somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

জুল ভার্ন
এপিটাফ এক নিঃশব্দ প্রচ্ছদে ঢাকা আছে আমার জীবনের উপন্যাস...খুঁজে নিও আমার অবর্তমানে...কোনো এক বর্তমানের মায়াবী রূপকথায়।আমার অদক্ষ কলমে...যদি পারো ভালোবেসো তাকে...ভালোবেসো সেই অদক্ষ প্রচেষ্টা কে,যে অকারণে লিখেছিল মানবশ্রাবণের ধারা....অঝোর

ফারহা.......

১২ ই জানুয়ারি, ২০২৩ সকাল ১০:১৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ফারহা.......

'নাকবা' আরবি শব্দ। যার বাংলা অর্থ হলো বিপর্যয়, দুর্ঘটনা, দুর্ভাগ্য। ১৯৪৭-১৯৪৯ সাল পর্যন্ত ফিলিস্তিনীদের উপর ইহুদি সন্ত্রাসী মিলিশিয়া বাহিনীর বর্বরোচিত আক্রমণকে বোঝাতেই নাকবা শব্দের ব্যবহার। এ সময়ের মধ্যে ফিলিস্তিনের দুই-তৃতীয়াংশ মানুষকে নিশ্চিহ্ন করে দেওয়া হয়েছিলো। ১৯৪৮ সালের নাকবা, বা বিপর্যয়, বিশ্বজুড়ে প্রতিটি একক ফিলিস্তিনি পরিবারের মনে গেঁথে থাকা একটি কষ্টের, ধ্বংশের ঘটনা।



১৩ মিলিয়ন ফিলিস্তিনী ব্যক্তিগতভাবে নাকবার শিকার হয়েছিলো এবং আজ অবধি সেই ধারা অব্যাহত। পশ্চিমা মিডিয়া ইসরায়েল রাষ্ট্রের সৃষ্টির কথা বলে নাকবাকে সমর্থন দিয়ে আসছে। নাকবা আসলে একটি বিদেশী ঔপনিবেশিক শক্তি দ্বারা ফিলিস্তিনি সমাজের পদ্ধতিগত, সূক্ষ্মভাবে পরিকল্পিত, ধ্বংসকে বোঝায়। এটি আমাদের জনগণের জাতিগত নির্মূল, গণহত্যা, জমি চুরি, বহিষ্কার এবং হত্যাকে বোঝায়।

ফারহা, জর্ডানের পরিচালক ড্যারিন সালামের প্রথম ফিচার ফিল্ম, যা এখন নেটফ্লিক্সে দেখানো হচ্ছে। এটি একটি অসাধারণ এবং অবশ্যই দেখার মুভি কারণ এটিই প্রথমবারের মতো ফিলিস্তিনের ইতিহাসে এই মূল ঘটনাটিকে নিপুণভাবে বর্ণনা করেছে। যদিও নাকবার ঘটনাগুলি মৌখিক সাক্ষ্য, লিখিত সাক্ষ্য, বই, কবিতা, গান, নিবন্ধ, তথ্যচিত্র এবং জায়নিস্ট আর্কাইভের মাধ্যমে সংরক্ষণ করা হয়েছে, তবে এটি খুব কমই ফিল্মে দেখানো হয়েছে- যা জনসাধারণের কাছে পৌঁছানোর ক্ষমতা রাখে।



ফারহা একটি ১৪ বছর বয়সী ফিলিস্তিনি মেয়ের গল্প যার জীবন এবং স্বপ্ন বিপর্যস্ত হয়েছিল যখন ইহুদিবাদী মিলিশিয়ারা তার গ্রামকে তাণ্ডব চালায় এবং ধ্বংস করে দেয়। ফিল্মটি একটি নামহীন গ্রামকে কেন্দ্র করে উপস্থাপন হয়েছে। যার শুরুর দৃশ্যটি দর্শকদের ফিলিস্তিনি গ্রামের শান্ত শীতল অবশিষ্টাংশের স্মরণ করিয়ে দেয়; যা সকলের কাছে একটি দৃশ্যমান টেস্টামেন্ট। প্রারম্ভিক দৃশ্যে, আমরা ফারহাকে তার বন্ধুদের সাথে খেলতে, কর্তৃত্বকে চ্যালেঞ্জ করতে, একটি বিরক্তিকর ছেলেকে দূরে সরিয়ে দিতে এবং একটি মেহেদি পার্টিতে যোগ দিতে দেখতে পাই।

