somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

দ্যা লিটল প্রিন্স

২৯ শে নভেম্বর, ২০২৩ রাত ১২:৫৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



মাত্র ৫৪ পেইজের এই বইটি বাচ্চাদের জন্য হলেও আমার মনে হয় প্রাপ্তবয়ষ্ক একজন মানুষ আরও বেশী নিজের সাথে রিলেইট করতে পারবে। গল্পটা শুরু হয় এভাবে ছয় বছরের একটা বাচ্চা একটা ড্রয়িং করে এবং এটা ছিল তার প্রথম আঁকা ছবি। একটা সাপ পুরো একটা হাতি গিলে ফেলে, সে ছবিটা যখন সবাইকে দেখায় কেউ বুঝতে পারে না, সবাই বলে এটা তো একটা হ্যাট। সে আবার ছবিটা আঁকার চেষ্টা করে এবং এবার ক্লিয়ারলি বুঝা যায় একটা সাপ একটা হাতিকে গিলে ফেলছে। তখন সবাই বলে এসব ছবি এঁকে কি হবে? যেমনটি আমাদের বাবা -মায়েরা বলে ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার হতে হবে। তাঁকেও বলে ইতিহাস, ভূগোল, গ্রামার এসব পড়তে হবে। তারপর সে আর ছবি আঁকেনি। এই বাচ্চাটা বড় হয়ে একজন পাইলট হয়। দুর্ভাগ্য কিংবা সৌভাগ্যক্রমে একবার তার প্লেন ক্রাশ করে একটা মরুভূমিতে আর তখন তার সাথে দেখা হয় লিটল প্রিন্স এর। লিটল প্রিন্স থাকে খুবই ছোট একটা গ্রহে, সেখানে শুধু দুইটা জাগ্রত ভল্কানো আর একটা মৃত ভলকানো আছে, আর আছে একটা রোজ। আর এই লিটল প্রিন্স এর সাথে পুরো গল্পটা লেখক এত চমৎকার ভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন, প্রত্যেকটা মেসেজ আমার কাছে এত গভীর আর অর্থবহ মনে হয়েছে বইটা আর একবার পড়তে একটুও বিরক্ত লাগবেনা।

লিটল প্রিন্স এর সাথে রোজ এর যখন পরিচয় হয় তখন সে দেখে কিভাবে ছোট চারা থেকে ধীরে ধীরে তার পুরো সৌন্দর্য নিয়ে প্রস্ফুটিত হয়। সে রোজ এর সব রকমের যত্ন নেয়। একসময় এসে সে মনে করে তার একজন বন্ধু লাগবে যে তাকে বুঝতে পারবে, তখন সে অন্য গ্রহগুলোতে যাওয়ার প্রস্তুতি নেয়। যখন আমাদের প্রিয়জন আমাদের ছেড়ে কোথাও যায়, আমরা কষ্ট হলেও বলি, ইটস ওকে ; আমরা পারবো। ঠিক তেমনি ভাবে রোজকে যখন জিজ্ঞেস করে তুমি কিভাবে টিকে থাকবে এত বৈরী আবহাওয়ায়? তখন সে খুব জোর দিয়ে বলে তুমি যাও আমি পারবো।
লিটল প্রিন্স প্রথমে যায় একটা গ্রহে যেখানে শুধুমাত্র একটা রাজা, তার কোনো কাজ নেই, সেখানে আর কেউ নেই। এখানে রাজার একটা চমৎকার কথা আছে... "if i ordered a general to change into a sea-bird, and if the general did not obey, it would not be the general's fault. It would be my fault. "
সে তারপর যায় একটা গ্রহে যেখানে শুধুমাত্র একজন মাতাল, সে সারাদিন ড্রিংস করে। তারপর যায় যেখানে শুধু একজন লোক যে সারাদিন হিসেব করে। আমাদের আশেপাশে অনেক ধনী ব্যক্তির মত। সে যত বেশি স্টার গুনতে পারবে ততবেশি স্টার তার হবে এবং সে অনেক ধনী হবে। তারপর সে যায় একটা গ্রহে যেখানে একটা ল্যাম্পপোস্ট আর লাইট আছে, আর একটা লোক প্রতি এক মিনিটে এটা অন আর অফ করে। তারপর সে যায় একজন জিওগ্রাফার এর কাছে এবং সেখান থেকে সে পৃথিবীর খোঁজ পায়। তারপর সে পৃথিবীতে আসে। সে মানুষ খুঁজতে থাকে, প্রথমে দেখা হয় সাপের সাথে দ্যান ফক্স এর সাথে। সে ফক্সকে যখন জিজ্ঞেস করে মানুষ কোথায়? আমার একজন বন্ধু লাগবে। তখন ফক্স হাসি দিয়ে বলে " one is also alone among men ". ফক্স তাকে বন্ধুত্বের অফার দেয়। লিটল প্রিন্স তখন ভাবে তোমার সাথে বন্ধুত্ব করে কি হবে? এই বইয়ের ৪০ নাম্বার পেইজে লেখক যে মেসেজটা দিতে চেয়েছেন তা এত অসাধারণ। পৃথিবীতে আমরা প্রত্যেকটা মানুষ ইউনিক। সৃষ্টিকর্তা আমাদেরকে অসামান্য পরিমাণ গুণাগুণ দিয়ে পাঠিয়েছেন। এই শত কোটি মানুষের মধ্যে আপনার একজন মানুষকেই ভালোলাগবে, সে আর কারো মত না। সে একদমই আলাদা। তার কন্ঠ, স্পর্শ আপনাকে যতটা অনুভূতি দিবে সেটা আর কেউ দিতে পারবে না, কেউ না। " I am only a fox to you like a hundread thousands foxes. But if you tame me, we will need one another . You will be unique in the world for me. I will be for you unique in the world."

