ফুলের নাম: দোলনচাঁপা!
‘দোলে প্রেমের দোলন-চাঁপা হৃদয় আকাশে,
দোল-ফাগুনের চাঁদের আলোর সুধায় মাখা সে।’
— রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
রবীন্দ্রসাহিত্যে এভাবেই উঠে এসেছে দোলনচাঁপা ফুল। কবিগুরু তাঁর কল্পনাশক্তি দিয়ে দোলনচাঁপাকে হৃদয়ের আকাশে দোল খাওয়ার কথা/ভাবনাকে তুলে এনে ঠাঁই দিয়েছেন তার বিভিন্ন লেখনীতে।
দোলনচাঁপার বৈজ্ঞানিক নাম Hedychium coronarium.
এটি Zingiberaceae পরিবারের সদস্য।
দোলনচাঁপার নান্দনিক পাপড়িগুলো সাদা প্রজাপতির কথা মনে করিয়ে দেয় সহজেই। ফুলেল গাছটার দিকে তাকালে একরাশ সাদা প্রজাপতির কথা মনে না এসেই যায় না। এই গাছের গড়নের সাথে আদা গাছের সাদৃশ্য চোখে পড়ে। তাই এর ইংরেজি প্রচলিত নাম Butterfly Ginger Lily অথবা White Ginger Lily. দোলনচাঁপা গাছ জীবনীশক্তিতে ভরপুর। এর জীবন নিঃসন্দেহে চমকপ্রদ। দোলনচাঁপা বহুবর্ষজীবী কন্দজ উদ্ভিদ। দোলনচাঁপা যে ভীষণভাবে ছায়াময় শীতল পরিবেশ ভালোবাসে সেটা তার ফুলের এবং গাছের মৌসুমের প্রকৃতি দেখেই বলে দেয়া যায়। বিকেলের শেষভাগে ফুটে সকাল হতে হতে ঝরে পড়ে দোলন চাঁপা। ওদিকে বর্ষায় ফুটতে শুরু করে শরৎ শেষ হতে হতে এর ফুলের মৌসুম শেষ হয়।
শীতকালে এর কান্ড মরে গিয়ে গাছ শুকিয়ে যায়। গ্রীষ্মে কান্ডের পুনর্জন্ম হয়। নতুন করে জেগে ওঠে গাছ। বিশেষ করে গ্রীষ্মের দু এক পশলা বৃষ্টির পর মাটি ফুড়ে নতুন করে জন্ম হয় দোলনচাঁপা গাছের। গাছটি ৩০ থেকে ৪০ সেন্টিমিটার পর্যন্ত উঁচু হয়। সর্বোচ্চ ৬ ফুট লম্বা হতে পারে। । পাতা গুলো গাঢ় সবুজ রঙ্গের, ৮-২৪ ইঞ্চি লম্বা ও ২-৫ ইঞ্চি চওড়া। গ্রীষ্মের মধ্যভাগ থেকে বসন্ত পর্যন্ত গাছটির অগ্রভাগে ৬-১২ ইঞ্চি পুষ্পমঞ্জুরি দেখা যায় এবং ক্রমান্বয়ে সাদা দুই পাপড়ির প্রজাপতি ফুল ফুটতে থাকে।
দোলনচাঁপার প্রজাতির সংখ্যা প্রায় ৪০টি। সাদা ছাড়াও সামান্য হলদে বা লালচে রঙের দোলনচাঁপার দেখা কখনও মিলে যায়। আবার কোনো কোনো ফুলে থাকতেই পারে গাঢ় হলুদ বা কমলা রঙের ছিটে। সমতল এবং পাহাড়ী মাটি দুই জায়গাতেই ভালো হয় দোলনচাঁপা। ভেজা মাটি এর প্রিয়। দোলনচাঁপার আদি নিবাস দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া। মূলত উত্তর ভারত। বাংলাদেশেও বিস্তর দেখা মেলে।
কথিত আছে স্প্যানিশ উপনিবেশ আমলে নারীরা এই ফুলের মধ্যে তাঁদের গোপন বার্তা লুকিয়ে আদান প্রদান করতেন।
তথ্যসূত্রঃ উদ্ভিদ চত্বর
ছবিঃ আমার বাগানের, আমার তোলা।
★★★★★★★★★★★★★★★★★★★★★★★★★★★★★★★★★★★★★★★
সর্বশেষ এডিট : ২১ শে জুলাই, ২০১৬ সন্ধ্যা ৬:১৫