ল্যাবে কলকাতার হিন্দু মেয়ে গ্রাজুয়েট স্টুডেন্ড হিসাবে জয়েন করল। খুবই করিৎকর্মা ছাত্রী, প্রথম কয়েকমাস ছোট খাটো এক্সপেরিমেন্ট খুব সহজেই করা হত...আসল সমস্য শুরু হয় যখন স্যাম্পল থেকে প্রোটিন বের করে সেই প্রোটিন gel এ রান করার সময়। অনেকগুলি স্টেপ...ছোট খাটো ভুলের জন্য প্রায়ই দেখা যেত যে এক্সপেক্টেড রেজাল্ট পেত না। কয়েক দিন পর আবিস্কার করলাম যে ল্যাবে মাটির একটা ছোট গনেশের মূর্তি আর ছাত্রী যখন জেল রান করত তখন সে মূর্তি টাকে জেল এপারেটাস এর (ছবিতে) উপর বসায়ে রাখত। কিন্তু সেই একই অবস্হা...সরাসরি কিছু বলতে ও পারছি না....একদিন ল্যাব মিটিং এর পর একলা ডেকে বাংলায় বললাম " দেখ বিশ্ববিদ্যালয় হল কনফিডেন্ট স্টুডেন্ট এর জন্য...একজন কনফিডেন্ট স্টুডেন্ট কোনদিন ই এক্সপেরিমেন্টের রেজাল্টের জন্য গনেশের উপর নির্ভর করবে না"। ফলাফল পরদিন ল্যাব থেকে মূর্তি উধাও আর ছাত্রী ও আস্তে আস্তে প্রোটিন এক্সপেরিমেন্টে চৌকশ হয়ে উঠল ....এখন পাশ করে পাশের বিশ্ববিদ্যালয়ে পোস্ট ডক্টোরাল ফেলো হিসাবে গবেষনা করছে।
এবার নতুন মুসলিম সৌদী ছাত্রী আসলো সৌদী সরকারের বৃত্তি নিয়ে। আপাদ মস্তক এক কাপড়ে ঢাকা, মাথায় হিজাব...একই অবস্হা.... ছোট খাটো এক্সপেরিমেন্ট ভাল ভাবে শেষ করল কিন্তু বিপত্তি আরম্ভ হল প্রোটিন এক্সপেরিমেন্টের সময় (আগের ছাত্রীর চেয়ে ভিন্ন প্রোটিন)। আমি সাহস যোগাই..আগের ছাত্রীর কথা বলি..নিজে যখন গ্রাজুয়েট ছাত্র ছিলাম তখন আমার কিভাবে ৬ মাস লেগেছিল একটা ডিএনএর টুকরা কে আরেক টা ডিএনএ র সাথে জোড়া দিতে...কিন্তু তাতেই তেমন কাজ হচ্ছে না....এখনও রেজাল্টের অগ্রগতি কিছুটা আগের ছাত্রীর মতই কিন্তু যেহেতু হাইলি মটিভেটেড আমি জানি যে বছর খানিকের মাঝেই চৌকশ হয়ে উঠবে...
ধাক্কা টা খেলাম কয়েক মাস আগে....যখন আমি হঠাৎ ল্যাবে দেখলাম ছাত্রী চোখ বন্ধ করে নিচু গলায় আরবীতে দোয়া দরূদ পড়ছিল প্রোটিনের এর এক্সপেরিমেন্ট আরম্ভ করার আগে সেই আগের একই এপারেটাস (গনেশ মূর্তি ছাড়া) এর সামনে...আমি আস্তে ল্যাবে থেকে বের হয়ে গেলাম.... কিন্তু পরদিন আবার সেই শুকনো মুখ ...এক্সপেরিমেন্ট কাজ করে নাই...
চিন্তা করছি কিভাবে বলি....বড়ই সেন্সসেটিভ ব্যাপার .... ইনডিরেক্টলি মনে করিয়ে দেব যে বিশ্ববিদ্যালয় হল কনফিডেন্ট স্টুডেন্ট বানানোর জন্য ....
ও হা কিছু দিন আগে একটা কাজে পাশের বিশ্ববিদ্যালয়ে যাই ...কাজ শেষ করে উপর থেকে লিফট এ নিচে নেমে দেখি কলকতার ছাত্রী উপরে উঠার জন্য লিফটের সামনে দাড়ানো...আমাকে দেখেই হই হই করে উঠল ...গবেষনার কাজ কেমন হচ্ছে , বাচ্চা কেমন আছে এসব টুকটাক কথা বলে আমি আমার গাড়ীর দিকে পা বাড়ালাম...কিন্তু মাথা থেকেই কিছুতে মিলাতে পারছিলাম না এ কোন কলকতার ছাত্রী কে দেখলাম!!! যার মুখে কথা বলতে তিন বার বাধত,বাহুর উপরের দিকে মাধুলি (তাবিজ এর মত) বাধা থাকত, লম্বা চুলের মেয়ে এখন পুরাপুরি আমেরিকান ড্রেস..। চুল ছোট করে কাটা ...মাধুলি উধাও.... আর যেভাবে কনফিডেন্টলি সে তার বর্তমান গবেষনার কাজ বর্ননা করল...মনে মনে হাসলাম
Education makes you CONFIDENT about yourself.
আজ হঠাৎ এই লিখা দিলাম কেননা এক টা ছোট স্ক্রু ড্রাইভার খোজার জন্য পুরাতন ছাত্রীর ডেক্সের ড্রয়ার টান দেওয়ার পর দেখি সেই গনেশের মূর্তি আমার দিকে তাকিয়ে আছে....আস্তে ধাক্কা দিয়ে ড্রয়ার টা বন্ধ করে দিলাম।
সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে জানুয়ারি, ২০২১ সকাল ১১:১২