সেদিন আঠারো প্লাস লিখা আর হইলোনা। কি আর করা? ভাবির সহিত মার্কেটে চলিয়া গেলাম। কতো কি কিনিলাম, কতো কি দেখিলাম। আরো কতো কি হইলো সে সব না হয় আরেকদিন বলিব। দেখো দেখো লুলেরা চোখ বড় বড় করিয়া কান পাতিয়া আছে কি ঘটিয়াছে তা শুনিতে। কিন্তু আমি লুলামির সুযোগ দিলেতো ?
পরদিন দেখি হঠাৎ মেঘ না চাইতেই বৃষ্টি চলিয়া আসিলো। মানে ভাবির বোন নীলা আমার দেয়া উপহার চটি জোড়া পড়িয়া তাহার শুভ্র কোমল পা দুটি আমাদের বাড়ীতে তাশরীফ রাখিল। যেদিন আমি তাকে রোমান্টিক মুডে চটি গিফ্ট করিয়াছিলাম সেদিন এক বিচ্ছিরি কান্ড ঘটিতে ঘটিতেই রক্ষা পাইয়াছিলাম। যাক সেসব। বিবাহ সন্নিকটে, তাই বোনের আদরের দেবরদের হক আদায় করিতেই আসা। লুলেরা উল্টা বুঝিওনা। বিদায় নিতেই আসিয়াছে। হাত বুলাইয়া আদর করিয়া দোয়া দিবো ভাবিয়া মনে মনে আপ্লুত হইলাম।
রাত্রি বেলা ভাবির বোনকে সাথে নিয়ে খাইয়া আমি টিভি দেখিতে বসিলাম। ছোটকে কহিলাম বুলুরে (নীলাকে আমি দুষ্টুমী করিয়া নীল/ ব্লু ডাকিতাম, আমার দেখা দেখি ছোট আর ভাবিও ডাকিত) ডাক ফিল্ম দেখিতে। ছোট ডাক মারিলো, তালতো বোন, ব্লু ফিল্ম দেখিলে আসো। ও তালতো বোন, ব্লু ফিল্ম দেখিলে তাড়াতারি আসো। ছোটর আক্কল দিন দিন লোপ পাইতেছে। দাড়ি (।), কমা (,) কোনটা কোন জায়গায় বসাইতে হয় দিন দিন সে জ্ঞানও হারাইতেছে । অনার্স মাস্টার্স শেষ করিয়াও দাড়ি কমাটাও শিখিলিনা। আমি কিন্তু মনে মনে বলি, কিপিটাপ ম্যান।
ছোটর এরকম হাক ডাক শুনিয়া ভাবি দৌড়াইয়া আসিয়া ছোটকে এক দলা আগুন ছুড়িয়া মারিয়া কহিল, কি বলিস এসব? সেতো লজ্জায় লাল হইয়া পড়িয়া যায়। ভাবিকে কহিলাম, আরে বাবা লাল হইয়া পরার কি দরকার? যেমনে আছে তেমনেই আমার চলিবে। আর ফিল্ম কিন্তু সুন্দর, দেখিলে আসিতে কহো। ছোট আবার হাক মারিল। ব্লু ফিল্ম দেখিতে আসো। ও তালতো বোন, ব্লু ফিল্ম দেখিতে আসো। ছোট’র এমন আমন্ত্রণে ভাবি সাহেবানের বোন অপমানে অভিমান করিয়া রাত্রি বেলাতেই বাসা প্রস্থান করিল। ভাইয়ের এমন অসামান্য ভুলের কারণে আমি শেষ সুযোগটিও হারাইলাম।
এর কিছুদিন পর টিভিতে ব্রাজিল আর আর্জেন্টিনা ম্যাচ দেখিতেছিলাম। ছোট আর্জেন্টিনা আর আমি সবসময়ই ব্রাজিল। বল যখন আর্জেন্টিনার খেলোয়ারদের পায়ে থাকে ছোট চিল্লায় টিনা টিনা (আর্জেন্টিনার শর্টকাট। ইত্তেজনায় পুরা নাম নেয়ার সময় নাই) ব্রাজিলের পায়ে থাকলে আমি চিল্লাই ব্রা ব্রা ব্রা (ব্রাজিলের শর্টকাট, যার যার ইচ্ছে মতোই শর্টকাট বানাই। তাতে ব্যাকরণ লাগেনা)। আমাদের ব্রা ব্রা টিনা টিনা চিল্লানিতে সারা ঘরময় ফুটবলের একটা আমেজ সৃষ্টি হইলো। অবশেষে ছোটর দল ২/১ গোলে হেরে যাবার পর আমায় আর কে ঠেকায়? ব্রা ব্রা বলে সারা ঘর লাফাইতে লাফাইতে একাকার করিয়া তুলিতে লাগিলাম।
