somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

একটি বন্ধ্যা দিনের পরিক্রমা

২৯ শে মে, ২০২৩ রাত ১:৪৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :




(ক)
শোনা যাচ্ছিল খুব শীঘ্রই আণবিক যুদ্ধ শুরু হয়ে যাবে। লোকজন যাবতীয় আনন্দের কথা ভুলে গেছে। ভুলে গেছে স্বপ্ন দেখাও। সময় হলে যার যার মতো কাজ করে। ঘরে ফিরে খিদে থাকলে খায়, নয়তো টিভির সামনে ঠায় বসে থাকে- যদি নতুন কোনও সংবাদ থাকে! কিন্তু টিভির পর্দায় তেমন কোনও আশা জাগানিয়া সংবাদের শিরনাম ভেসে ওঠে না। বিভিন্ন দেশের সরকার প্রধানদের নানা রকম বিবৃতির কথাই শোনা যায় সংবাদ পাঠকদের মুখে।

সিদ্ধেশ্বরী পরিপূর্ণ দেশের মতোই একটি গ্রাম। যেখানকার মানুষ সব দিক দিয়েই এগিয়ে ছিল অন্যান্য গ্রাম থেকে। তবু এখানকার মসজিদ, মন্দির, গির্জা আর বাউলদের আখড়ায় প্রার্থনা চলছে দিনরাত। ঈশ্বর যাতে লোভী আর যুদ্ধবাজ মানুষদের অসৎ উদ্দেশ্য থেকে পৃথিবীকে রক্ষা করেন। শোনা যায় একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের খ্রিস্টান পরিচালক আর বৌদ্ধ কেরানিও প্রার্থনা করে যাচ্ছে সমানে।
প্রতিটি বাড়ির সামনেই কবরের মতো নানা আকৃতির গর্ত খোঁড়া হচ্ছে। কেউ কেউ ঘরের ভেতরেই গর্ত করে দিনের বেশির ভাগ সময়টাই সেখানে কাটিয়ে দিচ্ছেন। অতি ধার্মিক কেউ কেউ মসজিদ আর মন্দিরে ঠাঁই নিয়েছে। তাদের ধারনা মসজিদ মন্দিরের কোনও ক্ষতি হবে না। কিন্তু এতটা ভয়ের ভেতর বাস করলেও কিছু কিছু মানুষ তাদের ধর্ম বিশ্বাস নিয়ে কটাক্ষ করতে ছাড়ল না। আবার গ্রামটির একমাত্র পাগল রশিদ মৌলবি বলতে লাগলো, তোমরা হগলতে ল্যাংটা হইয়া যাও। দুনিয়ারে পাপে ধরছে। আদম হাওয়া ল্যাংটা হইয়া কান্দাকাটি করছেন বইল্যাই আল্লার মাপ পাইছিলেন।

রশিদ মৌলবি একেক সময় একেক কথা বলেন। লোকজন তার কথাকে খুব একটা পাত্তা দিচ্ছিল না। বড় ছোট সবাই আসন্ন বিপদের জন্য মনে মনে প্রস্তুত হয়ে আছে। কিন্তু কেউ বুঝতে পারছে না যুদ্ধের পরিণতি কী হবে। কেউ কেউ ভাবছিল যে, যুদ্ধের ভয়াবহতা থেকে যদি সে কোনোক্রমে বেঁচে যায়, তাহলে সে কী খেয়ে বাঁচবে?

পারমানবিক বোমার তেজস্ক্রিয়তায় শুকিয়ে যাবে নদী-নালা-খাল-বিল। সমুদ্রের পানি শুকিয়ে গিয়ে পরিণত হবে লবণের উপত্যকায়। মাঠের ফসল, গাছপালা সব শুকিয়ে যাবে। সূর্যের অল্প তাপেই আগুন জ্বলে উঠবে। মাটি পরিণত হবে পাথরে। তারপরও যদি কোনও ক্রমে কেউ কেউ বেঁচে যায়, তাহলে তাদের পরিণতি কী হবে? তারা কীভাবে বাঁচবে? তখন কি বেঁচে থাকাটাই প্রধান হয়ে দাঁড়াবে, নাকি ধুঁকে ধুঁকে মৃত্যুকেই বরণ করে নেবে মানুষ? আর যদি খেয়ে বাঁচার মতো কোনও উপায় আবিষ্কার হয়, তাহলে সে জীবনটা কেমন হবে? পৃথিবী কি আবার আবাদ করা সম্ভব হবে?

এতটুকু লেখা হয়ে গেলে পর সঙ্গে সঙ্গেই মাথাটা কেমন হালকা বোধ হচ্ছিল। সেই সঙ্গে যতটা তোড়জোড় করে পুরো লেখাটাই ভাবনায় এসে ভিড় জমিয়েছিল, তাও যেন কোথায় হারিয়ে গেল। গল্প ভাবনার একটি অক্ষর, শব্দ বা বাক্যের কোনোটাই ধরা দিচ্ছিল না।
মধ্যরাতে কলম হাতে টেবিলের ওপর কাগজ রেখে দু পা তুলে হতবিহ্বল হয়ে বসে থাকেন জুলিয়ান সিদ্দিকী। বারবার নিজের লেখাটুকু পড়ছিলেন আর হারিয়ে যাওয়া অংশটুকুর খেই ধরতে চেষ্টা করছিলেন। কিন্তু কিছুতেই যুতসই একটি অক্ষর বা শব্দ বসাতে পারছিলেন না। এমনটা আর জীবনে নতুন কিছু নয়। আরও অনেকবার এমন হয়েছে। এবং এমন বন্ধ্যা পরিস্থিতি সামাল দিয়ে উৎরেও গেছেন। কিন্তু আজকের ব্যাপারটি যেন কেমন। কোনও সম্ভাবনাও উঁকিঝুঁকি দিচ্ছে না তার ভাবনায়।

বেশ কিছুক্ষণ বসে থাকার পর কলম রেখে উঠে পড়েন তিনি। মধ্যরাতে চারদিক সুনসান এক নীরবতায় ছেয়ে থাকলেও ঝিঁঝিঁ পোকাদের অবিশ্রান্ত ডাক শোনা যাচ্ছিল। একটু এগিয়ে গিয়ে জানালা দিয়ে বাইরে একবার দৃষ্টি বুলিয়ে আসেন। রাতের কোনও চেহারা দেখতে পান না তিনি। হয়তো আকাশে ঘন হয়ে মেঘ জমে আছে। একটি তারাও চোখে পড়েনি।

টেবিলের পাশে ইলেকট্রিক হিটারে পানি রাখা আছে। যখন মন চায় পানি গরম করে কাপে ঢেলে নিলেই হলো। চিনি আর কফিও রয়েছে হাতের কাছেই। রাত জাগতে পারেন না বলে রুবী বেগম আগেই ঘুমিয়ে পড়েন। তা ছাড়া কম পড়ুয়া বলে লেখালেখি বা পাঠের প্রতি কোনও আগ্রহ নেই তার। বরং এক ধরনের বিতৃষ্ণা বা ভয় যেন কাজ করে। ঘুমিয়ে পড়ার আগে একা একা কিছুক্ষণ টিভি দেখেন। তারপর টেবিলের কোনায় কফির আর চিনির কৌটা আর হিটারে পানি ভরে দিয়ে যাওয়ার আগে বলেন, আমি ঘুমাইতে যাই। দরকার হইলে ডাইকো।

