somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সমালোচিত হাজির বিরিয়ানি গানের বাস্তব প্রেক্ষাপট

২২ শে অক্টোবর, ২০১৮ রাত ৯:১৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



সম্প্রতি রায়হান রাফির পরিচালনায় জাজ মাল্টিমিডিয়ার ব্যানারে ‘দহন’ সিনেমার ‘হাজির বিরিয়ানি’ গানটি নিয়ে বেশ বিতর্ক তৈরি হয়েছে। সেই গানটিতে ব্যবহৃত হয়েছে মদ, গাঁজা, বাবা, দেয়ালে হিসু ইত্যাদি কিছু বিতর্কিত শব্দ। ইউটিউবে প্রকাশের পরেই প্রচুর ভিউ পেয়েছে, সাথে পক্ষে বিপক্ষে অসংখ্য কমেন্টও। অনেক খ্যাতিমান শিল্পীরাও গানটির ব্যাপারে আপত্তি জানিয়েছেন।

গানটির ব্যাপারে রায়হান রাফি বলেছেন, "আমাদের গল্পের চরিত্রটি একটি বস্তিতে বেড়ে উঠেছে। তার বাবা-মা নেই। যার জীবনের একমাত্র লক্ষ্যই হল আজ রাতে সে কিছু একটা নেশা করবে।"
"অসুস্থ মস্তিষ্কের মানুষ এই ছেলেটা। গালি ছাড়া কথা বলে না। নেশার টাকার জন্য অনেক কিছু করতে পারে সে, সেটাই আসলে এখানে ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা করা হয়েছে।"
এ ধরনের গানের গীতি লেখার অনেক কারন থাকতে পারে। হতে পারে সেটা নিষ্ক্রিয়ভাবে লেখা হয়েছে, বা সমালোচিত করার মাধ্যমে গানটিকে হিট করানোর জন্য। অথবা সত্যিকার অবস্থা তুলে ধরার জন্যও বানানো হতে পারে।

যে কারনেই গানটিকে বানানো হোক না কেন, এটা তো খুব সত্যি যে তরুণ সমাজের একটা বিশাল অংশের চিত্র এখানে ফুটে উঠেছে। তবে শুধু বস্তিতেই এমন ছেলে থাকে তা মোটেই নয়; ভদ্র-শিক্ষিত ধনী ঘরেও এই ছেলেদের দেখা পাওয়া যায়। যারা সমাজ নিয়ে অনেক সন্তুষ্ট তারা আরও একটু অনুসন্ধান করে দেখতে পারেন যে, ব্যাপারটা মিথ্যা কি না। গলির মোরে, চায়ের দোকানে ছেলেপেলের আড্ডায় উচ্চস্বরে গালিগালাজ, মাদক নিয়ে ফুর্তির আলাপ, মেয়েদের কটাক্ষ বা ব্যবচ্ছেদ খুব সাধারণ বিষয়। অন্তত আমার কাছে। কারন আমি এগুলো প্রতিনিয়ত দেখে এবং শুনে অভ্যস্ত। মদ, গাঁজা তো এখন আর নেশা হিসেবেই তরুণরা দেখেই না। এগুলো এখন ফ্যাশান, ট্রেন্ড। আগে গাঁজা সেবকদের কটাক্ষ করে বলা হত গাঞ্জুট্টি, ভাবা হত এরা বস্তির লোক। কিন্তু ব্যাপারটা আদৌ তা না। মাদকাসক্তদের মধ্যে বিশাল অংশ উচ্চ বিত্ত পরিবারের সন্তান । এখন মাদক ছাড়া পার্টি জমে না, রিফ্রেশ হওয়ার একমাত্র মাধ্যম হয়ে গেছে। এর মাধ্যমে ভাই-ব্রাদার মিলে চিল করা হয়।

হুট করে তো কিছু হয় না। জানতে-অজান্তে একটা প্রক্রিয়ার মাধ্যমে এসকল ধ্বংসাত্মক জিনিসের বিকাশ ঘটেছে। এটা হতেই পারে না যে, কারো চোখে এই সমস্যাগুলো ধরা দেয় নি। কিন্তু রাষ্ট্র ক্ষমতা যেহেতু কতিপয় ব্যক্তিকেন্দ্রিক তাই চাইলেও আমরা অনেক কিছু করতে পারি না; অন্তত ভালো কিছু করতে পারি না।

