somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

একজন জামাল নজরুল ইসলাম (বাংলাদেশের গণিতবিদ বিজ্ঞানী)

১৩ ই মে, ২০১২ দুপুর ১:১৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :







তখন ২০০১ সাল। আমি তখন সপ্তম শ্রেণীর ছাত্র। গুঞ্জন উঠল আর কিছুদিনের মধ্যেই ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে আমাদের চিরচেনা পৃথিবী। এ রকম একটা সংবাদে আতঙ্কিত বিশ্ববাসীকে অভয়ের বাণী শুনিয়ে যিনি শান্ত করলেন তিনি আর কেউ নন,এই বাংলার প্রথিতযশা গণিতবিদ বিজ্ঞানী ডঃ জামাল নজরুল ইসলাম (আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে সবাই যাকে জে.এন ইসলাম নামে চেনে)৷পয়গাম্বরদের মত কোনো দৈবজ্ঞান নয়,বরং প্রকৃতির ভাষা গণিতের মার প্যাছ দেখিয়ে তিনি বিশ্ববাসীকে দেখিয়েছিলেন যে, ওই সময়ে আমাদের সৌরজগতের অধিকাংশ গ্রহ প্রাকৃতিক নিয়মেই একই সরলরেখা বরাবর এলেও এর প্রভাবে পৃথিবীতে অস্বাভাবিক কিছু ঘটার আশঙ্কা নেই৷
জন্ম ১৯৩৯ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি, ঝিনাইদহ জেলায় হলেও এই গুনীমানুষটার শৈশবের বেশিরভাগ সময়ই কেটেছে কলকাতায়৷কলকাতা থেকে এসে চট্টগ্রাম কলেজিয়েট স্কুলে ভর্তি হওয়ার সময় মেধা পরীক্ষায় তাঁর অসাধারণ কৃতিত্বের জন্য কর্তৃপক্ষ ডাবল প্রমোশন দিয়ে তাঁকে সরাসরি ষষ্ঠ শ্রেণীতে ভর্তি করে নিয়েছিল বলে তখনই অনেকের নজর কেড়েছিলেন তিনি৷কলকাতার সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজ থেকে বিএসসি অনার্স করে যখন তিনি পড়তে গেলেন কেমব্রিজে ততদিনে গণিতের প্রতি তাঁর দুর্বলতা তৈরি হয়ে গেছে৷ কেমব্রিজে গিয়ে আবারও গ্রাজুয়েশন করার পর ট্রিনিটি কলেজ থেকে নিলেন এম এ ডিগ্রি। কেমব্রিজ থেকেই ১৯৬৪ সালে প্রায়োগিক গণিত ও তাত্ত্বিক পদার্থবিদ্যা বিষয়ের ওপর পিএইচডি করলেন এবং একই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৮২ সালে এসসিডি (ডক্টর অব সায়েন্স) ডিগ্রিও অর্জন করলেন৷
প্রিয় বন্ধুদের মধ্যে যেমন ছিলেন স্টিফেন হকিং ,আবদুস সালামের মত নামকরা বিজ্ঞানীরা তেমনি অমর্ত্য সেনের মত নোবেলবিজয়ী অর্থনীতিবিদও। বয়সে দুই বছরের ছোট হকিং এর সাথে জামাল নজরুল ইসলাম কাজ করতেন কেমব্রিজের ইনস্টিটিউট অব থিওরেটিক্যাল অ্যাস্ট্রোনমিতে (১৯৬৭ থেকে ১৯৭১.দুজনের কাজের প্রতি পরস্পরের আগ্রহ এমন ছিল যে হয়তো দেখা গেল জামাল নজরুল ইসলাম কোথাও লেকচার দিচ্ছেন সেখানে হকিং গিয়ে বসে আছেন তাঁর লেকচার শুনতে বা হকিং কোথাও লেকচার দিচ্ছেন সেখানে জামাল নজরুল ইসলাম গিয়েছেন তাঁর লেকচার শুনতে৷আর বয়োজ্যেষ্ঠ অমর্ত্য সেনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা হওয়ার কারণ হতে পারে এদের দুজনেরই গণিতের প্রতি আগ্রহ বেশি৷
এতসব বন্ধুর বাইরে জামাল নজরুল ইসলামের প্রিয় বন্ধু হলো বই ৷ দিনের অনেকটা সময় কাটে তাঁর এসব বইয়ের সঙ্গে আর লেখালেখি করে৷তার লেখা ‘দ্য আল্টিমেট ফেট অব দি ইউনিভার্স’ (মহাবিশ্বের চূড়ান্ত পরিণতি) বইটি কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয় প্রেস থেকে ১৯৮৩ সালে প্রকাশ হওয়ার পর বিজ্ঞানী মহলে বেশ হই চই পড়ে যায়৷ বইটি পরে জাপানি, ফ্রেঞ্চ, ইতালিয়ান, পর্তুগিজ ও যুগোস্লাভ ভাষায় প্রকাশিত হয়৷ঠিক পরের বছরেই ১৯৮৪ সালে W B Bonnor-এর সঙ্গে সম্পাদনা করেছেন ‘ক্লাসিক্যাল জেনারেল রিলেটিভিটি’ এবং ১৯৮৫ সালে ‘রোটেটিং ফিল্ডস ইন জেনারেল রিলেটিভিটি’৷এই তিনটি বইই কেমব্রিজ, অঙ্ফোর্ড, প্রিন্সটন, হার্ভার্ডসহ নামকরা বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠ্য৷এছাড়া ‘কৃষ্ণ বিবর’ (ব্ল্যাকহোল),’মাতৃভাষা ও বিজ্ঞান চর্চা এবং ‘শিল্প সাহিত্য ও সমাজ’ বইগুলি তাঁর লেখা বাংলা ভাষার বই।
নিজের গবেষণা প্রবণতা সম্পর্কে তার নিজেরই উক্তি-
“কোনো বিষয়ে গবেষণা করে ব্যর্থ হলে বা শেষ হলে সেটাকে একেবারে ছেড়ে দিইনি৷ আবার তাতে ফিরে এসেছি৷ আবার সেটা নিয়ে গবেষণা করেছি৷ এভাবে গবেষণা করতে আমার ভালো লাগে৷”
কেমব্রিজ ইউনিভার্সিটির ইনস্টিটিউট অব থিওরেটিক্যাল এস্ট্রোনমির স্টাফ মেম্বার ছিলেন আমাদের জামাল নজরুল ইসলাম৷ কাজ করেছেন লন্ডনের কিংস কলেজ থেকে আরম্ভ করে আমেরিকার প্রিন্সটন ইন্সটিটিউট ফর অ্যাডভান্সড স্টাডিসহ (যেখানে আইনস্টাইন তাঁর জীবনের শেষ বিশ বছর কাটিয়েছিলেন) অনেক খ্যাতনামা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে প্রভাষক, ভিজিটিং অ্যাসোসিয়েট বা মেম্বার হিসেবে। দেশপ্রেমের টানেই ১৯৮৪ সালে কেমব্রিজের সোয়া লাখ টাকা বেতনের অধ্যাপনার চাকরীটি ছেড়ে বাংলাদেশের চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে মাত্র হাজার তিনেক টাকা বেতনে অধ্যাপক হিসেবে যোগ দেন। আমাদের প্রিয় লেখক মুহম্মদ জাফর ইকবালকেও আমেরিকা থাকা অবস্থায় দেশে ফিরতে উতসাহ প্রদান করেন।
সারাজীবন প্রচারবিমুখ থাকা বাংলার এই কৃত্তি সন্তান কাজ করেছিলেন বাংলার স্বাধীনতার জন্যও। ১৯৭১ সালে চিঠি লিখেছিলেন বৃটেনের প্রধানমন্ত্রীকে পাক হানাদার বাহিনীর আক্রমণ বন্ধ করার উদ্যোগ নিতে। ‘৭১এর যুদ্ধে সারাবিশ্ববাসীকে সচেতন করার উদ্যোগেও কাজ করেছেন প্রবাসীদের সাথে। এই মানুষটার জীবন হতে পারে আমাদের জন্য আদর্শ।