বেশিরভাগ সময়েই স্ত্রীকে ঘুম থেকে জাগানোর প্রয়োজন পড়ে না তার। লেখালেখি না থাকলে কফি খেতে খেতে বই পড়েন। অপ্রয়োজনীয় বই। যেসব বইয়ে গল্প থাকে না। অথবা গল্পের ভেতরে ঠাসা থাকে আরও গল্প। হিটারের সুইচ অন করে দিয়ে একবার শোওয়ার ঘরে উঁকি মারেন তিনি।

রুবী বেগম ঘুমুচ্ছেন। মাথার ওপর ফ্যান চলছে। অক্টোবরের শেষ সময়। মাঝরাতে বাতাস ঠাণ্ডা হতে হতে গায়ে কাঁটা দেবার মত শীত শীত বোধ হয়। তাই হয়তো ঘুমের ভেতরই কুকরে মুকরে আছেন তিনি। তার পায়ের কাছে একটি পাতলা কাঁথা আছে। সেটা সেখানেই গুটিয়ে পড়ে আছে। জুলিয়ান সিদ্দিকী এগিয়ে গিয়ে স্ত্রীর গায়ে কাঁথাটা ভালো মতন টেনে দিয়ে লেখার টেবিলের কাছে ফিরে আসেন।

ঘুম থেকে জেগে যদি কোনও স্ত্রী গায়ে স্বামীর যত্নের ছাপ বা চিহ্ন দেখতে পান, নিঃসন্দেহে খুশি হবেন। অবশ্য রুবী বেগমের কথাবার্তায় এটা গোপন থাকে না কোনও দিন। বরং ভরাট কণ্ঠে দু একজনকে জানিয়ে ও আনন্দ পান বলেই মনে হয়।

পানি গরম হতে হতে হিটার বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। আবার সুইচ টিপলেও তা কাজ করে না। তার মানে পানি যথেষ্ট গরমই আছে। বুঝতে পেরে তিনি কাপে পানি ঢেলে নিয়ে টেবিল চামচের এক চামচ কফি আর দু চামচ চিনি কাপের পানিতে ঢেলে নিয়ে মিশ্রণটিকে চামচ দিয়ে ঘুটতে থাকেন। অবশ্য তার এ বয়সে চিনি খাওয়াটা কেউ কেউ ভালো চোখে দেখেন না। তিনি বলেন, আমার এমন কোনও ব্যাধি নেই যে চিনি খাওয়াটা কমাতে হবে। তেতো চা বা কফির কোনও স্বাদ আছে নাকি?

কফিতে চুমুক দিতে দিতে তার মনে পড়ে যায় যে, প্রায় বছর পাঁচেক গড়িয়ে গেল ঢাকামুখী হন না। ফেসবুক আর ব্লগে লেখালেখির সুবাদে যাদের সঙ্গেই খানিকটা পরিচয় হয়েছিল, তাদের কারও সঙ্গেই এখন আর যোগাযোগ বা দেখা সাক্ষাৎ হয় না। যখন ল্যাপটপ ছিল, তখন যোগাযোগ যেমন ছিল তেমন বিভিন্ন জায়গায় লেখাও পাঠাতেন। কিন্তু ল্যাপটপটা রাগের মাথায় ভেঙে ফেলার পরই সেইসব কর্ম স্থবির হয়ে আছে। তা ছাড়া স্মার্ট ফোন যতদিন হাতে ছিল তখনও ফেসবুকে মাঝে মধ্যে ঢুঁ মারতে পারতেন। এখন স্মার্ট ফোন নেই বলে সেটিও আর হয়ে উঠছে না। মাঝখানে তো বলা যায় ফেসবুকে আসক্তি জন্মে গিয়েছিল। স্মার্ট ফোনের অভাবে সেই আসক্তিও দূর হয়ে গেছে। তবে এখনও মাঝে মধ্যে যোগাযোগের অভাবটা খুব অনুভব করেন। কে কেমন আছে, কোথায় আছে, সেসব জানতেও মনটা আনচান করে। যদিও কারও সঙ্গেই সম্পর্কের তেমন একটা গভীরতা ছিল না। তবু কেন যেন তাদের অনেকটা আপন বলেই মনে হয়। খুব কাছের কেউ বলে মনে হয়। আবার এও মনে হয় যে, বয়স বেড়ে গেলে মানুষ স্মৃতি কাতর হয়ে পড়তে পারে। তখন চেনাজানা, আধা চেনাজানা মানুষদের সম্পর্কে জানতে মন কেমন কেমন করে।

কফি শেষ করে একটি সিগারেট জ্বালাতে খুব ইচ্ছে করে তার। কিন্তু কদিন ধরে এদিক দিয়ে নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে চেষ্টা করছেন। একটি সিগারেট পুরোপুরি শেষ করতে পারেন না। আধাআধি হতেই মুখের ভেতরটা কেমন তিতকুটে হয়ে পড়ে। তাই প্রায়ই একটি সিগারেট ভেঙে সামনের অর্ধেকটা ফেলে দেন। এখনও সিগারেট জ্বালানর আগে খানিকটা কাল ক্ষেপণ করতেই ঘরময় পায়চারী করতে করতে গল্পের বাকি অংশটা মনে করতে চেষ্টা করেন। কিন্তু নতুন কিছু ভাবনায় আসে না। কেবল ঘুরে ফিরে একটি জিজ্ঞাসাই মনের ভেতর খচখচ করতে থাকে, পৃথিবী কি আবার আবাদ করা সম্ভব হবে?

কোথায় যেন একবার পড়েছিলেন যে, পারমানবিক বোমায় ধ্বংস হয়ে যাওয়া কোনও এক পরিত্যক্ত এলাকা সবুজে ছেয়ে গেছে। পাখ-পাখালির কলতানে মুখরিত হয়ে উঠেছে। বাঘ সহ অন্যান্য বন্য প্রাণীও দেখা গেছে সেখানে। সেটা তো একটা খণ্ডিত অংশ মাত্র। কিন্তু পুরো পৃথিবী ধ্বংস হয়ে গেলে কি আর এমনটি হবে?

