somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

স্মৃতিতে সিরাজুদ্দৌলা

২১ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১২ রাত ৮:২৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

মিজানুর রহমান

ছোট বেলা থেকেই ছবি আঁকার অভ্যেস আমার। প্রাইমারী জীবনে পাঠ্য বইয়ে যত ছবি ছিল সবই আমার খাতায় একেছিলাম। হাইস্কুলে এসে আঁকা-আকির মাত্রা বেড়ে গিয়েছিল। তখন আনজুরহাট বাজারে অনেকগুলো সাইন বোর্ড একে ছিলাম। একেছিলাম আমাদের মিজান মেডিকেল হলের একটা সাইন বোর্ড যা আজও আছে। আমার হাতের এ শিল্পকর্মগুলো শ্রদ্ধেয় মরহুম সিরাজুদ্দৌলা (সিরাজ স্যার) আগ্রহ নিয়ে দেখতেন। আমার ভুল ক্রটি ধরিয়ে দিতেন, পরামর্শ দিতেন।
স্কুলে স্যারকে প্রচন্ড ভয় পেতাম। শুধু আমি নই আমাদের সময়ে দেখেছি স্কুলের সব ছাত্র/ছাত্রীরাই স্যারকে ভয় পেত। কখনও স্যারের ক্লাসে পড়া দিতে কষ্ট হয়নি, সব সময় পড়া মুখস্ত করেই ক্লাসে আসতাম তবুও তাকে ভয় পেতাম প্রচন্ড। একবার ক্লাসে খাতা ছেড়া ও আলৌকিক দস্তখত নিয়ে উত্তেজনা কর পরিস্থিতির সৃষ্টি হল। আমি খাতা ছেড়া বা আলৌকিক দস্তখত সম্পর্কে কিছুই জানতাম না, তুবও দোষী হলাম ক্লাস ক্যাপ্টেন হওয়ায়। হেডমাষ্টার স্যার স্কুলের বাহিরে থাকায় এসিস্ট্যান্ট হেডমাষ্টার হিসেবে সিরাজ স্যার আমাকে স্কুল থেকে বের করে দিলেন।
সিরাজ স্যার আমায় প্রচন্ড ভালবাসতেন। তিনি আমার প্রিয় শিক্ষকদের একজন ছিলেন, আমি ও স্যারের সবচেয়ে প্রিয় ছাত্রদের একজন ছিলাম। আমি ছবি আকি, সাইনবোর্ড লিখি, গল্প লিখি, কবিতা লিখি স্যার এ সব দেখতেন। যে কথা প্রথমে বলতে চেয়েছিলাম মিজান মেডিকেল হলের সাইনবোর্ড লিখতে দু'টো বানানে ভুল ছিল স্যার আমায় ভুল দু'টো ধরিয়ে দিলেন। সাথে সাথে কেরোসিন ঘষে মুছে নিয়েছিলাম শব্দ দু’টো। এ ভাবেই আমি কিছু করতে গেলে স্যার দাড়িয়ে দাড়িয়ে দেখতেন, উৎসাহ দিতেন।
স্যারের একমাত্র ছেলে অসুস্থ্য হওয়ায় স্যার খুবই চিন্তা গ্রস্থ হলেন। আমাদের দোকানের টেবিলে হেলান দিয়ে দাড়িয়ে ডান হাত দিয়ে বাম হাতটাকে জোড় করে তুলে রাখতেন টেবিলের উপর। আমি দেখতে পাচ্ছি চিন্তায় স্যারের বা হাতের কাপুনিটা বেড়ে গেছে। স্যার তখন বলতেন ছেলের অসুস্থতার কথা কোথায় নেয়া হয়েছিল, কোথায় নেয়া হবে এসব। ছেলেকে নিয়ে স্যার চট্টগ্রাম গেলেন। ফিরে এসে যে জিনিসটা আমায় উপহার দিলেন তা ভেবে আজ শিউরে উঠি ভালবাসায় মনের গভীরে। ছেলের অসুস্থতার মাঝে স্যার যখন চিন্তায় অস্থির, ছেলের চিন্তায় চিন্তায় নিজে যখন অসুস্থ্য হয়ে পড়েছেন তখনও স্যার আমার কথা ভেবেছিলেন। চট্টগ্রাম থেকে আমার জন্য ছবি আঁকার তুলি নিয়ে এসেছেন। তার কিছুদিন পর স্যারও অসুস্থ্য হয়ে পড়লেন। তখন অনুভব করতে থাকি কি যেন হারাতে বসেছি আমরা। আজও আমার ভেতর কান্না উথলে ওঠে। আজও কেঁদে উঠি ।