ফারহার বাড়ি প্যালেস্টাইনের একটা গ্রামে।
সেখানে ফুল আছে, নীল আকাশ আছে, ঝর্না আছে।
ফারহা বই পড়তে বড্ড ভালবাসে। যখন বন্ধুদের সঙ্গে নদীতে পানি আনতে যায়, তখনও সঙ্গে থাকে বই।
পড়াশুনো বলতে কেবল ধর্মশিক্ষা। তাতে ফারহার মন ভরে না মোটেই। তার প্রাণের সখী ফরিদা শহরের স্কুলে পড়ে। ছুটিতে যখন গ্রামে আসে দুই সখীতে কত আড্ডা। ফারহার চোখে স্বপ্ন- সেও একদিন শহরের বড়ো স্কুলে পড়বে, অনেক পড়বে, তারপর ফিরে আসবে এই গ্রামেই, একটা স্কুল খুলবে, কেবলমাত্র মেয়েদের জন্য।



গ্রামের মৌলভী সাহেব চান না ফারহা শহরে যাক। কিন্তু ফারহার মামার কথায় ফারহার বাবা রাজি হন মেয়েকে শহরের স্কুলে পড়তে পাঠাতে। ভর্তির ফর্ম চলে আসে। ফরিদা আর ফারহার দেখা হয় তাদের প্রিয় জায়গাটিতে। যেখানে দোলনায় দুলতে দুলতে দুই কিশোরী নতুন দিনের স্বপ্ন দেখে। এমন সময় বোমার আওয়াজে চারপাশ কেঁপে ওঠে.....

শুরু হয়ে যায় কুখ্যাত 'নাকবা'। প্যালেস্টাইনের জনপদ গুঁড়িয়ে যেতে থাকে ইজরায়েলি দখলদার বাহিনীর আক্রমণে। কী ভয়ংকর বর্বরতা, কী অমানবিক জুলুম নির্যাতন নিপীড়ন- বিশ্বাসেরও বাইরে, কল্পনারও অতীত! ফারহা মুভির এই রিভিউ লিখেছিলাম ফেসবুকে.... কিন্তু দশ মিনিট এর মধ্যেই আমার পোস্ট হাওয়া করে দিয়ে আইডি রেস্ট্রিকটেড করে দেয় ফেসবুক কমিউনিটি স্টান্ডার্ড বহির্ভূত পোস্ট দেওয়ার অপরাধে।



কী হয় ফারহার? কী অভিজ্ঞতা হয় ছোট্ট মেয়েটির?
এই নিয়ে তৈরি জর্ডনের ছবি "ফারহা"। নেটফ্লিক্সে চলছে। আরবি ভাষায় নির্মিত মুভির ইংলিশ সাবটাইটেল থাকলেও সাব টাইটেল খুব দ্রুত ক্রল করায় পড়তে অসুবিধা হলেও ছবি আর চরিত্রগুলোর বডি ল্যাংগুয়েজ দেখে বুঝতে অসুবিধা হয়না চরিত্রের উপস্থাপন, বক্তব্য। দখলদারি রাষ্ট্র আর তার প্রভাবশালী সাথীদের চাপে ছবিটি হয়ত বেশিদিন থাকবে না। এক কিশোরীর চোখ দিয়ে দেখা ইতিহাসের নির্মমতা ৭৫ বছর পরেও যা দিব্যি বুক ফুলিয়ে ঘোরে তা সিনেমার পর্দায় এসে মানুষের মনে নাড়া দিক সে কি নিরীহ মানুষের রক্তে মাখামাখি "বিজয়ী" রা চাইতে পারে? বিশ্ব পরাশক্তির ঘনিষ্ট তাবেদার ইহুদী জায়ান্ট যেখানে অত্যাধুনিক মারনাস্ত্র নিয়ে নিরিহ নিরস্র ফিলিস্তিনীদের ধ্বংশ করে দিচ্ছে, সেখানে ফারহাদের হাতে বন্দুক নেই, তবুও নিজের খালি হাতকেই বন্দুকের মতো তাক করে ইহুদী জায়ান্টদের সামনে দাঁড়িয়ে প্রতিবাদ করছে- এই দৃশ্ব্য দুনিয়ার সকল শান্তিপ্রিয় মানুষের হৃদয়ে অনূরণ তোলে!
আশংকার বিষয়, ইহুদী চক্র এবং পশ্চিমা মিডিয়া ইতোমধ্যেই ফারহা মুভিটি প্রচারের বিরুদ্ধে একজোট হয়েছে।