ভাবতে ভাবতে নিজের অজান্তেই একটি সিগারেট ধরিয়ে টানতে আরম্ভ করেন জুলিয়ান সিদ্দিকী। ভাবতে থাকেন, পৃথিবীতে যখন কিছুই ছিল না, ধীরে ধীরে সেখানে প্রাণের সঞ্চার হয়েছে। তো পৃথিবী যদি টিকে থাকে, আবহাওয়া পুরোপুরি নষ্ট হয়ে না যায়, তাহলে আবার বৃষ্টি হবে। কোথাও না কোথাও পানি জমবে। আর যেখানে পানি আছে সেখানে প্রাণেরও সৃষ্টি হবে।

এ কথা মনে হতেই তিনি ফিরে গিয়ে টেবিলের সামনে চেয়ার টেনে বসেন। সিগারেট টানতে টানতে কলম হাতে নিয়ে গল্পের যে অংশটুকু লেখার পর খেই হারিয়ে ফেলেছিলেন তা কালির আঁচড়ে কেটে ফেলেন। আসলে অত শত প্রশ্ন আর জিজ্ঞাসা থাকলে গল্প হয় না। যেখানে প্রাণ নেই, জীবন নেই, তা নিয়ে গল্প হয় কী করে? মানুষ আর প্রকৃতি ছাড়া কোনও গল্পই গল্প হয়ে উঠতে পারে না। সুতরাং গল্পটাকে তিনি অন্যভাবে লিখবেন বলে ঠিক করেন। কিন্তু কাকে দিয়ে গল্পটা কম্পোজ আর কনভার্ট করাবেন সে কথা এখনই ভাবতে চান না। আগে গল্পটা লেখা হোক। পরের কাজ পরে ভাবা যাবে।

(খ)
প্রায় পাঁচ বছর পর ঢাকা এলেন জুলিয়ান সিদ্দিকী। এ সময়ের ভেতর দিয়ে পৃথিবীর অনেক কিছুই বদলের সঙ্গে সঙ্গে ঢাকা শহরেরও পরিবর্তন হয়েছে অনেক। ফ্লাইওভার আর করনা রোগের প্রভাবে শহরের মানুষও অনেকটা বদলেছে মনে হয়। এক সময় শহুরে মানুষগুলো তার পাশের জনকেই মানুষ মনে করতো না। কিন্তু এখন পাশের জনকে খেয়াল করছে। হতে পারে অতিমারি মানুষ জনকে অনেকটাই সভ্য আর ভব্য হতে শিখিয়েছে। মৃত্যু নামক চরম এক বাস্তবতাকে স্বীকার করার মন মানসিকতা থেকেও হতে পারে পাশের জনকে গুরুত্ব দিতে শিখেছে। ছেলে-মেয়েদের উগ্রতা, বখাটেপনা তেমন একটা চোখে পড়েনি। তবে যে ব্যাপারটা তাকে অবাক করেছে বেশি, তা হলো, মানুষের খাওয়ার প্রতি ঝোঁক বেড়েছে আগের তুলনায়। আগের চেয়ে খাবারের দোকান যেমন বেড়েছে, সেই সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে খাদকের সংখ্যাও। আবার এমন হতে পারে যে, দীর্ঘদিন পর গ্রাম থেকে শহরে এসেছেন বলেই ব্যাপারটা তার চোখে লাগছে বেশি।

কোথাও গেলে দু একজন পরিচিত বা আধা পরিচিত মুখ দেখতে পাবেন ভাবতে ভাবতে তার মনে পড়ে কনকর্ড এম্পোরিয়ামের কথা। এক সময়ের নানা রকম পাখ-পাখালি আর জন্তু-জানোয়ারের বাজারের পাশে মাথা তুলে দাঁড়িয়েছে বিশাল সাহিত্যের ভাণ্ডার। ব্যাপারটা ভাবতেও ভালো লাগে। যেখানকার বেজমেন্টে আস্তানা গেড়েছে অনেক প্রকাশনা সংস্থা। শুনেছেন ম্যাজিক লণ্ঠনের আড্ডাও নাকি সেখানেই বসে আজকাল। এ ছাড়া ঢাকা শহরে আর কোথায় কোথায় সাহিত্যের কারবারীরা একত্র হতে পারে তা ঠিক জানেন না তিনি।
দীর্ঘদিন পর ঢাকা এসেছেন বলে, একই গ্রামের মানুষ তার ওপর পাশের বাড়ির গণেশের সঙ্গে দেখা তাকে করতেই হয়। নয়তো তিনি ঢাকা গেছেন আর কামরাঙ্গীরচর গিয়ে তার সঙ্গে দেখা করেননি জানলে কথার খই ফোটাতে বিন্দু মাত্র দেরি করবে না। হাঁটতে হাঁটতে গণেশ বলছিল, ওই যে বড় কইরা বুড়িগঙ্গা লেখা হালকা গোলাপী রঙ্গের বাড়িটা দেখতাছ, অইটা একজন কবির বাড়ি।

- হ, জানি। কবি নির্মলেন্দু গুণ। এলাকার অনেকেই তার বড় দাড়ি-গোঁফ আর চুল দেইখ্যা গুনিন বা কবিরাজও মনে করে। দূর থাইক্যা দেখলে ভয়ও পায় কিছুটা।

জায়গাটার নাম শিমুলতলা। কেউ কেউ তুলাগাছ তলাও বলে। কবরস্থানটা ছাড়িয়ে খানিকটা সামনে এগিয়ে গিয়ে বাঁয়ে ঘুরলেই কবির বাড়ি। বিখ্যাত লোকজন, বিশেষ করে ঢাকা শহরের বিখ্যাত জন অন্যদের খুব একটা পাত্তা দেয় না। অনেকেই ছোটখাট লেখকদের অবজ্ঞার চোখে দেখেন। তাই পারতপক্ষে তিনি বিখ্যাত বা হাফ বিখ্যাতদের ধারেকাছে ভিড়তে সাহস পান না। তাদের পাশে দাঁড়িয়ে ছবি তোলার দীনতা বোধেও আক্রান্ত হননি কখনও। তার মনে হয় পাশে গিয়ে দাঁড়ালে যদি বলে বসেন, ও আচ্ছা আপনি অমুক? আমি তো ঠিক চিনতে পারলাম না!

এর অর্থ তারা নতুনদের ব্যাপারে তেমন একটা খোঁজ খবর রাখেন না। নতুনদের লেখাও পড়েন না। মুষ্টিমেয় কয়েকজনের কথাই তারা জানেন, যারা তাদের সর্বক্ষণ ঘিরে রাখেন। এর বাইরের জগত তাদের কাছে অন্ধকার।

নবাবগঞ্জ পুলিশ ফাঁড়ি যার আরেকটা নাম আছে সেকশন। সেখান থেকে রিকশায় করে নিউমার্কেট এসে নামতেই সব যেন কেমন এলোমেলো মনে হয়। ডানে যাবেন না বাঁয়ে যাবেন বুঝতে পারেন না জুলিয়ান সিদ্দিকী। কোনটাই বা পশ্চিম, কোনটাই বা দক্ষিণ, দুটোর একটিও ঠাহর করতে পারেন না।

আসার পথে সেকশনের ঢালে গড়ে ওঠা মার্কেটের একটি দোকান থেকে দু নাম্বার একটি ক্যাসিও ঘড়ি কিনেছিলেন এক শ টাকায়। তাতে সময় দেখলেন সাতটা চব্বিশ। এক সময় এমন একটি ক্যাসিও ঘড়ি যেমন দামী ছিল, তেমনই লোকজনের পছন্দের তালিকার শীর্ষে ছিল। এখন বলতে গেলে বয়স্ক মানুষের হাতে ঘড়ি তেমন দেখা যায় না। যেমন এক সময় ছেলে-বুড়ো, কামার-কুমার, তাঁতি-জেলে সবার হাতেই ঘড়ি দেখা গেছে। এখন দেখা যায় স্মার্ট ফোন। ঘড়ির মতই খুব অল্প কিছু মানুষের হাতে দেখা যায় বাটন ফোন।

