প্রতিদিনের আজও আমার মা টিভিতে নাটক দেখছিলেন। আমিও পাশে বসে ছিলাম। সেখানে একটা দৃশ্য ছিল এমন, একটি মেয়ে রাতে অফিস থেকে ফেরার পথে কিছু দুষ্কৃতিকারীর কবলে পড়েছে, তারা মেয়েটিকে তুলে নিয়ে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছে। মেয়েটি পালানোর চেষ্টা করছে, চিৎকার করছে। কিছু লোক এগিয়ে এসেও ভয় পেয়ে পিছু হটে যায়।
এরকম নাটক বা সিনেমার দৃশ্য টিভি পর্দায় আমরা হরহামেশাই দেখি। বাস্তবেও প্রতিনিয়ত আমাদের আশেপাশে এসকল ঘটনা ঘটে চলেছে, হয়তো একই রকম; হয়তো পরিবর্তিত রূপে। কিছু ঘটনা আমরা বিভিন্ন মাধ্যমে জানতে পারি, অধিকাংশই থেকে যায় অগোচরে। প্রতিদিন যৌন হয়রানি, শ্লীলতাহানি, ধর্ষণের মত অপরাধ ঘটেই চলেছে। দুষ্কৃতিকারীদের কবল থেকে রেহাই পায় না কেউ, শিশু থেকে বৃদ্ধা সবাই এদের শিকার।
আমরা দেখেও না দেখার ভান করে চলে যাই, ঘটনা মনে বেশি পীড়া দিলে ভুলে যাই। মনে মনে ভাবি, এমনটা হবেই; কিছু করার নেই। নয়তো ভাবি ভুক্তভোগী তো আমার কেউ না। ভাবি যে এসব দেখার দায়িত্ব আমাদের না; এই দায়িত্ব প্রশাসনের। যদিও এটা সত্যি যে, এসকল অপরাধীদের ধরা এবং তাদের বিচারের মাধ্যমে শাস্তি প্রদান করা আইন প্রশাসনের দায়িত্ব; কিন্তু তারা যথাযথভাবে সেটা করছে না বলেই অহরহ আমাদের দেশের নারীদের যৌন হয়রানির শিকার হতে হয়।
তবে কতকাল নিজের জাগ্রত বিবেককে কালো কাপড় পরিয়ে অন্ধ বানানোর বৃথা চেষ্টা করা যায়, কতকাল না দেখার ভান করে অদৃষ্টের ওপর মিথ্যে দায় চাপিয়ে ঘরের কোণে বসে থাকা যায়?
এখানে স্কুলে পড়া কৃষ্ণচন্দ্র মজুমদারের কয়েকটি লাইন উল্লেখ করা দরকার –
“চিরসুখীজন ভ্রমে কি কখন
ব্যথিতবেদন বুঝিতে পারে।
কী যাতনা বিষে, বুঝিবে সে কিসে
কভূ আশীবিষে দংশেনি যারে।”
একজন নারী যখন যৌন হয়রানির শিকার হয়, সে যে কি ট্রমার মধ্য দিয়ে যায় তা আমাদের পক্ষে অনুধাবন করা সম্ভব নয়। এমনকি তার পরিবারের ভয়, দুশ্চিন্তাও আমরা অনুভব করতে পারবো না যতক্ষণ পর্যন্ত আমাদের পরিবারের কোন মেয়ে একই ঘটনার সম্মুখীন হবে।
আমি যখন এসব ব্যাপার নিয়ে ভেবে খুব হতাশ হই; আমার ধারণা অনেকেই হন। তবে এই আশাও রাখি সকলের একতাবদ্ধ প্রচেষ্টায় নিশ্চয়ই একদিন আমরা আমাদের মেয়েদের জন্য একটা নিরাপদ সমাজের প্রবর্তন ঘটাতে পারবো। আজকের এই মানসিক পীড়াই আমাদের সেই কাজটা করতে সাহায্য করবে। আলো আসবেই।
সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই অক্টোবর, ২০১৮ রাত ১১:১২