হঠাৎ ভাবির হুঙ্কারে আমার আনন্দোল্লাসে কড়া ব্রেক করিতে হইলো। আরেকবার যদি ব্রা ব্রা করছিসতো বটি দিয়া জিব কাটিয়া দিবো হতচ্ছরা। চুপ কররর। আমার গলায় যে অজস্র ব্রা ভীড় করিয়াছিলো, ভাবির হুঙ্কারে তা কুঁত করিয়া পেটে গিলিয়া ফেলিলাম। সমস্থ ব্রা একযোগে পেটে গিয়ে ব্রাাাাাাাাাাাাাাাাাা এর মতো আওয়াজ করিতে লাগিলো। আমার আনন্দোচ্ছাসে বাঁধা আসায় ছোট যারপরনাই খুশি হইয়া ভাবির সাথেই যোগ দিলো। কিন্তু আমি সমস্থ ব্রা হজম করিয়াও ভাবির হঠাৎ এমন উগ্রমুর্তি ধারনের কারণ আজো উৎঘাটন করিতে পারিলামনা।
তার কিছুদিন পর হঠাৎ একদিন ভাবি আমার হাক মারিয়া কহিল, ওই ব্লাক ডায়মন্ড, মার্কেটে যাইয়া আমার জন্য এক জোড়া টুপি লইয়া আয়তো। পুনরায় কি যেন একটু ভাবিয়া কহিল তোর মাথার সাইজের হইলেও চলিবে। আমি আসমান হইতে পড়িলাম। আমার চোক্কের কোটর হইতে চোখ দুটি বাহির হইয়া দুরবীন স্টাইলে নিজের অজান্তেই কোথায় ঘুরিতেছিলো নিজেই জানিনা। ভাবির ধমকে বুঝিতে পারিলাম কিছু গন্ডোগল হইয়াছে, আমি আবুলের মতো মাথায় হাত বুলাইতে লাগিলাম। আমার অবস্থা দেখিয়া ভাবি কোমরে শাড়ির কোণা পেছিয়া কহিল, দেব এক থাপ্পড়ে কান লাল করে। হতচ্ছড়া তোর ভাইয়ার টুপি হারাইয়া গিয়াছে, উনার জন্য টুপি আনিতে বলেছি। যা ভাগ। আমি বেকুব না বুঝিয়াই খালি উল্টা বুঝি।
ভাতিজা বড় হইতেছে। এখন একটু একটু করিয়া আম্মু - তাত্তু ডাকিতে শিখিয়াছে। বাসার এটা সেটা জানালা দিয়ে বাইরে ফেলিয়া দেয়াটাও ভাল করিয়া রপ্ত করিতেছে আজকাল। তার আরেকটা প্রিয় খেলা, টেবিলে যাই পায় তাই হাতের উল্টা পিঠে হালকা ধাক্কা মারিয়া নীচে ফেলিয়া দেয়া। ওই খেলা খেলিয়া সে এমন ভাব করে যেন কিছুই হয়নাই। হাত দুটি পিছনে দিয়ে চোখ দুটি বন্ধ করিয়া টিভি রুমের মাঝখানেই দাড়িয়ে থাকে। ভাব খানা এমন আমাকে কেউ দেখিতেছেনা। ঘরময় ঝন ঝন শব্ধ হইলেই সবাই ঠের পায়যে সে খেলাটি খেলিতেছে। কোথাও পালাবার উপায় না পাইলেই সেখানেই চোখ বন্ধ করিয়া দাঁড়িয়ে থাকিবে।