কনকর্ড এম্পোরিয়ামের সামনে ছোট ছোট জটলাগুলোতে কোনও পরিচিত মুখ দেখতে পান না জুলিয়ান সিদ্দিকী। সিঁড়ি বেয়ে বেজমেন্টে গিয়ে বেশ কয়েকটি প্রকাশনীর শো-রুম দেখতে পান। বছর পাঁচেক আগে দু একবার এসেছিলেন বলে এখন ঠিক বুঝতে পারেন না অনুপ্রাণনের শো-রুম বা অফিসটা কোথায়। পরিসর বিস্তৃত নয় বলে কাউকে কিছু জিজ্ঞেস করার প্রয়োজনও বোধ করেন না তিনি। ঘুরতে ঘুরতে দেখেন বিভিন্ন প্রকাশনীর নামাঙ্কিত শো-রুম। মেন গেট দিয়ে ঢুকেই হাতের ডানদিকে অনুপ্রাণনের অফিস দেখতে পান না।

এখানেই একদিন দেখা হয়েছিল কুহকের সঙ্গে। কবি কুহক মাহমুদ। অনুপ্রাণনের সঙ্গে যার ছিল নিবিড় সংযোগ। কুহক নেই। যেন অনুপ্রাণনের সেই আগের সৌরভটাও নেই। যেবার অনুপ্রাণন তার ছোটগল্পের বই করেছিল, সে বছর এসেছিলেন। শো-রুমে দেখা হয়েছিল কবি চৈতি আহমেদের সঙ্গে। এখন একটাই অফিস কাম শো-রুম। তাও সার্টার নামানো। ঠিক আর একটু সামনেই কবিতা পরিষদ লেখা একটি দোকান বা অফিস ঠিক বুঝতে পারেন না জুলিয়ান সিদ্দিকী। সেখানে বসে থাকা লোকজনকেও চিনতে পারেন না। হতে পারে তারা সমকালীন কবি বা লেখক। হতে পারে অন্য কোনও প্রকাশনীর কর্মচারী। আবার এমনও হতে পারে তারই মতো ভবঘুরে কেউ। তা যে কে সে হোক না কেন, তাকে তো আর কেউ চিনতে পারছে না। এটাই মোটামুটি স্বস্তির। কাউকে কেউ না শুধালে বা কুশল-বার্তা না পুছলে এমন কী বা আসে যায়!

একজনকে তিনি শুধালেন, আচ্ছা, অনুপ্রাণনের অফিসটা বন্ধ, শো-রুম না একটা ছিল এখানে?

- হ্যাঁ, এখন ওটাই সব।

হায় কোথায় গেল অনুপ্রাণনের সেই উজ্জ্বলতায় ধাঁধানো দিনগুলো! মনে মনে আক্ষেপ করেন জুলিয়ান সিদ্দিকী।

সেই ভদ্রলোক ফের একবার ইউসুফ ভাই, বলেও কেন জানি থেমে গেলেন।

- ইউসুফ ভাই আজকে হয়তো আসেন নাই, না?

- হয়তো। আজকে দেখিনাই একবারও।

মনেমনে খানিকটা ভেঙে পড়েন তিনি।

আসলে তিনি অনুপ্রাণনে গিয়েছিলেন ইউসুফ ভাইয়ের সঙ্গেই দেখা করতে। আর শামীম তো এমনিতেই সেখানে থাকার কথা। হতে পারে সন্ধ্যার পর অনুপ্রাণনে কেউ আর বসে না। ভেবেছিলেন ইউসুফ ভাইয়ের সঙ্গে দেখা হলে কুশল বিনিময়ের পর বলবেন, ভাই, একটা কাজ-কর্ম থাকলে দেন। বেকারত্ব আর ভালো লাগে না!

কথাগুলো মনে মনে বেশ কয়েকবার ঝালাই করেও নিয়েছিলেন। কিন্তু যাকে বলবেন বলে কথাগুলোকে শানিয়ে এসেছিলেন তাকেই তো পেলেন না।

হতাশ মনে কনকর্ড এম্পোরিয়াম থেকে বের হয়ে ডানে যাবেন না বাঁয়ে যাবেন ঠিক করতে পারেন না তিনি। কাউকে যে জিজ্ঞেস করবেন সে কথাও তার মনে হল না একটিবারের জন্যও। কুমিল্লা যেতে হলে আগে গুলিস্তান যেতে হবে। আর শাহবাগ থেকে গুলিস্তান যেতে সুবিধা। অনেক রকম বাস সার্ভিস আছে। অবশ্য রিকশায় করে তিনি গুলিস্তান চলে যেতে পারতেন। কিন্তু পকেটের অবস্থা বিবেচনা করে হাঁটতে থাকেন। হাঁটতে থাকলেও তিনি বুঝতে পারেন না যে, এলিফ্যান্ট রোডের দিকে যাচ্ছেন নাকি নীলক্ষেতের দিকে?

হাঁটতে হাঁটতে তিনি হঠাৎ মাথা তুলে দেখতে পান নীলক্ষেত স্কুল। আর তখনই তার হুঁশ ফিরে আসে যেন। বুঝতে পারছিলেন, কনকর্ড এম্পোরিয়াম থেকে বের হয়ে হাতের বাঁ দিকে গেলেই এলিফ্যান্ট রোড। তারপর ডান দিকে হাঁটলেই বাটা মোড় পেরিয়ে শাহবাগ পিজি হাসপাতালের গেটে পৌঁছে যেতে পারতেন। কিন্তু এতটা পথ হেঁটে এসে ফিরতি দ্বিগুণ পথ হাঁটতে মন সায় দিচ্ছিল না। অগত্যা পকেট থেকে কিছুটা না খসিয়ে সুবিধা পাবেন না ভেবে, একটি রিকশায় ত্রিশটাকা রফা করে উঠে পড়লেন।

শুধু ঢাকা শহর বলেই নয়, যে কোনও শহর বা গ্রামের রাস্তায় স্থবির হয়ে থাকাটা কারুরই ভালো লাগার কথা নয়। ট্রাফিক জ্যাম এড়িয়ে যেতে তিনি হাঁটতেই পছন্দ করেন। আর যে পথটুকু তিনি হেঁটে যেতে পারবেন সে পথটুকু হেঁটেই যান। রিকশা নিতে ভরসা পান না। টাকায় টাকা নষ্ট, জ্যামে আটকা পড়ে সময়ও নষ্ট।

চারপাশে মানুষ-গাড়ি-রিকশা-সাইকেল-মোটরসাইকেল-সিএনজি অটোরিকশার জট দেখতে দেখতে তিনি ভাবেন, নগরের কী উন্নয়নটা করল সরকার? এত এত ফ্লাইওভারে মানুষের দুর্ভোগ কি কমলো? এখন চালু হতে যাচ্ছে মেট্রোরেল। এতে ঢাকার মানুষের কোন উপকারটা হবে কে জানে। তার মতে সরকারের উচিত রেল ব্যবস্থাকে উন্নত করা। বাস, টেম্পো আর লেগুনা দিয়ে এর সমাধান অসম্ভব। প্রতিটি জেলা থেকে কতটা দ্রুত অন্য জেলায় যাওয়া যায় সে হিসেব কষে রেল রাস্তা বৃদ্ধি করা। বাস-ট্রাক মালিকদের কাছে মানুষ প্রায়ই জিম্মি হয়ে যায়। কখনও বা পুরোটা দেশই তাদের হাতে জিম্মি হয়ে পড়ে। সরকার তাদের অন্যায় আবদার মানতে বাধ্য হয়। যা এক ধরনের দেশদ্রোহীতার সামিল। যাদের দাপটে দূরপাল্লার আন্তঃজেলা সরকারি বাস চলতে পারে না।

