ছোট বেলা হতেই আমার এক বদাভ্যাস (জানিনা বদাভ্যাস কিনা) আছে, হেডফোন লাগিয়ে গান শোনা। মোবাইল যুগের আগে ওয়াকম্যান ছিলো আমার নিত্য সঙ্গী। আর মোবাইলে যুগে আমার প্রিয়সী মোবাইল এখন আমার নিত্য সঙ্গী। এ প্রিয়ার দরুন ওই প্রিয়ার কতো যে বকা খেয়েছি তার কোন হিসেব নেই। ওই প্রিয়াকে মাইনাচ

আমার গান শোনা এমন এক পর্যায়ে পৌছে যে, এটাকে সবাই একটা রোগই ভাবত শুরু করেছে। কারণও আছে। এই যেমন ভাত খেতে বসতে হাত ধুয়ে টেবিলে না বসে বাথরুমে ঢুকে গেছি একদিন। ভাবি ডাক মারে, কি সাহেব ভাতের প্লেট কি বাথরুমেই দিয়ে আসবো? মা ভাই বোন সবাই হেসে উঠে। কি এমন হাসির কথা যে সেটা , হাসতে হবে?

আরেক দিন বাসায় আসছি । তখনও কানে হেডফোল লাগানো। সোজা ৩ তলায় উঠে আমাদের বাসায় না ঢুকে পাশের বাসায় বেল টিপতে থাকি। আন্টি দরজা খুলে দিলো। সোজা ঢুকে গেলাম। ঢুকেই মনে হলো বাসার পরিবর্তন হয়েছে। একটু ভেবাচেকা খেলাম।

এই করতে করতেই দিন চলছিলো আমার।
মোবাইলে তার সাথে কথা বলার সময় একটা ভাষা ব্যবহার করতাম। যা আমরাই তৈরী করেছিলাম। কারো বুঝার সাধ্য নেই সেটা। এটা দিয়ে আমরা নির্ধিধায় সবার সামনেই লুতুপুতু কথা বলেই যেতাম।
এই যেমন, কথা বলার মাঝে হঠাৎ কেই চলে এলো। অমনি ভাষা চেইন্জ । সেদিন ভাত খেতে বসেছি। তার ফোন। বল্লাম "ইটামি ইটেখন ভিটাত খিটাচ্ছি, তিটুমার সিটাতে পিটরে কিটথা বিটলসি"

সেদিনও বাসে উঠেই ভিড়ে দাড়িয়েছি মাত্র । দেখি তার ফোন। শুরু করে দিলাম সেই ভাষা। বাসের সবাই আমার দিকে চেয়ে চোখ কপালে তুলে । সেদিকে আমার খেয়াল নেই। আমার লুতুপুতু কথা অবিরাম চলতেই আছে। হঠাৎ এ লুতুপুতুর রোমান্টিকতার মাঝে একটা থাপ্পর এসে পড়লো সোজা আমার গালে ।

জিজ্ঞাসু দৃস্টিতে তাকালাম ম্যাডামের দিকে। যে কিনা আরামেই সিটে বসে আছে, তার পাশেই আমি দাড়ানো ভিড়ের মাঝে। ম্যাডামের জলন্ত চোখ আরো লাল করে হুশ হুশ করে বল্লো সেই কখন হতে আমার পায়ের উপর পা রেখে দাড়িয়ে আছেন। হুশ নেই আপনার ।

বল্লাম ম্যাম বল্লেইতো পারতেন।
বলে, বল্লেকি কানে যায় আপনার? কতো বল্লাম, শুনেন না। পরে কলাম দিয়ে খোচালাম। তারপও হুশ হয়না আপনার।
বল্লাম, তাইতো বলি আামর পেটে কাতুকুতু দেয় কে।

ম্যাডাম দেখি হুশ হুশ করতেই আছে। আর ব্যাথায় কুকড়ে আছে কিঞ্চিত । মান সম্মান খুইয়ে সেখানে আর ওয়েট করা বুদ্ধিমানের কাজ না। অপথেই নেমে পড়লাম।
কেটে গেল অনেক দিন। আমার গান শোনা থেমে নেই। একদিন বিকেলে বাসায় আসার পর মা বলে এটাতে গান ভরে দেয়তো। বল্লাম হঠাৎ তোমার মেমোরী কার্ডে গানের কি প্রয়োজন? বল্লো গাধা আমার না । নীচের বাসার এক মেয়ে দিয়ে গেল। মা দেখি মুচকি মুচকি হাসে।
ঘটনা কি? তার সাথে হাসির কি হলো? ভাবির কাছে ইনকোয়ারী করলাম। ভাবি বলে, মেয়েটা নীচের ফ্লাটে নতুন এসেছে। গান বাজতে শুনে গান গুলো নিতে এসেছিল। তুমি না থাকায় আম্মাকে দিয়ে গেল। ওই মেয়েটা দেখতে সুইট। মায়ের নাকি খুব পছন্দ। তোমার জন্য দেখতে বল্লো।
আহ, একটু লজ্জা লজ্জা ভাব দেখিয়ে ভাবির কাছ হতে বিদায় নিয়ে সেই অদেখা সুন্দরীকে নিয়ে আকাশ পাতাল স্বপ্নে বিভোর হয়ে পড়লাম।
পরদিন মা এসে বলে মেয়েটি এসেছে মেমোরিটা নিতে। সামনের রুমে বসে আছে, দিয়ে আয়। নিজেকে গুচিয়ে নিয়ে, ফিটফাট হয়ে, পারফিউম লাগিয়ে যেইনা সামনের রুমে গেলাম। মনে হলো যেন আকাশ হতেই পড়লাম।

তুমি??????????????
সে বলে তুমি?????????????

তড়িৎ চোখ বুলালাম তার পায়ে, এখনো কানি আঙ্গুলটা কালো হয়ে আছে দেখি।
এ মেয়ে বিয়ে করলে জীবন শেষ আমার। প্রতি পদে পদেই মার খেয়ে খেয়ে কাটাতে হবে। না তার চেয়ে এ জীবন একলাই কাটাবো। তবুও এ মেয়ে বিয়ে করবোনা। বাচাওওওওওওওওও


সর্বশেষ এডিট : ০২ রা এপ্রিল, ২০১৩ রাত ৯:৪৬