেখলে মনে হবে তা ফুল ফ্রেম ক্যামেরার ছবিটি থেকে crop করা হয়েছে। আসলে একই ফোকাল লেন্থে ৩৫ মিমি সেন্সর-এ যে প্রতিচ্ছবিটি পড়বে, APS-C সেন্সরে ততটুকু প্রতিচ্ছবিই পড়বে কিন্তু সেন্সরের সাইজ ছোট বলে ছবিটির চারদিকের কিছু অংশ সেন্সরটি নিতে পারবে না। তাহলে APS-C সেন্সর যুক্ত ক্যামেরা সব সময় ৩৫ মিমি সেন্সরের চেয়ে ছোট ছবি তুলবে? উত্তরটি হ্যাঁ আবার না। আপনি যদি একই ফোকাল লেন্থে ছবি তুলেন তাহলে সব সময় ছোট বা কম ছবি উঠবে। কিন্তু আপনি যদি বুদ্ধি করে APS-C যুক্ত ক্যামেরার লেন্সের ফোকাল লেন্থ কমিয়ে ৩১মিমি এ ছবি তুলেন তাহলে একই পরিমান ছবি তুলতে পারবেন। APS-C সেন্সর যুক্ত ক্যামেরায় আপনি যে ৩১মিমি ফোকাল লেন্থ ঠিক করেছেন এই হিসাবটিকেই ক্রপ ফেক্টর বলে। আমার ক্যামেরাটি Nikon D3300 যার সেন্সরটি APS-C সেন্সর এবং এর ক্রপ ফেক্টর ১.৬X। সুতরাং আমি যদি ফুল ফ্রেমের ক্যামেরার ৫০ মিমি ফোকাল লেন্থের ছবি তুলতে চাই তাহলে আমাকে ৫০/১.৬=৩১মিমি ফোকাল লেন্থে ছবি তুলতে হবে। নিচের ছবিদুটি দেখলে আমার এত বকরবকরের মানে বুঝা সহজ হবে।
এখন প্রশ্ন হচ্ছে ফুল ফ্রেম সেন্সর আর অন্যান্য সেন্সরের মধ্যে আপনি কোন ক্যামেরাটি কিনবেন? তার আগে জেনে নেই যে কোনটার কি সুবিধা? প্রথম কথা হচ্ছে ৩৫মিমি সেন্সরে যে ছবিটি উঠবে তা অবশ্যই APS-C সেন্সরের ক্যামেরার থেকে ভাল হবে। যেহেতু ফুল ফ্রেমের সেন্সরটি বড়, ছবি খুব স্পষ্ট, পরিস্কার, উঠবে। ছবির details ভাল হবে, noise কম হবে এবং অন্ধকারেও ভাল ছবি উঠবে। আপনার যদি পর্যাপ্ত বাজেট থাকে তাহলে আমি মনে করি আপনার ফুল ফ্রেমের DSLR ক্যামেরাই কিনা উচিত। তাছাড়া ফুল ফ্রেম ক্যামেরাগুলোতে এমন সব অপশন আছে যা যত দিন যাবে ততই আপনার ফটোগ্রাফিকে আর মজাদার করবে। কিভাবে তা অন্য কোনদিন হয়তো লিখবো।
আর যারা আমার মত নুন আনতে পান্তা ফুরায় অবস্থা, মানে গরিবের ঘোড়া রোগে আক্রান্ত তারা APS-C ক্যামেরা কিনতে পারেন। কারন এধরণের সেন্সর যুক্ত ক্যামেরার দাম অনেক কম। আরেকটা সুখবর হল, কম ফোকাল লেন্থের লেন্স প্রয়োজন হয় বলে এধরণের ক্যামেরা হাল্কা হয় এবং লেন্সের দামও কম হয় (আসলে এগুলো হল স্বান্তনা )।
সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই জুন, ২০১৬ দুপুর ১:০৮