মাদক যে শুধু স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর তা নয়, সমাজের জন্যই ভয়ানক ক্ষতিকর। মাদকে আসক্ত মানুষের মাথায় সারাক্ষণ একটাই চিন্তা ঘুরতে থাকে, আর সেটা হল মাদক। কখন সে মাদক সেবন করবে, তা সে যেভাবেই হোক না কেন। এ কারনে তারা সাধারণ জীবনযাপন করতে পারে না। সিনেমায় যেমন মানুষের রক্তখেকো জোম্বি দেখি, তাদের ভেতরের অবস্থাও একই। দিনের পর দিন বিভিন্ন মাদক গ্রহনের ফলে তাদের ব্রেন ক্ষতিগ্রস্থ হয়, ন্যায় অন্যায় বোধ হারিয়ে ফেলে। যার উদাহরণ আমরা খবরে অহরহ পাই, মাদকের টাকার জন্য বাবা-মাকেও হত্যা করতে বাধে না তাদের। আমি নিজে দেখেছি মাদক সেবীদের বাসায় তাদের আচরণ। আমি হতবাক হয়েছি।
এবার আসি দেয়ালে হিসু। এরকম ব্যাপারও তো অহর্নিশি দেখি। দেয়ালে কতশত গলির নেতাখাতার নাম, কত প্রেম প্রস্তাব আর গালিগালাজ ইত্যাদি তো আছেই। এটা এক শ্রেণীর তরুণদের কাছে শিল্প। তাদের শিল্পের দৌড় ওই পর্যন্ত সেটারই জানান দিচ্ছে এই লেখাগুলো। এই দেয়ালের অবস্থা কিন্তু অনেক কিছুর প্রতি ইঙ্গিত দেয়। জানান দেয় তাদের শিক্ষা, মনস্তাত্ত্বিক অবস্থা, যৌন সন্ত্রাস এবং নারী নির্যাতনের অবস্থা প্রভৃতি সার্বিকভাবে সমাজ এবং তরুণদের বেহাল দশার কথা। দেশ এবং সমাজ কোন দিকে যাচ্ছে তাও বোঝা যায় এসকল ব্যাপার বিশ্লেষণের মাধ্যমে।

এখন শুধু একটা গানের কথা আর ভিডিওতে এসকল দেখেই পাবলিক ক্ষোভে ফেটে পড়েছে, আপত্তি জানিয়েছেন অনেক খ্যাতিমান শিল্পীরা। কিন্তু বছরের পর বছর ধরে ধ্বংস হয়ে যাওয়া সমাজের বেহাল দশা কি তারা দেখে নি? কেন তখন তাদের আলোচনায় এই বিষয়গুলো তুতে আনেন নি। তখনও তো পারতেন উল্টো পালটা বানান দিয়ে কিছু লেখার চেষ্টা করতে। যারা কমেন্ট করেছেন তারা আদৌ নিজের ব্যক্তিগত জীবনে কতটা সৎ সেটা ভাবারও অবকাশ রয়েছে। সব আপত্তি নাটক সিনেমা নিয়ে কেন? বরং আপত্তিগুলো সেখানে করা উচিৎ যেখানে করার মাধ্যমে ইতিবাচক পরিবর্তন আসতে পারে।
আমাদের দেশে যেহেতু ভারত এবং পাশ্চাত্ত্যের চ্যানেলগুলোর এক্সেস আছে, সেখানে খুব স্বাভাবিকভাবে আমাদের ভাষা এবং সংস্কৃতিতে ভারত বা পাশ্চাত্ত্যের প্রভাব পড়বে। বিশ্বায়নের এই যুগে এই ধরনের অনুপ্রবেশ আটকানো সম্ভব না। কিছু যদি করার থাকে তা হল নিজেদের ভাষা, সংস্কৃতি সম্পর্কে শিক্ষার প্রসার ঘটানো, আমাদেরও যে সুন্দর নির্মল একটা ঐতিহ্য ছিল সেটা তুলে ধরা। আমাদের ভাষা, সংস্কৃতি, ঐতিহ্য যে স্বয়ংসম্পূর্ণ সেটা সবাইকে বুঝতে সক্ষম করা। সক্ষম করা বলছি কারন কাউকে বাধ্য করিয়ে এ কাজ হওয়ার নয়।
আমার মতে জোর করে কিছু হয় না। মদ, গাঁজা, বাবা ইত্যাদি মাদকের কথাই বলি আর বখে যাওয়া তরুণদের কথাই বলি; কাউকেই পিটিয়ে বা শাস্তি দিয়ে ঠিক করা সম্ভব নয়। পিটিয়ে বা শাস্তি দিয়ে ভয় দেখানো সম্ভব তবে ভেতরে সে সেই পশুই থেকে যাবে। বরং তার মধ্যে বিবেকের জন্ম দিতে হবে যাতে সে নিজেই ন্যায় অন্যায় বিচার করতে পারে।


