“শিক্ষকের মর্যাদা"
পারিবারিক ভাবে মা-বাবাই যেমন সর্বচ্চ শিক্ষক, তেমন সামাজিক, রাস্ট্রীয় ভাবে শিক্ষকগণই সর্বচ্চ শিক্ষক। শিক্ষকের হাত ধরে রাস্ট্রীয় সকল স্তরের মর্যাদাবান সম্মানীত মানুষ তৈরী হয়।কাজেই শিক্ষকদের “চাকরী ছেড়ে বিসিএস পরিক্ষা দিয়ে সচিব” হবার প্রতিযোগীতায় নামার আহবান অগ্রহণযোগ্যই নয় অমন বক্তব্য নিন্দনীয়।
শ্রদ্ধেয় শিক্ষকদের কাছে শিক্ষা নিয়ে ড:মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ, অধ্যাপক আবুল ফজল,শিল্পাচার্য্য জয়নুল আবেদীন, ড: মোহাম্মদ ইউনু্স, স্যার ফজলে হাসান আবেদ, ড: স্দিরাজুল ইসলাম চৌধুরীদেরমত যেমন সবাই জ্ঞানী গুনী যোগ্য, আদর্শ মানুষ গড়ে না উঠলেও এদেশে জ্ঞানী গুণী সর্বজন সম্মানীয় মানুষের সংখ্যা নেহায়েত কম নয়। তেমনি কম-বিস্তর শিক্ষা গ্রহন করেও গুটিকতক রাজাকার, মুক্তিযুদ্ধ চেতণা ব্যবসায়ীর সংখ্যাও অনেক। লেখা পড়া শিখে হোক কিম্বা সার্টিফিকেট “যোগার করে” হোক কেউ কেউ ‘ইয়াবা বদি, লক্ষীপুরের তাহের,শামীম ওসমান,তারেক সাঈদ,সুব্রত বাইনদেরমত সন্ত্রাসী-ফ্রাঙ্কেন্সটাইন হয়,ধর্ষণ সেঞ্চুরিয়ান মানিক, চাপাত্তি লীগ-রগকাটাদেরমত শিক্ষার্থী হয়, হাছান-অপু-শাজাহান-ইনু-‘টোটালী রাভিশ’-'কালো বিড়াল' গংদেরমত বেয়াদব রাজনীতিবিদও তৈরী হয়।একই ভাবে শিক্ষকদের মধ্যেও পরিমল-পান্নাদেরমত কুলাংগারদেরও ঘাটতি নাই। তারপরেও শিক্ষকগণই হতে পারেন আমাদের সর্বচ্চ শ্রদ্ধেয় জন।কাজেই শিক্ষকদের অসম্মান করে, অবমূল্যায়ণ করে ‘নাকউচু প্রজাতি’ ক্ষমতাবান হতে পারবেন সত্য কিন্তু সম্মানীয় হতে পারবেন না।
প্রসংগত ছেলে বেলায় পড়া, কাজী কাদের নেওয়াজের লেখা “শিক্ষকের মর্যাদা” কবিতাটি আপনাদের সাথে শেয়ার করছিঃ-
"শিক্ষকের মর্যাদা"
..............কাজী কাদের নেওয়াজ
বাদশাহ আলমগীর-
কুমারে তাঁহার পড়াইত এক মৌলভী দিল্লীর।
একদা প্রভাতে গিয়া
দেখেন বাদশাহ- শাহজাদা এক পাত্র হস্তে নিয়া
ঢালিতেছে বারি গুরুর চরণে
পুলকিত হৃদে আনত-নয়নে,
শিক্ষক শুধু নিজ হাত দিয়া নিজেরি পায়ের ধুলি
ধুয়ে মুছে সব করিছেন সাফ্ সঞ্চারি অঙ্গুলি।
শিক্ষক মৌলভী
ভাবিলেন আজি নিস্তার নাহি, যায় বুঝি তার সবি।
দিল্লীপতির পুত্রের করে
লইয়াছে পানি চরণের পরে,
স্পর্ধার কাজ হেন অপরাধ কে করেছে কোন্ কালে!
ভাবিতে ভাবিতে চিন্তার রেখা দেখা দিল তার ভালে।
হঠাৎ কি ভাবি উঠি
কহিলেন, আমি ভয় করি না’ক, যায় যাবে শির টুটি,
শিক্ষক আমি শ্রেষ্ঠ সবার
দিল্লীর পতি সে তো কোন্ ছার,
ভয় করি না’ক, ধারি না’ক ধার, মনে আছে মোর বল,
বাদশাহ্ শুধালে শাস্ত্রের কথা শুনাব অনর্গল।
যায় যাবে প্রাণ তাহে,
প্রাণের চেয়েও মান বড়, আমি বোঝাব শাহানশাহে।
তার পরদিন প্রাতে
বাদশাহর দূত শিক্ষকে ডেকে নিয়ে গেল কেল্লাতে।
খাস কামরাতে যবে
শিক্ষকে ডাকি বাদশা কহেন, ”শুনুন জনাব তবে,
পুত্র আমার আপনার কাছে সৌজন্য কি কিছু শিখিয়াছে?
বরং শিখেছে বেয়াদবি আর গুরুজনে অবহেলা,
নহিলে সেদিন দেখিলাম যাহা স্বয়ং সকাল বেলা”
শিক্ষক কন-”জাহপানা, আমি বুঝিতে পারিনি হায়,
কি কথা বলিতে আজিকে আমায় ডেকেছেন নিরালায়?”
বাদশাহ্ কহেন, ”সেদিন প্রভাতে দেখিলাম আমি দাঁড়ায়ে তফাতে
নিজ হাতে যবে চরণ আপনি করেন প্রক্ষালন,
পুত্র আমার জল ঢালি শুধু ভিজাইছে ও চরণ।
নিজ হাতখানি আপনার পায়ে বুলাইয়া সযতনে
ধুয়ে দিল না’ক কেন সে চরণ, স্মরি ব্যথা পাই মনে।”
উচ্ছ্বাস ভরে শিক্ষকে আজি দাঁড়ায়ে সগৌরবে
কুর্ণিশ করি বাদশাহে তবে কহেন উচ্চরবে-
”আজ হতে চির-উন্নত হল শিক্ষাগুরুর শির,
সত্যই তুমি মহান উদার বাদশাহ্ আলমগীর।”
সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে অক্টোবর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৫১