কাল বুয়েটের পরিচিত একজনের সাথে কথা হচ্ছিল। তার মতে, নারী অনেক কাজ করে, যেমন যারা গৃহিনী তারা রান্না-বান্না, ঘরের কাজ, বাচ্চাকে স্কুলে নেয়া, বাজার করা, বিল দেয়া সবই করে। সমস্যা নাকি শুধু এটা যে তারা অবান্তর বক্তব্য দেয় বেশি। সে আরও বলল, নারী হল স্রষ্টার বাঁকা সৃষ্টি। স্রষ্টা নাকি ইচ্ছেকৃতভাবে বাঁকা করে নারীকে সৃষ্টি করেছেন, এটা তার হিকমত।
অনেক মানুষই এমনটাই মনে করে থাকেন। তর্কের খাতিরে ধরে নিলাম তার কথা ঠিক। তার মানে কি এটা যে স্রষ্টা যাকে অন্ধ করে সৃষ্টি করেছেন তার অন্ধত্ব নিয়ে আমরা প্রতিনিয়ত উপহাস করব অথবা খোঁচাব?
আর তার কথাগুলো মানার কোন কারণ দেখছি না। প্রথমত, বেশিরভাগ গৃহিনীই যারা আমাদের মায়ের বয়সী দেখা গেছে তারা তাদের সময়ে শিক্ষার অধিকার থেকে বঞ্চিত হয়েছে। অবান্তর কথা যদি বলেও থাকে সেটা অযৌক্তিক কিছু নয়। নারী সঠিকভাবে শিক্ষার সুযোগ পেলে আর স্বাভাবিক ভাবে বেড়ে উঠতে পারলে যে কি হতে পারে তার উদাহরণ মার্গারেট থ্যাচার, বেগম রোকেয়া, কিংবা ড. নীলিমা ইব্রাহীম। তারা কোন অবান্তর কথাটি বলেছিলেন বলে আপনার মনে হয়? নাকি তারা মানুষকে ভালবাসতে শিখিয়েছিলেন আর সংগঠিত করেছিলেন দেশপ্রেমকে? এরকম হাজারও উদাহরণ আছে।
আমাদের সমস্যা হল, আমরা Stereotyping পছন্দ করি। কোন এক ব্যক্তির দোষকে আমরা তার সগোত্রের দোষ বলে ধরে নেই। যেমনটা কয়েকটা নারীর ব্যাপারকে পুরো নারী জাতির উপর চাপিয়ে দিয়ে বলি, "নারী মাত্রই খারাপ"।
আসল কথা হল, যতদিন পর্যন্ত শিক্ষিত মানুষরা নারীকে তার প্রাপ্য সম্মানটুকু দিতে না শিখছে, সূর্য পূর্ব দিকে উঠার মতই সত্য যে ততদিন অশিক্ষিতদের মধ্যে মেয়েভ্রুণ হত্যার প্রবণতা অথবা ছেলে সন্তানের আশায় একের পর এক বাচ্চা নেয়ার প্রবণতা বন্ধ হবে না। প্রথমটি অমানবিক, আর পরেরটা জনসংখ্যা বৃদ্ধির অনেক বড় কারণ।
আর নারীর এ সম্মান অর্জনের প্রধান ফ্যাক্টর হল নারী শিক্ষা।
[বি. দ্র. এখানে সমানাধিকারের প্রসঙ্গ তুলে অযথা ত্যানা না পেঁচানোর অনুরোধ রইল।]