যেবার তিনি কোলকাতা গিয়েছিলেন, সেখানকার শেয়ালদা রেলস্টেশনে দেখেছেন শত শত মানুষ রেলে আসা যাওয়া করছে। শহরে গিয়ে নটা পাঁচটা অফিস সেরে আবার ফিরে আসছে সূর্য ডোবার আগে আগে। কিন্তু বাংলাদেশের মানুষ নরসিংদী, টাঙ্গাইল, জয়দেবপুর, গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ থেকে ট্রেনে এসে ঢাকায় অফিস করে ফিরতে পারবে না সময় মত। বাস-মালিক আর রেল-কর্মচারি দুয়ে মিলে কোনও অদৃশ্য সিন্ডিকেট তৈরি করেছে কিনা কে জানে। কোনোও দিন কোনও ট্রেনের শিডিউল ঠিক থাকে না। অথচ মানুষগুলো যদি সময় মতো ট্রেনে আসা যাওয়া করতে পারতো তাহলে কতগুলো টাকা তাদের বেঁচে যেতো। সে টাকায় আরও কিছুটা ভালো থাকা যেতো অথবা ছোটোখাটো একটা সঞ্চয় গড়ে উঠতে পারতো।

রাত দশটা নাগাদ শাহবাগে এসে রিকশা থেকে নামলেন জুলিয়ান সিদ্দিকী। তার মনে হচ্ছিল যদি হেঁটে আসতেন তাহলে হয়তো অতটা সময় লাগতো না। রিকশা বিদায় করে দিয়ে তিনি রাস্তা পেরিয়ে গুলিস্তানগামী বাসের জন্য অপেক্ষা করতে থাকেন। এখান দিয়েই আগে মিরপুর মোহাম্মদপুরের বাসগুলো গুলিস্তানের দিকে যেতো। কিন্তু অনেকটা সময় পেরিয়ে গেলেও কোনও বাসের দেখা পাওয়া যায় না। আস্তে আস্তে অপেক্ষমান লোকজনের ভিড় বাড়তে থাকে। কয়েকজন মোটরসাইকেল আরোহী ভ্রূ নাচিয়ে ইশারায় জানতে চেয়েছে যাবেন নাকি? তিনিও নিঃশব্দে মাথা নেড়ে না করে দিয়েছেন। মনেমনে তাদের তিরস্কার করে বললেন, লাখ টাকা দামের বাইক নিয়ে যদি রিকশা বা অটোরিকশাঅলাদের মতো প্যাসেঞ্জার ডাকিস তো এত দামী বাহন আর কুলীন পেশার মান কোথায় নামে? প্যাসেঞ্জার এসে জিজ্ঞেস করবে ব্যাটারা যাবি কি না। চুপচাপ বসে থাক না জমিদারী ভাব নিয়ে। নিজের মান-সম্মান বা দাম না রাখতে পারিস, দামী বাইকটার অসম্মান করিস না। এই দেশে বাইক কিনতে কারও কারও জমি বিক্রি করতে হয় এ কথা কে না জানে!

হঠাৎ করেই ভোজবাজির মতো একটি প্রায় খালি মিনিবাস এসে থামতেই লোকজনের ভেতর হুড়োহুড়ি লেগে যায় কে কার আগে উঠবে। ভিড়ের স্রোতে জুলিয়ান সিদ্দিকীও বাসে উঠে পড়েন কোনও শক্তি খরচ না করেই। কিন্তু সিট খালি না পেয়ে দাঁড়িয়ে রইলেন। এরই মধ্যে হেল্পার চিৎকার করে বলছিল, মহিলা কেউ উঠবেন না, সিট নাই!

তবু কালো বোরখা পরা একজন উঠে পড়েন বাসে। কোনও সুবিধা দেখতে না পেয়ে দরজার পাশে দাঁড়িয়ে থাকেন। ভিড়-ভাট্টা আর দাঁড়ানো যাত্রীদের ধাক্কাধাক্কি থেকে বাঁচতে জুলিয়ান সিদ্দিকী খানিকটা পেছনের দিকে সরে গিয়ে রড ধরে দাঁড়িয়ে থাকেন। সামনের দিক থেকে পেছনের দিকে যাত্রীদের চাপ বাড়ে। কিন্তু লোকজন বেশিরভাগই পেছনে আসতে চায় না। যে কারণে দরজার দিকেই চাপটা থাকে বেশি।

বাসটাতে প্রায় গাদাগাদি অবস্থায় যাত্রী উঠেছে। এরই মধ্যে বাস চলতে আরম্ভ করেছে। বাসটা ইঞ্জিনিয়ার্স ইন্সটিটিউট পেরিয়ে মৎস্য ভবনের কাছাকাছি এসেছে কি আসেনি হঠাৎ মহিলাটিকে বলতে শোনা যায়, গায়ের ওপর পড়ছেন কেন?

কন্ডাক্টর হয়তো রেগেই ছিল, মহিলার অভিযোগ শুনে কর্কশ কণ্ঠে বলে ওঠে, এমন ইট্টু-আট্টু লাগবোই! সিট নাই কওনের পরও উঠছেন ক্যা?

জুলিয়ান সিদ্দিকী বিরক্ত হন কন্ডাক্টরের আচরণে। বলেন, আরে বাবা, এমন শক্ত করে বলছ কেন? তার প্রয়োজন ছিল বলেই তো এভাবে উঠেছে। তুমিও একটু দেখে শুনে চল।

- আপনে বুঝবেন না আঙ্কেল! এরা ভিড়ের ভিত্রে উঠবো আবার টাচ লাগলেই চিল্লাইবো। আমি ভাড়া কাটমু না হ্যার খেয়াল রাখমু আপনেই কন?

- সেটা ত আমিও বুঝি!

এতটুকু বলে, অন্য দিকে মুখটা ঘুরিয়ে নেন তিনি। পকেটে যে কটা টাকা অবশিষ্ট আছে, পকেটমারের ভয়ে প্যান্টের ওপর দিয়ে টাকাগুলোকে শক্ত মুঠিতে ধরে রাখেন।

হাইকোর্টের কাছাকাছি আসতেই ফের কন্ডাক্টরের রাগী কণ্ঠস্বর শোনা যায়, হাফ-ভাড়া দিলে কার্ড দেখান। স্টুডেন্টরা কার্ড না দেখাইলে ফুল-ভাড়া দিতে হইবো।

জুলিয়ান সিদ্দিকী দেখলেন ছেলেটি হাতের স্মার্ট ফোনে কিছু একটা দেখতে ব্যস্ত। সে অবস্থাতেই আবার বলে, আমি কার্ড ছাড়াই যামু!

স্টিয়ারিং হুইল ঘোরাতে ঘোরাতে ড্রাইভার ছেলেটির উদ্দেশ্যে বলে, কার্ড ছাড়া গেলে ফুল ভাড়া দেন!

এবার ছেলেটিও রাগী কণ্ঠে বলে, দিমু না কইছি, দিমু না!