আসার পথে লিটল প্রিন্স অনেকগুলো রোজ একসাথে দেখেছিল। তখন সে ফীল করে দেখতে একই হলেও এরা কেউ তার রোজ এর মত না। তার রোজ সম্পূর্ণ আলাদা। আমরা যখন আমাদের পরিবার বা কাছের কেউ দেশের বাইরে চলে যায় অনেক সময় আকাশের দিকে তাকিয়ে ভাবি সেই দেশটা ঠিক কোন জায়গায় বা সে কি করছে ঠিক তেমনি ভাবে লিটল প্রিন্স ও আকাশের দিকে তাকিয়ে ভাবে ওই ছোট্ট স্টারটাই তার গ্রহ আর ওখানেই তার রোজকে রেখে এসেছে। একটা লাইন ছিল এমন "if someone loves a flower that only exists in one million and millions of stars, that’s enough for him to be happy when he looks at them ".

ফক্স এর সাথে তার বন্ধুত্ব হয়ে গেলে সে লিটল প্রিন্সকে অনেক কিছু শেখায়। আমারা মানুষ শুধু বলতে চায়। কারোটা কেউ শুনতে চায় না। ৪২ নাম্বার পেইজে একটা লাইন ছিল এমন " It is very simple : one sees only with the heart. What is essential is invisible to the eyes ".

