সপ্তাহখানেক হয় গোসল করা হয় না আলী মোকাদ্দমের। পুরাতন অভ্যাস আবার নতুন করে জেগে উঠছে। বিদেশি সাহেবদের খেদমতে একসময়তো দিন আর রাত গুজার হয়ে যেত গোসল ছাড়াই। বড় বড় সাহেবরা সঙ্গীসহ আসতেন গাড়ী নিয়ে, সপ্তাহখানেক আরাম করতেন। তারপর তাদের বিদায় দিয়ে গোসলখানায় ঢুকে পরতেন আলী মোকাদ্দম। আহা কি সব দিন ছিল! কত আয়োজনই না করতেন সাহেবদের জন্য। গোসল করার সময়টুকুও ছিল না।
মধ্যরাতে আশেপাশের গ্রামে গিয়ে গণিমত ধরে এনে সাহেবদের আপ্যায়ন করতে হত। ভালো গণিমতের মাল পেতে সাহেবরা পা রাখতেন আলী মোকাদ্দমের আখড়ায়। আলী মোকাদ্দমের এ যশ পশ্চিম পাকিস্তান পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়েছিল। একবার তো তিনি সংবাদ পেয়েছিলেন ভারতীয় দালালদের মেরে এ দেশে পাকিস্তানি শাসন রক্ষা করতে পারলে উপমহাদেশের সবচেয়ে বড় ফাইভ স্টার হোটেল তার খেদমতে নির্মিত হবে। সে থেকে আলী মোকাদ্দমের রাতের ঘুম হারাম। সাহেবদের খেদমতের গোলাম আলী মোকাদ্দম ইসলাম কায়েম করতে গণিমত ধরে এনে সাহেবদের খুশি করাতে ব্যস্ত হয়ে পড়লেন।
শরীর কি আর সাহেবদের একলার? মাঝে মাঝে দু'চারটা গণিমত যে চেখে দেখেননি তা কিন্তু নয়। এমনও তো হয়েছে যে এরপর পাঁচদিন গোসলও করা হয়নি। কিন্তু গোসলতো ফরজ। তাতে কি? ইসলামের জন্য সবই জায়েজ আছে। অবুঝ মেয়েগুলো যদি ধার্মিক হত তাহলে নিজেরাই সাহেবদের খেদমতে হাজির হয়ে যেত। সব মুনাফিক ভারতীয়দের দালাল।
কিন্তু এ কি হল! আরেকটু হলেই তো ইসলাম রক্ষা হয়ে যাচ্ছিল দেশে। হঠাৎ ভারতীয় দালালগুলো ক্ষেপে উঠল। আর কিভাবে যেন একের পর এক সব নিঃশেষ হয়ে গেল। আলী মোকাদ্দম নাম পাল্টিয়ে লুকিয়ে ছিলেন কিছুদিন। কিন্তু না কিছুকাল পরেই আশীর্বাদ হয়ে আসলেন এ দেশেরই সাহসী পুরুষ মুজিব। তিনি সাধারণ ক্ষমা দিয়ে দিলেন। অথচ আলী মোকাদ্দমের ধারণা ছিল ভারতীয় দালালরা এত সহজে হয়ত তাকে ছেড়ে দিবে না। কি ভুলটাই না করেছিলেন আলী মোকাদ্দম এটা ভেবে! মুজিব সাহেব ভালো লোক ছিলেন বৈকি। তারপর কারা যেন মুজিব সাহেবকে হত্যা করল। আলী মোকাদ্দম বুঝলেন, আল্লাহর গজব শুরু হয়ে গেছে। ইসলামের তলে না গিয়ে তিনি হিন্দুদের সাথে রাষ্ট্র কায়েমে নেতৃত্ব দেয়ায় খোদার পক্ষ থেকে গজব পরছে। আবার নতুন করে আলী মোকাদ্দম স্বপ্ন দেখছিলেন এ দেশে ইসলাম কায়েমের।
এরপর জিয়াউর রহমান নামের এ দেশেরই এক সাহেব এসে আলী মোকাদ্দেমসহ আরও অনেক লোকের পূনর্বাসনের ব্যবস্থা করে দিলেন। কিন্তু বড়ই আচানক ব্যাপার হল, সে সময় ভারতীয় দালালদের যুদ্ধের সেক্টর কমান্ডারসহ বিভিন্ন তথাকথিত মুক্তিযোদ্ধা ভারতীয় দালালরা একের পর এক খুন হচ্ছিল! কাউকে আবার বিনা কারণে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে দিলেন স্বয়ং দেশপ্রধানই। আলী মোকাদ্দম এইবার নিশ্চিত হলেন, নাহ্ এ তো পুরাই খোদার গজব! গণিমত সাপ্লাই দিয়ে ইসলাম কায়েম করার লক্ষ্যে যে পূণ্যের কাজ আমি করে এসেছি তার উত্তম জাজা আমি পাবই।
তারপর কত কিছু হয়ে গেল! ভারতীয় দালালদের গুষ্ঠী খোদার গজবে ক্ষমতার লোভে পরে গেল। সেই সুযোগের সদ্ববহার করেছিলেন বলেই না আলী মোকাদ্দম আজ এতো ক্ষমতার অধিকারী। এরপর আলী মোকাদ্দম নিজের দল গঠন করে দেশে ইসলাম কায়েমের পথ উন্মুক্ত করলেন। খুলে ফেললেন শ'খানেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, যেখানে ছাত্র-ছাত্রীরা শিখবে সেই শিক্ষা যা একাত্তরে চর্চা করে আলী মোকাদ্দম আজ খোদার দিদার লাভ করেছেন। এমনই শিক্ষা তাদের শিখানো হবে যাতে করে তারা সবকিছুর উর্ধ্বে উঠে আলী মোকাদ্দমের মত আল্লাহর মকবুল বান্দাদের গুনকীর্তন আর সেবা করে যাবে, প্রয়োজনে জানও কোরবান দিতে প্রস্তুত থাকবে।
কিন্তু হঠাৎ এটা কি শুরু হইল? ভারতীয় দালালরা স্বাধীনতা লাভের পর পর আলী মোকাদ্দম ঠিক যেভাবে কিছুদিন ভয়ে ভয়ে দিন রাত গুজার করেছিলেন আবার তেমন করে ভয় শুরু হয়ে গেল। নাহ্ এটা খোদার তরফ থেকে একটা পরীক্ষা! কিন্তু তারপরও কেন জানি প্রতি রাতে দুঃস্বপ্ন দেখেন আলী মোকাদ্দম। ফাঁসির দড়ি হাতে গণিমতের মালগুলো ধেয়ে আসছে তার দিকে। আর ঘুম ভেঙে গেলে দেখতে পান তার নেংটিখানা পায়ের গোড়ালীতে পড়ে রয়েছে। নাউজুবিল্লাহ্ কি বিপদ!