সাম্প্রতিক এক গবেষনায় দেখা গেছে , ব্রিটেনে প্রতি ১০ জন হার্টএটাক- এ আক্রান্ত রোগির মধ্যে ৯ জনকেই প্রচলিত ব্যবস্থায় ভুল চিকিৎসা দেওয়া হয়। পরিনামে গত ১০ বছরে হার্টএটাক এ আক্রান্ত হয়ে ৩৩০০০ এর বেশি রোগি মারা গেছে,অপ্রয়োজনে,অযথা। সঠিক ট্রিটমেন্ট পেলে হয়ত পরিনিতি অন্যরকম হতে পারত।গবেষকগন এও মনে করেন ,এইভাবে প্রতিরোধযোগ্য মৃত্যর হার এখানে উল্লেখিত সংখ্যার চেয়ে দ্বিগুন হবার সম্ভাবনাও আছে এবং তা উড়িয়ে দেবার মত যথেষ্ট গ্রাউন্ড সত্যিকার অর্থেই কারও নেই।এই যদি হয় ইংল্যান্ড এর অবস্থা,তাইলে বাংলাদেশের অবস্থা যে কি,তা অনুধাবন করার জন্য খুব বেশি চিন্তা করার প্রয়োজন আছে কি?
তবে গবেষনার যৌক্তিকতা নিয়ে,তার পদ্বতিগত ত্রুটি নিয়ে অনেকেই প্রশ্ন তুলেছেন।ইংল্যান্ড এ ডাক্তারদের সংগটন গবেষনার এই ফলাফল কে "অগ্রহনযোগ্য" বলে প্রত্যাখান করেছেন,এমনকি National Health Service এর মাধ্যমে সঠিক জবাব দিতে আহবান জানিয়েছেন।
হার্টএটাক এ আক্রান্ত রোগিদের ট্রিটমেন্ট দেবার জন্য আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত যে পদ্বতি আছে ,তাও যদি ইংল্যন্ডের হাসপাতাল গুলোতে মেনে চলার চর্চা থাকত, এতেও নিদেন পক্ষে ২৫% হার্টএটাকড রোগিকে মৃত্যর হাত থেকে রক্ষা করা যেত।
গবেষকগন তাদের পর্যবেক্ষনে এও দেখেছেন,প্রতি মাসে ইংল্যন্ডের প্রতিটি হাস্পাতালে অন্তত ১ জন রোগি অপর্যাপ্ত বা অযথাযথ চিকিৎসায় মারা যাচ্ছে,যা সঠিক পদ্ধতি মেনে চললে হয়তবা রক্ষা করা যেত।সঠিক সময়ে সঠিক ওষুধ কিংবা পরিমিত স্ক্রিনিং এর মাধ্যমে এই মৃত্যু নিশ্চিত ভাবেই ঠেকানো যেত বলেই মনে করেন এই গবেষনা কর্মের প্রধান গবেষক।
এটা ঠিক যে বর্তমানে হার্ট এর চিকিৎসায় অভূতপুর্ব উন্নয়ন সাধিত হয়েছে,তথাপি ইংলান্ডে প্রতি ৩ মিনিটে ১ জন হার্টএটাকে আক্রান্ত হয়,এবং প্রতি সপ্তাহে কর্মক্ষম বয়সের ২০০ জন মৃত্যুবরণ করছে। এই গবেষনা শুরু হয় ২০০৩ সালে।শেষ হোয় ২০১৩।মোট ৩৯০০০০ কেইস্কে এই গবেষনা অন্তর্ভুক্ত করা হয়। ইংল্যান্ড এবং ওয়েলশ এর ২৪৭ টি হাস্পাতাল থেকে তথ্য সংগ্রহ করে এই গবেষনা প্রতিবেদন দেয়া হয়েছে।
হার্ট এটাকে আক্রান্ত হলে পেশেন্ট কে কীভাবে ট্রিটমেন্ট দিতে হবে,আন্তর্জাতিকভাবে ১৩ পদ্বতিকে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে।গবেষনায় দেখা গেছে,ইংল্যান্ড এ ৮৭% ক্ষেত্রেই এই পদ্বতি মেনে চলে না।কর্তব্যরত ডাক্তার যা মনে করে,তাই সে রোগীর উপরে প্রয়োগ করছে,এতে ফেটালিটি তথা মৃত্যহারও বৃদ্ধি পাচ্ছে।