ইদানিং সে আরেকটা খেলা উদ্ভাবন করিয়াছে। কোন কিছু খাওয়ার সময় টিভি দেখা, নইলে মোবাইলে ডিঙ্কা চিকা রিঙটোন শোনা, নইলো গান শোনা। গানটা আবার আমাকেই করিতে হইবে। এদিকে আমার কাউয়া কন্টের গান শুনিয়া ভাবি হাসিতে হাসিতে হামাগুড়ি দেয়। সেদিন ভাত খাইতেছে, আমি আসিয়া কহিলাম তাত্তু তুনতুনি কই তোমার? সে প্যান্ট নীচে নামাইয়া তুনতুনি ধরিয়া টানিয়া দেখায়, আর খিক খিক করিয়া হাসিয়া উঠে। হঠাৎ সে হাসি থামাইয়া কাদিঁয়া উঠিল। আমি ভাবিলাম ডালে ঝাল দেয়নাইতো ভাবি? কিন্তু তার কথা শুনিয়া আমরাও হাসিয়া উঠিলাম। বলে কিনা তাত্তুর তুনতুনি তেকবো। নননইলে বাত কাপনা।
আমি পড়িলাম বিপত্তিতে। তার খেলা সর্ম্পকে আমার ভালই ধারনা আছে। সে যে খেলা খেলিতে চাই সেটা খেলিয়াই ভাত খাইবে। আমি পকেট থেকে কলম নিয়ে দেখাইলাম। বলে কিনা এতাতো তলম। তাত্তুর তুনতুনি দেকপপ ওয়াাাাাাাাাঁ । আমি আবার হাতের একটা আঙ্গুল দেখাইলাম। তাতেও মানেনা। বলে কিনা প্যান্ট খুলিয়া দেখাইতে হইবে। আমিতো ঘামিয়া একাকার। ভাতিজার খেলার ষ্টাইল আর আমার হালত দেখিয়া ভাবি হাসিয়া নাকের পানি চোখের পানি একাকার করিয়া ফ্লোরেই হামাগুড়ি দিতে লাগিল। এদিকে আমি ভাতিজাকে এত বুঝাই মানেইনা। তার সব খেলাই খেলিলাম। কাজ হয়না। শেষে না পারিয়া ভাবিকে কহিলাম তোমার ইবলিশটাকে তুমিই শামলাও, আমি গেলাম। জান নিয়ে কোন রকমে বাসা হইতে ভাগিলাম ।
সেদিন রাতে বাসাতেই ফিরিলামনা। পরদিন গেলেও পুরা এক সাপ্তাহ তার সামনেও যাই নাই। এরপর একদিন রাত বারটায় বাসায় আসিয়া দেখি ভাইয়া নাই। ভাবিকে শুধাইলাম ভাইয়া আসেনাই? ভাবি হাসিয়া কহিল, আজ তোমার ভাইয়াও ভাগছে। আমি চোখ উল্টাইয়া কহিলাম, সেই খেলাটি ভাইয়ার সাথেও খেলিয়াছে নাকি? ভাবি কহিল, আরে নাহ। আজ খেলেছে নামায নামায খেলা। নামায খেলা না দেখিয়া সে কিছুতেই খাইবেনা।
সব টিভি চ্যানেল খুঁজিয়াও কোথাও নামায খেলা পাইলামনা। পরে তোমার ভাইয়াকে বলিলাম একটু নামায খেলা খেলিতে। তোমার ভাইয়া জায়নামাযে বসিয়া বুদ্ধি করিয়া টিভি দেখিতেছিল। কিন্তু সে মানেইনা। তার দাদী যেরকম নামায খেলা খেলে ঠিক সেভাবেই নাকি খেলিতে হইবে। মানে রুকু সিজদা ও করিতে হইবে। শুধাইলাম তারপর? ভাবি কহিল, কি আর হইবে? তোমার ভাইয়া তিন সিজদা দেয়তো সে আধা চামচ ডাল- ভাত খায়। এভাবে করিয়া সে আজ তোমার ভাইয়াকে পুরা এক বছরের নামায আদায় করিয়া লইল। তোমার ভাইয়া আর না পারিয়া, তোমার ইবলীশটারে তুমি শামলাও বলিয়া খুড়াইতে খুড়াইতে ভাগছে। খবর পাইলাম আপুর বাসায় নাকি গেছে। আপু নাকি হাটুতে মলম মাঝিতেছে।
আল্লাহ আজকালকার ডিজুস পোলাপাইনদের এরকম একটা করিয়া ইবলিশ দান করো, আমীন।
উৎসর্গ