"কবিগুরু রবীন্দ্রনাথের মৃত্যুর পর তার শবদেহ শ্মশানে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। শ্মশান যাত্রীরা হঠাতই মৃত রবীন্দ্রনাথের উপর ঝাপিয়ে পড়ল।তার চুল-দাড়ি টেনে খুলে ফেলতে লাগল। রবীন্দ্রনাথের স্মারক সংগ্রহ। কেওড়াতলা শ্মশানে রবীন্দ্রনাথ যখন পৌঁছলেন তখন তার দাড়ি- গোঁফ- চুল সবই তুলে নেওয়া হয়েছে। তাকে দেখাচ্ছিল বীভৎস প্রেতের মতো।
পাঠক কল্পনা করুন, রবীন্দ্রনাথ দেড়শ বছর বেঁচেছেন। সার্ধশতবর্ষে তার মৃত্যু হলো। বাংলাদেশে আমরা তখন রবীন্দ্রসৃতি সংগ্রহের জন্যে কি করব? চামড়াসুদ্ধ খুলে ফেলব না? রবীন্দ্রনাথ তখন গায়ের চামড়া দিয়ে বুঝতেন বাংলাদেশের রবীন্দ্রভক্তি কোন পর্যায়।"(রঙ পেন্সিল)
না স্যার!!! ইতিহাসে লেখা থাকবে, আমরা বাঙালি চামড়া খুলে বুঝাই নাই আপনার প্রতি আমাদের ভক্তি কি রকম? তার চেয়েও জঘন্য কাজ করছি আমরা। লাশের রাজনীতি!! গত পাঁচ দিন হলো আপনি মারা গেছেন।বাংলাদেশের লক্ষ কোটি মানুষের ভালোবাসায় সিক্ত হলেন। এরপর আপনার দাফন কোথায় হবে সেটা নিয়ে শুরু হলো পরিবার রাজনীতি।আপনার প্রিয়তমা বউ বনাম আপনার পরিবার।আমরা জানি নুহাশপল্লীর প্রতিটি ইঞ্চি আপনার খুব প্রিয়। আর সেজন্য আপনি সেখানে তীর্থস্থান বানাতে চাননি। যেন আপনার প্রিয় গাছগুলো আমাদের মতো হিংস্র স্বার্থপর মানুষগুলোর সংস্পর্শে না আসুক। কিন্তু হলো না স্যার। এখন নুহাশপল্লী হবে হুমায়ূনের মাজার। আমাদের মতো আপনার আবেগী ভক্তরা সেখানে দল বেধে যাবে। নাটকের শুটিং আর পিকনিক স্পট হবে। স্যার ব্যবসা। আপনাকে নিয়ে আমাদের আবেগের প্রতি ব্যবসা।
"আমাকে নিয়ে একটি মজার ওয়েবসাইট আছে।নাম- 'হুমায়ূন আহমেদ কে না বলুন'( say no to Humayun Ahmed)। একদিন শাওন ওয়েবসাইট খুলে আমাকে দেখাল। আমি প্রভূত আনন্দ পেলাম। মনের আনন্দে সবাই আমাকে গালাগাল করে যাচ্ছে। ওয়েবসাইট দেখে জানলাম, আমার মৃত্যু বাংলাদেশের জন্যে একটি শুভ ঘটনা বলে বিবেচিত হবে। মৃত্যুতেও দেশের জন্যে কিছু করতে পারব, এটাও তো মন্দ না। কয়জনের সে সৌভাগ্য হয়?"(রঙ পেন্সিল) স্যার লাইন গুলো পড়ে গলার মধ্যে আটকে আসছে কান্না। স্যার যেখানে থাকেন ভালো থাকেন।আল্লাহ আপনাকে জান্নাতুল ফেরদৌস দান করুক...।