জুলিয়ান সিদ্দিকীর মনে হয়, এই অপদার্থ ছেলেটি সিট ছেড়ে দিয়ে মহিলাটিকে বসার সুযোগ দিতে পারে। অথচ ভাড়া না দিয়েই কতটা দাপট দেখাচ্ছে। তিনি এবারও চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকেন। ইচ্ছে হয় ছেলেটির বাবা-মাকে সামনে পেলে একবার জিজ্ঞেস করতেন, ছেলেটা বাইরে কী কী করে বেড়ায় তার খোঁজ রাখো তোমরা?

(গ)
গুলিস্তান ভবনের সামনে এসে বাস থামতেই নেমে পড়েন জুলিয়ান সিদ্দিকী। এতক্ষণ বাসের ভেতর গরমে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছিলেন প্রায়। অক্টোবরের শীতল হাওয়া গায়ে লাগতেই মনটা বেশ ফুরফুরে হয়ে ওঠে। হাত পা খেলিয়ে নিয়ে খানিকটা আয়েশি ভঙ্গীতে হাঁটতে থাকেন। ফ্লাইওভারের গোঁড়ায় যেখান থেকে কুমিল্লা যাওয়ার সরকারি বাসগুলো ছাড়ে, সেখানে কোনও বাস দেখতে পান না। খানিকটা ইতস্তত করে যাত্রাবাড়ি চিটাগাং রোডের দিকে যায় এমন একটি বাসে উঠে পড়েন। ভাবেন, সায়দাবাদ টার্মিনালে গেলে কোনও একটা ব্যবস্থা হয়ে যাবে।

রাতের যাত্রী কম থাকার কথা থাকলেও রাজধানী থেকে শহরতলীতে যাওয়ার যাত্রী ভালোই থাকে। খুব অল্প সময়েই বাসটি যাত্রীতে প্রায় ঠাসাঠাসি হয়ে যায়। সায়দাবাদ নামবেন বলে জুলিয়ান সিদ্দিকী দরজার কাছাকাছি জানালার সঙ্গেই একটি সিটে বসেছেন। বাইরে চমৎকার হাওয়া থাকলেও বাসের ভেতর তেমন একটা স্বস্তি পাচ্ছিলেন না। দুপাশের সিটের মাঝামাঝি দাঁড়ানো যাত্রীদের কারণেই হয়তো এক জানালা দিয়ে হাওয়া ঢুকে আরেক জানালা দিয়ে বেরিয়ে যেতে পারছে না। বাধার প্রাচীর থাকলে জগতের সব গতিই স্তিমিত হয়ে পড়ে। কখনও বা রুদ্ধ।

বাস থেকে সায়দাবাদ নামতেই কয়েকজন নানা বয়সের লোক ছুটে আসে। বলে, কই যাইবেন ছার? ভালো গাড়ি আছে। চিটাগাং গেলে চাইশশ ট্যাকা দিলেই হই যাবে।

আরেকজন বলে, ফেনী, সোনাইমুড়ি, লক্ষ্মীপুর। আবার কেউ বা সিলেটের সংবাদও বলে। কিন্তু তিনি কুমিল্লা যাবেন শুনে দলটির মনের জোর বা আগ্রহ অকস্মাৎ খসে পড়ে যেন। সেই সঙ্গে যাত্রী হিসেবে তাদের কাছে যেন গুরুত্ব হারিয়ে ফেলেন নিমেষেই। হয়তো আশাহত হয়েই অন্য যাত্রী ধরতে এগিয়ে যায় তারা।

খানিকটা অপেক্ষা করে তিনি এগিয়ে যান সামনের দিকে। পকেটে যা টাকা আছে তাতে ভালো বাসে চড়া হবে না। সস্তার লক্কড়-ঝক্কর মার্কা বাসে চেপেই যেতে হবে তাকে।

চট্টগ্রামের একটি বাস দেখতে পেয়ে আরও কিছুটা এগিয়ে যান তিনি। আসার সময় এমন একটি বাসে চড়েই এসেছিলেন। যেটি তুলনামূলক ভাবে অন্যদের তুলনায় ভাড়াটা অনেক কম নিয়েছিল। বাসের ছোকরা-বয়সের হেল্পার ছেলেটি বলল, যাইবেন কই আঙ্কেল?

- কুমিল্লা।

- উঠেন।

- ভাড়া নিবা কত?

ছেলেটি যা বলল জুলিয়ান সিদ্দিকী আসার পথে ভাড়া যা দিয়েছিলেন তা বলতেই ছেলেটি সানন্দে বলে, উঠেন উঠেন। পিছনের দিকে যাইয়েন না।

বাসের ভেতরের দিকে যেতে যেতে তিনি ভাবেন যে, দিনের চেয়ে রাতের ভাড়া কিছুটা বেশিই হয় হয়তো। একে তো যাত্রী কম থাকে, তার ওপর যারা যাত্রী তাদের যাওয়াটা বেশি জরুরি বলেই হয়তো বাসের লোকজন ভাড়াটা কমাতে চায় না।

দেখেশুনে বাসের মাঝামাঝি অংশে জানালা ঘেঁষে একটি খালি সিট দেখে বসে পড়েন তিনি। বাইরের শীতল হাওয়া জানালা দিয়ে এলেও ধুলো আর তেলচিটে একটি গন্ধ পাচ্ছিলেন বলে অস্বস্তি হচ্ছিল বেশ। কুমিল্লা থেকে ঢাকা আসা, ঘোরাঘুরি, এমন কি এ অবধি আসা পর্যন্ত মাস্ক ব্যবহারের প্রয়োজনীয়তা বোধ করেননি। কিন্তু এখন যেন অনেকটা বাধ্য হয়েই তাকে মাস্কটা পড়তে হলো।

মাস্কে মুখ ঢেকে নিয়ে জানালা দিয়ে বাইরের দৃশ্য দেখতে দেখতে বাসটি ঢাকা ছেড়ে যাওয়ার জন্য অপেক্ষা করতে থাকেন। কিন্তু বেশ কিছুটা সময় পার হয়ে গেলেও বাস ছাড়ার কোনও রকম লক্ষণ প্রকাশ পায় না। পেছন থেকে একজন যাত্রী চেঁচিয়ে ড্রাইভারের উদ্দেশ্যে বলে, ও ভাই, গাড়ি ছাড়বা কখন?

ড্রাইভার জানালা দিয়ে মাথা গলিয়ে পানের পিক ফেলে জানায়, ভাই, আর দশটা মিনিট সবুর করেন!

ঠিক তখনই বোরখাবৃত আর নেকাবে মুখ ঢাকা এক নারী উঠে আসেন। সামনে পেছনে তাকিয়ে বেশ কটি খালি সিট দেখতে পেলেও তিনি জুলিয়ান সিদ্দিকীকে বললেন, এখানে বসা যাবে? কেউ আছে?

নেকাবের আড়াল থেকে বেরিয়ে আসা কথাগুলোকে কেমন যান্ত্রিক শোনায়। জুলিয়ান সিদ্দিকী বললেন, না, না। আপনি বসেন, কেউ নাই!

