দেশ ও রাজনীতি নিয়ে প্রায়ই ভাবি যদিও বিশেষ কিছু মাথা থেকে বের করতে পারি নি। অনেক সময় সাংগঠনিক শক্তি অর্জন করার কথা ভেবে, রাজনীতি করার অনুমতি আদায়ের জন্য দেশের দুর্বিষহ অবস্থা নিয়ে বাবা-মায়ের সাথে কথা বলি। দেশের খারাপ অবস্থা, মানুষের অসহায়ত্ব তুলে ধরে রাজনীতি করার প্রয়োজনীয়তা এবং ইচ্ছা প্রকাশ করি। কিন্তু বাংলাদেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট এবং পরিস্থিতি বিবেচনা করে কোন বাবা-মা বোধহয় সন্তানকে রাজনীতিতে যুক্ত হওয়ার স্বপক্ষে মত দেবেন না। আমার ক্ষেত্রেও এক।
বাবা বললেন,“লেখাপড়া করো, মানুষ হও। নিজে মানুষ না হয়ে অন্যদের সাহায্য করা যায় না।” বাবার জায়গা থেকে সে অত্যন্ত যৌক্তিক কথাই বলেছেন। আমি কতিপয় মানুষের রাজনৈতিক অপকর্মকে তুলে ধরলে বাবা বলেন, “কে কি করলো তা আমাদের দেখার বিষয় না।” এই হল আলাপচারিতার সংক্ষিপ্ত বর্ণনা এবং সারকথা। বাবা-মায়ের সাথে এরকম কথাবার্তা আগেও অনেকবারই হয়েছে। প্রত্যেকবারই কথাবার্তার ধরন প্রায় একইরকম ছিল।
আমার মনে এখন অনেক প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে। আমরা যারা দেশের জন্য কিছু করার স্বপ্ন দেখি, একটা সুন্দর রাজনৈতিক পরিবেশ গড়তে চাই তারা যদি মানুষের পাশে না দাঁড়াতে পারি তাহলে কে দাঁড়াবে? সবাই চাই যে দেশের মঙ্গল অন্য কারো মধ্য দিয়ে আসুক, অন্য কেউ সেই দুর্গম পথটা পাড়ি দিক। কেউ আমরা নিজেরা দায়িত্বটা নিতে চাই না। বাবা-মায়েরাও ঠিক একই ব্যাপার চান। তারাও চান না যে তাদের সন্তান ওই কঠিন পথ পাড়ি দিক, সেটা যদিও নিরাপত্তার কথা ভেবে। অর্থাৎ দেশের ভাগ্য আমরা অদৃষ্টের কাছে ছেড়ে দিচ্ছি।
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তার “বঙ্গমাতা” কবিতায় বলেছেন-
“পুণ্যে পাপে দুঃখে সুখে পতনে উত্থানে
মানুষ হইতে দাও তোমার সন্তানে”
তাই রবি ঠাকুরের পরামর্শ অনুযায়ী আমাদের বাবা-মায়েদের উচিৎ এই কঠিন বিশ্বে একটু বিচরণ করার সুযোগ দেয়া। কোন বৃহৎ অর্জনই ত্যাগ-তিতিক্ষা ব্যতীত আসে না। এই দেশে গণতন্ত্র আর আইনের শাসন প্রতিষ্ঠিত করতেও হয়তো আমাদের অনেক বড় ত্যাগ করতে হবে।
সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই মে, ২০১৮ রাত ১১:০৩