লিটল প্রিন্স তো চলে যাবে, তখন সে ফক্সকে বলে তোমার খারাপ লাগবে, ফক্স সায় দেয়। তখন সে বলে তুমি হেরে গেছ, ফক্স ম্লান হেসে বলে না আমি হারিনি। তখন সে তার সমস্ত অনুভূতি দিয়ে প্রিন্সকে বলে " we risk crying a little if we let ourselves tame ". আপনি কাউকে সত্যিকার অর্থে ভালোবাসবেন আর তার জন্য কাঁদবেন না এটা তো হতেই পারে না। তখন ফক্স তাকে একটা সিক্রেট বলে। এটা হয়তো তাদের জন্য যারা ভালোবাসে বলে কিন্তু কোন প্রকার কমিটমেন্ট বা রেন্সপন্সিবিলিটির ধারে কাছে ও যেতে চায় না। " Men have forgotten this truth. But you must not forget it. You become responsible forever for what you have tamed. You’re responsible for your rose. লিটল প্রিন্স তখন ফীল করে তাকে ফিরতে হবে। তার রোজ একা, সে এত দুর্বল, মাত্র চারটা কাঁটা দিয়ে সে কি করে নিজেকে প্রটেক্ট করবে। তাঁর মন কেঁদে ওঠে যদি রোজ এর কিছু হয়ে যায়। লিটল প্রিন্স আটদিন যাবৎ তার পৃথিবী ভ্রমন আর বন্ধুত্বের গল্প বলে যায় পাইলটকে। সে বার বার পাইলটকে বলে একটা শীপ এঁকে দিতে কারণ তার গ্রহে শুধু একটা শীপ এর জায়গা হবে। তখন সে জানতে চায় শীপ কি রোজ কে খেয়ে ফেলবে? পাইলট যখন বলে হ্যাঁ। লিটল প্রিন্স তখন কেঁদে উঠে। যেমন করে আমরা আমাদের প্রিয় মানুষকে হারিয়ে ফেলার ভয়ে কাঁদি তেমন করে সে তার রোজ এর জন্য কাঁদে। যাকে সে যত্ন করেছে, তাকে প্রটেক্ট করার দায়িত্ত্ব তার। লিটল প্রিন্স হারিয়ে যায়, বাট পাইলট জানে এক অন্য বন্ধুত্বের গল্প। যেটা সে কাউকে বলে না।
সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে নভেম্বর, ২০২৩ সকাল ৮:২৪
৭টি মন্তব্য ৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

পাগলের প্রলাপ' যখন সত্যি হয়......

লিখেছেন জুল ভার্ন, ০৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০২৪ সকাল ১০:১৯

'পাগলের প্রলাপ' যখন সত্যি হয়......
[/সব

আমার এক মামা ততকালীন পূর্ব পাকিস্তানে হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে জব করতেন হোটেলের শুরু থেকেই। সেই মামা মাঝেমধ্যে আমাদের জন্য হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টাল থেকে মুখরোচক কেক, পেস্ট্রি ছাড়াও বিভিন্ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তার চাওয়া পাওয়ার কিছু ছিল না, তবুও

লিখেছেন খাঁজা বাবা, ০৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১:৩২



শেখ হাসিনার নাকি বায়ক্তিগত চাওয়া পাওয়ার কিছু ছিল না। শেখ মুজিবের বেয়ে নাকি দুর্নীতি করতে পারে না। সে এবং তার পরিবার যে হাজার হাজার কোটি টাকার দুর্নীতি করতে পারে... ...বাকিটুকু পড়ুন

দেশের বর্তমান পরিস্থিতি সংক্রান্ত বিষয়ে সামু কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি

লিখেছেন সাড়ে চুয়াত্তর, ০৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৩:৪৬

ছাত্র-জনতার সম্মিলিত অভ্যুত্থানের মাধ্যমে গত ৫ আগস্ট, ২০২৪ তারিখে ফ্যাসিস্ট হাসিনা এবং তার দলের পতন ঘটানো হয়। এটা আমাদের একটা জাতীয় গৌরবের দিন। এটা নিয়ে কারও সন্দেও থাকলে মন্তব্যে লিখতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জ্বীনভুতে বিশ্বাসী বাংগালী ও ঢাকায় ৫০ হাজার ভারতীয় একাউন্টটেন্ট

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৪:৩৩




ব্লগার সাড়ে চুয়াত্তর ব্লগে লিখেছিলেন যে, উনার ভগ্নিপতিকে জ্বীনেরা তুলে নিয়ে গিয়েছিলো; ২ সপ্তাহ পরে ভগ্নিপতিকে দিয়ে গিয়েছে; এই লোক, সামুর কাছে আমার বিরুদ্ধে ও অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

বেছুর নিজস্ব একটি জ্বীন ছিলো!

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০২৪ রাত ৮:২৪



আমাদের গ্রামের খুবই সুশ্রী ১টি কিশোরী মেয়েকে জংগলের মাঝে একা পেয়ে, প্রতিবেশী একটা ছেলে জড়ায়ে ধরেছিলো; মেয়েটি ঘটনাকে সঠিকভাবে সামলায়ে, নিজের মাঝে রেখে দিয়েছিলো, এটি সেই কাহিনী।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×