এই গবেষনাটি যৌথ ভাবে University of Leeds এবং University College London পরিচালনা করেন,যা পরবর্তিতে ব্রিটেনের প্রেস্টিজিয়াস মেডিকেল জর্নাল " European Heart Journal " এ প্রকাশিত হয়।তারা গবেষনা পরিচালনা করতে গিয়ে দেখেন,যদি প্রতিটি রোগিকে যথাযথ পরিক্ষানীরিক্ষা করে সঠিক উপায়ে ট্রিট্মেন্ট দেওয়া হত,পাশাপাশি মটিভেশান দেওয়া হত,তবে গত দশ বছরেই ৩৩০০০ মানুষকে মৃত্যর হাত থেকে রক্ষা করা যেত।
এই গবেষনায় তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে Myocardial Ischaemia National Audit Project (MINAP) থেকে।কিন্তু সত্যি বলতে কি এই প্রতিষ্টানটিও নানা সমস্যায় জর্জরিত,যার কারনেই প্রতিষ্টান অর্ধেকেরও কম রোগিকে তাদের ডেটাবেইজে অন্ত্ররভুক্ত করতে পারে।এতে গবেষনা কর্মটি কিছুটা বায়াসড হয়েছেন বলে মনে করেন গবেষনাদলের প্রধান Dr Chris Gale এবং কিছুটা ক্ষোভও প্রকাশ করেন যিনি নিজে Leeds Institute of Cardiovascular and Metabolic Medicine এর প্রধান। Dr Chris Gale- MINAP এর তথ্যগত গড়মিলের কারনে গবেষনার ফলাফল আন্ডার ইস্টিমেট হয়েছে বা হয়ে থাকতে পারে বলে জানান।
এই গবেষনায় আরেকটি উল্লেখযোগ্য বিষয় উন্মোচিত হয়েছে তা হল,আমাদের চিকিৎসা ব্যবস্থায় অভাবনিয় উন্নতি হয়েছে,তবে খুবি সাধারন কিছু ব্যপার একটু খেয়াল করে মেনে চললে হার্ট এটাকড পেশেন্ট এ পরিনিতও ভাল করা সম্ভব।
এই গবেষনা সবচেয়ে বড় যে অর্জন হল,আমরা সমস্যটা আইডেন্টিফাই করতে পেরেছি।এখন সামান্য কিছু পরিবর্তন,পরিমার্জন করে কিছু নীতিমালা প্রনয়ন এবং বাস্তবায়ন করতে পারলেই অনেক মানুষের জীবন রক্ষা করা সম্ভব হবে।কাউকে ছোট কিংবা বিব্রত করার জন্য এই গবেষনা করা হয় নি।
এই গবেষনার আর্থিক সহায়তা দিয়েছেন "ব্রিটিশ হার্ট ফাউন্ডেশান"।"ব্রিটিশ হার্ট ফাউন্ডেশান এর কর্মকর্তা Professor Peter Weissberg বলেছেন,এই গবেষনার মধ্যমে আমরা বুঝতে পারলাম,কিভাবে ব্রিটিশরা ভুল চিকিৎসা কিংবা অপর্যাপ্ত চিকিৎসার কারনে হার্ট এটাকড রোগি মারা যেত,এখন আমাদের দায়িত্ব আরো বেড়ে গিয়েছে,এখন আমাদের হাসপাতাল,এবং স্বাস্থ্যসংক্রান্ত যে প্রতিষ্টান আছে,সবাই যে এই গবেষনার প্রাপ্ত ফলাফল থেকে শিক্ষা নিয়ে,কিভাবে আরো ভাল্ভাবে নিজেদের মান বৃদ্ধি করে মানুষ্কে অকাল মৃত্যর হাত থেকে রক্ষা করতে পারি,সে দিকে আরো বেশি মনোযোগ দেয়া উচিত।সবশেষে আরেকটা ফ্যক্ট সবাইকে মনে করিয়ে দিতে চাই,কোন বিষয়ের ব্যপারে যদি কোন গাইডলাইন থাকে তবে তা অবশ্যই মেনে চলা উচিত,এতে সুবিধাই হয়।সবসময়।
সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই মে, ২০১৬ রাত ১১:১৬