ফারহার গল্পটি কেবল নাকবা দ্বারা সৃষ্ট ফিলিস্তিনি জীবন ধ্বংসের গল্প নয়। এটি ঐতিহ্যবাহী গ্রামীণ জীবনের একটি সংবেদনশীল এবং সুন্দর প্রতিকৃতি এবং একটি কিশোরী মেয়ের স্বপ্ন যারা গ্রামের মৌলভীদের দ্বারা মেয়েদের শিক্ষায় বাঁধা দেয় এবং বয়স্ক লোকের কাছে জোর করে বিবাহ দেওয়াকে ভাগ্য বলে চালিয়ে দিতে চায়। ১৯৪৮ সালের প্যালেস্টাইনের এই প্রতিকৃতিটি কেউ মিস করবেন না। প্যালেস্টাইনের জায়নবাদী আলোচনার বিন্দু "মানুষ ছাড়া একটি ভূমি একটি জনগণের জন্য একটি ভূমি ছাড়াই"- আজ প্রতিষ্ঠিত!
সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ দুপুর ২:০৪
১১টি মন্তব্য ১১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

পানি লাগবে? পানি

লিখেছেন আবদুর রব শরীফ, ১৪ ই এপ্রিল, ২০২৫ দুপুর ১২:৩৬

আজকের নববর্ষের সেরা মোটিফটা দেখে ফেলেছি। যারা এই আইডিয়া নিয়ে এসেছেন তাদের স্যালুট ভাই। তোমরা মুগ্ধকে স্মরণ করেছো। যতদিন এই বাংলার বুকে মুগ্ধদের এভাবে স্মরণ করা হবে ততদিন পথ হারাবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারত-বাংলাদেশে আলাদা দিনে বাংলা নববর্ষ কেন?

লিখেছেন জুল ভার্ন, ১৪ ই এপ্রিল, ২০২৫ বিকাল ৫:৪৪

ভারত-বাংলাদেশে আলাদা দিনে বাংলা নববর্ষ কেন?


বাংলাদেশে পহেলা বৈশাখ আসে ইংরেজি মাসের ১৪ এপ্রিল। অন্যদিকে পশ্চিম বাংলায় ১৫ এপ্রিল উদযাপন করা হয় উৎসবটি। যদিও ১৯৫২ সন পর্যন্ত বাংলাদেশের মানুষ এবং... ...বাকিটুকু পড়ুন

বেকারত্ত্ব এবং দেশের রিজার্ব বারানোর এইটা একটা পথ হতে পারে…

লিখেছেন ফেনা, ১৪ ই এপ্রিল, ২০২৫ সন্ধ্যা ৬:৪৬



বাংলাদেশে শ্রমিকদের মধ্যে অদক্ষ শ্রমিকের সংখ্যা উল্লেখযোগ্যভাবে বেশি। সাম্প্রতিক তথ্য অনুযায়ী, দেশের মোট শ্রমিকের সংখ্যা প্রায় ৮.৫ কোটি। এর মধ্যে প্রায় ৯৬% শ্রমিক প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত নন, অর্থাৎ তারা অদক্ষ... ...বাকিটুকু পড়ুন

গণতন্ত্র ও নির্বাচিত শব্দের নয়া ব্যাখ্যা দিলেন ফরিদা-মজহার দম্পতি !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৪ ই এপ্রিল, ২০২৫ রাত ৯:১৭


বাংলাদেশে গণঅভ্যুত্থানের পর গঠিত অন্তর্বর্তী সরকারের শুরুটা ছিল জনতার কণ্ঠে, এখন সেটা রূপ নিচ্ছে কিছু নির্দিষ্ট গলার একচেটিয়া লোকের তর্জন-গর্জনে । শুরুর দিকে বলা হয়েছিল, এটা অস্থায়ী সরকার—জনগণের... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমেরিকা আমাদের দেশে সরকার পরিবর্তনে সক্ষম হয় কেন?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ১৪ ই এপ্রিল, ২০২৫ রাত ৯:৩৮



আমাদের দেশের সরকার সমূহ যখন সরকার পরিবর্তনের ব্যবস্থা বন্ধ করে দেয় তখন বিশ্ব মোড়ল হিসাবে আমেরিকা আমাদের দেশের সরকার পরিবর্তন তাদের দায়িত্ব মনে করে। তারা এটা করে আমাদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×