somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

জুল ভার্ন
এপিটাফ nnএক নিঃশব্দ প্রচ্ছদে ঢাকা আছে আমার জীবনের উপন্যাস...খুঁজে নিও আমার অবর্তমানে...কোনো এক বর্তমানের মায়াবী রূপকথায়।আমার অদক্ষ কলমে...যদি পারো ভালোবেসো তাকে...ভালোবেসো সেই অদক্ষ প্রচেষ্টা কে,যে অকারণে লিখেছিল মানবশ্রাবণের ধারা....অঝোর

ইংরেজি বর্ষের ইতিকথা

০১ লা জানুয়ারি, ২০১২ সকাল ৯:৪৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ইংরেজি বর্ষের ইতিকথা

বাংলাদেশে ইংরেজি,বাংলা ও হিজরী এই তিনটি সনের প্রচলন রয়েছে।যদিও বাংলাদেশে বাংলা সনেরই প্রধান্য হওয়ার কথা কিন্তু আন্তর্জাতিক যোগাযোগের সুবিধার্থে ইংরেজীসন, মাস দিন হিসেব করে আমাদের জীবনাচার।হিজরী সন/মাস শুধু মাত্র মুসলমানদের ধর্মীয় প্রেক্ষাপটেই আমাদের দেশে ব্যাবহার করা হয়। আমাদেরদেশেও এক সময় শকাব্দের প্রচলন ছিল যা এখন আর নেই, অবশ্য ভারতের পশ্চিম বাংলায় এখনো শকাব্দের প্রচলন বিদ্যমান। ইংরেজী নব বর্ষের আছে বিরাট এক ইতিহাস, যদিও সেই ইতিহাস অত্যন্ত জটিল এবং বিশাল। আমি সংক্ষিপ্ত ভাবে পাঠকদের সাথে কিছু শেয়ার করতে চাইঃ-

আমরা যে ইংরেজি সন বা খৃস্টাব্দ বলি আসলে এটা হচ্ছে গ্রেগরীয়ান ক্যালেন্ডার। এটা একটি সৌর সন। নানা পরিবর্তন, পরিমার্জন, পরিবর্ধন, বিবর্তন এবং যোগ-বিয়োজনের মধ্য দিয়ে বর্ষ গণনায় বর্তমান কাঠামো লাভ করে। জানা যায়, মানুষ যেদিন বর্ষ গণনা করতে শিখলো সেদিন চাঁদের হিসাবেই শুরু করে বর্ষ গণনা। চাঁদের বিভিন্ন অবস্থা দিয়ে ওরা মাসের বিভিন্ন সময়কে চিহ্নিত করতো। চাঁদ ওঠার সময়কে বল হতো ক্যালেন্ডস, পুরো চাঁদকে বলতো ইডেস, চাঁদের মাঝামাঝি অবস্থাকে বলতো নুনেস। সূর্যের হিসাবে বা সৌর গণনার হিসেব আসে অনেক পরে। সৌর গণনায় ঋতুর সঙ্গে সম্পর্ক থাকে, কিন্তু চান্দ্র গণনায় ঋতুর সঙ্গে সম্পর্ক থাকে না।
খ্রিস্টপূর্ব ১৫৩ সালের ১ জানুয়ারি নতুন বছর পালনের সিদ্ধান্ত নেয় রোমান সিনেট। আর বছরের প্রথম মাস জানুয়ারির নামকরণ করা হয় রোমানদের দেবতা জানুসের নামে। লাতিন শব্দ জানুস, অর্থ দরজা। এই দড়জা মানেই ইংরেজী নতুন বছরের আগমন,ইংরেজী নতুন বছরের শুরু।

খ্রিস্টপূর্ব ২০০০ অব্দে মেসোপটেমীয় সভ্যতায় প্রথম বর্ষবরণ চালু হয়। প্রাচীন মেসোপটেমিয়ায় যে সভ্যতা গড়ে উঠেছিলো, তাকে বলা হয় মেসোপটেমীয় সভ্যতা। বর্তমানের ইরাককে প্রাচীনকালে বলা হতো মেসোপটেমিয়া। এই মেসোপটেমিয়ান সভ্যতার ৪টা আলাদা আলাদা ভাগ আছে- সুমেরীয় সভ্যতা, ব্যাবিলনিয় সভ্যতা, আসিরিয় সভ্যতা ও ক্যালডিয় সভ্যতা। এদের মধ্যে বর্ষ গণনা শুরু হয় ব্যাবিলনিয় সভ্যতায়। কিন্তু তখন বর্তমানের মতো জানুয়ারির ১ তারিখে নতুন বর্ষ গণনা শুরু হতো না। তখন নিউ ইয়ার পালন করা হতো যখনই বসন্তের আগমন হতো।অর্থাৎ শীতকালের রুক্ষতা ঝেড়ে প্রকৃতি যখন গাছে গাছে নতুন করে পাতা গজাতে থাকে, ফুলের কলিরা ফুটতে শুরু করে-তখনই নতুন বর্ষ!