হিজাব নেকাবের এক চিলতে ফাঁক দিয়ে চশমার আড়ালে দৃশ্যমান চোখ দেখে কারও বয়স ঠাহর করা দুষ্কর। যেমন কণ্ঠস্বর শুনেও কারও বয়স আন্দাজ করা কঠিন।

নারীটি ধন্যবাদ জানিয়ে পিঠ থেকে ব্যাগ নামিয়ে ওপরের লাগেজ কেরিয়ারে উঠিয়ে রাখতে রাখতে আবার বলেন, গাড়ি কতক্ষণে ছাড়বে জানেন কিছু?

- বলেছিল তো মিনিট দশেকের কথা, কিন্তু অলরেডি পঁচিশ মিনিট পার হয়ে গেছে।

- ওহ, এও এক সমস্যা। এদের কথায় আর কাজে কোনও মিল পাবেন না!

বলে, পাশে বসে হিজাব আর বোরখা টানাটানি করে ঠিক করতে করতে থাকেন মহিলা।

- তাই তো দেখছি।

বলে, জুলিয়ান সিদ্দিকী ফের জানতে চান, যাবেন কোথায়?

মহিলা হঠাৎ বিব্রত হয়ে বলেন, আমাকে আপনি করে বলবেন না তো! আমার বয়স অত না। আমি চিটাগাং যাবো।

- যার চোখ ছাড়া আর কিছুই দেখা যায় না তার বয়স তেমন গুরুত্বপূর্ণ না। সে বুড়ি না ছুকরি তাও কোনও ব্যাপার না। অতটকু দেখে কারও বয়স বোঝা যায়?

- দেখতে জানলে অবশ্যই যায়।

- যেমন?

কৌতূহলী হয়ে তাকান জুলিয়ান সিদ্দিকী।

- বয়স্ক মেয়েদের চোখদুটো বেশ পাকা আর শুকনো দেখায়। দুপাশে চামড়া কুঁচকে থাকে। কম বয়স্ক মেয়েদের চোখ দুটোও কাঁচা আর সজীব দেখবেন। টসটসে!

- কালি লাগিয়ে রাখলে তো সেটা বোঝা যাবে না।

- বোঝা যাবে। আর ওটা কালি নয়, কাজল।

- একই হলো। ছোট বেলায় মা চাচি আর খালাদের দেখতাম সর্ষের তেলে ভেজানো সলতে পুড়িয়ে পেতলের কাজলদানীতে কাজল ওঠাতেন। আর তোমার চোখও তো সজীব বা টসটসে নয়।

- আমার কথা আলাদা। বেশিরভাগ সময় চশমা পরে থাকলে চোখের সজীবতা নষ্ট হয়ে যায়। দু চোখের নিচের দিকটাও বেশ খানিকটা কালচে দেখায়।

- হতে পারে।

বলে, মেনে নেওয়ার ভঙ্গী করে জানালা দিয়ে বাইরে দৃষ্টি ফেরান জুলিয়ান সিদ্দিকী। তারপর মেয়েটির দিকে ফিরে বলেন, মেয়েদের চোখের দিকে বিশেষ করে অচেনা কোনও মেয়ের চোখের দিকে বেশিক্ষণ তাকিয়ে থাকাটা এক রকম অসভ্যতা।

- তা ঠিক আছে। কিন্তু সবাই তো একই রকম সভ্য-ভব্য নয়।

- হুম।

হঠাৎ করে প্রসঙ্গ পালটাতেই যেন তিনি আবার বলেন, রাতের বেলা ট্রেনে যেতে পারতে। নয়তো নাইট কোচে যেতে পারতে। এই বাস চিটাগাং পৌঁছুতে পৌঁছুতে তো সকাল হয়ে যাবে।

- চেষ্টা যে করিনি তা নয়। ট্রেনের টিকেট পাইনি। মেইল ট্রেনে গেলে বাসের চেয়েও দেরি হবে। আর নাইট-কোচে আমি ভরসা পাই না। অত জোরে চালায় যে, আমার ভয় হয়। অত ভয় নিয়ে নাইট-কোচে যাওয়ার চেয়ে লক্কর মার্কা বাস অনেক সেফ মনে করি।

হঠাৎ বাসটি দুলে উঠে হালকা চালে সামনে আগাতে থাকে। চারদিকে একবার চোখ বুলিয়ে নেন জুলিয়ান সিদ্দিকী। সব সিটেই কমবেশি যাত্রী আছে। মেয়েটির সঙ্গে কথায় কথায় অত কিছু খেয়াল করেননি। বাসটা চলতে চলতে সায়দাবাদ টার্মিনাল ছেড়ে বেরিয়ে আসে। ঠিক তখনই মেয়েটি বলে ওঠে, একটা কথা বলি, কিছু মনে করবেন না তো?

- কী কথা? আগে শুনিই না!

বলে, মেয়েটির চোখের দিকে এবার ভালো করে তাকান জুলিয়ান সিদ্দিকী। মনে মনে ভাবলেন, মেয়েটি সত্যিই মেয়ে। বয়স একুশ-বাইশের কাছাকাছি।

মেয়েটি ফের বলে ওঠে, বাসে উঠতে উঠতেই আপনার ওপর আমার চোখ পড়েছিল। আর তখনই মনে হয়েছে আপনাকে আমি চিনি। অনেকবার দেখেছি।

- তাই নাকি?

বলেই, শব্দ করে হেসে ওঠেন জুলিয়ান সিদ্দিকী।

তারপর বলেন, এটা নতুন কী এমন! এ কথা আমাকে প্রায়ই শুনতে হয়। একবার গাজীপুর পেরিয়ে শ্রীপুর গেছি। ফিরে আসার সময় ময়মনসিং থেকে আসা একটি বাসে উঠেছি। তো কী হলো, পাশের একজন বয়স্ক লোক হঠাৎ বলে উঠলেন, আফনেরে ত সিনামা টিফিত অনেক দ্যাহা যায়। আছেন কিরম? শুটিং-মুটিং আছিন বুঝি?

বলতে বলতে আবার হেসে ওঠেন জুলিয়ান সিদ্দিকী। তারপর বলেন, লোকটি আসলে অভিনেতা ফারুক বা আলমগির এ দুজনের কারু সঙ্গে আমাকে গুলিয়ে ফেলেছে। আমার চেহারার সঙ্গে কী এমন মিল তাদের বুঝতে পারি না।

- আমার ব্যাপারটা কিন্তু তেমন কিছু নয়। ফেসবুকে আপনাকে দেখেছি। গত সপ্তাহেও আপনার ছবি দেখেছি। ফেসবুকে আছেন? থাকলে আপনার আইডির নামটা বলতে পারবো আমি।

- হুম ফেসবুকে আছি।

- তাহলে আমি ঠিক ছিলাম। বেশ কয়েকবার রিকোয়েস্ট পাঠিয়েছিলাম। কোনোবারই একসেপ্ট করেননি।

- হতে পারে। কেউ আমাকে ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট পাঠালে, আগে তাদের প্রোফাইল দেখি। ফ্রেন্ড-লিস্ট দেখি। ফেসবুকে বা ব্যক্তিগত ভাবে তাদের এক্টিভিটিজ দেখি। মনে না ধরলে বা প্রোফাইল লক থাকলে ডিলিট করে দেই। তোমার ক্ষেত্রেও হয়তো তেমন কিছু একটা হয়ে থাকবে।

- হতে পারে। আপনি তাহলে সন্দেহ-বাতিক মানুষ।

- আসলে ব্যাপারটা তা নয়। কিছু মন্দ লোক আছে, যারা ফ্রেন্ড-লিস্টে অ্যাড হয়েই আজেবাজে লিংক পাঠাতে থাকে। তাই যাকে তাকে অ্যাড করতে ভয় পাই। তা ছাড়া আমি মেধাবীদের পছন্দ করি।

- এবার কিন্তু আমাকে একসেপ্ট করতেই হবে!

