অনেক দিন পর ফিরে এলাম রতন গোঁসাইর বাড়ী
স্কুল পালিয়ে রবীন্দ্রনাথ হতে না পেরে,
আমি রতন গোঁসাই হতে চেয়েছিলাম।
একতারা আর খ্ঞ্জনীতে তাল দিতে,দিতে
ভুলেই গিয়েছিলাম"মনমাঝি"কোন সমাস?
মধ্যপদলোপী নাকি রুপক কর্মধারায়!
তর্কালঙ্কার বাবু,
বাবাকে বললেন"মশাই ছেলেকে স্কুলে দিয়ে কাজ নেই"
বাবার ঠ্যাঙ্গানির ভয়ে মনমাঝির তরী না বেয়ে
রুপক কর্মধারায়ে ফিরে এলাম।
তবুও আমার রতন গোঁসাইর মতো
চোয়াল ভেঙ্গে পড়ে,আর ধঃসে যায় দেয়ালের মাটি!
অথবা কি ভেঙ্গে পড়েনি একটা সপ্নের কোঠা বাড়ী,
উত্তাল যমুনার তীব্র স্রোতে,যেখানে একদা ছিল বহমান নদী
যে জলে একদিন ভাসাতে চেয়েছিলাম সেই তরীখানি
তা কি এখনও নিঃশব্দ অভিমানে নাগরিক জীবনের
চোরাস্রোতে বহে চলে না?তবে কিসের লুকোচুরি
নিয়ে কেটে চলে অবিরাম সংবেদনশীল এই মনের প্রতিকূলে,
জীবন যমুনার উত্তাল স্রোতে?
আমার মধ্যবিত্ত বাবার আকাশ গঙ্গায় জলবতী মেঘের
স্থলে কালবৈশাখে রুদ্র ভৈরবীর আনা গোনা।
যার উর্বর জমিনে,বীজ হীন ফসলের মাঠে
রতন গোঁসাইর মত হাওয়ায় ভেসে বেড়ানো, নিরঙ্গমের চাপা আর্তনাদ।
আমি হয়তো সেই আকাশে আমার বুকের রুদ্র ভৈরবীকে
উজান স্রোতে ভাসিয়ে দিয়ে,জলবতী মেঘ হতে চেয়েছিলাম!
যা তোমার নদীতে কূল হারিয়ে,
বাবার চোখে শ্রাবণের জল ধারা ঝড়ে অবিরাম।
আর আমার বিবর্ন আকাশের ঈশান কোনে জমিয়েছি
রুদ্র ভৈরবীর কাল মেঘ
যে ঝড় আমাকে করেছে কূল হারা মাঝি
সেই উজান স্রোতে
এক বুক পিপাসা নিয়ে দাড় বহে যায়।অথবা
যাকে একটা অযাচিত কলংকের তিলক
নিঃশব্দে তাড়া করে ফেরে নাগরিক জীবনের সভ্যতার খোলসে!
মনমাঝি তরী খানি কূলে ভেরাতে একদিন ঘর ছেড়ে
বেরিয়ে পড়েছিল,সে হয়তো পারেনি পৌঁছাতে,
তবুও হাল ছাড়েনি!
পৌঁছে যাবে একদিন সেই আশায় আজও দিন গোনে,
আর বাতাসে ছড়িয়ে দেয় এক গাঁদা ধোঁয়ার সাথে
কিছুটা রক্ত মিশ্রিত ধুলি কণা ,সাথে বেড়িয়ে যায়
রাই কিশোরীর জন্য কিছুটা চাঁপা দীর্ঘশ্বাস।
আমিও বৈশাখের মধ্য দুপুরে আমার জীবনের সাথে
রতন গোঁসাইর জীবনের কিছু পার্থক্য খুজেঁ ফিরে
বরাই তলা স্কুল মাঠে এসে দাড়াই।
"মিমু মিসট্রেস"যার বিরহে,আমার যমুনায় জল শুকিয়ে গিয়েছিল!
অথবা আমাকে শুনতে হয়েছিল,আমার বাবার সপ্ন ভঙ্গের চাঁপা কান্না!
যার শুন্যতায় আমার পরানের গহীনে এখনও
মনমাঝির তরী নিঃশব্দে বহে চলে অহঃনির্শ।
কিছু সপ্ন ভাগাভাগি করি রাই কিশোরী অথবা
"মিমু মিসট্রেস"কে নিয়ে।
তার পর বেলা শেষে হিসাব মিলাই
তবে আমি কি সেই কূল মান হারা বিবাগী হলাম?
যে কলংকের বোঝা নিয়ে,চলে অসীমের সন্ধানে।
যার বিরহে লুকিয়ে চোখের জল ফেলেছি বারোটি বছর
সে কি কখনো নিয়েছে মনমাঝির খবর!
অথবা কতটা পথ,পাড়ি দিবে সে তরীখানি?
তাই এখন ঘুম ভাঙ্গা মধ্যরাতে চলে আসি,ছেলেবেলার দুঃসপ্নে
তাড়া করা রতন গোঁসাইর বাড়ী।যে আমার পরাণের অকুল গাঙে
ঝড়ে পড়া তরীখানির পথ দেখাবে বলে,অপেক্ষায় থাকি বারো মাস
মনমাঝি কোথায় আছো তুৃমি?
বুকের পাজর ভেদ করে উঠে আসে,হাজার বছরের চাপা দীর্ঘঃশ্বাস!
সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে জুলাই, ২০১৬ দুপুর ১২:৫৭