শাস্তি!
খুব কাছের বন্ধু আমিন এস আই পদে সদ্য নিয়োগ পেয়েছে। যোগদানের আগের দিন আমার সাথে দেখা। বলল, দোস্ত দোয়া করিস, যাতে সৎ থাকতে পারি।
ছেলেবেলা থেকে আমিনকে দেখছি। তার সততা নিয়ে প্রশ্ন করার অবকাশ কখনো আমরা পাই নি। তার কথা শুনে গর্বে বুকটা ভরে উঠল। বললাম,
তুই পারবি। তোর মতো ছেলেদেরই উচিত পুলিশে যোগ দেয়া।
উভয়ের ব্যস্ততার কারনে তারপর অনেক দিন আমাদের আর দেখা হল না। দেখা হল প্রায় এক বছর পর।
গল্পের এক পর্য়ায়ে তার মোবাইলের রিং টোন বেজে উঠল। শুনতে পেলাম,
হ্যা, বস। ৫০০ টাকার ফ্লেক্সি পেয়েছি। থ্যাংকু।
ফোন রেখে দিলে তাকে প্রশ্ন করলাম, কে রে? কে তোকে ৫০০ টাকা ফ্লেক্সি দিল?
আরে বলিস না। এক ইয়াবা স্মাগলার। প্রতি সপ্তায় ৫০০ টাকা করে ফ্লেক্সি দেয়।
ঘুষ বুঝি?
প্রশ্ন শুনে সে কিছুক্ষণ আমার মুখের দিকে তাকিয়ে থাকল। তারপর রেগে গিয়ে বলল,
ঘুষ হতে যাবে কেন? এটা তাকে দেয়া আমার একটা শাস্তি। তাকে ধরে জেল হাজতে ঢুকালে কাউকে না কাউকে টাকা দিয়ে অথবা উপরের ফোনে এমনিতেই বের হয়ে যাবে। তাই এটা আমার নিজের করা বিচার। কঠিন শাস্তি।
প্রতিজ্ঞা!
টেবিলে রাখা ফুলদানিটা গায়ে লেগেই পড়ে গেল!
কে? কে? কে...রে?
গৃহকর্ত্রী চিৎকার দিয়ে উঠলেন!
মতিও চট করে পাশের বিছানার নিচে লুকিয়ে গেল। তার বুক ঢিপ ঢিপ করছে। চুরি করতে এসে এমন ভুল কখনো হয় না তার। কেন যে টেবিলের পাশে গিয়েছিল! তার আরো সাবধান হওয়া উচিত ছিল। এখন কী হবে তার? গৃহকর্তা কেরামত আলি সাহেবও উঠে গেছেন এতোক্ষণে! কেরামত আলি ভয়াবহ লোক। মতিকে ধরতে পারলে জানে মেরে ফেলবেন। এখন কী করা! দুইজন মিলে আশপাশের লোকজনকেও ডাকা শুরু করেছে! হায় আল্লাহ! মতি আল্লাহকে ডাকা শুরু করল। এবারের মতো রক্ষা কর মালিক। আর জীবনেও এমন খারাপ কাজ করব না।
আল্লাহ্ তার ডাক শুনলেন। তাকে এ যাত্রা রক্ষা করলেন। একটা বিড়াল ডেকে উঠায় গৃহকর্তা আর কর্ত্রী নিজেদের ভুল বুঝতে পেরে বিছানায় ফিরে গেলেন। মতি চোরাও তড়িঘড়ি বের হয়ে বেঁচে গেল।
পরদিন রাতে আবার নতুন প্রত্যয় বুকে নিয়ে চুরি করতে বের হল মতি। এবার আর গত রাতের মতো ভুল যাতে না হয় তার জন্য আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করা শুরু করল।
উপর থেকে আল্লাহ্ কেবল মুচকি হাসলেন।
শাড়ি
অত:পর এই মর্মে ডিক্রি জারি করা হল যে এখন হইতে শ্রীমতি নিভা রানি দত্ত কখনো সালোয়ার কামিজ পড়তে পারবে না। সবসময় শাড়ি পরে থাকতে হবে।
শ্রীমতি নিভা রানি এহেন বিদঘুটে আইন করার কারন জানতে চাচ্ছে মহামান্য পতিদেবের কাছে।
কেননা শাড়িতে নিভা রানি দত্তকে এই মর্ত্য জগতের কেউ বলে মনে হয় না। চোখের আরাম হয়। মনেরও।
নিভা রানি কি তবে বাইরে গেলেও শাড়ি পড়বে?