অন্যান্য দেশেরমতই আমাদের দেশেও প্রাথমিক বর্ষ পঞ্জীকায় অল্প পরিসরে সুমের/সুমেয়ী সভ্যতায় পরিলক্ষিত হয়। তবে মিশরীয় সভ্যতাই পৃথিবীর প্রাচীনতম সৌর ক্যালেন্ডার চালু করে বলে জানা যায়। প্রাচীন মিশরীয় ক্যালেন্ডার পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা মনে করেন যে, খৃস্টপূর্ব ৪৩৬ অব্দ থেকে আনূষ্ঠানিক ভাবে ক্যালেণ্ডার ব্যবহার শুরু হয় । আরো জানা যায়, রোমানরা তাদের প্রথম ক্যালেণ্ডার লাভ করে গ্রীক গনিতজ্ঞ ও জ্যোতির্বিদদের কাছ থেকে। রোমানদের প্রাচীন ক্যালেণ্ডারে মাস ছিল ১০টি এবং তারা বর্ষ গণনা করতো ৩০৪দিনে। মধ্য শীত মৌসুমের ৬০ দিন তারা বর্ষ গণনায় আনতো না। রোমানদের বর্ষ গণনার প্রথম মাস ছিল মার্চ। তখন ১ মার্চ পালিত হতো নববর্ষ উৎসব। শীত মৌসুমে ৬০ দিন বর্ষ গণনায় না আনার কারণে বর্ষ গণনা যে দুটি মাসের ঘাটতি থাকতো তা পূরণ করবার জন্য তাদের অনির্দিষ্ট দিন-মাসের দ্বারস্থ হতে হতো। এই সব নানা জটিলতার কারণে জনসাধারণের মধ্যে তখন ক্যালেণ্ডার ব্যবহার করবার প্রবণতা একেবারেই ছিল না বলে জানা যায়।

রোম উপাখ্যান খ্যাত প্রথম সম্রাট রমুলাসই আনুমানিক ৭৩৮ খৃস্টপূর্বাব্দে রোমান ক্যালেন্ডার চালু করার চেষ্টা করেন। পরবর্তীকালে রোমান সম্রাট নূমা পন্টিলাস ১০ মাসের সঙ্গে আরো দুটো মাস যুক্ত করেন। সে দুটো মাস হচ্ছে জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি। তিনি জানুয়ারিকে প্রথম মাস ও ফেব্রুয়ারিকে শেষ মাস হিসাবে যুক্ত করেন। জানুয়ারি মাস ধার্য করা হয় ২৯ দিনে এবং ফেব্রুয়ারি মাস ধার্য করা হয় ২৮ দিন। এ ছাড়াও তিনি মারসিডানাস নামে অতিরিক্ত একটি মাসেরও প্রবর্তন করেন। এই মারসিডানাস মাস গণনা করা হতো ২২ দিনে। এই অতিরিক্ত মাসটি গণনা করা হতো এক বছর অন্তর ফেব্রুয়ারি মাসের ২৩ ও ২৪ তারিখের মাঝখানে। খৃস্টপূর্ব ৪৩২ অব্দে সম্রাট নূমা কর্তিক প্রবর্তিত মাসের হিসেব পরিমার্জন ও পরিবর্তন করা হয়।

পরবর্তীকালে রোমানরা চার বছর অন্তর লীপ ইয়ারের হিসেব প্রবর্তন করে। এ হিসেবেও এক বছরের সঙ্গে অন্য বছরের দিন সংখ্যার হেরফের হতে থাকে। চার বছর অন্তর অতিরিক্ত একটি দিন যোগ করলে দেখা যেতো দিনের সংখ্যা বেড়েই চলেছে।

রোমান সম্রাট জুলিয়াস সীজার মিশরীয় ক্যালেন্ডার রোমে চালু করেন। তিনি জ্যোতির্বিদদের পরামর্শে খৃস্টপূর্ব ৪৬ অব্দে সেই বছরের নভেম্বর ও ডিসেম্বর মাসের মাঝখানে ৬৭ দিন এবং ফেব্রুয়ারি মাসের শেষে ২৩ দিন এই মোট ৯০ দিন যুক্ত করে ক্যালেণ্ডার সংস্কার করেন। এই ক্যালেন্ডার জুলিয়ান ক্যালেন্ডার নামে পরিচিত হয়। এই ক্যালেন্ডারে মার্চ, মে, কুইন্টিলিস ও অক্টোবর দিন সংখ্যা ৩১ দিন, অপরদিকে জানুয়ারি ও সেক্সটিনিস মাসের সঙ্গে দুইদিন যুক্ত করে ৩১ দিন করা হয়। ফেব্রুয়ারি মাস ২৮ দিনেই গণনা হতে থাকে। তবে প্রতি চার বছর অন্তর একদিন যুক্ত করা হয়। জুলিয়াস সীজারের নামানুসারে প্রাচীন কুইন্টিলিস মাসের নাম বদলিয়ে রাখা হয় জুলাই।