যে স্যার আমায় এত ভালবাসতেন সেই স্যার আমায় স্কুল থেকে বের করে দিলেন। অনেকেই মানতে পারেনি রায়টা। ছাত্র/ছাত্রীরা স্কুল বর্জন করলো, আব্বা আমায় বাড়ী পাঠিয়ে দিলেন, আমার প্রিয় স্যারদের কেউ কেউ রায়ের বিরুদ্ধে কথা বললেন। চূড়ান্ত বিচারের আগে চরফ্যাশন স্যারের বাসায় গিয়ে বুঝেছিলাম প্রিয় ছাত্রকে স্কুল থেকে বের করে দিয়ে তিনি নিজেও কম দুঃখ পাননি - আরও বুঝেছিলাম আমাকে বেশি ভালবাসতেন বলেই স্কুল থেকে বের হতে বলার অধিকার রেখেছিলেন।

আমার গান শোনায়, বই পড়ায়, চলাফেরায় প্রতি পদক্ষেপেই সিরাজ স্যারের কথা মনে পড়ে। এত অল্প কাগজে স্যারের স্মৃতির কথা লিখে শেষ করার নয়। আমার পুরো কিশোর জীবনের পুরোটাই সিরাজ স্যারের স্মৃতিতে ঘেরা। আনজুর হাটের প্রতিটা পদক্ষেপ সিরাজ স্যারের স্মৃতি আচড়ে পড়ে। আমরা সে স্মৃতিটকু ধরে রাখতে চাই আজীবন। আমাদের সাইনবোর্ডটা পুরানো হয়ে গেছে। আব্বা নতুন সাইনবোর্ড লাগাতে বলছেন, হয়তো দু’দিন বাদে আসবে নতুন সাইনবোর্ড। ঝড়ে পড়তে থাকবে এক এক করে সব স্মৃতি।

সিরাজ স্যারের স্মৃতি ধরে রাখতে আনজুর হাটে তৈরি হয়েছে গণগ্রন্থাগার “সিরাজুদ্দৌলা স্মৃতি সাহিত্য কোষ”। বই পড়ায় সবাইকে উৎসাহিত করে আলো ছড়িয়ে দিচ্ছে সমস্ত কলমীতে। আর এভাবেই স্মৃতি হয়ে গেথে থাকুক জনাব সিরাজুদ্দৌলা সবার স্মৃতিতে।

সর্বশেষ এডিট : ২১ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১২ রাত ৮:২৪
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কমলার জয়ের ক্ষীণ ১টা আলোক রেখা দেখা যাচ্ছে।

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:১৮



এই সপ্তাহের শুরুর দিকের জরীপে ৭টি স্যুইংষ্টেইটের ৫টাই ট্রাম্পের দিকে চলে গেছে; এখনো ট্রাম্পের দিকেই আছে; হিসেব মতো ট্রাম্প জয়ী হওয়ার কথা ছিলো। আজকে একটু পরিবর্তণ দেখা... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিড়াল নিয়ে হাদিস কি বলে?

লিখেছেন রাজীব নুর, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:২৪



সব কিছু নিয়ে হাদিস আছে।
অবশ্যই হাদিস গুলো বানোয়াট। হ্যা বানোয়াট। এক মুখ থেকে আরেক মুখে কথা গেলেই কিছুটা বদলে যায়। নবীজি মৃত্যুর ২/৩ শ বছর পর হাদিস লিখা শুরু... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। বকেয়া না মেটালে ৭ নভেম্বরের পর বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না আদানি গোষ্ঠী

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:৪১





বকেয়া বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে কোটি কোটি টাকা। ৭ নভেম্বরের মধ্যে তা না মেটালে বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না গৌতম আদানির গোষ্ঠী। ‘দ্য টাইম্স অফ ইন্ডিয়া’-র একটি প্রতিবেদনে এমনটাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ভারত থেকে শেখ হাসিনার প্রথম বিবৃতি, যা বললেন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১২:৩২



জেলহত্যা দিবস উপলক্ষে বিবৃতি দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শনিবার (২ নভেম্বর) বিকালে দলটির ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এটি পোস্ট করা হয়। গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার... ...বাকিটুকু পড়ুন

=বেলা যে যায় চলে=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৪:৪৯



রেকর্ডহীন জীবন, হতে পারলো না ক্যাসেট বক্স
কত গান কত গল্প অবহেলায় গেলো ক্ষয়ে,
বন্ধ করলেই চোখ, দেখতে পাই কত সহস্র সুখ নক্ষত্র
কত মোহ নিহারীকা ঘুরে বেড়ায় চোখের পাতায়।

সব কী... ...বাকিটুকু পড়ুন

×