না!
কিক
আসলে কী সুমিতা এইসব টাকা পয়সাকে সবসময় কিক মারতে হয়, কিক। যতো বেশি কিক মারবা ততো বেশি কাছে আসবে।
ঠিক তোমার মতো, তাই না?
আমার মতো? কিভাবে?
এই যে তোমাকে যতবার কিক মারি ততবার ফিরে আসো।
তবে তুমি কি আমাকে চাও না?
না।
ঠিক আছে। তবে চললাম।
ওকে। টা টা।
গেলাম। আর জীবনে যদি ফিরে আসি!
চিন্ময় গটগট করে হেটে চলে গেল।
দু ঘন্টা পর সুমিতার মোবাইলের মেসেজ টোন বেজে উঠল।
চিন্ময় লিখেছে, কী করছ স্যুইট ডার্লিং?
ব্যক্তিগত গল্প-৫
তখন আমি ক্লাস এইটে। পরীক্ষায় ফার্স্ট হবার তুমুল ইচ্ছে নিয়ে মাথায় গামছা বেঁধে পড়াশুনা করলাম। পরীক্ষার হলে ঢুকে দেখি বন্ধু শোয়েব আমার পাশের সিটে। সে মন খারাপ করে বসে আছে চুপচাপ। থাকুক। চুপচাপ বসে থাকুক। আমার কী? পরীক্ষার প্রশ্নপত্র হাতে আসার পর শোয়েব কথা বলে উঠল, দোস্ত, আমাকে একটু হেল্প করিস দোস্ত। পড়াশুনা কিচ্ছু করিনি। অথচ বাসা থেকে বলেছে পরীক্ষা ভাল না হলে বাসা থেকে বের করে দেবে।
স্ট্রেট বাসা থেকে বের করে দেবে?
হু।
কী বলিস! আচ্ছা ঠিক আছে। আমার কোন ডিসটার্ব না করে লিখতে পারলে দেখিস। আমার আপত্তি নাই।
শোয়েব খুব খুশি হয়ে লেখা শুরু করল।
এভাবে সবগুলো পরীক্ষাতেই সে আমার লেখা কপি করল। করুক। আমার তো কোন সমস্যা হচ্ছে না। আমার লেখা দেখে যদি সে এ যাত্রা রক্ষা পায় তাতে তো আমারই খুশি হবার কথা। হাজার হোক বন্ধুতো।
পরীক্ষা শেষ হলে রেজাল্টের দিন আসল। আমদের স্কুলে প্রথম তিনজনের রেজাল্ট হেড স্যার নিজে এসে ঘোষনা করতেন। তিনি আসলেন। নাম ঘোষনা শুরু হল। আমি বেশ কনফিডেন্ট। এবার ফার্স্ট হবই হব।
রোল নং- ৩। না আমার নাম না। আমি তবে প্রথম!
রোল নং- ২। আমার নাম! আমি দ্বিতীয় স্থানে! থাক, দ্বিতীয়ই থাক। পাঁচ থেকে দুইয়ে উঠে এসেছি- এটাই বা কম কিসের? নিজেকে সান্ত্বনা দেয়ার চেষ্টা করলাম।
রোল নং- ১। শোয়েব আক্তার নিজাম! আমার চোখ বড় হয়ে গেল! আমি শোয়েবের দিকে তাকালাম! সে মিটিমিটি হাসছে!