অটিজম একটি মনোবিকাশের বিন্যাসগত সমস্যা। যার ফলে সাধারণত কিছু সমস্যা দেখা দেয়, যেমনঃ মৌখিক কিংবা অন্য কোনো প্রকার যোগাযোগ সমস্যা, মানসিক বিকাশগত সমস্যা। আর এই সমস্যায় আক্রান্ত রোগীদের বলা হয় অটিস্টিক। অটিস্টিক শব্দটি শুনলেই অক্ষম মানুষের কথাই চোখে ভাসে। সমাজের বিভিন্ন মানুষের কাছে তো অবশ্যই, নিজের ফ্যামিলির কাছেও অনেক সময় নিগ্রহের শিকার হয় তাঁরা। অটিজমে আক্রান্ত রেমন্ড এক অটিস্টিক ও তাঁর ভাই চার্লির গল্প নিয়েই গড়ে উঠেছে মুভিটির প্লট।
সম্পত্তির লোভ সাংঘাতিক খারাপ একটি ব্যাপার। পিতৃদত্ত উইলের সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত হয়ে অটিস্টিকে আক্রান্ত বড় ভাই রেমন্ড’কে ওয়ালব্রুক নামক এক প্রতিষ্ঠান থেকে কিডন্যাপ করে ছোট ভাই চার্লি। সম্পত্তির লোভের কাছে হার মানে রক্তের সম্পর্ক। যদিও সে তাঁর ভাইয়ের কথা জানতো না। সম্পতির উইলের খোঁজ খবর নিতে গিয়ে ভাইয়ের খোঁজ পায় সে। একদিকে ব্যবসায়ে বিশাল অংকের অর্থ ঋণী ও অন্যদিকে বাবা’র সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত হয়ে প্রচণ্ড হতাশাগ্রস্ত চার্লি স্বিদ্ধান্ত নেয় বড় ভাই রেমন্ড’কে কিডন্যাপ করে তাঁর দাবীকৃত অর্ধেক সম্পত্তি আদায় করে নিবে। কিন্তু তাঁর বাবা’র নির্বাচিত ট্রাস্টি (অছি) এতে রাজি হয় না। এদিকে রেমন্ড’কে নিয়ে দেখা দেয় নানা রকম বিপত্তি। রেমন্ড’র ধরাবাঁধা নিয়মের ব্যাত্তয় ঘটলেই চ্যাঁচামেচি ও তুলকালাম কাণ্ড শুরু করে দেয় সে। সময়মত খাওয়া, গোসল, টিভি দেখা তাঁর নিয়মিত রুটিনের অংশ।
রেমন্ডের একটি বিশেষ ক্ষমতা আছে। যে কোনো কিছু একবার দেখলেই নিখুঁত গণনা করে ফেলতে পারে সে। অর্থের লোভে বড় ভাইয়ের এই ক্ষমতা ব্যবহার করে টু-পাইস কামিয়ে নিতেও দ্বিধা করে না চার্লি। একটি ক্যাসিনো’তে নিয়ে কার্ড খেলায় রেমন্ডের বিশেষ ক্ষমতা ব্যবহার করে প্রচুর অর্থ বাজিতে জিতে নিয়ে সেই টাকা দিয়ে ঋণের অর্থ পরিশোধ করে। বড় ভাইয়ের সানিদ্ধে থাকতে থাকতে একসময় ভাত্রিত্বের বন্ধনে আবদ্ধ হয় চার্লি। মনে পড়ে যায় তাঁর ছোটবেলার রেইন ম্যান নামের কাল্পনিক এক চরিত্রের কথা। পরে বুঝতে পারে, তাঁর সেই কাল্পনিক চরিত্র আর কেও নয়, স্বয়ং রেমন্ড’ই তাঁর সেই রেইন ম্যান। রেমন্ড থেকে রেইন ম্যান হওয়ার ঘটনাটি বেশ ইন্টারেস্টিং লেগেছে আমার কাছে। নিজের ভুল বুঝতে পেরে রেমন্ডকে ইন্সটিটিউশনে পাঠিয়ে দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয় চার্লি। অবশেষে জয় হয় রক্তের সম্পর্কের। জয় হয় ভাত্রিত্বের বন্ধনের।
রেমন্ডের প্রতি চার্লির আচরণ মাঝে মাঝে এমন পর্যায়ে গেছে যে, পিসির মনিটরেই থাপ্রাইতে মন চাচ্ছিলো। পরে মাথায় এলো, বাস্তবে হয়তো আমরা অটিজমে আক্রান্ত মানুষদের সাথে এর চেয়েও খারাপ ব্যবহার করি অনেক সময়। যা কোনোভাবেই হওয়া উচিৎ নয়।
অটিস্টিক চরিত্রে অভিনয় করেছেন ডাস্টিন হফম্যান, আর চার্লি চরিত্রে টম ক্রুজ। হফম্যানের অভিনয় দেখে আমার সন্দেহ হতে থাকে, বাস্তবেও তিনি অটিস্টিক নয়তো? এতোটাই নিখুঁত অভিনয় করেছেন তিনি। এক্সট্রা-অর্ডিনারি অভিনয় যাকে বলে। দেখে বুঝার উপায় নেই যে, এই লোকটি বাস্তবে একজন সুস্থ সবল মানুষ। এর জন্য অবশ্য তিনি লিডিং ক্যারেক্টারে অস্কার জয় করেন। আর টম ক্রুজকে যে মারদাঙ্গা চরিত্রে দেখে অভ্যস্ত, এখানে সম্পূর্ণ ভিন্ন একটি ভূমিকায় দেখা যাবে তাঁকে। অসাধারণ অভিনয় করেছেন মুভিটিতে।
মুভিটি বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে ৪ টি অস্কারসহ অন্যান্য মোট ২৭ টি পুরষ্কার জয় করেছে। এছাড়া আরও ১৯ টি পুরস্কারের জন্য নমিনেশন পায়।
# আপনারা চাইলে মুভিটি বাংলা সাবটাইটেল দিয়েও দেখতে পারেন। বাংলা সাব ডাউনলোড করুন সাবসিন ডট কম থেকে।
বাংলা সাবটাইটেলের স্ক্রিনশটঃ