সুত্রঃ গুনিজন.ও আর জি
৮টি মন্তব্য ৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মুসলিমকে বিভিন্ন নিয়মে ইবাদত করতে কে বলেছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ১১ ই এপ্রিল, ২০২৫ ভোর ৬:৪৭



সূরাঃ ৬ আনআম, ১৫৩ নং আয়াতের অনুবাদ-
১৫৩। আর এপথই আমার সিরাতাম মুসতাকিম (সরল পথ)। সুতরাং তোমরা এর অনুসরন করবে, এবং বিভিন্ন পথ অনুসরন করবে না, করলে তা’... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছায়ার রক্তচোখ: ক্রোধের নগর

লিখেছেন শাম্মী নূর-এ-আলম রাজু, ১১ ই এপ্রিল, ২০২৫ সকাল ৯:৫২


ষড়ঋপু সিরিজের দ্বিতীয় কাহিনী ”ক্রোধ”

রাত্রি নেমেছে শহরের উপর, কিন্তু তিমির কেবল আকাশে নয়—সে বসেছে মানুষের শিরায়, দৃষ্টিতে, শ্বাসে। পুরনো শহরের এক প্রান্তে, যেখানে ইট ভেঙে পড়ে আর... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রিয় কন্যা আমার- ৭৪

লিখেছেন রাজীব নুর, ১১ ই এপ্রিল, ২০২৫ দুপুর ১২:৪২



প্রিয় কন্যা আমার-
ফারাজা, তুমি কি শুরু করেছো- আমি কিছুই বুঝতে পারছি না! রাতে তুমি ঘুমানোর আগে ঘুমানোর দোয়া পড়ে ঘুমাতে যাও। প্রতিদিন তোমার মুখে ঘুমের দোয়া শুনতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। নববর্ষের শোভাযাত্রা নাম বদল করছি না, পুরোনো নাম–ঐতিহ্যে ফেরত যাচ্ছি: ঢাবি উপাচার্য

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১১ ই এপ্রিল, ২০২৫ দুপুর ১:০৪



পয়লা বৈশাখে ফি বছর চারুকলা অনুষদ আয়োজিত মঙ্গল শোভাযাত্রার নাম পরিবর্তন প্রসঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক নিয়াজ আহমেদ খান বলেছেন, ‘আমরা নাম পরিবর্তন করছি না। আমরা পুরোনো নাম... ...বাকিটুকু পড়ুন

'৭৪ সালের কুখ্যাত বিশেষ ক্ষমতা আইন বাতিল এখন সময়ের দাবী !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১১ ই এপ্রিল, ২০২৫ সন্ধ্যা ৭:৫৫


বিগত আম্লিক সরকারের আমলে যে কুখ্যাত আইনের অপব্যবহার করে প্রতিপক্ষকে কোনো অভিযোগ ছাড়াই আটক করে গায়েব করার চেষ্টা চলতো তা হলো ১৯৭৪ সালের বিশেষ ক্ষমতা আইন। এই আইন ব্যবহার করে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×