অন্যদিকে সম্রাট অগাস্টাসের নামানুসারে সেক্সটিনিস মাসের নাম পাল্টিয়ে অগাস্ট করা হয়। মিশরীয়রা সৌর বর্ষ গণনা করতো ৩৬৫ দিনে। কিন্তু জুলিয়াস সীজারের সংস্কারের ফলে তা তিনশ' সাড়ে পঁয়ষট্টি দিনে এসে দাঁড়ায়। এই ক্যালেন্ডারটি তৈরি করা হয় ১৫৮২ সালে।

যীশুখৃস্টের জন্ম বছর থেকে গণনা করে ডাইওনীসিয়াম এক্সিগুয়াস নামক এক খৃস্টান পাদরী ৫৩২ অব্দ থেকে খৃস্টাব্দের সূচনা করেন। ১৫৮২ খৃস্টাব্দে রোমের পোপ ত্রয়োদশ গ্রেগরী জ্যোতির্বিদগণের পরামর্শে জুলিয়ান ক্যালেণ্ডার সংশোধন করেন। তার নির্দেশে ১৫৮২ খৃস্টাব্দের অক্টোবর ১০ দিন বাদ দেয়া হয়, ফলে ঐ বছরের ৫ তারিখকে ১৫ তারিখ করা হয়। পোপ গ্রেগরী ঘোষণা করেন যে, যেসব শত বর্ষীয় অব্দ ৪০০ দ্বারা বিভক্ত হবে সেসব শতবর্ষ লীপ ইয়ার হিসাবে গণ্য হবে। এই গ্রেগরীয়ান ক্যালেণ্ডারই আমাদের দেশে ইংরেজি ক্যালেন্ডার নামে পরিচিত।

(তথ্য সূত্রঃ- উইকিপিডিয়াঃ ইংলিশ নিউ ইয়ার্স ও হিস্ট্রি অব রোমান ক্যালেন্ডার)

সবাইকে ইংরেজী নববর্ষের শুভেচ্ছা।
সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে অক্টোবর, ২০২৪ রাত ৯:৫৯
৬৩টি মন্তব্য ৬৬টি উত্তর পূর্বের ৫০টি মন্তব্য দেখুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

জাতির জনক কে? একক পরিচয় বনাম বহুত্বের বাস্তবতা

লিখেছেন মুনতাসির, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৮:২৪

বাঙালি জাতির জনক কে, এই প্রশ্নটি শুনতে সোজা হলেও এর উত্তর ভীষণ জটিল। বাংলাদেশে জাতির জনক ধারণাটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ, যেখানে একজন ব্যক্তিত্বকে জাতির প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে মর্যাদা দেওয়া হয়। তবে পশ্চিমবঙ্গের... ...বাকিটুকু পড়ুন

আত্মপোলব্ধি......

লিখেছেন জুল ভার্ন, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ১০:৫১

আত্মপোলব্ধি......

একটা বয়স পর্যন্ত অনিশ্চয়তার পর মানুষ তার জীবন সম্পর্কে মোটামুটি নিশ্চিত হয়ে যায়। এই বয়সটা হল পঁয়ত্রিশ এর আশেপাশে। মানব জন্মের সবকিছু যে অর্থহীন এবং সস্তা সেটা বোঝার বয়স... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবন থেকে নেয়া ইলিশ মাছের কিছু স্মৃতি !

লিখেছেন হাসানুর, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৫:৩২



হঠাৎ ইলিশ মাছ খেতে ইচ্ছে হল । সাথে সাথে জিভে ..জল... চলে এল । তার জন্য একটু সময়ের প্রয়োজন, এই ফাঁকে আমার জীবন থেকে নেয়া ইলিশ মাছের কিছু স্মৃতি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ট্রাম্প ক্ষমতায় আসছে এটা ১০০% নিশ্চিত। আমেরিকায় ইতিহাসে মহিলা প্রেসিডেন্ট হয়নি আর হবেও না।

লিখেছেন তানভির জুমার, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ৯:৩৩

আর এস এস সহ উগ্র হিন্দুদের লিখে দেওয়া কথা টুইট করেছে ট্রাম্প। হিন্দুদের ভোট-আর ইন্ডিয়ান লবিংএর জন্য ট্রাম্পের এই টুইট। যার সাথে সত্যতার কোন মিল নেই। ট্রাম্প আগেরবার ক্ষমতায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

ট্রাম্প জিতলে কঠোর মূল্য দিতে হবে ইউসুফ সরকারকে?

লিখেছেন রাজীব, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১০:৪২

ডোনাল্ড ট্রাম্পের এক মন্তব্যে বাংলাদেশের মিডিয়ায় ঝড় উঠেছে। ৫ তারিখের নির্বাচনে ট্রাম্প জিতলে আরেকবার বাংলাদেশের মিষ্টির দোকান খালি হবে।

আমি এর পক্ষে বিপক্ষে কিছু না বললেও ডায়বেটিসের রুগী হিসেবে আমি সবসময়... ...বাকিটুকু পড়ুন

×