"দেখার কথা, কী দেখছি
কী শোনার কথা, কী শুনছি
কী ভাবার কথা, কী ভাবছি
কী বলার কথা, কী বলছি"....শিল্পী হায়দার হোসাইনের এই গানের কথা দিয়েই বাস্তবতা তুলে ধরতে হচ্ছে।
গণবিপ্লবে স্বৈরাচার শেখ হাসিনার পলায়নপর পরিস্থিতি নিয়ে আমি হতাশ! হতাশার কারণ, স্বৈরাচারী সরকারের পতন হলেও রাষ্ট্রের রন্ধ্রে রন্ধ্রে লুকিয়ে নয়, প্রকাশ্যেই তৎপর স্বৈরশাসকের শেকড়, ডালপালা..... একজন সরকারী চাকুরিজীবি ৫৯ বছর পর্যন্ত স্বাভাবিক নিয়মে চাকুরি করতে পারেন এবং চাকুরির সময়সীমা সাধারণত হয় ৩০ বছর। তাহলে গত ১০/১২ বছর যাদের চাকুরীর বয়স হয়ে গিয়েছে- তারা সবাই স্বৈরশাসক শেখ হাছিনার প্রোডাক্ট এন্ড ট্রেইন্ড দুর্নীতিবাজ, সন্ত্রাসী সংগঠন ছাত্রলীগের সদস্য এবং ইন্ডিয়ান মগজধোলাই হওয়া ক্যাডার সার্ভিসের চালক। এরাই এখন দেশের সর্বত্র মূল ধারায় এবং আরও ১০/১৫ বছর চাকুরি করবে। অন্যদিকে বর্তমানে যে তরুণের বয়স ২৫ বছরের মধ্যে- সেইসব তরুণরা জীবনের সব চাইতে শিক্ষণীয় সময়ে দেখেছে- স্বৈরসরকারের দুর্ণীতি, স্বেচ্চাচারিতা দুঃশাসন! এই তরুণ শ্রেণীর ক্ষমতায়ণ হতে আরও ৫/১০ বছর সময় লাগবে- তারা কতোটা শিক্ষা নিয়ে দেশ সেবা করবেন সেটা সময়ই বলবে। তবে তা দেখে যেতে পারবো কি না জানিনা!
স্বৈরাচারী শাসক শেখ হাসিনা নির্লজ্জভাবে তার অবৈধ ক্ষমতা টিকিয়ে রাখার জন্য নিয়ম বিরোধী, আইন বিরোধী সকল কুকাম করেছে। প্রশাসনে পদ খালি খালি না থাকার পরেও মেধাবীদের বাদ দিয়ে পদ লেহী অযোগ্য, দুর্নীতিপরায়ণ, দলীয় ক্যাডারদের প্রমোশন দিয়ে মাথা ভাড়ী প্রশাসন তৈরী করেছে। সকল বাহিনী প্রধান, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান থেকে শুরু করে সাংবিধানিক সংস্থার শীর্ষ পদে যাদেরকে বসিয়েছে- তাদের বেশীরভাগেরই সেইসব সংস্থার তৃতীয় গ্রেডের অফিসার হবার যোগ্যতাও নাই।
ছাত্রজনতার গণ আন্দোলনে স্বৈরাচার সরকারের পতনের পর অন্তর্বর্তীকালীন সরকার রাষ্ট্র সংস্কার করতে সেই স্বৈরশাসকের রেখে যাওয়া দুর্নীতিবাজ চর্ব্য, চোষ্য, লেহ্য পেয়দের নিয়েই এখন পর্যন্ত প্রশাসন চলছে, এমনকি কয়েকজন উপদেষ্টাও স্বৈরশাসকের দোসর ছিলো। আকন্ঠ দুর্নীতিতে নিমজ্জিত পুলিশ বাহিনীর কতিপয় অফিসার পালিয়ে যাওয়ায় সেইসব যায়গায় বেনজীর-আসাদুজ্জামান- শহীদুল হক গঙ্গদের উত্তোরসুরী যাদেরকে বসিয়েছে- তাদের রেকর্ডও তেমন স্বচ্ছ নয়। পুলিশ বাহিনীর দুর্নীতির সুতিকাগার এবং চালিকাশক্তি থানার ওসি, জেলার এসপি, মেট্রোপলিটান এলাকার ডিসি/এডিসি এবং ডি আই জি রেঞ্জ....এদের অনেকেই এক স্থান থেকে অন্য স্থানে বদলী করা হয়েছে- তাতে কি তাদের স্বভাবের পরিবর্তন হবে? প্রশাসনের সূতিকাগার ইউএনও রা বহাল তবিয়তে আছে। পরিবর্তন হয়নি দুর্নীতিবাজ কোনো একজন এসি ল্যান্ড, সাবরেজিস্টারের।
পিলখানায় বিডিআর ম্যাচাকারে যারা সরাসরি জড়িত ছিলো- তারা অনেকেই এখন মেজর থেকে মেজর জেনারেল হয়ে চাকরি করছে। কেউ কেউ লে: জেনারেল, জেনারেল হয়েছে, এমনকি সেনা প্রধান হয়েছে! র্যাব পুলিশের যেসব অফিসার আমাদেরকে গুম করে শারীরিক নির্যাতন নিপীড়ন করে চিরদিনের জন্য পংগু করে দিয়েছে- তারাও বহাল তবিয়তে আছে। আমাকে এবং আমার গুমের ১৫ দিন আগে ব্লগার @শের শায়েরী (রেজানুল হক শোভন), আরজান মাহাদী ইভান, ওয়াসীম ইফতেখারকে গুম করে আয়না ঘরে দিনের পর দিন চোখ বেঁধে, দুই হাত পেছনে নিয়ে হ্যান্ডকাফ লাগিয়ে শারীরিক নির্যাতন করেছিল, শোভনের বহুজাতিক কোম্পানীর চাকুরী, ইভানের ব্যাংকের চাকুরী, আমার আর ওয়াসীমের প্রতিষ্ঠিত বিজনেস ধ্বংশ করে দিয়েছিলো- ততকালীন র্যাব-১০ এর কোম্পানি কমান্ডার এখন এসপি, সিও সাহেব এখন ডি আই জি!
.........অন্যদিকে, আমরা নির্যাতিত নিপীড়িত আমজনতা যে তিমিরে ছিলাম- সেখানেই আছি। হয়তো আমৃত্যু এভাবেই চলবে.....আমাদের ভরসা- হাসবুনাল্লাহু ওয়া নি মাল ওয়াকিল, নি মাল মাওলা ওয়া নি মান নাসির।