দেশ বা সমাজ বললে তো নাটক সিনেমাও চলে আসে কারন সেগুলো দেশ বা সমাজেরই প্রতিচ্ছবি। তাই বদল যদি কিছু করতেই হয় একেবারে শেকড়ে করতে হবে। আগাছা গোঁড়া থেকে তুলে ফেলার মাধ্যমেই অন্তত কিছু সময় আগাছা থেকে বাঁচা সম্ভব। তাই শুধু নাটক সিনেমা নয়; মূল সমস্যা নিয়ে আলাপচারিতার প্রয়োজন।
আলোকিত সকাল আসন্ন, আর খানিক অপেক্ষা।
সর্বশেষ এডিট : ২২ শে অক্টোবর, ২০১৮ রাত ৯:৪৭
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলায় দেশনায়ক তারেক রহমানকে সম্পৃক্ত করার নেপথ্যে  

লিখেছেন এম টি উল্লাহ, ০৬ ই নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৫:০৮


আগেই বলেছি ওয়ান ইলেভেনের সরকার এবং আওয়ামীলীগের যবনায় জনাব তারেক রহমানের বিরুদ্ধে পৌনে একশ মামলা হলেও মূলত অভিযোগ দুইটি। প্রথমত, ওই সময়ে এই প্রজন্মের নিকট উপস্থাপন করা হয়েছিল দেশনায়ক তারেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

ট্রাম্পকে নিয়ে ব্লগারদের রাজনৈতিক চিন্তাভাবনা

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৬ ই নভেম্বর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:১০



**** এডমিন টিমের ব্লগারেরা আমাকে বরাবরের মতোই টার্গেট করে চলেছে, এভাবেই সামু চলবে। ****

ট্রাম্পের বিজয়ে ইউরোপের লোকজন আমেরিকানদের চেয়ে অনেক অনেক বেশী শংকিত; ট্রাম্প কিভাবে আচরণ করবে ইউরোপিয়ানরা... ...বাকিটুকু পড়ুন

ট্রাম্পের বিজয়, বিশ্ব রাজনীতি এবং বাংলাদেশ প্রসংগ

লিখেছেন সরলপাঠ, ০৬ ই নভেম্বর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:২১

ট্রাম্পের বিজয়ে বাংলাদেশে বা দেশের বাহিরে যে সব বাংলাদশীরা উল্লাস করছেন বা কমলার হেরে যাওয়াতে যারা মিম বানাচ্ছেন, তারাই বিগত দিনের বাংলাদেশের ফ্যাসিস্টের সহযোগী। তারা আশায় আছেন ট্রাম্প তাদের ফ্যাসিস্ট... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঠেলার নাম বাবাজী !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৬ ই নভেম্বর, ২০২৪ রাত ৯:৩১

এক গ্রামীণ কৃষক জমিদার বাড়িতে খাজনা দিতে যাবে। লোকটি ছিলো ঠোটকাটা যখন তখন বেফাস কথা বা অপ্রিয় বাক্য উচ্চারণ করে ক্যাচাল বাধিয়ে ফেলতে সে ছিলো মহাউস্তাদ। এ জন্য তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

শীঘ্রই হাসিনার ক্ষমতায় প্রত্যাবর্তন!

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৭ ই নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:৩৮


পেক্ষার প্রহর শেষ। আর দুই থেকে তিন মাস বাকি। বিশ্ব মানবতার কন্যা, বিশ্ব নেত্রী, মমতাময়ী জননী, শেখ মুজিবের সুয়োগ্য কন্যা, আপোসহীন নেত্রী হযরত শেখ হাসিনা শীগ্রই ক্ষমতার নরম তুলতুলে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×