- কিন্তু কী করে?

- মানে? বুঝলাম না!

- আমার না আছে স্মার্ট-ফোন, না আছে ল্যাপটপ। ভার্চুয়াল জগত থেকে আমি এখন অনেক দূরে।

- আজ না হোক অন্য দিন ফোন বা ল্যাপটপ ত আপনার হবেই, তখন দেখবেন। তা ছাড়া লেখালেখি কি স্মার্ট-ফোন বা ল্যাপটপ ছাড়া হয় না?

- হবে না কেন? কাগজে কলমে তো লিখিই। কিন্তু সেগুলো কম্পোজ করা হয়ে ওঠে না। কোথাও লেখা পাঠাতে পারি না। ফেসবুকিং, ব্লগিং বন্ধ।

- তাহলে তো হারিয়ে যাবেন।

মেয়েটি যেন হাহাকার করে ওঠে।

জুলিয়ান সিদ্দিকী মেয়েটির দিকে তাকিয়ে মিটিমিটি হাসছিলেন। বললেন, হারাবো কেন? যেটুকু লিখেছি তাতে চলবে না? লেখালেখি তো ঢের করেছি। সেগুলোর সব যদি আবর্জনা না হয়ে থাকে, তো কেউ না কেউ মনে রাখবে। আর লেখার নামে যদি সাহিত্যের আঙিনায় আবর্জনা বাড়িয়ে থাকি, তাহলে আমার হারিয়ে যাওয়াই উচিত। নাকি অনুচিত? জোর করে বা চালাকি করে কোথাও ঠাঁই পাওয়া যায় না। আর কোনও ভাবে যদি ঠাঁই হয়েও যায় তাহলে তা মানুষের মনে ঠাঁই পায় না। যেমন ইসরাইল নামের অতি চালাক রাষ্ট্রটি। মন থেকে কেউ তাকে পছন্দ করে এমনটা আমার জানা নেই। যদিও কেউ পছন্দ করে, তাহলে সেটা ভান। স্বার্থ উদ্ধারই তার মূল উদ্দেশ্য।

- আজকাল টাকার জোরে, লবিঙের জোরে অনেক কিছুই হয়ে যায়।

- তা হয়তো হয়। কিন্তু সে সবের স্থায়িত্ব বেশি হয় না।

- তাও আজকাল সম্ভব!

- হলে হোক। যারা পারে তারা করুক! আমার সাধও নেই সাধ্যও নেই।

কথাগুলো বলার সময় তিনি ভেতরকার উষ্মা গোপন রাখতে পারেন না।

হঠাৎ কানে বাজে বাসের হেল্পার চেঁচিয়ে বলছে, কুমিল্লা বিশ্বরোড, আলেখারচর থাকলে আসেন!

হঠাৎ দাঁড়িয়ে পড়ে জুলিয়ান সিদ্দিকী বলেন, স্টেশন এসে গেছে। আমাকে এবার নামতে হবে।

- আপনি এখানেই নেমে যাবেন?

বলতে বলতে, মেয়েটি উঠে জায়গা করে দেয়।

- হ্যাঁ। আমাকে এখানেই নামতে হবে।

জুলিয়ান সিদ্দিকী দরজার দিকে কাঁপা কাঁপা এলোমেলো পদক্ষেপে এগিয়ে যান। সতর্কভাবে বাসের হ্যান্ডেল ধরে নেমে পড়েন রাস্তায়।
হঠাৎ বাসের জানালায় মুখ বাড়িয়ে মেয়েটি বলে, আপনার ফোন নাম্বারটাও পেলাম না!

কিন্তু জুলিয়ান সিদ্দিকী কিছু বলার আগেই বাসটি গর্জন করে উঠে চলতে আরম্ভ করে। মেয়েটি আরও কি কি বলে তার কিছুই তিনি শুনতে পান না। শুধু দেখতে পান অন্ধকার হাইওয়ের একটি বাসের জানালা দিয়ে নেকাবে ঢাকা চশমা পরিহিত একটি মুখ তার দিকেই ফিরে আছে।

(সমাপ্ত)

১নভেম্বর, ২০২১
কামরাঙ্গীরচর, ঢাকা।
সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে মে, ২০২৩ রাত ১:৫৭
৩টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ফখরুল সাহেব দেশটাকে বাঁচান।

লিখেছেন আহা রুবন, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ৯:৫০





ফখরুল সাহেব দেশটাকে বাঁচান। আমরা দিন দিন কোথায় যাচ্ছি কিছু বুঝে উঠতে পারছি না। আপনার দলের লোকজন চাঁদাবাজি-দখলবাজি নিয়ে তো মহাব্যস্ত! সে পুরাতন কথা। কিন্তু নিজেদের মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ হচ্ছে।... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। প্রধান উপদেষ্টাকে সাবেক মন্ত্রীর স্ত্রীর খোলা চিঠি!

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১০:০৩




সাবেক গৃহায়ণ ও গণপূর্তমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেনকে মুক্তি দিতে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে খোলা চিঠি দিয়েছেন মোশাররফ হোসেনের স্ত্রী আয়েশা সুলতানা। মঙ্গলবার (২৯... ...বাকিটুকু পড়ুন

কেমন হবে জাতীয় পার্টির মহাসমাবেশ ?

লিখেছেন শিশির খান ১৪, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১০:৫৬


জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে বিক্ষুব্দ ছাত্র জনতা আগুন দিয়েছে তাতে বুড়ো গরু গুলোর মন খারাপ।বুড়ো গরু হচ্ছে তারা যারা এখনো গণমাধ্যমে ইনিয়ে বিনিয়ে স্বৈরাচারের পক্ষে কথা বলে ,ছাত্রলীগ নিষিদ্ধ হওয়াতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

দ্বীনদার জীবন সঙ্গিনী

লিখেছেন সামিউল ইসলাম বাবু, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১২:১৩

ফিতনার এই জামানায়,
দ্বীনদার জীবন সঙ্গিনী খুব প্রয়োজন ..! (পর্ব- ৭৭)

সময়টা যাচ্ছে বেশ কঠিন, নানান রকম ফেতনার জালে ছেয়ে আছে পুরো পৃথিবী। এমন পরিস্থিতিতে নিজেকে গুনাহ মুক্ত রাখা অনেকটাই হাত... ...বাকিটুকু পড়ুন

জাতির জনক কে? একক পরিচয় বনাম বহুত্বের বাস্তবতা

লিখেছেন মুনতাসির, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৮:২৪

বাঙালি জাতির জনক কে, এই প্রশ্নটি শুনতে সোজা হলেও এর উত্তর ভীষণ জটিল। বাংলাদেশে জাতির জনক ধারণাটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ, যেখানে একজন ব্যক্তিত্বকে জাতির প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে মর্যাদা দেওয়া হয়। তবে পশ্চিমবঙ্গের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×